অসম্মান ও সম্মানের আতিশয্য

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ১০ জুলাই, ২০১৪, ০৮:২৮:৩০ রাত



আজকের ধর্ম ব্যবসায়ী মোল্লারা গায়ে জোব্বা আলখাল্লা, দাড়ি, টুপি, পাগড়ি ইত্যাদি ধারণ করে নবীর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে ধর্মভীরু অধিকাংশ জনসাধারণের সামনে পীর-দরবেশ বা ওয়াজকারী সেজে মূর্তির মত পূজা, সম্মান আর সম্মানী নিচ্ছেন। ঠিক তেমনি যুধিষ্ঠির রামচন্দ্র মহাবীর (আ.) এঁদের শিক্ষা ত্যাগ করে তাদের মূর্তি বানিয়ে পূজা করছে হিন্দু পুরোহিতরা। ঈসা (আ.) এবং মা মরিয়মের উপরে ইহুদি ধর্মব্যবসায়ী ও তাদের দ্বারা প্রভাবিত জনগণ যে কলঙ্ক আরোপ করেছিল তা অপনোদন করেছেন শেষ নবী এবং তাঁর উপর অবতীর্ণ কোর’আন। ইহুদিরা ঈসা (আ.)-কে ভ্রষ্টা মরিয়মের অবৈধ সন্তান (নাউযুবিল্লাহ) বোলে প্রচার কোরেছিল। আর খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে ঈসাকে (আ.) ক্রুশবিদ্ধ কোরে নিহত করা হয়েছে। এসব অপবাদ ও মিথ্যাপ্রচারের আড়াল থেকে আল্লাহ প্রকৃত সত্যকে উদ্ভাসিত করলেন যে, মা মরিয়ম আল্লাহর হুকুমে সন্তান ধারণ কোরেছেন এবং তিনি পুতঃপবিত্র ছিলেন। ঈসা (আ.) ছিলেন আদমসদৃশ ও নিষ্পাপ, তাঁকে ক্রুশে চড়ানো হয় নি। এই মহাসত্য আল্লাহ ১৪০০ বছর আগে প্রকাশ কোরলেও অধিকাংশ মানুষ আজও অপপ্রচার দ্বারা বিভ্রান্ত। একইভাবে শ্রীকৃষ্ণ (আ.) এর ব্যাপারেও নারী-সংক্রান্ত বহু কলঙ্ক লেপন করা হয়েছে, তাঁকে নিয়ে এত কাল্পনিক গান, কবিতা, নাটক, চলচ্চিত্র, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, বৈষ্ণবপদাবলী, দোঁহা, প্রবাদ-প্রবচন রচনা করা হোয়েছে যে এসবের আড়াল থেকে প্রকৃত কৃষ্ণচরিত্র উদ্ঘাটন করা সত্যিই দুরূহ। তবে আমরা নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করি যে, কৃষ্ণের (আ.) পুতঃ চরিত্রে প্রকৃতপক্ষে অপবাদ আরোপ ও কলঙ্ক লেপন করা হয়েছে, এর পেছনে কারণ যাই থাক, তা ভক্তিবশেই হোক বা চক্রান্তবশেই হোক। ইসলাম ধর্মের ইতিহাস হল মাত্র ১৪০০ বছরের, আর বৈদিক ধর্মের ইতিহাস হাজার হাজার বছর প্রাচীন।

