বৌদ্ধধর্মের উপর নাস্তিক্যের অপবাদ আরোপের কারণ কি?
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:৩৪:১২ দুপুর
প্রথমেই বলে রাখছি- ধর্মীয় জ্ঞানের ব্যাপারে আমার সীমাবদ্ধতা প্রকট। আমি কোনো গবেষকও নই, সামান্য লেখালেখি করি। আমি কেবল প্রতিটি ধর্মের অন্তর্নিহিত সত্যগুলিকে খুঁজে ফিরছি। কারণ স্রষ্টার অপার মহিমায় আমি এটুকু বুঝতে সক্ষম হয়েছি যে, মানবজাতির বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে স্রষ্টার বিধানই হতে পারে মুক্তির আশ্রয়। ধর্মবর্জিত পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুগত হয়ে মানুষ আজ ধ্বংসের দোরগোড়ায় উপনীত। এখান থেকে একমাত্র ধর্মের শাশ্বত বিধানই কেবল মানবজাতিকে মুক্তি দিতে পারে। সত্যের এই শাশ্বত রূপ সব ধর্মেই আছে, কিন্তু বিকৃতির অতল গহ্বর থেকে তা উদ্ধার করতে গলদঘর্ম হতে হয়। সে লক্ষ্যেই আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস।
পৃথিবীতে প্রচলিত ধর্মগুলোকে জানতে গিয়ে প্রথম যে বাধাটির মুখোমুখি হয়েছি তাহলো- জটিলতা। ধর্মকে এতটাই জটিল করে ফেলা হয়েছে যে, সাধারণ কোনো মানুষের মাধ্যমে এর সামগ্রিক রূপ বুঝতে পারা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম নয়, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইসলাম ইত্যাদি সব ধর্মেই অত্যাধিক জটিলতার সৃষ্টি করা হয়েছে। করেছে ধর্মব্যবসায়ী পুরোহিত শ্রেণিটি। তাদের ইতিহাস ঘাটলেই এ কথার সত্যতা প্রমাণিত হয়। ধর্মকে জটিল ও সাধারণ মানুষের বোধগম্যতার বাইরে নিয়ে গিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে তৈরি করেছে বাণিজ্যনিষদ বা সিন্ডিকেট। প্রতিটি ধর্মের ধর্মজীবী সিন্ডিকেট জটিলতার বেড়াজালে আবদ্ধ করে রেখেছে তাদের নিজ নিজ ধর্ম ও জাতিকে।
বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে আমার কৌতুহল সীমাহীন। মানবজাতির মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি ও অহিংসার মন্ত্র শেখায় বৌদ্ধধর্ম। বেশ কিছুদিন হলো আমি বৌদ্ধধর্ম বিষয়ক বই-পুস্তক, ম্যাগাজিন, ওয়েবসাইট, বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত বৌদ্ধধর্ম বিষয়ক পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি পড়াশোনা করছি। উদ্দেশ্য- বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্মবিশ্বাসটির মৌলিক বিষয়গুলি জানা এবং সেটাকে মানবতার কল্যাণে কাজে লাগানো। কিন্তু পড়াশোনা করতে গিয়ে আমি কিছু অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই। একটি ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলি নিয়ে মতভেদ থাকার কথা নয়, অথচ বৌদ্ধধর্মের ক্ষেত্রে যেন উল্টোটা ঘটেছে। প্রধান বিষয়গুলি জানতে গিয়েও আমাকে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। মাঝে মাঝেই পতিত হয়েছি