প্রকৃত নাস্তিক ও প্রকৃত আস্তিকের মিলনবিন্দু
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ০৪ জুলাই, ২০১৫, ১২:৫১:০৭ দুপুর
বিশ্বাসের ওপর জোর চলে না এ কথা দিবালোকের ন্যায় সত্য। কাউকে জোর করে বিশ্বাসী বানানো যতটা কঠিন, কাউকে অবিশ্বাসী বানানোও সমান কঠিন। এ বোধ সবার থাকতে হবে। প্রাকৃতিক এই সত্যকে অমান্য করে যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি নিজের খেয়াল খুশির প্রয়োগ ঘটাতে চাইবে সে শুধু নিজের বিপদই ডেকে আনবে না, সমাজকেও ঘোর দুর্দশায় নিপতিত করবে, যেমন আজ করছে। আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে আজ যেন সকলের এক ‘রা’- প্রতিপক্ষের অস্তিত্ব মানি না, মানবো না। কেউ উন্মত্ত চাপাতি হাতে, কেউ নীতি-নৈতিকতাহীন কলমের তীব্র আঘাতে, যার যার সামর্থ্য মোতাবেক ক্ষত-বিক্ষত করে চলেছে প্রতিপক্ষের শরীর, মন, আবেগ-অনুভূতিকে। উগ্রতার জবাবে উগ্রতা, তার জবাবে আরও বেশি উগ্রতা- এভাবেই সমাধানকে পাশ কাটিয়ে সঙ্কটকে তীব্র থেকে তীব্রতর করা হচ্ছে।
নাস্তিকতা ও আস্তিকতার সংজ্ঞা নিয়ে কোনো তত্ত্বগত আলোচনায় আমি যাব না, এ বিষয়ে আলোচনা, বিশ্লেষণ, যুক্তি-প্রতিযুক্তির অভাব নেই। বলা চলে রাজনীতিক ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলে এই আস্তিক-নাস্তিক ইস্যু চালু হবার পর থেকেই ও বিষয়ে গবেষণা চলছে। শুধু এক নাস্তিকতাকেই যে কতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় তা সচেতন মানুষমাত্রই জানেন। আমার এই লেখাটি বাংলাদেশ নিয়ে; সেই সুবাদে বাংলাদেশের আস্তিকতা ও নাস্তিকতার মাঝে বিরাজিত প্রবল দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানোর উপায় খোঁজার চেষ্টা থাকবে এই লেখায়। সব শেষে চেষ্টা করব প্রকৃত আস্তিক ও প্রকৃত নাস্তিককে অভিন্ন লক্ষ্য ও আদর্শের বন্ধনে আবদ্ধ করতে।
প্রথমেই জেনে নেয়া যাক আমাদের দেশের নাস্তিকদের স্বরূপ কেমন, এবং অবশ্যই তা বাস্তবতার আলোকে। বাংলাদেশের নাস্তিকদের আমি তিন ভাগে ভাগ করেছি। প্রথমত, এক শ্রেণির নাস্তিক আছে যারা নিজেদের পরিচয় দেয় নাস্তিক হিসেবে, কিন্তু কার্যত তারা না আস্তিক, না নাস্তিক। এদের ধর্ম হলো ‘হিপোক্রিসি’। এরা নিজেদের নাস্তিক পরিচয় দেয় শুধুমাত্র বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীদের ভয়ে। প্রেসটিসের কথা ভেবে। যেহেতু আধুনিকতার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে নাস্তিকতা, তাই তারা নাস্তিকতার সিঁড়ি বেয়ে আধুনিকতার চরম শিখরে আরোহন করতে সচেষ্ট। এদের মতো হিপোক্রেট, যারা নিছক নিজেকে আধুনিক প্রমাণ করার জন্য ফেসবুক বা ব্লগের ধর্ম ক্যাটাগরিতে ‘এথিজম’ লিখেন বা ‘মানবতা’ লিখেন, তারা আসলে যে কী, সে সম্বন্ধে হয়তো নিজেরাই সন্দিহান থাকেন। আজ বাদে কাল যদি আস্তিকতার পালে হাওয়া লাগে এবং এরা টুপি পরে মসজিদ-মাদ্রাসায় দৌড়ায় তাহলে অবাক হবার কিছু নেই। এদেরকে অনেকে ‘নিউ এথিস্ট’ও বলে থাকে।
