আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদ: পশ্চিমাদের তৈরি আধুনিক গ্ল্যাডিয়েটর--- যুদ্ধই যাদের বেঁচে থাকার সম্বল
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ১৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:৫০:৩৮ রাত
মধ্যপ্রাচ্যের আগুন দিন দিন নতুন মাত্রা লাভ করছে। এ আগুনের কোনো শেষ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী মহলের জ্বালানো আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলে-পুড়ে ছারখার হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নিরীহ মানুষগুলো। সে আগুনে আবার ঘি ঢালছে কতিপয় সন্ত্রাসবাদী ভ্রান্ত আদর্শের জঙ্গিগোষ্ঠী। এই জঙ্গিরা ভালোভাবেই জানে- পশ্চিমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে কথিত ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ তারা কখনই পাবে না। আবার ক্ষুদ্রশক্তি নিয়ে যুদ্ধ করেও পশ্চিমাদের পরাজিত করতে পারবে না। পাশ্চাত্যের বিশাল অস্ত্রসম্ভার, অর্থনৈতিক প্রাচুর্য ও একচেটিয়া অনুগত মিডিয়ার সামনে এরা অসহায়। মিডিয়ার অবিশ্রান্ত প্রচারণায় তারা ইতোমধ্যেই সারা বিশ্বে ‘ভিলেন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কাজেই তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে- এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই সত্য জানার পরও তারা অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা এখানে ওখানে আক্রমণ করছে, স্কুল-অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সিনেমা হল, পর্যটন কেন্দ্র ইত্যাদি উড়িয়ে দিচ্ছে, নির্দ্বিধায় আত্মাহুতি দিচ্ছে। অসম শত্র“র বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে দলে দলে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হলেও পরক্ষণেই পশ্চিমা হস্তক্ষেপে সে নিয়ন্ত্রণ হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, পরাজয় নিশ্চিত জানার পরও কেন জঙ্গিরা একইরকম তৎপরতা চালাচ্ছে? নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও কেন তারা এই অসম যুদ্ধ-সংঘাত পরিত্যাগ করছে না? একবার জড়িয়ে পড়লে কেন তারা আর সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে না? এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য জানা এখন সময়ের প্রয়োজন।
এর উত্তরে প্রথমেই যে প্রসঙ্গ আসে তাহলো- এদের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা লাভ করা। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের কাছে যারা এখনও মাথা বিক্রি করেন নি তাদের বলে দিতে হবে না যে, জঙ্গি-সন্ত্রাসীখ্যাত তালেবান-আল কায়েদাকে কারা তৈরি করেছিল? তাদের রসদ কারা জুগিয়েছিল? প্রশিক্ষণ কারা দিয়েছিল? সর্বোপরি তাদেরকেই জঙ্গি-সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে দেশ দখল করে লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধকে কারা হত্যা করেছিল, কারা দুইটি দেশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছিল? পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী মহলের এই কুকীর্তি এখন আর গোপন নেই, তা এখন দিবালোকের মতো দৃশ্যমান।
জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীগুলোর উৎপত্তি কিভাবে হলো তা জানতে হলে আমাদেরকে কয়েক দশক পেছনে ফিরে যেতে হবে। ফিরে যেতে হবে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধের মুহূর্তে। এ যুদ্ধ আপাতভাবে মুসলিমদের সাথে সোভিয়েত বাহিনীর মনে হলেও কার্যত তা ছিল স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে ও যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত এমন একটি যুদ্ধ যার জন্য জীবন দিয়েছে মুসলিমরা কিন্তু ফসল ঘরে তুলেছে পুঁজিবাদী পশ্চিমারা। যুক্তরাষ্ট্র তার সমস্ত শক্তি ব্যবহার করে কম্যুনিস্ট রাশিয়ার বিরুদ্ধে কম্যুনিস্ট অধ্যুষিত দেশগুলোর মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতি ও স্বাধীনতার চেতনাকে ব্যবহার করে। তারা আফগানিস্তানের স্বাধীনতাকামী জনগণের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করে এবং তাদেরকে ব্যাপক প্রশিক্ষণ দিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত করে। এটি বাহ্যত ছিল আক্রমণকারী রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের কম্যুনিস্ট-বিরোধী গেরিলাদের যুদ্ধ। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আফগানদেরকে এই অসম যুদ্ধে (১৯৭৯-১৯৮৯) লিপ্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে ধর্র্ম। আফগানিস্তানের শতভাগ মানুষ ছিল ইসলাম ধর্মের অনুসারী। অন্যদিকে প্রাচীনকাল থেকেই আফগানরা ছিল কঠিন শক্তিশালী। এই সুযোগ কাজে লাগাতে কুচক্রী যুক্তরাষ্ট্র ও তার দোসররা এতটুকু কসুর করে নি। শুরু হয় আফগান-পাকিস্তান ইত্যাদি দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে কথিত জেহাদের প্রচার-প্রচারণা। যুক্তরাষ্ট্রের সি.আই.এ’র প্রত্যক্ষ উপস্থিতি ও পরিচালনায় চলতে থাকে জেহাদের পক্ষে লোক সংগ্রহ, অস্ত্র সরবরাহ, প্রশিক্ষণ প্রদান ও তাদেরকে নির্দিষ্ট এলাকায় মোতায়েনের কাজ। সেই যুদ্ধে একদিকে ছিল রাশিয়ার প্রশিক্ষিত লক্ষ লক্ষ সেনা, কমান্ডো, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, ট্যাংক, জঙ্গি বিমান, অন্যদিকে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তান, আফগানিস্তান ইত্যাদি দরিদ্র দেশের “অশিক্ষিত” জনগণ- যারা ছিল প্রকৃতপক্ষে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, কৃষক-শ্রমিক, দিনমজুর। এদের অস্ত্র বলতেই ছিল সামান্য কিছু ভাঙ্গা বন্দুক, কাটা রাইফেল, পাহাড়ের গুহার কামারখানার তৈরি ছুরি-চাকু-পিস্তল, লাঠি-সোটা ইত্যাদি। কিন্তু এই সাধারণ অস্ত্র নিয়েই তারা যুদ্ধ করতে করতে জীবন বিসর্জন দিয়েছে। কারণ তাদের কাছে এ কোনো সাধারণ যুদ্ধ ছিল না, এ ছিল জেহাদ, ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। তারা যুদ্ধ করেছে ইসলামের জন্য, আল্লাহর জন্য, আল্লাহর রসুলের জন্য। তাই সে যুদ্ধে তাদের মরণের কোনো ভয় ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের দোসরদের ভাড়া করার ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী তাদের শিখিয়েছিল যে, এই যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করলে জান্নাতে যেতে পারবে। এই জান্নাতে যাওয়ার উদগ্র বাসনা সৃষ্টি করে সাধারণ গ্রাম-গঞ্জের অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত ইসলামপ্রিয় মানুষগুলোকে রাশিয়ার সুসজ্জিত সেনার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। শান্তিপ্রিয় মানুষগুলোর মধ্যে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের বিকাশ ঘটিয়েছে। যুদ্ধকে তাদের জন্য অনিবার্য হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। সে যুদ্ধে আনুমানিক ১০ লক্ষ আফগান প্রাণ হারিয়েছিল। রুশ বিমানগুলো নির্বিচারে আফগানিস্তানের গ্রামের পর গ্রাম জনশূন্য করে দিয়েছিল, বৃষ্টির মত বোমাবর্ষণ করেছিল সাধারণ মানুষের ওপর। কিন্তু পশ্চিমাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ইসলামের জন্য যুদ্ধ করতে যাওয়া নির্বোধ মুসলিমরা পিছ-পা হয় নি।