বৈপরীত্য আর অস্পষ্টতার ভ্রান্তিতে। মতভেদও দেখছি বিস্তর। এটা শাশ্বত যে, সত্যমাত্রই সরল আর মিথ্যামাত্রই জটিল। তাই আমি খোঁজার চেষ্টা করছি ধর্মের সহজ-সরল সত্য কল্যাণময় রূপ, যা সব মানুষের বোধগম্য হবে। সবচেয়ে যেটা আশ্চর্যের বিষয় মনে হলো সেটা হচ্ছে, ৪র্থ/৫ম শ্রেণির বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা বইয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামনে যেভাবে ধর্মকে উপস্থাপন করা হয়েছে তা আমার নিজের কাছেই দুর্বোধ্য লেগেছে, ঐ বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা সেটাকে কীভাবে আত্মস্থ করছে সেটা আমার সামনে বিরাট এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে আছে। বাচ্চাদের পাঠপুস্তক ছাড়াও অন্যান্য গ্রন্থেও বৌদ্ধধর্মের আলোচনা এতটাই উচ্চমার্গীয় যে, আমার সীমাবদ্ধ জ্ঞান তার মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। পৃথিবীর প্রধান প্রতিটি ধর্মই স্রষ্টা কর্তৃক প্রেরিত বা নবী-রসুল-অবতার অর্থাৎ মহামানবদের মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছে। মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনধারণ নিশ্চিত করার জন্য স্রষ্টা সেসব ধর্মে সময়োপযোগী পথ-নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। সেগুলোকে মেনে চলে মানুষ শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ লাভ করেছে। তাই সনাতন, এসলাম বা খ্রিস্টধর্মের দিকে নজর দেওয়া মাত্রই একজন স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে পাই। কিন্তু ব্যতিক্রম বৌদ্ধ ধর্ম। সাধারণভাবে বলায় হয়, গৌতমবুদ্ধ নিরীশ্বরবাদী ছিলেন এবং বৌদ্ধ ধর্ম কোনো ঐশ্বরিক ধর্ম নয়। কারণ, কোনো বস্তু বা গ্রন্থকে বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই স্বতঃপ্রমাণ হিসেবে না মেনে নেবার উপদেশ দিয়েছেন মহামতি গৌতম বুদ্ধ। তিনি বলেছেন, যেসব বিষয়ের সঙ্গে মানুষের জীবন গঠনের সম্পর্ক নেই, সেই সব বিষয়ে চিন্তা করারও প্রয়োজন নেই। তাই বৌদ্ধ ধর্মকে কর্মবাদসর্বস্ব একটি উন্নত দর্শন হিসেবেই দাবি করে থাকে অধিকাংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। বৌদ্ধ ধর্মে বলা আছে কর্মই ধর্ম, মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্য বিধাতা। এখানে ঈশ্বরের কোনো অস্তিত্ব নেই। এখানে যুক্তির ও বাস্তবতার স্থান দেওয়া হয়েছে সবার উপরে। আর তা করতে গিয়ে স্বয়ং ঈশ্বরকেও অস্বীকার করতে কসুর করা হয় নি। কিন্তু আসলেই কি তাই? নাকি অন্যান্য ধর্মের বিকৃতির মতো বৌদ্ধ ধর্মেও সময়ের স্রোতে এত বড় বিকৃতি স্থান করে নিয়েছে? বাস্তবেই কি বৌদ্ধ ধর্ম শুধুই একটি নিরীশ্বরবাদী দর্শনের নাম, নাকি ঈশ্বরবাদী ধর্মের উপর নিরীশ্বরবাদের অপবাদ আরোপ করা হয়েছে?
বৌদ্ধ ধর্মে কি স্রষ্টাকে অস্বীকার করা হয়েছে?
