ইসরাইলি আগ্রাসন ও আরবদের চরিত্র
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ০৯ আগস্ট, ২০১৪, ১২:২৯:২৭ দুপুর
অসহায় ফিলিস্তিনিদের উপর ক্রমাগত নির্দয়-নির্মম ও হৃদয়বিদারী আগ্রাসন চালিয়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধকে হত্যা করছে ইসরাইলি বাহিনী। পশ্চিমাদের একচেটিয়া মদদপুষ্ট এই দেশটিকে হত্যালীলা থেকে বিরত করা যেন দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। অনেকে মনে করেন, ইসরাইলের এই আগ্রাসন ও বিশ্বজনমতের প্রতি এত বড় ধৃষ্টতার ক্ষমতা ইসরাইলের নিজের নয়। এটা কেবল সম্ভব হচ্ছে কথিত বিশ্ব মানবতার ফেরিওয়ালা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ গুটিকতক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আস্কারা পেয়ে। আমিও তা-ই মনে করি। এটা এক নির্মম সত্য, যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু এখানে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা থেকে যায়। মধ্যপ্রাচ্যে মোসলেম দেশগুলোতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পেছনে সাধারণত একচেটিয়াভাবে পশ্চিমা মোড়ল ও তাদের মদদপুষ্ট ইসরাইলকে দায়ী করা হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? একবার ভালোভাবে চেয়ে দেখুন তো, মধ্যপ্রাচ্যের এত অশান্তি, যুদ্ধ, হানাহানি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের দায় আরবদের নিজেদের উপরও বর্তায় কি না?
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল নামের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্রটি প্রবল জাতীয়তাবাদের উপরে প্রতিষ্ঠিত। পশ্চিমা লবি ছাড়াও তাই ইসরাইলের অন্যতম একটি শক্তি হলো ঐক্য। প্রবল জাতীয়তার টানে সারা পৃথিবী থেকে দলে দলে ইহুদিরা এসে ইসরাইলে একত্রিত হয়েছে, আজও হচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য অতি পরিষ্কার। পুরো ফিলিস্তিন ভূখণ্ড তাদের প্রয়োজন। পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে তারা তাদের সামনে নতমস্তকে দেখতে চায়। এ উদ্দেশ্য নিয়েই তারা এগোচ্ছে। অতঃপর বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা বলা অযৌক্তিক হবে না যে, তাদের উদ্দেশ্য অর্জন অনেকাংশেই হয়ে গেছে। ঠিক যতটা অর্জন হলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে গরু বানিয়ে হালচাষ করা যায় ততটুকু হয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হলো মাত্র এক কোটি জনসংখ্যার এই জাতিটি যখন পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তখন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য আরব দেশগুলো কী করছে? তাদের জাতীয়তাবাদের কী অবস্থা? তাদের মুসলমানিত্বের কী হাল? ধর্মের অন্যতম শিক্ষা- ‘ঐক্যের’ ব্যাপারে তাদের অবস্থান কোথায়?