নবীদের প্রতি ভক্তি প্রদর্শনের পথ তাদেরকে পূজা করা নয় কেবল, তাঁদের আদর্শকে অনুসরণ করা। দু’ হাজার বছর ধোরে ঈসাকে (আ.) শান্তির যুবরাজ বলে প্রচার করা হচ্ছে। তাঁর অনুসারীরা ভক্তির আতিশয্যে তাঁকে ‘ঈশ্বরের পুত্র ঈশ্বর’ বানিয়ে ফেলেছে। অপরদিকে ইহুদীরা তাকে যারজ সন্তান বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। (নাউজুবিল্লাহ) কিন্তু এই যে ভক্তি আর অভক্তির বাড়াবাড়ি- এসব কোরে মানবজাতির কি উপকার হয়েছে সেটা কি কেউ বলবেন? শান্তির যুবরাজের অনুসারী দাবিদার খ্রিস্টানরা তাঁর আনীত সকল শিক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়ে গত দুই হাজার বছর বিশ্বের বুকে মানুষের রক্তে হোলি খেলে চলেছে। তারাই ধর্মের দোহাই দিয়ে ইউরোপ জুড়ে ইহুদিদের উপর গণহত্যা, মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড পরিচালনা করেছে। ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদ চালিয়ে বিশ্বের বহু সভ্যতাকে ধূলিস্মাত কোরে সেখানকার সম্পদ লুটে পুটে খেয়েছে, কোটি কোটি আদম সন্তান হত্যা করেছে। গত শতাব্দীতে তারা দুটি বিশ্বযুদ্ধ ঘোটিয়ে ১৪ কোটি মানুষ হত্যা কোরেছে, আহত-উদ্বাস্তুর কোনো হিসাব নেই। এই শতাব্দীর প্রথম পাঁচ বছরেই তারা দশ লাখ মানুষ হত্যা কোরেছে ইরাক আর আফগানিস্তানে। পাশাপাশি গণতন্ত্রের নামে এমন এক নিষ্পেষণমূলক পুজিবাদী জীবনব্যবস্থা মানবজাতির উপর চাপিয়ে দিয়েছে যে সমগ্র মানবজাতি অন্যায়-অবিচারের চূড়ান্তে গিয়ে পৌঁছেছে। সুতরাং যিশু মানুষ না আল্লাহর পুত্র সে বিতর্ক এখানে অবান্তর। যে জন্য নবীদের আসা অর্থাৎ শান্তি আনয়ন সেটাই যখন ব্যর্থ কোরে দেওয়া হয় তখন তাঁকে শ্রদ্ধায় সম্মানে স্রষ্টার সমকক্ষ কোরে দিলেও কোনো লাভ নেই।

একইভাবে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে অনেকেই কৃষ্ণের নামে যে লীলাখেলার অপপ্রচার চালানো হয়েছে তা বিশ্বাস কোরে তাঁর সম্পর্কে অশ্রদ্ধাব্যঞ্জক উক্তি করেন, এমন কি ‘লম্পট’ বোলে গালাগালিও করেন (নাউযুবিল্লাহ)। আবার একদল শ্রীকৃষ্ণকে (আ.) খ্রিস্টানদের মতই খোদ ‘ভগবান’ বোলে বিশ্বাস করেন, শুধু অবতার মেনে তারা সন্তুষ্ট নন। আমাদের কথা হচ্ছে তিনি স্বয়ং ভগবান হোন আর অবতারই হোন তিনি যে উদ্দেশ্যে এসেছিলেন অর্থাৎ দুস্কৃতিকারীর দমন কোরে সাধুজনের পরিত্রাণ এবং ধর্মের পুনসংস্থাপন। এই উদ্দেশ্য পূরণ কতটুকু হল সেটা বিচার না কোরে, সাধারণ বঞ্চিত নিগৃহীত বুভুক্ষ জনতাকে নির্যাতন নিপীড়নের মধ্যে ফেলে রেখে কৃষ্ণকে যতই সম্মান শ্রদ্ধার উচ্চ শিখরে বসানো হোক না কেন, সেটা প্রকৃত কৃষ্ণভক্তির পরিচয় নয়, এতে সেই মহামানবও সন্তুষ্ট হবেন না।

