৯/১১ এর কুশীলবরা সক্রিয়; মুসলিম-বিশ্ব সাবধান!
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:২৬:৩১ দুপুর
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। স্থান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র। রাজধানী শহর ওয়াশিংটন ডিসিতে আমেরিকার প্রতিরক্ষা সদর পেন্টাগনে ছিনতাইকৃত তিনটি যাত্রীবাহী বিমান দিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয় ১১০ তলা ভবন টুইন টাওয়ারে। অকল্পনীয় এই হামলায় প্রায় আশিটি দেশের নাগরিক নিহত হওয়া ছাড়াও অনেকে এখনও নিখোঁজ রয়েছে। প্রায় ৩ হাজার মানুষের প্রাণসংহার ঘটে এই হামলায়। ভয়াবহ এই হামলার জন্য জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদাকে দায়ী করে হামলার প্রতিশোধ নিতে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীব্যাপী কথিত সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধে নেমে পড়ে। আজও সে যুদ্ধের লেলিহান শিখা দৃশ্যমান।
আজ ১১ সেপ্টেম্বর, ৯/১১ (নাইন ইলেভেন) খ্যাত এই হামলার ১৩ বছর পূর্ণ হলো। পৃথিবী তাই আরও একবার ফিরে যেতে চাইছে ঐ অভিশপ্ত দিনটিতে। জানতে চেষ্টা করছে, আসলে কী ঘটেছিল সেদিন, কেন ঘটেছিল এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা? আর ঐ ঘটনায় কে-ই বা লাভবান হয়েছিল? পরিণতিই বা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে? আজকের দিনটি বিশ্ববাসীর স্মৃতিচারণের দিন, শিক্ষাগ্রহণ করার দিন। আমাদেরকেও প্রকৃত ঘটনা জেনে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনার মূল হোতা কে ছিল- সে প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর আজও মেলেনি। গত ১৩ বছরে অসংখ্য বই-পুস্তক রচিত হয়েছে, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ স্ব স্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন, পশ্চিমা সংবাদ জগতে ঝড় উঠেছে, আজও উঠছে, কিন্তু মানুষ এখনও ঘটনাটি সম্পর্কে যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই আছে। প্রকৃত সত্য আজও উদ্ঘাটিত হয় নি। পশ্চিমা সভ্যতার শক্তি-সামর্থ্যরে সীমারেখা টানা যায় না। এ সভ্যতা মানুষের কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। আকাশের বিদ্যুৎকে বেঁধে চাকরের মতো কাজ করাচ্ছে, নদীর গতিকে মোড় ফিরিয়ে ফসল ফলাচ্ছে, তার গতি রুদ্ধ করে বিদ্যুৎ তৈরি করছে, লক্ষ লক্ষ মাইল দূরে চাঁদে গিয়ে ফিরে আসছে। হয়তো আর কিছুদিন পর এই সভ্যতা মানুষকে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে পরিভ্রমণ করাবে। এই সভ্যতা ব্যর্থ হতে পারে এমন কোনো কাজই নেই, কিন্তু যেখানে ব্যর্থ হয়েছে সেটা হলো ১৩ বছর আগে সংঘটিত টা কি সত্যই ব্যর্থতা, নাকি সত্য উদ্ঘাটনে অনিহার বহিঃপ্রকাশ, সেটাও এক রহস্যের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।
তবে হ্যাঁ, ঘটনার দিন থেকেই পশ্চিমা মিডিয়া আল-কায়েদা নামক জঙ্গিগোষ্ঠীকে জড়িয়ে খবরাখবর প্রচার করতে শুরু করে। যেন ঘটনার পূর্বে থেকেই তারা সবকিছু অবগত ছিল। ঘটনার পর পরই শুরু হয় একপেশে মুসলিমবিরোধী প্রচার-প্রচারণা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে, আল কায়েদা তাদের কাছে প্রধান বিষয় নয়, সেটি একটি অবলম্বনমাত্র। তাদের আসল প্রতিপক্ষ সম্পূর্ণ মুসলিম জাতি। তাদের সেই উদ্ভট-কল্পিত সংবাদগুলোই এখন সারা বিশ্বে গৃহীত হয়ে