দ্বিতীয়ত, নাস্তিক বলা হয় এমন আরেকটি দল আছে যারা অনেকাংশে উপরোক্ত শ্রেণিটির মতোই, তবে পার্থক্য হলো, এরা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিজেদের নাস্তিকতাকে প্রচার করতে পছন্দ করে; এবং তা করতে গিয়ে এমন কদর্যতার আশ্রয় নেয়, যা মানবজাতির ইতিহাসে অতীতে খুব কমই ঘটেছে। দিনের আলো প্রকাশ হলে রাতের অন্ধকার এমনতিতেই কেটে যায়, এ সত্য এরা জানে তবে মানে না। যদি মানতো তাহলে নিজেদের আদর্শকে সুষ্ঠুভাবে প্রচার করাকেই বেশি গুরুত্ব দিতো, নির্দিষ্ট ধর্মের নবী, অনুসারী, ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মীয় স্থাপনা নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি বা অশ্লীল কমেন্ট করতো না। এমন কোনো কাজ করত না যাতে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে আঘাত লাগে। অতি সম্প্রতি এদেরই একজনকে দেখা গেছে মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রাণপ্রিয় ক্বাবাঘরকে অবমাননা করতে। মানসিকতার কী নিদারুন বিকৃতি! এসবের বিরুদ্ধে কম-বেশি সমালোচনাও হয়। আস্তিকদের পাশাপাশি কখনো কখনো এসব সমালোচনায় কিছু নাস্তিককেও অংশ নিতে দেখা গেছে। যেমন দিন কয়েক পূর্বে ক্বাবাঘরকে অবমাননা করার সমালোচনা করতে গিয়ে জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ মুক্তমনায় জনৈক নাস্তিক লিখলেন যে,
“বাংলাদেশে ধর্মান্ধদের দেশ এটা সবাই জানে। ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষগুলো ধর্ম পালন করুক বা না করুক ধর্মের প্রতি এক ধরনের উগ্রতা তারা লালন করে থাকে। এখন কথা হচ্ছে এই উগ্রতা বা ধর্মান্ধতা কীভাবে দূর করা যাবে? কীভাবে আমরা সমাজটাকে ধর্মান্ধতা মুক্ত করতে পারি?
ক) ধার্মিকদের গালাগালি করে?
খ) ধার্মিকদের পবিত্র জিনিসগুলোকে অশ্রদ্ধা করে?
গ) ধার্মিকদের সাথে মিশে এবং যৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে সবকিছু বোঝানোর মাধ্যমে?
ঘ) শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার ও বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে?”
তার উত্থাপিত এই প্রশ্নগুলোই নাস্তিক সেজে থাকা কট্টর ধর্মবিদ্বেষী হিপোক্রেটদের ভ্রান্ততা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তাদের কাছে আছে কি? যার স্বপক্ষে শক্তিশালী যুক্তি-প্রমাণ আছে, সে কোন কারণে প্রতিপক্ষের মোকাবেলা করতে গিয়ে গালাগালি করবে? তার তো উচিত যথাসম্ভব ধার্মিকদের সাথে মিশে এবং যৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানো। কিন্তু তা না করে তারা যে বক্রপথ অবলম্বন করছে সেটা তাদের দুর্বলতাই প্রমাণ করে।
সুতরাং বোঝা গেল উপরোক্ত শ্রেণিদু’টি আদর্শিক ও কর্মপদ্ধতি উভয়দিক দিয়েই প্রকৃত নাস্তিকের মধ্যে পড়ে না। তৃতীয় শ্রেণিটিই মূলত নাস্তিকতার চর্চা করতে চেষ্টা করেন যুক্তির কষ্ঠিপাথরে যাচাই-বাছাই করে। যদি সংখ্যার হিসাব করা হয়, তাহলে আগের দুই শ্রেণির অনুপাতে এদের সংখ্যা খুবই কম। এই শ্রেণিটি কম-বেশি সব সময়ই ছিল, কিন্তু বর্তমানে যে কারণে নাস্তিকতা বিতর্কিত হচ্ছে এবং দেশের রাজনীতি ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলে অস্থিরতা ছড়াচ্ছে তার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী নাস্তিক নামধারী আগের দুই শ্রেণি, যারা আসলে কোনো আদর্শেরই ধারক নয়, আদর্শ ও নীতিহীনতাই যাদের ধর্ম। লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে, কিংবা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ধর্মবিদ্বেষ ছড়িয়ে তারা নিজেরা যদিও নিরাপদেই থাকছে, তবে ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে সেই সব বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী ধ্যান-ধারণার মানুষগুলো, যারা মাঠ লেবেলে কাজ করেন। কাজেই এদের সম্পর্কে যদি প্রকৃত নাস্তিকরা এখনই সজাগ না হন, প্রতিহত না করেন, কমপক্ষে নিয়ন্ত্রণ করতেও সচেষ্ট না হন তাহলে শেষ বিচারে নাস্তিকতাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাতে সন্দেহ নেই। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে কিন্তু ইতোমধ্যেই নাস্তিকতা বহু অখ্যাতি কুড়িয়েছে, এবং অবশ্যই তা নাস্তিকতার কারণে নয়, উগ্র ধর্মবিদ্বেষের কারণে।
বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ বহু পুরনো যে, এখানকার মানুষ ধর্মান্ধ। অভিযোগটি উড়িয়ে দেবার মতো নয়। এ দেশের ধর্মভীরু মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে বারবার ভুল পথে প্রবাহিত করা হয়েছে এটা ইতিহাস। যে ধর্মবিশ্বাস হতে পারত জাতির উন্নতি, প্রগতি ও সমৃদ্ধির পাথেয়, দেখা গেছে সেটা জাতির অকল্যাণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ তাদের ধর্মবিশ্বাসকে ব্যবহার করছে আর্থিক স্বার্থোদ্ধারে, কেউ রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে, কেউ জঙ্গিবাদের জ্বালানি হিসেবে। সবক্ষেত্রেই সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রতারিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। ধর্মব্যবসায়ী স্বার্থপুজারী শ্রেণির স্বার্থে কেউ আঘাত করলেই তারা সাধারণ মানুষকে তার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে দেয় যে, অমুক নাস্তিক, অমুক কাফের, অমুক মুরতাদ, অমুককে কতল করা ফরদ, অমুক দলকে ভোট দেয়া হারাম ইত্যাদি ইত্যাদি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মানুষ বারবার তাদের বিশ্বাস করে এবং প্রতারিত হয়। বছরের পর বছর এমনটাই হয়ে আসছে। এমতাবস্থায় এক শ্রেণির ইসলামবিদ্বেষী, ফেতনাবাজ ও নৈরাজ্যবাদী লোক নিজেকে নাস্তিক পরিচয় দিয়ে যখন আল্লাহ, আল্লাহর রসুল, ধর্মগ্রন্থ, ধর্মীয় স্থাপনা ইত্যাদি নিয়ে করুচিপূর্ণ মন্তব্য করে, ধর্মবিশ্বাসী মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তখন ধর্মব্যবসায়ী, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতিকারী ও জঙ্গিবাদীদের হাতে বিরাট এক অস্ত্র এসে যায়। তারা কথিত নাস্তিকদের এই ক্রিয়াকলাপকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে নিজেদের অভিসন্ধি পূরণে প্রবৃত্ত হয়। সাধারণ মানুষকে অহেতুক উত্তেজিত করে তোলে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যেই বেশ কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটে গেছে। ফল হয়েছে এই যে, চূড়ান্তভাবে ইসলামকেই হেয় করার সুযোগ বেড়েছে। বলা হচ্ছে- ইসলাম ও মুসলিম জাতি ভিন্নমত সহ্য করে না, ভিন্নমতের মানুষকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়, ইসলামে চিন্তার স্বাধীনতা নেই, বিশ্বাসের স্বাধীনতা নেই, ওরা যুক্তি বোঝে না, ওরা বোঝে শুধু চাপাতি! আসলেই কি তাই?