শুধু আফগান বা পাকিস্তানিরাই নয়, তখন বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে লাখ লাখ যুবক আফগানে ছুটে গিয়েছিল আল্লার রাস্তায় যুদ্ধ করার জন্য। তারা বোঝে নি যে, এটা জেহাদ ফি সাবিলিল্লাহ নয়, এই যুদ্ধ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকার স্বার্থের যুদ্ধ। বুঝতে পারে নি, কারণ তাদেরকে প্রাণদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র হাজার হাজার ধর্ম ব্যবসায়ীকে ভাড়া করছিল যারা এই যুদ্ধের নাম দিয়েছিল জেহাদ ও কেতাল। এই ধর্মব্যবসায়ীরা তখন শত শত ওয়াজে কম্যুনিস্ট রাশিয়ার বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়েছে, জেহাদী প্রেরণা সৃষ্টির প্রয়াস পেয়েছে। যাই হোক, প্রতারণার শিকার কথিত ঐ জেহাদীদের ধর্মীয় আদর্শের সামনে সেদিন সোভিয়েত বাহিনী টিকতে পারে নি। অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত সোভিয়েত বাহিনী আফগান ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল, জেহাদীরা শত্র“মুক্ত হয়েছিল, মার্কিন স্বার্থ রক্ষিত হয়েছিল।
তবে এখানেই সবকিছুর পরিসমাপ্তি ঘটে নি। বরং নির্মম বাস্তবতা এই যে, সোভিয়েত বাহিনীর এই পরাজয় এবং কথিত জেহাদীদের জয়ের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল মুসলিম জাতির নতুন এক কালো অধ্যায়ের। এ কথা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, মুসলিম নামধারী জাতিটির মধ্য থেকে জেহাদের জোশ হারিয়ে গিয়েছিল বহু আগেই। এমনটা হয়েছিল প্রায় সমগ্র মুসলিম ভূখণ্ড বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দী হয়ে ও প্রভূত ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হওয়ার ফলে। তারা পরিণত হয়েছিল সুফি চরিত্রের নিরীহ জাতিতে। কোনো পরাশক্তির বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার শক্তি ও সাহস কোনোটাই তাদের ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো পরাশক্তি, যাকে কিনা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিও সমীহ করে চলছে- এমন পরাশক্তির ব্যাপারে তো কথাই নেই। বস্তুত এই শক্তি ও সাহস উভয়ই যুগিয়েছে পশ্চিমা স্বার্থবাদীরা। তাদেরই সাহায্য, সহযোগিতা, ও সমর্থন পেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক, ইমাম, মুয়াজ্জিন, কৃষক-শ্রমিক যারা কোনো দিন অস্ত্র স্পর্শ করা তো দূরের কথা, কোন অস্ত্রের নাম পর্যন্ত জানতো না তারাই প্রশিক্ষণ পেয়ে, জেহাদের আদর্শ ধারণ করে অমিততেজে যুদ্ধ করে রুশ বাহিনীকে লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য করেছিল। এই যে আদর্শ কথিত ঐ জেহাদীদের মধ্যে ঢোকানো হলো, যুদ্ধের ময়দানে প্রবেশ করানো হলো, তা এতদিন পর্যন্ত ঠিকঠাক থাকলো বটে, কিন্তু এর পরিণতি হয়তো আমেরিকানরা কল্পনা করতে পারে নি। তারা এটা বোঝে নি বা বুঝেও এড়িয়ে গেছে যে, তারা তাদের নিজস্ব স্বার্থের প্রয়োজনে যাদের মধ্যে সশস্ত্র জেহাদের বীজ বপন করলো, এই বীজ থেকে একদিন না একদিন চারা গজাবে, সে চারা