বিএনপির নবযাত্রা কোন পথে?

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ১৬ মে, ২০১৪, ০৮:০১:৩৯ রাত

এরশাদ পরবর্তী গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ধারাবাকিতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একটি গুরুত্বপূূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এই সময়ের মধ্যে বিএনপি দুইবার জনগণের ভোটে ক্ষমতা লাভ করে সরকার গঠন করেছে। দশটি বছর দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে বিএনপি নেতৃবৃন্দের। সে হিসেবে তারা অভিজ্ঞতা, সাংগঠনিক ভিত্তি, রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতা ইত্যাদি দিক দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চাইতে কোনো অংশে পিছিয়ে রয়েছে এমনটি বলা যায় না। তাই বিএনপির কাছ থেকে দেশের জনগণ সর্বদাই জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ আশা করে। উন্নয়নশীল এই দেশটিকে যাবতীয় অন্যায়-অন্ধত্ব, বৈষম্য, দুর্নীতি, নিপিড়ন ও নিস্পেষণহীন একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিএনপি অন্যতম একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে- এমনটাই আশা করে দেশের ষোল কোটি জনতা।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই আশার কতটুকু প্রতিফলন বিএনপি ঘটাতে পেরেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় অনায়াশেই। ২০০১ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে বিএনপি। অতঃপর ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালিত হয় বিএনপির নেতৃত্বে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে খোদ বিএনপির বেশ কিছু প্রথম সারির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাও হঠাৎ করে যেনো মাথা তুলে দাঁড়ায়। আবার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তো ছিলই। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা ধরে রাখতে পারে নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। এরপর ওয়ান-ইলেভেনের ধকল কাটিয়ে আবারও নির্বাচনে যায় দলটি। কিন্তু জনগণের হারানো আস্থা ফিরে না পাওয়ায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়। বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় যায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট। কিন্তু আওয়ামী লীগের বেশ কিছু মন্ত্রী-এমপির লাগামহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বিডিআর বিদ্রোহ, হলমার্ক কেলেংকারি, শেয়াবাজার ধ্বস, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি, রানা প্লাজা ট্রাজেডি, বিশ্বজিত হত্যাকাণ্ড, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ বেশ কিছু জাতীয় ইস্যু মোকাবেলায় ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়ার কারণে ক্রমেই আওয়ামী লীগ সরকার সাধারণ মানুষের আস্থা হারাতে থাকে। তাছাড়া আস্তিক-নাস্তিক ইস্যুতে একটি মহলের অবিরাম অপপ্রচার আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা শুন্যের কোঠায় নামিয়ে দেয়।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই একদিকে যে গতিতে আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে, অন্যদিকে বিএনপির জনপ্রিয়তা সেই গতিতেই বাড়তে থাকে। এর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল বিগত বছরের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমে। মানুষ অনেকটা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিএনপির ভোটের বাক্স ভরে দিয়েছিল। যাই হোক, এটা ছিল বৃহৎ এই রাজনৈতিক দল বিএনপির জন্য অন্যতম একটি টার্নিং পয়েন্ট। বিএনপি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে, জনতার সমর্থন এখন তাদের প্রতি। এসময় সরকারের যাবতীয় জনস্বার্থ পরিপন্থী কাজের যৌক্তিক সমালোচনা করে তারা নিজেদের জনপ্রিয়তা আরও উর্ধ্বে উঠিয়ে নিতে পারতো। কিন্তু জনগণ দেখলো তার বিপরীত চিত্র। সে সময় বিএনপি যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছিল সেটাকে বোদ্ধা মহলের অনেকেই নিজ পায়ে কুড়াল মারার মতোই মনে করেন। ধারাবাহিক হরতাল-অবরোধ ঘোষণা করে ও ব্যাপক সহিংসতার জন্ম দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে বিএনপি। সেই দিনগুলোর ভয়াবহতা এখনও বাংলাদেশের ষোল কোটি জনতা ভুলতে পারে নি। বিগত ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার পূর্ব পর্যন্ত গত বছরের একটি উল্লেখযোগ্য সময় জুড়েই তারা দেশব্যাপী এক প্রকার সহিংসতা ও নৈরাজ্যের আবহ সৃষ্টি করে রেখেছিল। সে সময় কথায় কথায় হরতাল-অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনমনে তীব্র নেতীবাচক প্রভাব ফেলা হয়। জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, পিকেটিং, ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহনে আগুন ইত্যাদি করে দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত করা হয়। এমনকি একটি পর্যায়ে কার্যত দেশ অচল হয়ে পড়ে। বাসের ভেতরে পেট্রল বোমা ছুড়ে মারা হয়, দগ্ধ হয় বহু সাধারণ মানুষ, যাদের সাথে রাজনীতির সামান্য পরিমাণ সম্পর্কও নেই। বিএনপি জোটের ঐ আন্দোলনের ধকল সইতে গিয়ে বহু প্রাণ ক্ষয়েছে, অনেকে আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, যে সংখ্যা থেকে বাদ পড়ে নি পথের শিশুও। একটি রাজনৈতিক দাবি আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল তা আজও পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয় নি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে মারাত্মকভাবে। ফল হয়েছে এই যে, বিএনপির যে বিরাট জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়েছিল তা অনেকাংশেই এখন লুপ্ত হয়ে গেছে। অন্যদিকে যার জন্য এতকিছু সেই নির্বাচনকেও তারা ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হয় নি। অনেকেই তাই বলছেন যে, বিএনপির একুল-ওকুল দু’কুলই গেছে। বাস্তবেই বিএনপি কুল হারিয়েছে কিনা তা বিতর্কাতীত না হলেও দলটি যে এখন ভারসাম্যহীনতায় পড়েছে এ বিষয়ে সকলেরই ঐক্যমত রয়েছে।