আল্লাহর স্পষ্ট নির্দেশ হচ্ছে- দীনের ব্যাপারে কোনো জোর জবরদস্তি নেই, সত্য থেকে মিথ্যা পৃথক হয়ে গেছে (বাকারা ২৫৬)। আর ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে রসুলাল্লাহর কঠোর নিষেধবাণী রয়েছে। শরীর ও আত্মার সমন্বয়ে মানুষ। জোর করে শরীরকে হয়তো কোনো কাজে বাধ্য করা সম্ভব, কিন্তু কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার উপর নির্দিষ্ট বিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়া সম্পূর্ণ অপ্রাকৃতিক। প্রকৃতপক্ষে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে নাস্তিক হবার কারণে ইসলামে কোনো শাস্তিমূলক বিধান নেই। ইসলামে শাস্তির বিধান আছে সমাজে বিশৃঙ্খলা, গোলযোগ, এক কথায় অশান্তি সৃষ্টি করলে। যে কেউ এমন গর্হিত কাজ করবে, সে মুসলিম হোক, হিন্দু হোক, খ্রিস্টান হোক বা নাস্তিক হোক, তার ওই কাজ ইসলামী আইন বা মানুষের বানানো আইন উভয়ক্ষেত্রেই অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়ার যোগ্য এবং তার শাস্তিও অনিবার্য। এই শাস্তি এই কারণে নয় যে, সে মুসলিম বা সে হিন্দু বা সে নাস্তিক, সে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করেছে এটাই তার অপরাধ।
নাস্তিকতা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি যে সহনশীল তার প্রমাণ পবিত্র কোর’আন। কোর’আনে বহু আয়াত রয়েছে যেখানে আল্লাহ তাঁর অস্তিত্ব, একত্ব ও শক্তিমত্তার পক্ষে অকাট্য যুক্তি তুলে ধরেছেন। মানবজাতির মধ্যে যারা তাঁকে অস্বীকার করতে চাইবে, যারা বলবে যে, কোর’আন আল্লাহর রচনা নয় তাদের প্রতি তিনি রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, আর আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তা সম্পর্কে তোমাদের যদি কোন সন্দেহ থাকে, তাহলে এর মত একটি সুরা রচনা করে নিয়ে আস। এক আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাহায্যকারীদেরও সাথে নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক (সুরা বাক্বারা ২৩)। অন্যত্র বলেছেন, তারা কি কোর’আন নিয়ে গবেষণা করে না? এটা যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে আসত তাহলে তারা অবশ্যই অনেক বৈপরিত্য দেখতে পেত (নিসা ৮২)। অর্থাৎ আল্লাহ নাস্তিকতার জবাব দিচ্ছেন যুক্তি দিয়ে, প্রমাণ দিয়ে, বুঝিয়ে। মানুষ তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, এটা আল্লাহর দৃষ্টিতে অস্বাভাবিক কিছু নয়। বরং তিনি যেন এটাই চান যে, সত্যান্বেষী মানুষ তাঁকে নিয়ে, তাঁর সৃষ্টি নিয়ে ও প্রেরিত ধর্মগ্রন্থ নিয়ে গবেষণা করুক। তাই কখনো আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে এবং দিন ও রাতের আবর্তনের মধ্যে তাঁর নির্দশনকে অনুধাবন করার জন্য জ্ঞানীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন (আল ইমরান ১৯০), আবার কখনো নিজের একক কর্তৃত্বের পক্ষে অকাট্য যুক্তি তুলে ধরছেন যে, যদি আসমান ও জমিনে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য ইলাহ থাকতো, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেতো। অতএব আরশের অধিপতি আল্লাহ সেসব বিষয় থেকে পবিত্র যা তারা বলে থাকে (আম্বিয়া ২২)। অর্থাৎ আল্লাহ কারও বিশ্বাসের উপর বা অবিশ্বাসের উপর শক্তির পরিবর্তে যুক্তির প্রয়োগ ঘটাচ্ছেন, যা প্রাকৃতিক ও বিজ্ঞানসম্মত। সুতরাং নাস্তিকতার বিরুদ্ধে সহিংসতা পরিহার করে ধর্মবিশ্বাসীদের উচিত হবে উপযুক্ত যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে নাস্তিকতাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করা।
আশার কথা হলো, নাস্তিক মানেই যেমন ধর্মবিদ্বেষী নয়, আস্তিক মানেও তেমন ধর্মান্ধ নয়। নাস্তিকদের মধ্যে অনেকেই প্রকৃত নাস্তিকতা চর্চা করেন তাতে সন্দেহ নেই। তারা বর্তমানে উগ্র ধর্মবিদ্বেষীদের প্রকাশ্য সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এজন্য তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। একইভাবে আস্তিকদের মধ্যেও যারা ধর্মান্ধতামুক্ত যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ রয়েছেন, যারা জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে সঠিক পথে প্রবাহিত করতে আগ্রহী তাদেরকেও যথাযথ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। যে করেই হোক, জাতিকে ধর্মব্যবসায়ী স্বার্থান্ধদের পেছন থেকে সরাতে হবে। নতুবা এই ধর্মবিশ্বাসই দেশ, জাতি ও মানবতার মহাশত্র“তে পরিণত হতে পারে। নাস্তিকতা মানে যদি সমাজকে ধর্মান্ধতা বা ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে মুক্ত করার সংগ্রাম হয়, এবং আস্তিকতা মানে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে মানবজীবনে ন্যায়, সমৃদ্ধি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াই হয় তাহলে আস্তিক-নাস্তিক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে বাধা কীসের?