প্রশ্নগুলো একদিকে যতটা যৌক্তিক অন্যদিকে ততটাই হাস্যকর। যৌক্তিক এ কারণে যে, আরবরা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে। মধ্যপ্রাচ্যে বেশ কিছু আরব দেশ আছে যে দেশে শতকরা একশ’ জনই মুসলমান। এই দেশগুলোর নেতৃস্থানীয় রাজনীতিবিদ, সরকার, সেনাপ্রধান, বুদ্ধিজীবী, বিশেষজ্ঞ থেকে আপামর জনতা, সবার দাবি তারা মুসলমান। এদের অনেকেই আছেন যারা নামাজ পড়তে পড়তে কপালে কাল দাগ ফেলে দিয়েছেন। তাদের এবাদত, উপাসনা, ধর্মীয় উৎসব, অনুষ্ঠানাদির কোথাও কোনো ঘাটতি নেই। কাজেই তারা সর্বদা স্বধর্মের মানুষের সাথে সুদৃঢ় ঐক্যই কায়েম রাখবে এবং একে অপরের বিপদে-আপদে এগিয়ে আসবে- এটাই কাম্য। কিন্তু সেটা হাস্যকর বিষয় হয়ে দাঁড়ায় যখন দেখা যায়, ঐক্যের ব্যাপারে এ জাতি ধর্মের বিধান থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থিত। তাদের ঐক্যের ভিত্তি ধর্মীয় আদর্শ নয়, ভৌগোলিক জাতীয় স্বার্থ। আর এখানেই তাদের ধর্মের জিগির মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়। প্রমাণিত হয় যে, তাদের আসল উদ্দেশ্য হলো ধর্মের ছদ্দবেশে থেকে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা। এটা করতে গিয়ে কার স্বার্থে আঘাত লাগলো, কে মরল কে বাঁচলো, কে মোসলেম কে অমোসলেম, যালেম নাকি মজলুম তা থাকে বিবেচনার বাইরে।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনে বর্বরোচিত ইসরাইলি আগ্রাসন চলছে। বেড়েই চলেছে লাশের সারি। এ সারি থেকে পিছিয়ে নেই নারী-শিশু বা বৃদ্ধরাও। মাঝে মাঝে যুদ্ধবিরতি নামক নাটকের মঞ্চস্থ হচ্ছে বিশ্ববাসীর দৃষ্টিকে আড়াল করার চক্রান্ত নিয়ে। অতঃপর সেটা ভাঙা হচ্ছে মিথ্যা অজুহাত প্রদর্শন করে। এদিকে পশ্চিমা ভাবাদর্শের বৃহৎ মিডিয়াগুলো বেশ সুচারুভাবে ইসরাইলকে বাঁচিয়ে চলেছে, আর সব অপরাধের দায় হামাসের ঘাড়ে চাপাচ্ছে। এটা আজকে নতুন নয়, মোসলেমদের ব্যাপারে পশ্চিমা মিডিয়ার এটা জাতীয় চরিত্র। ওদিকে জাতিসংঘের মানবতা, মানবাধিকার আর আইন-আদালতের দরজা রয়েছে বন্ধ। আর যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ পশ্চিমা বিশ্বের চোখে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার ছাড়া আর কিছুই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। ফিলিস্তিনের সাধারণ বেসামরিক মানুষের আর্তনাদ তাদের কানে যাচ্ছে না। নীরব-নিথর, বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত ও মৃতপ্রায় শিশুর বীভৎস দেহের ছবি তারা দেখতে পাচ্ছে না। ইসরাইলের আত্মরক্ষার জন্য হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু তাদের চোখে সন্ত্রাসী নয়, কিন্তু ঐ আত্মরক্ষার জন্যই হামাস যখন অকার্যকর কিছু রকেট নিক্ষেপ করছে তখন তা বিবেচ্য হচ্ছে সাংঘাতিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে। আজ ফিলিস্তিনিদের সামনে পেছনে, ডানে-বামে সবদিকে অবরোধ। নেই পালাবার কোনো দরজা। কেবল মৃত্যুর দরজাই তাদের সামনে খোলা রয়েছে। আর সেটাই