এ বিষয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে আমি পূর্বে আলোচিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নাস্তিক্যবাদী ধ্যান-ধারণার বিপরীত চিত্র দেখতে পাই। বুদ্ধের এমন অনেক সুত্র আছে যেখানে স্বর্গের দেবতার এবং স্বর্গের কথা স্পষ্ট উল্লেখ আছে যেমন- গুরুত্বপূর্ণ রতন সুত্রে, মহামঙ্গল সুত্রে। বুদ্ধের বাণী ছাড়াও এদেশের বৌদ্ধদের শিরমনি মহামান্য সাধনান্দ মহাস্থবির উনার ধর্ম দেশনার সব বইগুলাতে স্বর্গ নরকের কাহিনী বর্ণনা করেছেন। যেখান থেকে বোঝা যায়, মহামতি গৌতম বুদ্ধ স্বর্গের কথা বলেছেন।পৃথিবীর ধর্মভূমি নামে খ্যাত ভারতবর্ষে গৌতম বুদ্ধের জন্ম। মায়ের দাঁড়ানো অবস্থায় তাঁর জন্ম, জন্মের পর উত্তর দিকে সপ্তপদ্মের উপর সপ্তপদ গমন, তর্জনী উত্তোলন করে-“অগ্গোহমস্মি লোকস্স, জেট্ঠোহমস্মি লোকস্স, সেট্ঠোহমস্মি লোকস্স’ অয়ং অন্তিম জাতি নত্থিদানি পুনব্ভবো’তি”-অর্থাৎ আমিই জগতে অগ্র, জ্যেষ্ঠ ও শ্রেষ্ঠ বলে তিনিি সিংহ নাদ করেন। তাঁর মাতৃগর্ভে উৎপত্তি, জন্ম, সংসারত্যাগ, বুদ্ধত্বলাভ, ধর্মচক্র প্রবর্তন, আয়ুসংস্কার ত্যাগ ও পরিনির্বাণকালে দশহাজার চক্রবালের কম্পন প্রভৃতি বহু অলৌকিক ঘটনার বিষয় বৌদ্ধ-শাস্ত্রে পাওয়া যায়। গৌতম বুদ্ধ পরকাল সম্বন্ধে তাঁর শিষ্যদের বহুকিছু বলে গেছেন। তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন- পরকাল নির্ভর করে মানুষের ইহজন্মের কর্মের উপর। মৃত্যুর পর মানুষ ৩১ লোকভুমির যে কোনো একটিতে গমন করে। এই ৩১ লোকভুমি ৪ প্রকারের হয়ে থাকে। যথা- অপায়, স্বর্গ, রূপব্রহ্মভূমি এবং অরূপব্রহ্মভূমি। অপায় হলো আবার ৪ ধরনের অর্থাৎ তীর্যক (পশু-পাখি কুল), প্রেতলোক (প্রেত-প্রেতনী), অসুর (অনাচারী দেবকুল) ও নরক (নিরয়)। স্বর্গ হলো ৭ ধরনের অর্থাৎ মনুষ্যলোক, চতুর্মহারাজিক স্বর্গ, তাবতিংশ স্বর্গ, যাম স্বর্গ, তুষিত স্বর্গ, নির্মানরতি স্বর্গ, পরনির্মিত বসবতি স্বর্গ। আবার রূপব্রহ্মভূমি ১৬ প্রকারের এবং অরূপব্রহ্মভূমি ৪ প্রকারের। অর্থাৎ বুদ্ধের শিক্ষা অনুযায়ী পরকাল হয় মোট ৩১ প্রকার। এই ৩১ প্রকার লোকভুমির উপরে সর্বশেষ স্তর হচ্ছে নির্বাণ বা পরম মুক্তি। ইহজন্মে মানুষ যদি মাতৃহত্যা, পিতৃহত্যা, গুরুজনের রক্তপাত ঘটায় তাহলে মৃত্যুর পর সেই মানুষ চতুর অপায়ে (তীর্যক, প্রেতলোক, অসুর, নরক) জন্মগ্রহণ করে, আর ইহজন্মে মানুষ যদি ভালো কাজ করে তাহলে মৃত্যুর পর সেই মানুষ বাকি ২৮ লোকভুমিতে গমন করে। বৌদ্ধ ধর্ম যদি নাস্তিক্যবাদীই হোয়ে থাকে তাহলে গৌতম বুদ্ধের জীবনীতে এত অলৌকিক ঘটনার সমাহার কেন? আর পরকালের এই ৩১ প্রকারের লোকভূমিরই বা কী হেতু? যারা বৌদ্ধধর্মকে নিরীশ্বরবাদী আখ্যা দেন তাদের নিকটে এই প্রশ্নের সরল উত্তর আশা করছি।
