একটি আজব দেশের গল্প
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ০৯ মে, ২০১৪, ০৬:০৭:৫৮ সন্ধ্যা
সে এক আজব দেশ। সে দেশে অন্যায়-অপরাধ, অত্যাচার, যুলুম, নৃশংসতা ও বর্বরতা বিস্তার লাভ করেছিল মহামারি আকারে। দেশটির জনগণের মধ্যে বলতে গেলে কোন একতা ছিল না, অতি ঠুনকো বিষয়ে লেগে যেত মারামারি, হানাহানি, দলে দলে সংঘর্ষ যা মৃত্যু পর্যন্ত গড়াতো। দয়া-মায়া ভালোবাসা ও মানবতা ঢাকা পড়েছিল পারস্পরিক শত্র“তা ও হিংসা-বিদ্বেষের আস্তরণে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আশ্চর্যের বিষয় হলো- এই দেশের জনগণ নিজেদের খুব ধর্মপরায়ণ জাতি হিসেবে মনে করতো। তারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতো ও তাঁর উপাসনা করতো। তাদের যাবতীয় ধর্মকর্ম পালিত হতো একটি নির্দিষ্ট এলাকাকেন্দ্রিক। ঐ এলাকাই ছিল সে দেশের রাজধানী। তাদের সবচেয়ে বড় যে উপাসনালয়টি ছিল তা রাজধানীর একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। বছরে একবার প্রায় দেশের সকল ধর্মপ্রাণ জনগণ সে এলাকায় এসে উপাসনা ও ধর্মীয় কার্যাবলী সম্পন্ন কোরত। এই সময়টিতে তারা কোন হামলা-মামলায় জড়াতো না। কারণ, রাজধানীর ঐ উপাসনালয়সহ আশ-পাশের এলাকাকে পবিত্র ভূমি হিসেবে মনে করা হোত এবং সে এলাকায় যাবতীয় রক্তপাত নিষিদ্ধ ছিল।
যাই হোক, একটি দেশের বর্ণনা দিতে গেলে সবার আগে আসে তার রাজনৈতিক দিকটি, অর্থাৎ সে দেশটির নেতা কে ছিল বা কীভাবে সে দেশ পরিচালিত হোত ইত্যাদি বিষয়াবলী। আসুন সে বিষয়ে জানা যাক। বস্তুত রাজধানী ও তার প্রাণকেন্দ্র উপাসনালয়ের রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা ও পরিচর্যার দায়িত্ব পালন কোরতেন সে দেশের সম্ভ্রান্ত জ্ঞানী-গুণি, পণ্ডিতগণ। এই পদ পেতে হলে তাকে ধর্মীয় বিদ্যা ও বংশমর্যাদায় শ্রেষ্ঠ হতে হোত। এই পণ্ডিতগণের মধ্যে সবার যে সমান মর্যাদা ছিল তা কিন্তু নয়। উঁচু-নিচু সব ধরনের পণ্ডিতরাই তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী সে দেশের রাজনীতি ও প্রশাসন পরিচালনা কোরতেন। নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ ধর্মীয় বিদ্যায় এমনও পারদর্শী ছিলেন যে, তাদের আসল নাম বাদ দিয়ে জনতা তাকে জ্ঞানীদের পিতা বলে ডাকতেন। বস্তুত রাজধানীর সম্ভ্রান্ত পণ্ডিতরাই পরোক্ষভাবে সারা দেশকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। পণ্ডিত নেতাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া কোন সাধারণ মানুষের সাধ্য ছিল না। শাসক পণ্ডিতরা জণগণকে বোঝাতেন যে, তারা হচ্ছেন ঈশ্বরের প্রতিনিধি, তাঁর প্রিয় পাত্র। কাজেই যারা ইশ্বরের প্রিয় পাত্রদেরকে সম্মান করবে, তাদের কথা অনুযায়ী কাজ করবে তাদেরকে ঈশ্বর ভালোবাসবেন, তারা ঈশ্বরের সান্নিধ্য অর্জন করতে পারবে। অথচ কথাগুলো ছিল ডাহা মিথ্যা। তারা আসলে ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র তো ছিলই না, বরং ধর্মীয় জ্ঞানের অপব্যবহার করে তারা সাধারণ মানুষকে ঈশ্বরের দেখানো পথ থেকে বিরত করে রাখতেন। শুধু