বড় হবে, আর তার বিষাক্ত ফল দিয়ে চারপাশের পরিবেশকে দূষিত করবে। হলোও তাই। সোভিয়েত বাহিনীর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শেষ হলেও, থেকে গেল জেহাদী আদর্শ। হাস্যকর বিষয় হলো, যে ধর্মীয় আদর্শ দ্বারা কথিত জেহাদীরা এতদিন সোভিয়েত বাহিনীর মোকাবেলা করেছে, ঠিক সেই আদর্শই তাদেরকে এবার পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে লড়তে অনুপ্রাণিত করল, দেশে দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার নৈতিক শক্তি জোগাল। অর্থাৎ এবার পশ্চিমা মদদপুষ্ট কথিত জেহাদীরা পাশ্চাত্য প্রদত্ত অস্ত্রের নল তাক করল পাশ্চাত্যের দিকেই। এদিকে আফগান ফেরত বিদেশি যোদ্ধারা যার যার দেশে ফিরে গিয়ে তারাও ছোট ছোট দল গঠন করতে লাগল। বিশ্বের যতদেশে মুসলিম সংখ্যাধিক্য আছে মোটামুটি সবদেশেই এমন দলের সৃষ্টি হল। পাকিস্তান, কাশ্মির, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ। এই সংখ্যা বাড়তে বাড়তে বর্তমানে সারা পৃথিবীতে শুধু সশস্ত্র ইসলামী জঙ্গি দলের নাম পাওয়া যায় ১০৪ টি। এই জঙ্গিরা কী করছে? তারা ঠিক তা-ই করছে, যা তাদেরকে বিগত দিনগুলোতে হাতে কলমে শেখানো হয়েছিল, যা তারা করেছিল আফগানে-পাকিস্তানে।
আজ এই জঙ্গিদের জঙ্গি কার্যক্রম থেকে সরানোর জন্য, তাদেরকে অস্ত্র ত্যাগ করানোর জন্য কত কিছু করা হচ্ছে। প্রতিটি দেশের সরকার তো বটেই এমনকি আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ইত্যাদি শক্তিধর দেশগুলো তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে জঙ্গিবাদ দমন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে, হাজার হাজার জঙ্গি গ্রেফতার করছে, নির্যাতন করছে, জেলে দিচ্ছে, ফাঁসি দিচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। হচ্ছে না তাই নয়, বরং উল্টো ফল হচ্ছে। দিন দিন জঙ্গিবাদী গ্র“পগুলোর সংখ্যা ও শক্তি উভয়ই আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো শক্তিবলে, কোনো মন্ত্রবলেই জঙ্গিদেরকে অস্ত্র ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ করানো সম্ভব হচ্ছে না। এই জঙ্গিবাদীরা এমন গ্ল্যাডিয়েটরে পরিণত হয়েছে যেন যুদ্ধই তাদের বেঁচে থাকার শেষ সম্বল। রোমান গ্ল্যাডিয়েটরদের ইতিহাস আমরা অনেকেই জানি। ল্যাটিন শব্দ গ্ল্যাডিয়েটর মানে হচ্ছে ‘তরবারিওয়ালা মানব’ যার উৎপত্তি ‘গ্ল্যাডিয়াস বা সোর্ড অর্থাৎ তরবারি থেকে। গ্ল্যাডিয়েটররা মানুষ ভিন্ন অন্য কোনো জীব ছিল না, তারা মানুষই ছিল। কিন্তু তাদের জীবনযাপন প্রণালি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। একজন গ্ল্যাডিয়েটরকে বেঁচে থাকতে হতো শুধুই যুদ্ধ করে রাজাদের মনোরঞ্জনের জন্য। তাদের সামনে সর্বদা দু’টি পথ থাকত। হয় হাজার হাজার দর্শকের সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করে তার প্রতিপক্ষের প্রাণ নিতে হবে, নয়তো প্রতিপক্ষের হাতে পরাজিত হয়ে নিজের প্রাণ দিতে হবে। তৃতীয় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা যে ছলনার আশ্রয় নিলো, সযতেœ ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে যে জঙ্গি তৈরি করল তারা আজ এমনই গ্ল্যাডিয়েটরে পরিণত হয়েছে। এরা পশ্চিমা কুচক্রীদের মনোরঞ্জনের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে, জয় এনে নিজেদের জীবন বাঁচিয়েছে। কিন্তু ঐ যে অস্ত্র হাতে তুলে নিল সে অস্ত্র হাত থেকে নামানোর মতো পরিবেশ আর