স্বামী বিবেকানন্দের দৃষ্টিতে গৌতম বুদ্ধ অন্যান্য ধর্মের অবতার বা মহামানবদের মতোই চিত্রিত হয়েছেন। গৌতম বুদ্ধকে নবী ঈসার (আ সঙ্গে তুলনা কোরে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, “ইহুদি ধর্মের সহিত খ্রিস্টানধর্মের যে সম্বন্ধ, হিন্দুধর্ম অর্থাৎ বেদবিহিত ধর্মের সহিত বর্তমানকালের বৌদ্ধধর্মের প্রায় সেইরূপ সম্বন্ধ। যীশুখ্রিস্ট ইহুদি ছিলেন ও শাক্যমুনি (বুদ্ধদেব) হিন্দু ছিলেন। শাক্যমুনি নতুন কিছু প্রচার করিতে আসেন নাই। যীশুর মতো তিনিও (পূর্ব ধর্মমতকে) ‘পূর্ণ করিতে আসিয়াছিলেন, ধ্বংস করিতে আসেন নাই।’ [১৮৯৩ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর শিকাগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বধর্ম মহাসভায় প্রদত্ত বক্তৃতা]। গৌতম বুদ্ধের নাস্তিক হওয়ার বিরুদ্ধে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর ‘ভগবান বুদ্ধ ও তাঁর বাণী’ বইতে লিখেছেন যে, শ্রী গৌতম বুদ্ধ তাঁর যুগে আবির্ভূত হোয়ে তাঁর জাতির উপর যেরূপ প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হোয়েছিলেন, সে যুগের কোন নাস্তিকের পক্ষে তা ছিল অসম্ভব-কল্পনার অতীত।’
স্বামী বিবেকানন্দের ছুঁড়ে দেওয়া এই প্রশ্নটিরও যথপোযুক্ত জবাব প্রাজ্ঞজনদের নিকট আশা করছি। নাস্তিক্যবাদ কখনও দৈব শক্তিতে বিশ্বাস করে না। কোনো জ্যোতির্বিদ্যা, গণনা, ভবিষ্যদ্বাণীতে বিশ্বাস নাস্তিক্যের পরিপন্থী। অথচ মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবনীতে এমন বহু ঘটনা আমরা দেখতে পাই। যেমন বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্রে গৌতম বুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণীর কথা উল্লেখ আছে, যা কোনো নাস্তিকের পক্ষে করা শোভা পায় না এবং তাদের দ্বারা সম্ভবও নয়।