তাই নয়, এই পণ্ডিতগণ সাধারণ মানুষকে অনেকটা ঈশ্বরের ভয় দেখিয়ে যে কোন ক্ষেত্রে পার্থিব স্বার্থ হাসিল করতেন। কিন্তু তা না বুঝে জনগণ তাদের কথা শুনতো ও মান্য করতো, কারণ তাদের ধারণা ছিল যে, পণ্ডিতদের কথা অমান্য করলে ঈশ্বর অসন্তুষ্ট হবে। কাজেই পণ্ডিত শাসকদের বিরুদ্ধচারণ করার সাহস কেউ দেখাতো না। এভাবেই চলতো সে দেশের মানুষের জীবনযাত্রা। পণ্ডিতগণ নিজেদের ইচ্ছামাফিক সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও অন্যান্য অশান্তিমূলক কাজে লিপ্ত করতেন। কিন্তু এতকিছু সত্ত্বেও কেউই পণ্ডিতদের কাজের বিরোধিতা করতে চাইতো না, বরং এই অমানবিক কর্মকাণ্ডকেই তারা ধর্ম-কর্ম বলে মনে করতো।তবে সময় তো আর একরকম যায় না। একদা সত্যি সত্যি ঈশ্বর তাঁর প্রিয় প্রতিনিধিকে সে দেশে পাঠালেন। তিনি এসে জনগণকে সাবধান করে দিলেন এই বোলে যে, “তোমরা যাদেরকে ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র হিসেবে মানছো, যাদের মনগড়া ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে ঈশ্বরের হুকুম হিসেবে মেনে নিয়েছ, তারা আসলে ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র নয়। তারা তোমাদেরকে ঈশ্বরের দেখানো শান্তির পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। তোমরা ভুল পথে আছো। এসো, এখন সময় এসেছে তথাকথিত পণ্ডিতদের সৃষ্ট মিথ্যার বেড়াজাল ভেদ করে সত্যের পথে এসো, শান্তির পথে এসো, বলো- আমরা একমাত্র ঈশ্বরের হুকুমই মানবো, তিনি ছাড়া আর কোন হুকুমদাতা নেই।
”কিন্তু হায়! সে কথা তো কেউ মানতে চায় না। জনগণ তখনও অন্ধভাবে ঐ পণ্ডিতদের কথা শুনতে থাকে। কিন্তু তবুও ভবিষ্যতের কথা ভেবে পণ্ডিতরা চিন্তায় পড়ে গেল। তারা দেখলো যে, জনগণ যদি সত্যটা জেনে যায় তাহলে সর্বনাশ! এতদিনের অর্জন সব বানের জলের মতো ভেসে যাবে। মানুষ তাদের কথা তো শুনবেই না, বরং তাদেরকে ঘৃণা করতে থাকবে। এই অশনিসংকেত অনুধাবন করে তারা স্রষ্টার সত্য প্রতিনিধির বিরোধিতা করতেও পিছপা হলো না, যদিও তারা সত্য জানতো। আর এ সিদ্ধান্তে পণ্ডিতদের মধ্যে কোন দ্বিমত ছিল না। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে ঈশ্বরের প্রতিনিধির বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন অপপ্রচার চালাতে থাকলো। তারা তাঁকে নির্বোধ, গণক, জাদুকর ইত্যাদি হিসেবে প্রচার চালাতে শুরু করলো এবং সফলও হলো। কারণ, পূর্বেই বলেছি যে, জনগণ অন্ধ বিশ্বাসের কারণে এই পণ্ডিতদের কথায় মারাত্বকভাবে বিভ্রান্ত হয়। কিন্তু ঈশ্বরের অভিপ্রায়ের কাছে তাদের সকল ষড়যন্ত্রই একের পর এক ব্যর্থ হতে শুরু কোরল। অতঃপর বহু কষ্ট করে, বহু অন্যায়-অবিচার, যুলুম ও অত্যাচার সহ্য করে শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের কৃপায় তাঁর প্রেরিত মানব সফল হলেন। দেশের সবাই তাঁর আহ্বান গ্রহণ করলো। উৎখাত হলো পণ্ডিততন্ত্র ও তাদের সৃষ্ট যাবতীয় বিভ্রান্তি। সেই সাথে সমাজ থেকে দূর হলো অন্যায়-অবিচার, অশান্তি। তাঁর অনেক বিরুদ্ধবাদীও তখন ভুল বুঝে অনুশোচনা করে তাঁর আনুগত্য মেনে নিল। এরপর দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে এবং তাঁর জাতিকে অন্যান্য দেশগুলোর শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়ে তিনি ঈশ্বরের কাছে চলে গেলেন।