হেযবুত তওহীদের এমাম, এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী এই ভারসাম্যহীন বাড়াবাড়ি থেকে মহামানবদেরকে মুক্ত কোরে তাদের যে সত্যিকার অবস্থান ও আগমনের উদ্দেশ্য তা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, শ্রীকৃষ্ণ আল্লাহরই একজন নবী এবং তাঁর শিক্ষা ও ব্যক্তিত্ব সকলের জন্য অনুসরণীয়, তিনি সকল মানুষের শ্রদ্ধেয় ও পূজনীয়। এমামুয্যামান শ্রীকৃষ্ণের (আ.) শিক্ষাকে বাস্তবে প্রয়োগ করে হানাহানিতে লিপ্ত সনাতন ধর্মাবলম্বীদেরকে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান করেছেন। আজ আত্মিক পরিশুদ্ধি, পারলৌকিক মুক্তির প্রত্যাশিদের একদল মন্দিরে একদল মসজিদে একদল প্যাগোডায় একদল চার্চে একদল সিনাগগে ঢুকেছেন। নিরন্তরভাবে তাদের কেউ ওম শান্তি, কেউ বুদ্ধং শরণং গচ্ছামী, কেউ এলি এলি, কেউ আল্লাহু আকবার বোলে চলেছেন। কিন্তু মানুষ অন্যায় অশান্তিতে নিমজ্জিত। মানবজীবনের সঙ্গে ধর্মের এই বিচ্ছেদ দেখে একদল হয়ে গেছে নাস্তিক আরেকদল হোয়েছে কূপমণ্ডুক স্থবির। মানুষের জাতীয় জীবনের এই ঘোরসঙ্কটে ধর্ম কোন কাজে না আসায় সৃষ্টি হয়েছে সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্রসহ বিভিন্ন তন্ত্রমন্ত্র। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানবজাতির এক জাতিতে পরিণত হয়ে শান্তিতে বসবাস করার জন্য যে ধর্ম দরকার তা আমাদের (হেযবুত তওহীদের) কাছে আছে।

বিষয়: বিবিধ

১১৭৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

243567
১০ জুলাই ২০১৪ রাত ০৯:২১
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন :
রামচন্দ্র মহাবীর (আ.), এমামুয্যামান শ্রীকৃষ্ণকে (আ.)
??????
অন্যের কথার উপর ভিত্তি করে কোন যাচাই বাছাই না করে নিজের স্ত্রীকে ত্যাগ করা, আত্মহত্যা করা রামচন্দ্র মহাশয়ের পর আলাইহিস সালাম?

নারীদের সাথে অশ্লীলতা লীলাখেলা করা, সারা জীবন ধরে ছল চাতুরীর আশ্রয় নেয়া, ১৬০০০ স্ত্রী রাখা, নিজেকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর দাবী করা শ্রী কৃষ্ণ আলাইহিস সালাম? কোন ভিত্তির উপর এসব আজাইরা কথা বলেন?

ইসলাম ধর্মের ইতিহাস হল মাত্র ১৪০০ বছরের, আর বৈদিক ধর্মের ইতিহাস হাজার হাজার বছর প্রাচীন।