যাচ্ছে। মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ধিক্কার দিচ্ছে আল কায়েদাসহ ধর্মের উন্মাদনায় সন্ত্রাস চালিয়ে যাওয়া অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে, আর পরোক্ষভাবে ঘৃণা বিস্তার করছে সম্পূর্ণ মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে। ঠিক এটাই চেয়েছিল পশ্চিমারা। তারা একে কাজে লাগিয়ে স্বার্থ উদ্ধার করতে এতটুকু কসুর করে নি। তারা বিশ্ববাসীকে বলছে- দ্যাখো! মুসলিমরা কত সন্ত্রাসী। এরা কত জঙ্গিবাদী, উগ্র। এরা পারে না এমন কোনো কাজ নেই। এদেরকে সব সময় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা উচিত। এই নিয়ন্ত্রণে রাখার অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র গত ১৩ বছরে মধ্যপ্রাচ্যে যে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে এসেছে, লক্ষ লক্ষ সাধারণ মুসলিম হত্যা করেছে, নারীদের বেইজ্জতি করেছে, নির্যাতন করেছে, শিশু হত্যা করেছে, বাড়ি-ঘর-স্থাপনা ধ্বংস করেছে তার কোনো শেষ নেই। আফগানিস্তান ও ইরাক এখন আর কোনো দেশ নয়, কোনো মানববসতি নয়, এ যেন শুধুই ধ্বংসস্তুপ। সে স্তুপের উপরে পতপত করে উড়ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পতাকা।
আজ ১৩ বছর পরও মানুষ ঐ হামলা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। কারণ, আজ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এই হামলার পরিষ্কার কারণ, হামলাকারী সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত, যথাযথ যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করতে সক্ষম হয় নি। সাভেটার্ন ঢুডে সাময়িকীর সম্পাদক এবং স্কলারস ফর ট্রুথ ফর নাইন/ইলেভেন সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফেটজার গত মঙ্গলবার একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেছেন। সেখানে বলা হচ্ছে- ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় নজিরবিহীন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আল কায়দার সাবেক নেতা ওসামা বিন লাদেন জড়িত ছিলেন না। আল কায়দা নয়, সুপরিকল্পিত ওই হামলার নেপথ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং তার একনিষ্ঠ দোসর ইসরাইল। পেন্টাগনের নব্য রক্ষণশীলরা মার্কিন ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে গোপন যোগসাজশ করে ৯/১১ নামে পরিচিত এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তিনি বলেন- ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, সিআইএ এবং নিউকন নামে পরিচিত পেন্টাগনের নীতিনির্ধারকরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
øায়ুযুদ্ধে সোভিয়েট ইউনিয়নের অধঃপতন হয় মূলত ১৯৭৯ সালে আফগান দখলকে কেন্দ্র করে। এসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য আফগানিদের পক্ষ হয়ে অর্থ, অস্ত্র, সামরিক প্রশিক্ষণ, মোজাহেদীনদের রিক্রুট, প্রচার-প্রচারণার কাজগুলো করে দিয়েছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েট ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বুকে তখন একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাদের অতীত কার্যকলাপের ফল কিছুটা বুমেরাং হয়ে দাঁড়ায়। তাদেরই অর্থ ও সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জেহাদীরা হয়ে উঠে তাদের প্রধান শত্র“। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেসকল মুসলিমকে সোভিয়েত পতনের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে সেই মুসলিমগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে লড়ে নি, লড়েছিল সোভিয়েট ইউনিয়নের বিপক্ষে। আর কমন ইন্টারেস্টভোগী যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছিল পুরোপুরি সমর্থন, শিখিয়েছিল অস্ত্র চালাবার প্রশিক্ষণ। এমনকি তাদেরকে অস্ত্র সরবরাহও করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র এটা বোঝেনি, অথবা বুঝলেও মূল্যায়ন করে নি যে, আফগানযুদ্ধে সে যাদেরকে ব্যবহার করছে তারা ব্যবহৃত হচ্ছে একটি আদর্শ দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে। সে আদর্শ হলো ইসলাম। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তখন ইসলামের আদর্শ দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করলেও ওসামা বিন লাদেনসহ অন্যান্য যোদ্ধারা কিন্তু জঙ্গি বা সন্ত্রাসী খেতাব পায় নি, কারণ সে যোদ্ধারা কার্যত ছিল আমেরিকার শুভাকাংখী। কিন্তু পরবর্তীতে ঐ আদর্শগত কারণেই যখন ঐ লোকগুলোই যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী হয়ে উঠলো, তখন তারাই হয়ে গেলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জঙ্গি, সন্ত্রাসী, উগ্রপন্থী ইত্যাদি।
যাই হোক, সোভিয়েত ধ্বংসের পর কথিত এই নতুন জঙ্গিদের ধ্বংস করার জন্য চালু করা হলো নতুন যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হলো তাদেরই প্রশিক্ষিত যোদ্ধা ওসামা বিন লাদেন। এই জঙ্গীদের কিন্তু কোন অস্ত্রের কারখানা ছিল না। তাদের হাতের বেশিরভাগ অস্ত্রই ছিল যুক্তরাষ্ট্রেরই দেওয়া এবং কিছুটা ছিল রাশিয়ার হাত থেকে হস্তগত করা। সেটা নিয়েই তাদের যাত্রা, জঙ্গিবাদের হাতে খড়ি। এখন যদি ৯/১১ হামলার পেছনে আল-কায়েদাকে দায়ী করা হয়, তাহলে প্রকারান্তরে সেই দায় কি আমেরিকার নিজের উপরই বর্তায় না? বিশ্ববিবেক কী বলে?
আল-কায়েদা, তালেবানের জন্ম ইতিহাস নিয়ে যারা শঙ্কায় ভুগে থাকেন তাদের জন্য বলছি- পৃথিবীতে আজ জঙ্গিবাদের নাম-গন্ধও থাকতো না যদি যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে মুসলিমদেরকে ব্যবহার না করতো। জঙ্গিবাদ আমেরিকার সৃষ্টি। জঙ্গিবাদী গ্র“পগুলো আমেরিকা অতি সুচতুরভাবে সৃষ্টি করেছে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করেছে। এরপর ৯/১১ এর মতো কোনো ঘটনা ঘটিয়ে ঐ তাদেরকেই ধ্বংস করার নামে দেশ দখলের উন্মাদনায় মুসলিমদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কারণ, জঙ্গি সৃষ্টির এই তত্ত্বকথাটি আমার নিজের নয়। স্বয়ং মার্কিন ফার্স্টলেডি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের স্বীকারোক্তি। চলতি বছর জুন মাসে ফক্স টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা স্বীকার করেন তিনি। আফগান যুদ্ধের সময় আল কায়েদা তৈরি, যুদ্ধের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ৫৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে বলে জানান তিনি। এখানে মনে রাখা দরকার যে, উপরোক্ত তথ্যটি কোনো সাধারণ ব্যক্তির মুখনিঃসৃত কথা নয়। কাজেই এটাকে ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। এই সেই আল কায়েদা যাকে যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করেছিল, অথচ আজ সেই আল কায়েদা ধ্বংস করার জন্য কতকিছু করা হচ্ছে। মহানাটকের মঞ্চস্থ করতে পশ্চিমারা কতই না পারদর্শী!