যাই হোক, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী দিনগুলোতে বিএনপি আর কোনো রকম সহিংসতা, হরতাল, অবরোধ ইত্যাদি পালনের কার্যত চেষ্টাও করেনি। কেন করেনি, সে বিষয়ে বিশ্লেষকদের ভেতরেই মতের অন্ত নেই। তবে মতবিরোধ যাই থাকুক, গোড়ার কথায় গেলে এর কারণ হতে পারে দু’টি। হতে পারে- নিরবচ্ছিন্ন শক্তি ক্ষয় ও সহিংস আন্দোলন করার দরুন সাংগঠনিকভাবে বিএনপির মধ্যে যে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোকে কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সময় অতিবাহিত হচ্ছে। হয়তবা নেতাকর্মীদের মধ্যে পুনরায় কর্মচঞ্চলতা ও আন্দোলনের মনোভাব দৃঢ় করার কাজ চলছে। এছাড়া আনুষঙ্গিক যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সেটা সম্পন্ন হলেই পুনরায় শুরু হবে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন যার দ্বারা সরকারকে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা সোপর্দ করে নতুন নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে।

আবার এও হতে পারে যে, ‘বিএনপির পলিসি এখন পাল্টে গেছে। সরকারের অস্ত্র-সজ্জ্বিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক ধরপাকড়, গ্রেফতার, মামলা ও হয়রানির সামনে তারা এখন অসহায়। তাছাড়া তাদের বর্তমানে প্রধান যে চাওয়া অর্থাৎ সরকার পতন ও নতুন নির্বাচন সেটা বাস্তবায়নে সহিংসতা করে সফলতা আনয়ন সম্ভব নয়। কাজেই এখন তারা অন্য উপায় তালাশ করছে। সে উপায় কোনটা তা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। তবে বর্তমানে বিএনপিকে অনেকাংশেই কুটনীতিমুখর হিসেবে দেখছেন অনেকে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির অন্যতম একটি পদক্ষেপ হচ্ছে যে, কোনো রকমে বৈদেশিক পরাশক্তিগুলোকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে নতুন নির্বাচনের জন্য চাপ দেওয়া। সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপে রাখতে পারলে বিএনপির স্বার্থ আদায় অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। বাস্তবে সেরকমই আবহাওয়া বিরাজ করছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বরাবরই সরকারকে অবিলম্বে নতুন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। নতুন সরকার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে একমাত্র ভারত ব্যতীত বিশ্বের কোনো গুরুত্বপূর্ণ দেশই বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে সমর্থন দেয় নি। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জিএসপি সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বহু পূর্বেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নও সুযোগ পেলেই কার্যত জিএসপি বাতিল করার হুমকি দিতে দ্বিধা করে না। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক ঋণ তহবিল, বিশ্বব্যাংক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সাথেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সম্পর্ক খুব একটা ভালো নেই। আল জাজিরা, ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য ইকোনমিস্ট টাইমসসহ বিশ্বের বড় বড় মিডিয়াতেও বর্তমান সরকারের নেতীবাচক খবরাখবর ও প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ হতে দেখা যায় প্রায়শঃই। এক