প্রখ্যাত ভাষাবিদ, ঐতিহাসিক ও প্রতœতত্ত্ববিদ রাহুল সংকৃত্যায়ন শ্রীলঙ্কার বৈশালী নগরের মাটির তলায় প্রাপ্ত বুদ্ধের জীবনীমূলক একগুচ্ছ শিলালিপির পাঠোদ্ধার কোরেছেন। ঐ শিলালিপিতে গৌতম বুদ্ধের একটি ভবিষ্যদ্বাণীর উল্লেখ পাওয়া যায়। ঐ শিলালিপি হোতে জানা গেছে যে, গৌতমবুদ্ধ এক প্রশ্নের জবাবে তাঁর শিষ্যকে জানান যে, ‘তিনিই একমাত্র মার্গ্যাধ্যায়ী নন; তাঁর পূর্বেও মার্গ্যাধ্যায়ী এসেছিলেন এবং পরেও আসবেন (আর্য-রহস্য: নাসির আহমেদ)।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, রাহুল সংকৃত্যায়ন কর্তৃক আবি®কৃত এই তথ্যের সত্যতা শ্রীলঙ্কা থেকে প্রাপ্ত অপর এক প্রামাণিক গ্রন্থ ঞযব এড়ংঢ়বষ ড়ভ ইঁফফযধ নু চধঁষ ঈধৎঁং হতেও সুপ্রতিষ্ঠিত। সেখানে লিখিত আছে: শিষ্য আনন্দ গৌতম বুদ্ধকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার মৃত্যুর পর কে আমাদেরকে উপদেশ দিবে? উত্তরে বুদ্ধ জানালেন:
ঞযব ইষবংংবফ ঙহব ৎবঢ়ষরবফ: “ও ধস হড়ঃ ঃযব ভরৎংঃ ইঁফফযধ যিড় পধসব ঁঢ়ড়হ বধৎঃয, হড়ৎ ংযধষষ ও নব ঃযব ষধংঃ. ওহ ফঁব ঃরসব ধহড়ঃযবৎ ইঁফফযধ রিষষ ধৎরংব রহ ঃযব ড়িৎষফ, ধ ঐড়ষু ঙহব, ধ ংঁঢ়ৎবসবষু বহষরমযঃবহবফ ঙহব, বহফড়বিফ রিঃয রিংফড়স রহ পড়হফঁপঃ, ধঁংঢ়রপরড়ঁং, শহড়রিহম ঃযব ঁহরাবৎংব, ধহ রহপড়সঢ়ধৎধনষব ষবধফবৎ ড়ভ সবহ, ধ সধংঃবৎ ড়ভ ধহমবষং ধহফ সড়ৎঃধষং. ঐব রিষষ ৎবাবধষ ঃড় ুড়ঁ ঃযব ংধসব বঃবৎহধষ ঃৎঁঃযং যিরপয ও যধাব ঃধঁমযঃ ুড়ঁ. ঐব রিষষ ঢ়ৎবধপয যরং ৎবষরমরড়হ, মষড়ৎরড়ঁং রহ রঃং ড়ৎরমরহ, মষড়ৎরড়ঁং ধঃ ঃযব পষরসধী, ধহফ মষড়ৎরড়ঁং ধঃ ঃযব মড়ধষ, রহ ঃযব ংঢ়রৎরঃ ধহফ রহ ঃযব ষবঃঃবৎ. ঐব রিষষ ঢ়ৎড়পষধরস ধ ৎবষরমরড়ঁং ষরভব, যিড়ষষু ঢ়বৎভবপঃ ধহফ ঢ়ঁৎব; ংঁপয ধং ও হড়ি ঢ়ৎড়পষধরস.” (ঞযব এড়ংঢ়বষ ড়ভ ইঁফফযধ নু চধঁষ ঈধৎঁং, চধমব হড়. ২১৭১)
অর্থাৎ আমিই প্রথম বুদ্ধ নই এবং শেষ বুদ্ধও নই। যথাসময়ে এই ধরাপৃষ্ঠে আর একজন বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটবে। তিনি হবেন অতি পবিত্র এবং সর্বাধিক আলোকপ্রাপ্ত। তিনি বিভূষিত হবেন গভীর প্রজ্ঞাসম্পন্ন জীবনপদ্ধতি দ্বারা, তিনি হবেন মাঙ্গলিক, বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে নিগূঢ় জ্ঞানের অধিকারী, মানবজাতির জন্য একজন অতুলনীয় নেতা, সকল মৃত্যুহীন সত্ত্বা এবং মরণশীলের প্রভু। তিনি তোমাদের সামনে প্রকাশ করবেন সেই অভিন্ন মহাসত্য যা আমি তোমাদের কাছে তুলে ধরেছি। তিনি যে ধর্ম প্রচার করবেন তা হবে সৃষ্টি, পরিণতি ও লক্ষ্যে গৌরবময়, চেতনা ও বাক্যশৈলীতে মহিমাময়। তিনি এমন এক ধর্ম প্রচার করবেন যা হবে নিখুঁত ও খাঁটি, ঠিক যেমন নিখুঁত ও খাঁটি হোচ্ছে আমার প্রচারিত ধর্ম।
আনন্দ জানতে চাইলেন, “আমরা তাঁকে কিভাবে চিনতে পারবো?”