বরণ করতে বাধ্য করছে ইসরাইলি বর্বর বাহিনী। সব মিলিয়ে অসহায় মুসলিম ফিলিস্তিনির পাশে এখন কেউ নেই। ওআইসি, আরবলীগ ইত্যাদি জোটগুলো বালির মধ্যে মুখ গুঁজে বসে আছে। অথচ সমস্ত মধ্যপ্রাচ্য যদি আজ ঐক্যবদ্ধ থাকতো, মোসলেমদের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা, ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য-সংহতির কিছুমাত্র অবশিষ্ট থাকতো তাহলে আজকের চিত্র পাল্টে যেতে সময় লাগতো না। মধ্যপ্রাচ্যের আরব মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ একটি হুংকারই যথেষ্ট ছিল ইহুদি রাষ্ট্রটিকে সব ধরনের অপরাধ থেকে বিরত রাখার জন্য। ঠিক আজকের দিনটি পর্যন্ত এই আরব দেশগুলো যে শক্তি-সামর্থ্যরে অধিকারী রয়েছে সেটা ঐ ক্ষুদ্র ইহুদি জাতির তুলনায় অসীম। কী নেই এই জাতির! যদি মধ্যপ্রাচ্যের কথিত মোসলেম নেতৃত্ব তাদের ব্যক্তিস্বার্থের জন্য মিথ্যার কাছে মাথা বিক্রি না করতো তাহলে জনবল, সামরিক বল, সম্পদ, ভৌগোলিক অবস্থান সব দিক দিয়ে এ জাতির ঐক্যের কাছে ইসরাইল পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হতো। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের জনসংখ্যা যেখানে একাত্তর লক্ষ, সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের মোসলেম দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা হলো প্রায় ৪৩ কোটি। আর এর মধ্যে যুদ্ধক্ষমই আছে ১৮ কোটির বেশি মোসলেম। সামরিক বাজেটে ইসরাইল যখন খরচ করে মাত্র ১২ বিলিয়ন তখন শুধুমাত্র সৌদি আরবই খরচ করে ৫৫ বিলিয়ন। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সামরিক বাজেটকে একত্রিত করা হলে যা দাঁড়ায় তা ইসরাইলের খরচের ১৭ গুণ। সামরিকভাবে নয়, আরবের মুসলিম দেশগুলো চাইলে যুদ্ধ ছাড়াও শুধুমাত্র অবরোধের মাধ্যমেই ইসরাইলকে প্রতিরোধ করতে পারে। সাগর, আকাশ, ভূমি এই তিন পথের প্রত্যেকটির জন্যই ইসরাইল আরবের মুসলিম দেশগুলোর উপর নির্ভরশীল। আরব দেশগুলো এই পথ খুব সহজেই ইসরাইলের উপর অবরোধ আরোপ করে বন্ধ করে দিতে পারে।
কিন্তু এসব চিন্তা বাস্তবে নিতান্তই অলীক ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ, সেটা কোনোদিনও সত্য হবার নয়। যা হবার তা ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনি মুসলিমদের দুঃখ, কষ্ট, আহাজারি বোঝার জন্য যে মাথা দরকার সেটা আরব নেতৃত্বের মধ্যে অনুপস্থিত। তাদের মাথা এখন ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতার দখলে। ভোগ-বিলাসিতা আর ক্ষমতার মোহে কখন যে তারা নিজেদের মাথা পশ্চিমাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে তা তাদেরও অজানা। আর তাই যতই সুযোগ বা সামর্থ্য থাকুক না কেন আরবরা নিপীড়িত ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াবে না। বরং পারলে অতীতের মতো এখনও এই জাতির সাথে গাদ্দারী করে অবৈধ আগ্রাসীদেরই রসদ যোগাবে। এদের এখন না আছে নৈতিকতা, না আছে ন্যায়ের প্রতি এতটুকু সম্মানবোধ। এরা