তাঁর জাতিও যথারিতি সে দায়িত্বকে কাঁধে তুলে নিয়ে তাদের আদর্শপুরুষ যেভাবে সংগ্রাম করেছেন সেভাবে সংগ্রাম চালাতে শুরু করলো। তারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়লো। মানুষকে সত্যের পথ দেখাতে লাগলো। প্রায় ৬০/৭০ বছরের মধ্যে সত্যের আলো ছড়িয়ে পড়লো অর্ধপৃথিবীতে। এই অর্ধপৃথিবীতে যত পণ্ডিততন্ত্র বা মোল্লাতন্ত্র ছিল, যত অন্যায়-অত্যাচার ও যুলুম ছিল সব ধ্বংস হয়ে গেল। মানুষ শান্তি ফিরে ফেল। কিন্তু এরপর ঘটলো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। জাতি সংগ্রাম ত্যাগ করলো। অর্থাৎ বাকি অর্ধপৃথিবীতে যে তখনও অশান্তি ও অন্যায়-অবিচার চলছিল তা বন্ধ করার দায়িত্ব ভুলে গেল। তারা আর সামনে এগুলো না। কিন্তু নিজেরা ঈশ্বরপ্রদত্ত সিস্টেমের অনুসরণ করে শান্তিতে বসবাস করতে থাকলো।এরপর ঘটল দ্বিতীয় দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। যতই দিন যেতে থাকলো ততই তাদের মধ্যেও আবার একটি শ্রেণি গজাতে শুরু করলো যারা নিজেদেরকে পণ্ডিত হিসেবে দাবি করতো। একজন-দুইজন করে এরকম অনেক পণ্ডিত এবারে ঐ জাতির ভেতরে মাথা তুলে দাঁড়ালো। তারা ঈশ্বরের প্রিয় পাত্রের মাধ্যমে পাওয়া জীবনবিধানকে মুখস্ত করলো, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করলো, নিজের নিজের মতামত দাঁড় করালো, একে অপরের মতের বিরুদ্ধচারণ করলো, স্ব স্ব মতের পক্ষে প্রমাণ হাজির করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, সর্বপরি জাতিকে বিভিন্ন মত-পথ ও ভাগে বিভক্ত করে ফেলল। তারা সহজ-সরল আদর্শকে মতভেদ ও অবিশ্রান্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে এমন আকৃতি দান করলো যে, জনগণ নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক থেকে তা আয়ত্ব করতে ব্যর্থ হতো। কিছুকালের মধ্যেই জনতার মনে একটি ধারণা জন্মে গেল যে, ধর্ম আসলে আমাদের বিষয় নয়, এটা আমাদের বোঝার বাইরে। যারা রাতদিন ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করছে, জ্ঞান হাসিল করছে অর্থাৎ পণ্ডিত (আলেম), কেবল তারাই ধর্মের ব্যাপারে কথা বলার যোগ্যতা রাখে। কাজেই যে কোন বিষয়ে ধর্মের মতামত কী তা জানার জন্য তারা এবার ঐ ধর্মীয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণরত পণ্ডিতদের শরণাপন্ন হতে শুরু করলো। আর পণ্ডিতরা সেটাই চাইতো। তারাও নিজেদের জ্ঞানের গভীরতা বোঝাবার জন্য জনসাধারণের সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেতে থাকলো তা ধর্মে থাকুক বা না থাকুক। এভাবে সরল-সত্য পথকে কণ্টকাকীর্ণ করে তুলল জ্ঞানপাপী পণ্ডিতরা। ফলে দেশে আবারও পণ্ডিততন্ত্র কায়েম হোল, যেমনটি বিদ্যমান ছিল ঈশ্বরের প্রতিনিধি আসার পূর্বে। বর্বরতার যুগ আবারো ফিরে আসল। ফিরে আসলো ধর্মের নামে সৃষ্ট অধর্মের যুগ। চলতে থাকলো