বুদ্ধ বললেন, “তিনি মৈত্তেয় (বা মৈত্রেয়) নামে পরিচিত হবেন।”
বৌদ্ধ ধর্মের অপর প্রামাণ্য গ্রন্থ দিঘানিকায়াতেও ঘোষণা করা হোয়েছে যে, ‘মানুষ যখন গৌতম বুদ্ধের ধর্ম ভুলে যাবে তখন আর একজন বুদ্ধ আসবেন, তাঁর নাম হবে মেত্তেয় অর্থাৎ শান্তি ও করুণার বুদ্ধ।’
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ গবেষকগণ লিখে গেছেন, এখানে মৈত্রেয় বলতে আল্লাহর শেষ রসুল মোহাম্মদ (দ) কে বোঝানো হয়েছে। এমন ভবিষ্যদ্বাণী কি কোনো নিরীশ্বরবাদীর পক্ষে করা সম্ভব? সম্ভব নয়। কারণ, মানুষ ভবিষ্যৎ জানে না, শত চেষ্টা করলেও সে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে না, যতক্ষণ না ঈশ্বর তাকে ভবিষ্যতের জ্ঞান দান করেন। কাজেই এটাই কি প্রমাণিত হয় না যে, গৌতম বুদ্ধ আস্তিক ছিলেন, তাঁর প্রচারিত ধর্ম মানবতাবাদী ধর্ম বটে, তবে স্রষ্টাহীন নয়?
সকল ধর্মের অনুসারীদের উচিৎ অন্য ধর্মগুলি সম্পর্কে সঠিক তথ্যগুলি জানা, এতে অনেক ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়। পরিশেষে আমি অকপট হৃদয়ে বলতে চাই যে, বৌদ্ধ ধর্মে নিরীশ্বরবাদ নিয়ে আমি দ্বিধান্বিত। কেউ আমার দ্বিধা দূর করতে এগিয়ে আসবেন এ প্রত্যাশা নিয়ে এখানেই শেষ করছি।
বিষয়: বিবিধ
২৪৪৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কালের ব্যবধানে ধর্মগ্রন্থগুলো এবং ধর্ম উদ্ভাবকদের সম্পর্কে সেই ধর্মের ধর্মাম্বলীরা (ভক্তরা) এমন সব গালগপ্প আর এমন সব অলীক কাহিনীর রচনা করে নিয়েছেন যা পড়ে সেই মহান ধর্ম উদ্ভাবক এর প্রকৃত পরিচয় পাওয়াই হয়েছে কষ্টকর। শুধুকি তাই ভক্তদের নির্যাতনে প্রকৃত জ্ঞান, প্রবর্তকের মুলমন্ত্র-ই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আদৌও অনুমান করা যায় না আসলে সেই সব ধর্ম প্রবর্তকরা কি ছিলেন, কে ছিলেন? এবং তাদের গ্রন্থগুলোতে কি ছিল? ভক্তদের জুলুম থেকে গৌতম বুদ্ধও বাদ পড়েননি। যে মানুষটি ভগবত ধর্মের বহুঈশ্বরবাদ ধারনা থেকে মুক্ত হয়ে, ভগবত ধর্মের মারাত্মক মারাত্মক দোষ-ত্রুটিগুলো দূর করতে সফল হয়েছিলেন। সেই সত্যসন্ধানী মানুষটির নীতিকে চার শতকের ব্যবধানে নিজ মনের ইচ্ছা মত পাল্টিয়ে নিয়েছে তার অনুসারীরা। বলা যেতে পারে বুদ্ধের প্রতি তার ভক্তের অন্ধভালবাসা আর চরম শ্রদ্ধবোধই তার ভক্তদেরকে এমন কাজে উ ত্সাহিত করেছিল। তা না হলে, যে মানুষটি নিজেকে কখনো স্রষ্টা বলে দাবি করেননি বা স্রষ্টার প্রেরিত বলেও দাবি করেননি, সেই সত্যসন্ধানী মানুষটার মূলনীতিকে