মুসলমান নয়, এদের কোনো ধর্ম নেই। সিংহাসন, অর্থ-সম্পদ, আর ভোগ-বিলাসিতাই হচ্ছে এদের একমাত্র ধর্ম। আর সে ধর্ম পালন করতে গিয়ে তারা যে কতটা নীচে নেমে গেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সমগ্র মুসলিম জাতি যখন দারিদ্র্যতার কবলে আক্রান্ত হয়ে পশু পর্যায়ের জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে, তখন এদের ভোগ-বিলাসিতার নজির দেখলে নিশ্চিতভাবেই যে কারও তাদের প্রতি ধিক্কার জন্মাবে।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত এই আরবরা ছিল অতি গরীব। মাটির নিচ থেকে তেল বের হওয়ার পর থেকে হঠাৎ ধন দৌলত ও সম্পদে পৃথিবীর অন্যতম ধনী জাতিতে পরিণত হোয়েছে। এখন এদের সম্পদ রাখবার জায়গা নেই। এই সম্পদ তারা কিভাবে ব্যবহার কোরছে? এরা একটা অংশ এর ব্যয় কোরছে পাশ্চাত্যের অনুকরণ কোরে দেশের রাস্তাঘাট, পুল, হাসপাতাল, বিদ্যালয়, বিরাট বিরাট প্রাসাদ, হোটেল, ফ্লাইওয়ে ইত্যাদি তৈরী কোরে। অঢেল টাকা ব্যয় কোরে এগুলো এমনভাবে তৈরি কোরছে যে, ইউরোপের, আমেরিকার মানুষরাও দেখে আশ্চর্য হোচ্ছে, হিংসা কোরছে। অগুনতি রাজকীয় প্রাসাদ, হোটেল, সমস্ত ইমারত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। শাদ্দাদ আল্লাহর সঙ্গে নাকি পাল্লা দিয়ে জান্নাত বানিয়েছিলো। সে আজ কবর থেকে উঠে এসে এদের শহর, নগর, পথ-ঘাট, হোটেল আর প্রাসাদগুলি দেখলে বোলবে- আমি আর কি বানিয়েছিলাম। সম্পদের অন্যভাগ তারা ব্যয় কোরছে অবিশ্বাস্য বিলাসিতায়, স্থূল জীবন উপভোগে, ইউরোপে, আমেরিকায়, জাপানে। দৈহিক ভোগে এরা কি পরিমাণ সম্পদ ব্যয় করে তা আমাদের মত গরীব দেশগুলির মোসলেমরা ধারণাও কোরতে পারবে না, লক্ষ লক্ষ ডলার তাদের কাছে কিছু নয়। তাদের ঐ অঢেল সম্পদের একটা মোটা ভাগ চলে যায় ঐ ইউরোপ, আমেরিকায়, জাপান ইত্যাদি দেশের কাছে, বিলাসিতার সামগ্রীর দাম হিসাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী গাড়ীগুলো কেনে এরাই। শুধু তাই নয়, রোলস, মার্সিডিস, আলফা-রোমিও, সিট্রন, ক্যাডিলাক ইত্যাদি গাড়ী শুধু কিনেই তারা খুশী নয়, এই গাড়ীগুলির বাম্পার লাইনিং ইত্যাদি তারা খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়ে দেয়। এদের মধ্যে আল্লাহর ভয়ের কিছুমাত্র প্রভাবও থাকলে এরা এমন কদর্য বিলাসিতায় নিজেদের ডুবিয়ে দিতে পারতো না। নিজেদের অতি উৎকৃষ্ট মোসলেম বোলে মনে কোরলেও এবং তা প্রচার কোরলেও আসলে ইউরোপ, আমেরিকার বস্তুতান্ত্রিকদের সাথে তাদের কার্যতঃ কোন তফাৎ নেই। বরং অনেক আগেই পশ্চিমা বস্তুবাদীদেরকে এরা ছাড়িয়ে গেছে। এদের পুরুষরা লম্বা জুব্বা, পাগড়ী, দাড়ি আর হাতে তসবীহ ধারণ করে এবং নারীদের আপাদমস্তক কালো বোরকায় আবৃত করে বোঝাচ্ছে যে, এরা পাক্কা মুসলমান। আসলে এরা বহু আগেই আইয়্যামে জাহেলিয়াতের পুরনো চরিত্রে ফিরে গেছে। এদের দেখলে আবু লাহাব, ওতবা, শায়বারাও লজ্জায় মুখ লুকাবে। তারা বলবে- আমরা সরাসরি মোহাম্মদ (দ এর বিরোধিতা করেছি কিন্তু তার বেশ-ভূষা ধারণ করে মুসলমান দাবি করে এভাবে ভণ্ডামী করি নি।