আজ আইএস জঙ্গি দমনের নামে যা করা হচ্ছে সে সম্পর্কেও ভাবনার অবকাশ রয়েছে। আইএসের উৎপত্তি হয়েছে ইরাকের মাটিতে। এক সময় আল কায়েদার অংশ ছিল সংগঠনটি। সেখান থেকে কেনই বা তারা বিচ্ছিন্ন হলো আর হঠাৎ করে আত্মপ্রকাশ করে মধ্যপ্রাচ্যে সাড়া ফেলে দিল তার মাহাত্ম বোঝা দুঃস্কর। আইএস এত শক্তি কোথা থেকে অর্জন করলো? জানা গেছে, সিরিয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ চলা যুদ্ধে বিদ্রোহী বাহিনীগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল আইএস। আর এটা দিনের আলোর মতো সত্য যে, এই বিদ্রোহীদেরকে যুদ্ধের প্রায় সমস্ত উপকরণ যুগিয়েছে পশ্চিমারা। কাজেই আইএস- এর শক্তির উৎস সেটাই যা আল কায়েদার শক্তির উৎস ছিল। আর সে কারণেই অত্যাধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র ব্যবহার করে সংগঠনটি সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে ও ইরাকের সরকারি সেনাবাহিনীকে নাজেহাল করতে পেরেছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে তারা ইরাক ও সিরিয়ার বিরাট ভূখণ্ড দখল করে কথিত খেলাফতের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ববাসীর চোখে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছে। অতঃপর যেই না কথিত খেলাফতের ঘোষণা আসলো, যুক্তরাষ্ট্র শুরু করলো বিমান হামলা। ওবামা বললেন- ‘যুক্তরাষ্ট্র তার নিরাপত্তার স্বার্থে ইরাকে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা হতে দেবে না’। এ যেন আফগান ও ইরাক যুদ্ধেরই পুনরাবৃত্তি।
এই ইরাকই সেই ইরাক যাকে পারমানবিক অস্ত্রের অজুহাত প্রদর্শন করে ধ্বংস্তুপে পরিণত করা হয়েছিল। একটি প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। স্বৈরশাসন হঠিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল গণতন্ত্র। আর আজ সেখানে না স্বৈরতন্ত্র আছে, না গণতন্ত্র আছে। আছে শুধু গণকবর। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা কি এবার আইএস-এর অজুহাতে সেটাও ধ্বংস করবে? হয়তো তাই হবে। এরপর পাঁচ বছর বা দশ বছর পর সাবেক কোনো আমেরিকান প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ সরকারি কর্মকর্তা ভারী কণ্ঠে বলবেন- ‘আইএস জঙ্গিকে আমরাই সৃষ্টি করেছিলাম।’
এখন কথা হলো, মুসলিম নামক এই জাতির এখনও কি সাবধান হবার সময় আসে নি? এখনও এদের শাসকদের বোধদয় হবার সময় হয় নি? মুসলিমদের নিয়ে পশ্চিমারা আজ ইঁদুর-বেড়াল খেলা খেলছে। চারিদিকে হাজারো চক্রান্তের জাল বিছিয়ে রেখেছে তারা। তারা আছে সুযোগের সন্ধানে। যখন সুযোগ পেয়েছে আফগান দখল করেছে, লাখে লাখে মুসলিম হত্যা করেছে, আজ সেখানে মুসলিমরা নিজ দেশে পরবাসীর মতো দিনাতিপাত করছে। আবার যখন সুযোগ পেয়েছে ইরাক দখল করেছে। দশ লক্ষ ইরাকীর প্রাণবায়ু নির্বাপিত করেছে অতি নিষ্ঠুরভাবে। অথচ সেখানে আজ অবধি কোনো পারমানবিক বোমার সন্ধান মেলে নি। সে যুদ্ধ ছিল মানবতার চূড়ান্ত লঙ্ঘন। কিন্তু মিথ্যা অজুহাত দিয়ে এতবড় অন্যায় করেও তারা দিব্যি বুক ফুলিয়ে চলছে। তাদের সামনে আঙ্গুল উঁচিয়ে কথা বলার সাহস কারও নেই। এরাই তারা যারা তাদের স্বার্থ বাস্তবায়ন করার অভিপ্রায়ে মিশর, লিবিয়া, সিরিয়া, লেবানন ইত্যাদি দেশে