নিজেদের ইচ্ছামত রদবদল করে নিয়ে মানুষটাকে স্রষ্টার আসনে বসিয়ে জগতের নিয়ন্তা বলে আখ্যায়িত করে সদাপ্রভু বিশ্ব স্রষ্টার পদে নিযুক্ত করার যৌক্তিকতা কোথায়? কনিস্কের যুগে বৌদ্ধ ধর্মের সভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের এক বিরাট সম্মেলন কাশ্মীরে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয় যে, বৌদ্ধ প্রকৃতপক্ষে স্রষ্টার দৈহিক প্রকাশ। অন্য কথায় স্রষ্টা বৌদ্ধের দেহে রুপান্তরিত হন। এমন বাক্য অন্ধ ভক্তদের থেকেই আসা করা যায়, শুদ্ধ বুদ্ধির মহাত্মা সিদ্ধার্থ বুদ্ধের কাছে থেকে নয়। ভিক্ষু আনন্দ সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, "আপনার মৃত্যুর পর কে আমাদেরকে উপদেশ দেবে?" আনন্দের প্রশ্নের জবাবে সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধ বললেনঃ
"আমিই একমাত্র বুদ্ধ বা শেষ বুদ্ধ নই। যথাসময়ে আর একজন বুদ্ধ আসবেন- আমার চেয়েও তিনি পবিত্র ও অধিকতর আলোকপ্রাপ্ত...তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্মমত প্রচার করবেন।"
ভিক্ষু আনন্দ জিজ্ঞেস করলেনঃ "তাঁকে আমরা কিভাবে চিনতে পারবো?"
বুদ্ধ বললেনঃ "তাঁর নাম হবে মৈত্রেয়।"
বৌদ্ধ ধর্মের 'দিঘা নিকারা' তে মুহাম্মদ (স) সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
"মানুষ যখন গৌতম বুদ্ধের ধর্ম ভুলিয়া যাইবে তখন আর একজন বুদ্ধ আসবেন, তাঁহার নাম মৈত্রিয়। অর্থাত্ শান্তি ও করুণার বুদ্ধ।"
এখানে মৈত্রেয় শব্দ দ্বারা বুঝায় শান্তি বা করুণার আধার। আর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন রাহমাতুলি্লল আলামীন অর্থাত্ বিশ্বের রহমত স্বরুপ, আশীর্বাদ স্বরুপ। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ পাক এরশাদ করলেনঃ
"আমি (আল্লাহ্) তো তোমাকে (হয়রত মুহাম্মদ সাঃ) বিশ্বের জন্য আশীর্বাদ হিসাবে পাঠিয়েছি।"
" অবশ্যই তোমাদের মধ্যে থেকে তোমাদের কাছে এক রাসূল আবির্ভূত হয়েছেনঃ তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক; সে তোমাদের মঙ্গলকামী, বিশ্বাসীদের জন্য তিনি দয়ার্দ ও পরম দয়ালু।" সূত্রঃ সূরা তওবা আয়াত ১২৮
অনেক নাস্তিক আছে যারা কিনা নাস্তিক জাতীর আদর্শ হিসেবে মহামতি গৌতম বুদ্ধের ছবি তাদের ফেসবুক প্রোফাইলে দিয়ে থাকে তাদের এ লেখাটা পড়া উচিত্।
হয়তবা একসময় ছিল ।বৌদ্ধ ধর্মে জীবহত্যা মহাপাপ অথচ এই বৌদ্ধদের কাছে রোহিঙ্গা হত্যা যেন একটা মহা পূণ্য !
মন্তব্য করতে লগইন করুন