ইসলামের ইতিহাস মাত্র ১৪০০ বছরের? ভাই কি কুরআন-হাদীস কিছু পড়েছেন???
১০ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:০৩
189200
মোহাম্মদ আসাদ আলী লিখেছেন : কোর'আন-হাদীসের সূত্র ধরেই এটা প্রমাণিত যে, রাম (আ.) কৃষ্ণ (আ.) মনু বা নূহ (আ.) মহাবীর (আ.) আল্লাহর নবী ছিলেন। আর তাদের ব্যাপারে আপনার যে আপত্তিগুলো আছে তার ব্যাপারে কথা হলো- ভারতবর্ষে আগত এই নবী-রসুল বা অবতারদের ব্যাপারে অজস্র মিথ্যা-বানোয়াট ইতিহাস ও কল্পকাহিনী প্রচলিত আছে। তাছাড়া ধর্মগ্রন্থগুলো অনেক পুরাতন হওয়ায় সেগুলোর ভেতরেও অনেক প্রক্ষিপ্ত ঢুকেছে বা ঢোকানো হয়েছে। ধর্মব্যবসায়ী পুরোহিতদের অতিভক্তির আতিশয্যে অবতারকে স্বয়ং ঈশ্বরের আসনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে যা কোনো অবতারই দাবি করেন নি। অনেকটা খ্রিস্টানদের মতো। যাই হোক, মানা-না মানা আপনার সিদ্ধান্তের বিষয়, আমি আপনার কাছে জোর করছি না যে, আপনি তাদেরকে নবী বলে মেনে নেন। কিন্তু আমার কথা হলো আপনি যার অনুসারী যাকে আপনি নবী বা অবতার হিসেবে বর্তমানে মানছেন তার শিক্ষাকে মেনে চলুন। তার শিক্ষাকে নেমে না চলে তার আনিত বিধানকে অবজ্ঞা করে প্রত্যাখ্যান করে পশ্চিমা সভ্যতার বিধান দিয়ে নিজেদের পরিচালনা করে যতই আমরা নবী-রসুলদের দরুদ-সালাম পাঠাই আর অবতারদের ভগবানের আসনে বসিয়ে পুজা করি ঐ অতিভক্তিও কোনো কাজে আসবে না। উদাহরণ বর্তমান সময়।
১০ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:৫৪
189212
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : কুরআনে কোন আয়াতে রাম, শ্রীকৃষ্ণকে নবী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে? কোন হাদীসে, এমনকি জাল হাদীসেও এমন বর্ণনা পাওয়া যায়? কোন ঐতিহাসিক কি এমন কোন বর্ণনা দিয়েছেন? তাহলে কিসের উপর ভিত্তি করে আপনি এটা বলতে পারেন?
কুরআনে বলা হয়েছে এমন কোন জনপদ নেই যেখানে আমি(আল্লাহ) নবী পাঠাইনি। কিন্তু সেখানে উল্লেখ করে বলা হয়নি যে ওমুক ওমুক এলাকায় ওমুক ওমুক কে নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।

ঈসা (আHappyকেও আমরা স্পষ্ট ভাবে নবী হিসেবে স্বীকার করতাম না, যদি না কুরআন অথবা হাদীসে তাঁকে নবী হিসেবে বর্ণনা না করা হতো। বাইবেলে যে ঘটনা আছে তা আমরা মানি না, আমরা মানি কুরআনে বর্ণিত ঘটনা সমূহ।

তেমনি ভাবে, হিন্দু ধর্মের মূল গ্রন্থ "বেদ", "পুরান" ও "স্মৃতি"র অনেক বর্ণনা ইসলামের সাথে মিলে গেলেও এগুলো আদৌ আসমানী কিতাব কিনা, সে মর্মে কোন স্পষ্ট দলিল না থাকায় এ ধরণের বিশ্বাস ঈমানের খিলাফ। আর যদি শ্রীকৃষ্ণের মাঝে নবুয়্যতের কোন চিহ্নও থাকতো তাহলে তাদেরই কোন না কোন বর্ণনায় ছিটেফোটা হলেও পাওয়া যেত, যেমনটি বাইবেলকে হাজারো সংস্করণ করেও সবটুকু সত্য মুছে দিতে পারেনি। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্কে ভগবত গীতা, মহাভারত ও শ্রীকৃষ্ণ চরিতে যা পাওয়া যায়, তাতে তিনি যে কোন পর্যায়ের ভালো মানুষ ছিলেন তা খুব ভালো ভাবেই বোঝা যায়।

ধর্মব্যবসায়ী পুরোহিতদের অতিভক্তির আতিশয্যে অবতারকে স্বয়ং ঈশ্বরের আসনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে যা কোনো অবতারই দাবি করেন নি। অনেকটা খ্রিস্টানদের মতো।


ভগবত গীতা পড়ে দেখেন, শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে কোন অবতার নয় বরং স্বয়ং ঈশ্বর দাবি করেছেন। দেবতা নয়....ঈশ্বর।

আপনি যেহেতু নিজেকে একটি ইসলামী দলের প্রতিনিধি হিসেবে বলেন, সেহেতু এতটুকু তো নিশ্চয়ই আপনার জানার কথা, অতীতের যে বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা বা কোন ইঙ্গিতও আসেনি, সে বিষয়ে নিজে থেকে সত্যায়ন করা ইসলাম থেকে নাম কাটানোর সমান।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File