হয় নি। ভবিষ্যতেও হবে না। এখন তাদেরকে আল কায়েদা, তালেবান, আইএস বা আল নুসরা যে নামেই অভিহিত করা হোক মূলত তারা সকলেই গ্ল্যাডিয়েটরে পরিণত হয়েছে। তারা যেখানেই যাবে, যুদ্ধ তাদের পিছে পিছে যাবে। তারা যুদ্ধকে ত্যাগ করতে চাইলেও যুদ্ধ তাদেরকে ত্যাগ করবে না। যুদ্ধ থেকে পরিত্রাণের একটিই উপায়- মৃত্যু। যে মুহূর্তে তারা যুদ্ধ ত্যাগ করবে সে মুহূর্তেই তাদের মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হবে। আর এটা সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায় যে, তারা স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে বরণ করবে না, এটা তাদের আদর্শ নয়, এটা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নয়। মৃত্যুকেই যদি বরণ করতে হবে তাহলে তারা জীবন বাজি রেখে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করত না। তারা লড়াই করেছে, লড়াই করছে, লড়াই করেই যাবে। যে শত্র“তার বীজ তাদের মধ্যে পশ্চিমারা প্রবেশ করিয়েছিল তা এখন চারা থেকে পূর্ণ বৃক্ষে রূপ পেতে যাচ্ছে। ক্রমেই সে বিষাক্ত ফলপ্রদায়ক বৃক্ষ তার ডালপালা, শাখা-প্রশাখা বিস্তার করছে। আজ আইএস নামের আল কায়েদার যে অংশটি মধ্যপ্রাচ্য দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, খোদ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ করছে, নিত্য নতুন নৃশংসতার জন্ম দিচ্ছে, তা কিন্তু পাশ্চাত্য রোপিত ঐ বিষবৃক্ষেরই বিষাক্ত ফল। ইচ্ছা করলেই পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদ এই বিষবৃক্ষকে উপড়ে ফেলতে পারবে না, ফলকে অস্বীকার করতে পারবে না।
বিষয়: বিবিধ
১২৯১ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জিহাদকে অনেক বিতর্কিত করেছেন, দয়া করে আর করবেন না। তাহলে মুসলিমরা কখনোই ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না।
জিহাদকে অনেক বিতর্কিত করেছেন, দয়া করে আর করবেন না। তাহলে মুসলিমরা কখনোই ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না।
তাই বলছি ভাই,আগে জ্ঞান নিয়ে জিহাদের মাঠে নামুন। তাহলে বুঝতে পারবেন অস্ত্র কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হয়।
আমার তো মনে হয় বন্যা ইসলাম ঠাকুরদের বাড়ি গিয়ে ভন্ডামির উপর পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করে এসেছেন
মারিয়া
পরীবানু
মরুর মুসাফির
পরীবানু ,সততার আলো
অশ্বথমা
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
পরমা ,নীলমণীলতা
বিলকিস লায়লা
দস্তার
রুপবান
মুক্তিযুদ্ধ ৭১
দ্রাবীড় বাঙাল
লেয়লা ইসলাম
বিলকিস
বাংলা ৭১
ভিক্টোরিয়া
হেলেনা
পল্লব প্রভাতে
খালেদ
রুশো তামজিদ
বারাংগনা
মধুবালা
সখি
ফয়সাল১
মাঝি-মাল্লা, ,
লায়লার
লায়লা০০৭
রাতুল দাস
চকো চকো
সায়েদ-রিয়াদ
বিভ্রান্ত নাবিক
ফাজিল
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
মুক্তিযুদ্ধ ৭২
দ্রাবীড় বাঙাল
পিচ্চি পোলা
কাওসাইন হক
চাষা
jahed_ullah
নীরু
সাদা মন
সাদা মন
চোথাবাজ
আমি বিপ্লবী
সততার আলো সকাল সন্ধ্যা
এই নেরিকুত্র এত নিক ।
সত্যিই হাসি বেড় হয় আমাদের সমাজের মুসলিমদের মুখ থেকে এমন কথা শুনলে ।আজ মুসলিমেরা কাফেরের অস্ত্র মিডিয়ার বহর দেখে ভয়ে কাপে । না হেসে পারলাম না।
আপনি বলেছেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসীখ্যাত তালেবান-আল কায়েদাকে কারা তৈরি করেছিল? তাদের রসদ কারা জুগিয়েছিল? প্রশিক্ষণ কারা দিয়েছিল?