কথায় আন্তর্জাতিকভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। আর এটা বিএনপিরই ইচ্ছার প্রতিফলন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। আবার অনেকে ধারণা করেন বিএনপিই কলাকাঠি নেড়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সাম্প্রতিক বাংলাদেশে বহুল আলোচিত সেভেন মার্ডারের পরিপ্রেক্ষিতেও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোও বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলে রয়েছে বহু পূর্ব থেকেই। আর এসবে আপাতভাবে লাভবান হচ্ছে বিএনপি। কিন্তু বিএনপির এই লাভ কি আখেরি সফলতা আনতে সক্ষম হবে, এমন প্রশ্নও আসছে স্বাভাবিকভাবেই। কারণ, সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিএনপি যাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তাদের ইতিহাসও স্বচ্ছ নয়। বলা হচ্ছে, বিএনপি পশ্চিমাদের ব্যবহার করতে গিয়ে কার্যত নিজেই ব্যবহৃত হচ্ছে। বৈদেশিক পরাশক্তিগুলোর কাছে গণতন্ত্র, মানবতা, আইনের শাসন ইত্যাদি কোনো বিষয় নয়। পৃথিবীর বহু দেশ রয়েছে যেগুলোতে মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন তো দূরের কথা পশ্চিমাদের বহুল আকাক্সিক্ষত গণতন্ত্রও চালু নেই। কিন্তু সে দেশগুলোর সাথে পশ্চিমাদের কোনো রেষারেষি তো নেই, বরং গলাগলির সম্পর্ক বিদ্যমান। বস্তুত, গণতন্ত্র বা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা এই পশ্চিমাদের কোনো উদ্দেশ্য নয়, বাংলাদেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, এখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, এখানে মানবাধিকার ভুলুন্ঠিত তাই তারা গণতন্ত্র তথা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসছে, ব্যাপারটা আসলে তা নয়। তারা বাংলাদেশের ব্যাপারে মনোযোগী তাদের নিজ স্বার্থেই। আর এই স্বার্থে তারা বিএনপিকে সমর্থন দেবে ততক্ষণ কমন ইন্টারেস্ট থাকবে যতক্ষণ। কমন ইন্টারেস্ট ফুরিয়ে গেলে বিএনপির সাথে তাদের সখ্যতাও ফুরিয়ে যাবে। তাই বিএনপির উচিত হবে, তাদের ব্যাপারে ভারসাম্য রক্ষা করে চলা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা অভ্যন্তরীণভাবেই মোকাবেলা করার চেষ্টা করতে হবে। আওয়ামী লীগকেও বিএনপির প্রতি সহনশীল হতে হবে কারণ বিএনপি শুধু একটি দল নয়, তারা একটি বিশাল সংখ্যক জনমানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। আলোচনা-পর্যালোচনার ভিত্তিতে উভয়েরই স্বার্থ রক্ষিত হয় এমন একটি প্লাটফর্মে এসে দাঁড়াতে হবে। পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষকে যতই বি¯তৃত করা হবে, যতই বাইরে ছড়ানো হবে ততই বাইরের পৃথিবী সুযোগে সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। আমাদের নিজেদের শত্র“তা ও বিভেদের ফাঁক যতই বড় হবে ততই তাদের মঙ্গল, ততই তাদের স্বার্থ আদায় সহজ হয়ে যাবে। তাই আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উচিত হবে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ও পরনির্ভরশীলতাকে উপেক্ষা করে চলমান সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা।

বিষয়: রাজনীতি

৯৫১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

222424
১৬ মে ২০১৪ রাত ১১:৫৫
বিন হারুন লিখেছেন : Rose

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File