বছরের পর বছর। এমনকি এভাবে শত-সহস্র বছর পেরিয়ে গেল। এ পর্যায়ে এসে পণ্ডিততন্ত্র এমন বীভৎস আকৃতি ধারণ কোরল যে, মানুষ ধর্মের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলল, অনেকে নাস্তিক হয়ে গেল। পণ্ডিত আর ধর্মকে এক চোখে দেখার কারণে মানুষ পণ্ডিতদের অপরাধের কারণে ধর্মকে গালি দিতে শুরু কোরল। এক কথায়, জ্ঞানপাপী পণ্ডিতরা ধর্মব্যবসা করে জাতিকে তুমুল অশান্তির মধ্যে নিপতিত কোরল।
অতঃপর ঈশ্বর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁর অভিপ্রায় হচ্ছে- পৃথবীতে যতগুলো দেশ আছে সবগুলো দেশ থেকে চূড়ান্তভাবে পণ্ডিততন্ত্র বিতাড়িত করে সেখানে সত্যধর্মকে প্রতিষ্ঠিত কোরবেন। যেহেতু তিনি তাঁর প্রণিত সংবিধানে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, তিনি আর তাঁর পক্ষ থেকে কোন বার্তাবাহক পাঠাবেন না এবং তাঁর শেষ বার্তাবাহী প্রতিনিধির মাধ্যমে পাওয়া জীবনব্যবস্থা এখনও অবিকৃত রোয়েছে, কাজেই এবারে তিনি পাঠালেন তাঁর মনোনীত একজন সংস্কারক। সংস্কারক ঘোষণা দিলেন, “আমি নবী-রসুল বা পীর ফকিরও নই। আমি তোমাদেরই মতোই ঈশ্বরের সাধারণ গুনাহগার বান্দা, জাতির মধ্য থেকে যে হেদায়াহ হারিয়ে গেছে সেই হেদায়াহর জ্ঞান ঈশ্বর আমাকে দান করেছেন। এই জ্ঞান সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়ে সংস্কার সাধন করারই হলো আমার কাজ।” তিনি ধর্মের নামে সৃষ্ট অধর্ম ও পণ্ডিততন্ত্রের বিরুদ্ধে বজ্রকঠিন আওয়াজ তুললেন। কারণ, ঈশ্বর তাঁকে জ্ঞান দান করেছেন, কীভাবে পণ্ডিততন্ত্র যুগে যুগে ঈশ্বরের পাঠানো জীবনব্যবস্থাকে ও তাঁর প্রেরিত মহাপুরুষদের আদর্শকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে, কীভাবে পণ্ডিতরা প্রতিটি জাতির অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করেছে, সাধারণ জনতাকে বিভ্রান্ত করেছে। ফলে সংস্কারক জানতেন যে, এই পণ্ডিততন্ত্রই হলো সকল অপকর্মের মূল। তাই তিনি এদের বিরুদ্ধে সাধারণ জনতাকে একতাবদ্ধ করার কাজে আত্মনিয়োগ কোরলেন। তিনি ঈশ্বরের বিধান থেকেই দেখিয়ে দিলেন যে, ধর্মীয় মুখোশধারী এই পণ্ডিতরাই হলো ঈশ্বরের চোখে সবচেয়ে বড় ফেতনাবাজ। তারা ধর্মের প্রকৃত পথ থেকে মানুষকে বিরত রেখেছে। তারা ধর্মকে ব্যবসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এমনকি তিনি এটাও দেখিয়ে দিলেন যে, আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে পৃথিবীতে আসা ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র এই পণ্ডিতদেরকে আসমানের নিচে সর্বনিকৃষ্ট জীব হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সংস্কারকের এই আহ্বানে ঠিক তাই ঘোটল যা সহস্র বছর পূর্বে ঈশ্বরের প্রতিনিধির ব্যাপারে ঘটেছিল। তৎকালীন পণ্ডিতরা যেভাবে নিজেদের প্রভাব হারানোর ভয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের আশ্রয় নিয়েছিল এরাও সংস্কারকের একই আহ্বানে একইভাবে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের আশ্রয় নেয়। মানুষ যেহেতু এখনও তাদের কথাকেই ধর্মের কথা