আমি বলিঃ আপনার গর্ভবস্থায় কোন পুরুষ ডাক্তার চিকিৎসা করার কারনে সেই ডাক্তার কি বাবা হয়ে যাবে ? না। ঠিক তেমনি হাল্কা কিছু সামরিক সাহায্য এবং অস্ত্র বিক্রি করার কারনে আল কায়েদা আমেরিকার সৃষ্ট একথা বলেন কেম্নে ?
আপনি বলেছেন, তারা বোঝে নি যে, এটা জেহাদ ফি সাবিলিল্লাহ নয়, এই যুদ্ধ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকার স্বার্থের যুদ্ধ। বুঝতে পারে নি, কারণ তাদেরকে প্রাণদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র হাজার হাজার ধর্ম ব্যবসায়ীকে ভাড়া করছিল যারা এই যুদ্ধের নাম দিয়েছিল জেহাদ ও কেতাল। এই ধর্মব্যবসায়ীরা তখন শত শত ওয়াজে কম্যুনিস্ট রাশিয়ার বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়েছে, জেহাদী প্রেরণা সৃষ্টির প্রয়াস পেয়েছে। যাই হোক, প্রতারণার শিকার কথিত ঐ জেহাদীদের ধর্মীয় আদর্শের সামনে সেদিন সোভিয়েত বাহিনী টিকতে পারে নি। অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত সোভিয়েত বাহিনী আফগান ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল, জেহাদীরা শত্র“মুক্ত হয়েছিল, মার্কিন স্বার্থ রক্ষিত হয়েছিল।
আমি বলিঃ আরেক চোট হাসি হিহিহিহিহি। আপনার ওসুখ আপনি ঔষধ
কিনে খেলেন। এতে আপনার অসুখ ভাল হলো আর ডাক্তারেরও লাভ হলো । আপনি কি এখন চিল্লাইয়া কইবেন যে ডাক্তারের লাভের উদ্দেশ্য ছিল যেটা আপনার মতো গাধা রুগি পুরুন করছে ?নাকি আপনার সুস্থতাটাই আসল ?
আফগানে সেভিয়েতকে পতনের দরকার ছিল আমেরিকার । কিন্তু তার চেয়ে বেশি দরকার ছিল আফগানিদেরিই । আমেরিকার স্বার্থ থাক্লেও সেটা জিহাদ ছিল, না থাকলেও সেটা জিহাদ ছিল ।
আপনার এটাও বোঝা উচিত ছিল যুদ্ধ চলবেই । যতদিন বাতিল শক্তি থাকবে ততোদিন। মালাইহিমের যুদ্ধ হবে, গজওয়ায়ে হিন্দ হবে এবং সর্বশেষ ঈসা আঃ এর নেত্বতে বাইতুল মোকাদ্দাস মুক্ত হবে।
জবাবটি গুছিয়ে দিতে পারিনি বলে দুঃখিত
পড়লাম, দোয়া করি, জাযাকাল্লাহ..
মন্তব্য করতে লগইন করুন