মুসলিমদের রক্ত ঝরিয়েছে। সিরিয়ায় মাত্র ২ বছরে কয়েক লক্ষ মানুষ জীবন হারিয়েছে শুধু পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রের কারণে। আর দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে প্রায় কয়েক কোটি মানুষ। পশ্চিমা সভ্যতা দাজ্জালের মানবতাবোধ নেই, ন্যায়-অন্যায়বোধ নেই। কারণ এর এক চোখ কানা। এদের কাছে শত্র“-বন্ধু ভেদাভেদ নেই। এরা এদের স্বার্থে আজকের শত্র“কে কাল বুকে টেনে নেবে, আজকের বন্ধুকে কাল শত্র“তে পরিণত করবে। বেন আলী, গাদ্দাফী, বাসার আল আসাদ তার প্রত্যক্ষ উদাহরণ। তাই এখনও সময় আছে, মুসলিমদেরকে অতীত থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে যারা এসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তথা জেহাদের নাম করে সহিংসতার পথে ধাবিত হচ্ছে, পশ্চিমাদের সহজ ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হচ্ছে তাদেরকেও বুঝতে হবে- সত্যদীনকে প্রতিষ্ঠার এগুলো সঠিক পথ নয়। সমস্ত পৃথিবী আজ পশ্চিমা বস্তুবাদী সভ্যতার করতলগত। ‘মুসলিম’ নামসর্বস্ব জনসংখ্যাসহ সমস্ত মানবজাতি পশ্চিমাদের পায়ে সাজদায় প্রণত হয়ে আছে। কাজেই এখানে ওখানে বোমা মেরে, সাধারণ মানুষ হত্যা করে, পশ্চিমাদের ট্যাংক-যুদ্ধবিমানের সামনে গুলতি হাতে দাঁড়িয়ে কোনো লাভ হবে না। কিছু তো হবে না-ই বরং তাদের লাভ হবে এবং হচ্ছে। মুসলিমদের ‘সন্ত্রাসী’, ‘মৌলবাদী’, ‘চরমপন্থী’, ‘জঙ্গী’ ইত্যাদি বহুবিধ নামে আখ্যায়িত করে সমস্ত মানবজাতিকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত কোরে দিচ্ছে। এমনকি মুসলিমদের মধ্যেও কিছু আবেগী ব্যক্তি আছেন যাদের হিতাহিত বোধ লুপ্ত। কোথায় থেকে একটি ভিডিও আপলোড হলো, কে করলো, কেন করলো, তাদের উদ্দেশ্য কী, আদর্শ কী, ঠিকানা কী ইত্যাদি কোনোকিছু না জেনে, না বুঝে, যাচাই না করে তাতে সাড়া দেওয়া কোনো সচেতন মুসলিমের কাজ নয়। যাই হোক, এখন প্রয়োজন ঐক্য। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, তাদের মদদদাতা, গড ফাদার, কুশীলব অপশক্তিকে রুখতে হলে সকল মত-পথ ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে। যতদিন মুসলিম জাতির মধ্যে অনৈক্য থাকবে ততদিন এভাবেই কুশীলবরা সেই দুর্বলতাকে ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ হাসিল করবে, মুসলিমদেরকে ব্যবহার করে যাবে। তাই এখন প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
বিষয়: বিবিধ
১৬৩৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ ।
জাযাকাল্লাহ খায়ের
আজ আমরা আরাম আয়েশ করে দিন কাটাচ্ছি। আর একদল আমাদের দায় কাঁধে নিয়ে জঙ্গি উপাধিতে ভূষিত হচ্ছে। আমরাও সাথে সাথে কেউ হা বলছি, কেউ নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকছি আবার কেউ মনে মনে কষ্ট পাচ্ছি। আজ আমরা দলের ইসলাম মানছি। যে যেভাবে পারছি নিজের মত করে দলিল পেশ করছি। আর সাধারণ মুসলমানরা আজ এতই বেখেয়াল যে, জীবনে কখনো তার জীবনবিধান পড়েও দেখিনি বা জানারও প্রয়োজন অনুভব করছে না, তাতে কি বলা বা লেখা আছে। আজ সবার মন এমনি স্থির যে, কোন রকম নামাজ, রোজা, দান-খয়রাত করে দিন পার করতে পারলেই হলো। উপর ওয়ালাতো সব দেখতেছেন...
মন্তব্য করতে লগইন করুন