এরা এই উম্মাহর কেন্দ্র কাবা এবং নেতার (দ রওযা মোবারকের হেফাযতকারী হোলেও এই উম্মাহর জন্য তাদের মনে কিছুমাত্র সহানুভূতি নেই। তার প্রমাণ হোচ্ছে এই যে, নিজেদের ঘৃণ্য বিলাসিতার সামগ্রী কিনতে তাদের বিপুল সম্পদ চলে যায় ইউরোপ, আমেরিকা আর জাপানে। তারপরও যে বিরাট সম্পদ তাদের থেকে যায় তা বিনিয়োগ করেন সেই ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে, শিল্পে। টাকা জমা রাখেন ঐসব দেশের ব্যাংকেই যা থেকে লাভবান হয় ঐসব অমোসলেম দেশ ও জাতিগুলিই। এসলাম ও মোসলেম জাতির প্রতি তাদের কিছুমাত্র ভালোবাসা যদি থাকতো তবে ঐ বিরাট সম্পদ তারা অমোসলেম দেশগুলিতে বিনিয়োগ না কোরে গরীব মোসলেম ভৌগোলিক রাষ্ট্রগুলিতে বিনিয়োগ করতেন। এতে অন্ততঃ পার্থিব দিক দিয়ে এই হতভাগ্য জাতির কিছু অংশ উপকৃত হোতে পারতো। অন্যান্য অতি দরিদ্র মোসলেম দেশগুলির জন্য তারা কিছু কিছু মাঝে মাঝে খয়রাত করেন যখন কোন দেশে বন্যা, ঝড় বা প্লাবনের মত প্রাকৃতিক কারণে মহাক্ষতি হয়। এইসব দেশগুলির মানুষকে তারা ডাকেন মিসকীন বোলে। যে ঐক্য ছাড়া শক্তি নেই, জাতির সেই ঐক্য সুদৃঢ় রাখার জন্য রসুলাল্লাহ (দ তাঁর জীবনের শেষ জনসমাবেশে বিদায় হজ্বে¡ বোলে গেলেন আরবের মানুষের উপর অ-আরব মানুষের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই যেমন নেই অ-আরব মানুষের উপর আরবের মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব, অর্থাৎ সবাই সমান। মানুষে মানুষে প্রভেদের একটিমাত্র সংজ্ঞা দিয়ে গেলেন, কে কত ভাল মোসলেম। ঐ ‘উৎকৃষ্ট মোসলেমদের’ আজ মহানবীর (দ ওসব কথা কিছুই মনে নেই। থাকলেও ওসব কথার কোন গুরুত্ব তারা দেয়না। তারা আরব, সবার শ্রেষ্ঠ, এই অহংকারে স্ফীত হোয়ে অন্যকে অনুকম্পার পাত্র মনে কোরছে।
এই আরব দেশ ও আমীরাতগুলির বাদশাহ ও আমীরদের এলাহ হলো তাদের যার যার সিংহাসন ও আমীরত্ব। এই সিংহাসন ও আমীরত্বের নিরাপত্তার জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের ও ইউরোপের কথায় ও আদেশে উঠেন বসেন, অন্য মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেন। মুখে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লোক দেখানো চিৎকার কোরলেও কার্যতঃ ইসরাইলের ক্ষতি হবে এমন কোন কাজ করেন না, ঐক্যবদ্ধ হোয়ে ইসরাইলকে ধ্বংস করেন না, কারণ তা করতে গেলে প্রভু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বিরক্ত হবে এবং তাতে তাদের সিংহাসন ও আমীরত্ব হারাতে হোতে পারে। যদি এমন কোন পরিস্থিতি কখনও হয় যে তাদের সিংহাসন বা আমীরত্ব রক্ষা এবং কাবা ধ্বংস করা এ দু’টোর মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হবে, তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তারা কাবা ধ্বংসকেই বেছে নেবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৮ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেকদিন পর খুব সুন্দর লিখেছেন ...
মন্তব্য করতে লগইন করুন