https://www.facebook.com/asadali.ht
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
১. http://www.monitor-bd.net/blog/blogdetail/detail/3557/warrior2013/64167#.VZfMoZsr7K8
২.http://www.monitor-bd.net/blog/blogdetail/detail/3557/warrior2013/64331#.VZfOy5sr7K8
৩. http://www.monitor-bd.net/blog/blogdetail/detail/3557/warrior2013/64399#.VZfO_Zsr7K8
৪. http://www.monitor-bd.net/blog/blogdetail/detail/3557/warrior2013/63968#.VZfPPJsr7K8
বাংলাদেশে নাস্তিক ২ প্রকারের। ১. নকল নাস্তিক এরা মূলত উগ্র হিন্দু এরা নিজেদের ধর্মীয় উগ্রতার জন্য নাস্তিক সেজে ইসলাম নিয়ে গালাগালি করে। ২. স্বল্প জ্ঞানের মূর্খ্য। কিয়ামত পূর্ব সময়ে এদের আধিক্য বেড়ে যাবে।
হাসান ইবনে সাব্বাহ (রঃ)..আনাস বিন মালিক (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন,(কিয়ামতের আলামত হল) লোকেরা পরস্পরে প্রশ্ন করতে থাকবে যে, আল্লাহ যদি সবকিছুরই স্রষ্টা হন, তবে তার সৃষ্টিকর্তা কে? (বুখারী: ৬৭৯৮, ১০ম খন্ড)
এজন্যই আল্লাহ ১৪০০ বছর আগে বলেছেন, যখন তাদেরকে বলা হয়, লোকেরা যেরূপ ঈমান এনেছে তোমরাও অনুরূপ ঈমান আন; তখন তারা বলে, নির্বোধেরা যেরূপ ঈমান এনেছে আমরাও কি সেরূপ ঈমান আনব? সাবধান! নিশ্চয়ই এরাই নির্বোধ কিন্তু তারা সে ব্যাপারে অবগত নয় (সূরা বাকারা আয়াত: ১৩)
হে মুহাম্মাদ! যদি আমি কাগজের উপর লিখিত কোন কিতাব তোমার প্রতি অবতীর্ণ করতাম, অতঃপর তারা তা নিজেদের হাত দ্বারা স্পর্শও করতো; তবুও কাফির ও অবিশ্বাসী লোকেরা বলত যে, এটা প্রকাশ্য যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা আনআম:৭)
তারা কোরানের প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করবেনা এবং অতীতে তাদের পূর্ববর্তীগণেরও আচরণ এরূপই ছিল। যদি তাদের জন্য আকাশের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেই এবং তারা সারাদিন তাতে আরোহণ করতে তাকে, তবুও তারা বলবে,আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হয়েছে, না, বরং আমরা জাদুগ্রস্হ হয়ে পরেছি। (সুরা হিজর, আয়াত:১৩,১৪,১৫)
সুতরাং,তাদের সামান্য হাঁসতে দাও, অতঃপর তারা অনেক বেশি কাঁদবে, এটা হল তাদের (কৃতকর্মের) পুরস্কার যা তারা উপার্জন করতো। (সুরাহ তওবাহ, ৮২)"
অতএব কাফিরদেরকে অবকাশ দাও, তাদেরকে অবকাশ দাও কিছুকালের জন্য।(সুরা আলা:১৭, ৩০ পারা)
অনন্তর যেদিন আমি তাদেরকে একত্রিত করব-যাতে কোন সন্দেহ নেই, তখন তাদের কি দশা হবে? এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যা অর্জন করেছে, তা সম্যকরূপে প্রদত্ত হবে এবং কারো প্রতি অত্যাচার করা হবেনা (সুরা আল ইমরান, আয়াত:২৫)
মন্তব্য করতে লগইন করুন