হিসেবে বিশ্বাস করে সেহেতু তারা প্রচার করতে থাকলো যে, এই লোক (সংস্কারক) ধর্মত্যাগী। তার কথা তোমরা কেউ শুনো না। শুনলে পাপ হবে, জাহান্নামে যেতে হবে। সাধারণ মানুষও পণ্ডিতদের কথায় বিশ্বাস আনলো এবং যিনি প্রকৃত ধর্মের কথা বলছেন, যিনি ঈশ্বরের মনোনীত পাত্র তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নিল। কিন্তু এখানেই কি বিষয়টির সমাপ্তি ঘটবে? না, ইতিহাস বলে, এখানে সমাপ্তি ঘটবে না, বরং এখানেই নব-দিগন্তের সূচনা হবে। সংস্কারকের পথ কেউ রুদ্ধ করতে পারবে না, কারণ তাঁর চলার পথ দেখাচ্ছেন স্বয়ং ঈশ্বর। তিনি ঠিকই সংস্কারককে বিজয় দান করবেন, পণ্ডিততন্ত্রকে চিরতরে কবর দিয়ে তিনি তাঁর বান্দাদেরকে শান্তিপূর্ণ একটি পৃথিবী উপহার দেবেন। তখন স্রষ্টার প্রিয় পাত্র সেজে থাকা তথাকথিত পণ্ডিতরা স্থান পাবে শুধুই ইতিহাসের পাতায়, যারা হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের ধিক্কার ও ঘৃণার পাত্র হবে। সেই দিনের অপেক্ষায় রোইলাম।
সহায়ক:
উপরোক্ত গল্পটিতে,
আজব দেশ: জাজিরাতুল আরব।
পণ্ডিত: ধর্মব্যবসায়ী তথাকথিত আলেম-মাওলানা শ্রেণি যারা যুগে যুগে আল্লাহর পাঠানো প্রতিটি জীবনব্যবস্থাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে সাধারণ মানুষের বোঝার বাইরে নিয়ে গেছে; অতঃপর সেটাকে নিজেদের কুক্ষিগত করে ও মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে ব্যবসা করেছে, সমাজে নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেছে। কোথাও কোথাও তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে জাতীয় কার্য পরিচালনা করেছে।
উপাসনালয়: এখানে উপাসনালয় বোলতে ক্বাবা ঘরকে বোঝানো হোয়েছে।
পণ্ডিতন্ত্র: মোল্লাতন্ত্র; যে শাসনব্যবস্থায় মোল্লা-পুরোহিতদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত থাকে তাকে মোল্লাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলা হয়।
ঈশ্বরের প্রতিনিধি ও প্রিয় পাত্র : গল্পটিতে ঈশ্বরের প্রতিনিধি ও প্রিয় পাত্র দ্বারা শেষ নবী মোহাম্মদ (দ কে বোঝানো হয়েছে।
সংস্কারক: জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। তিনি ১৪০০ বছর আগে নিয়ে আসা রসুলাল্লাহর সেই প্রকৃত এসলামকে জাতির সামনে আবারও পেশ করেছেন। তিনি এ যামানার জন্য আল্লাহর মনোনীত এমাম, এমামুয্যামান। মোজেজার মাধ্যমে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন, এমামুয্যামান হলেন আল্লাহর মনোনীত এমাম এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত আন্দোলন হেযবুত তওহীদ দিয়েই সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ ধর্মব্যবসা ও মোল্লাতন্ত্রের পতন হবে যামানার এমাম, এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর মাধ্যমেই, যদিও ধর্মব্যবসায়ীরা তাঁর বিরুদ্ধে শতমুখী ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে লিপ্ত রোয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১৩০০ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন