ঐক্য ভঙ্গকারীরা কাফের
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ৩১ মার্চ, ২০১৪, ০৫:৫৫:৩৯ বিকাল
জাতির ঐক্য এতটাই প্রয়োজনীয় বিষয় যে একটি জাতি একটি সংগঠন যত শক্তিশালীই হোক, যত প্রচণ্ড শক্তিশালী অস্ত্র-শস্ত্র, ধন-সম্পদের অধিকারীই হোক, যদি তাদের মধ্যে ঐক্য না থাকে তবে তারা কখনই জয়ী হোতে পারবে না। অতি দুর্বল শত্র“র কাছেও তারা পরাজিত হবে। তাই আল্লাহ কোর’আনে বহুবার এই ঐক্য অটুট রাখার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। এই ঐক্য যাতে না ভাঙ্গে সে জন্য তাঁর রসুল (দ) সদা শঙ্কিত ও জাগ্রত থেকেছেন এবং এমন কোনো কাজ যখন কাউকে কোরতে দেখেছেন, যাতে ঐক্য নষ্ট হবার সম্ভাবনা আছে তখন রেগে গেছেন। একদিন দুপুরে আব্দাল্লাহ বিন আমর (রা) রসুলাল্লাহর গৃহে যেয়ে দেখেন তাঁর মুখ মোবারক ক্রোধে লাল হোয়ে আছে। কারণ তিনি দু’জন আসহাবকে কোর’আনের একটি আয়াত নিয়ে মতবিরোধ কোরতে দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি (দ) বোললেন- কোর’আনের আয়াতের অর্থ নিয়ে যে কোনো রকম মতভেদ কুফর। নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহ তাদের কিতাবগুলির (আয়াতের) অর্থ নিয়ে মত বিরোধের জন্য ধ্বংস হোয়ে গেছে। তারপর তিনি আরও বোললেন- (কোর’আনের) যে অংশ (পরিষ্কার) বোঝা যায় এবং ঐকমত্য আছে তা বল, যেগুলো বোঝা মুশকিল সেগুলোর অর্থ আল্লাহর কাছে ছেড়ে দাও (মতবিরোধ কোরোনা) (হাদীস-আব্দাল্লাহ বিন আমর (রা) থেকে- মোসলেম, মেশকাত)। বিশ্বনবী (দ) রেগে লাল হোয়েছিলেন কেন? কারণ যদিও তিনি পরিষ্কার বোলেই দিলেন অর্থাৎ আয়াতের অর্থ নিয়ে মতবিরোধ হোয়ে জাতির ঐক্য নষ্ট ও পরিণামে যে জন্য জাতির সৃষ্টি সেই সংগ্রামে শত্র“র কাছে পরাজয় ও পৃথিবীতে এই দীনকে প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা। তবুও ইতিহাস এই যে, যে কাজকে রসুলাল্লাহ (দ) কুফর বোলে আখ্যায়িত কোরেছেন সেই কাজকে মহা সওয়াবের কাজ মনে কোরে করা হোয়েছে এবং হোচ্ছে অতি উৎসাহের সাথে এবং ফলে বিভিন্ন মযহাব ও ফেরকা সৃষ্টি হোয়ে জাতির ঐক্য নষ্ট হোয়ে গেছে এবং জাতির শত্র“র কাছে শুধু পরাজিতই হয় নি তাদের ক্রীতদাসে পরিণত হোয়েছে।
বিদায় হজ্বে বিশ্বনবীর (দ) ভাষণ মনযোগ দিয়ে পড়লে যে বিষয়টা সবচেয়ে লক্ষণীয় হোয়ে ওঠে সেটা তার জাতির ঐক্য সম্বন্ধে তার ভয় ও চিন্তা। স্বভাবতঃই কারণ জীবনের সবকিছু কোরবান কোরে অসহনীয় অত্যাচার সহ্য কোরে সারা জীবনের সাধনায় একটি জাতি সৃষ্টি কোরলে এবং সেই জাতির উপর তার আরদ্ধ কাজের ভার ছেড়ে পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার সময় একটা মানুষের মনে ঐ ভয়, ঐ শঙ্কাই সবচেয়ে বড় হোয়ে দাঁড়াবে। কারণ ঐক্য ভেঙ্গে গেলেই সবশেষ, জাতি আর তার আরদ্ধ কাজ করতে পারবে না, শত্র“র কাছে পরাজিত হবে। তাই তাকে বিদায় হজ্বের ভাষণে বোলতে শুনি- হে মানুষ সকল! আজকের এই দিন (১০ই জিলহজ্ব), এই মাস (জিলহজ্ব) এই স্থান (মক্কা ও আরাফাত) যেমন পবিত্র, তোমাদের একের জন্য অন্যের প্রাণ, সম্পদ ও ইয্যত তেমনি পবিত্র (হারাম)। শুধু তাই নয় এই দিন, এই মাস ও এই স্থানের পবিত্রতা একত্র কোরলে যতখানি পবিত্রতা হয়, তোমাদের একের জন্য অন্যের জান-মাল-ইযযত ততখানি পবিত্র (হারাম)। খবরদার! খবরদার! আমার (ওফাতের) পর তোমরা একে অন্যকে হত্যা কোরে কুফরী কোরো না। শেষ নবী (দ এই সাবধানবাণী একবার নয়- পুনঃপুনঃ উচ্চারণ কোরলেন এবং শেষে আসমানের দিকে মুখ তুলে বোললেন- হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক- আমি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিলাম। হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক- আমি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিলাম। এখানে লক্ষ্য কোরুন নিজেদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটিকে, অর্থাৎ জাতির ঐক্যকে নষ্ট বা ক্ষতি করাকে শেষ নবী (দ) কোন্ শ্রেণির গোনাহের পর্যায়ে ফেলছেন। একেবারে কুফরের পর্যায়ে। তাই আল্লাহর রসুল দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি এই উম্মতের ঐক্য ও সংহতির মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি কোরতে চায় তাদের ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরাতে চেষ্টা করে, তলোয়ার দ্বারা তোমরা তাকে শায়েস্তা করো, সে যেই হোক না কেন (হাদীস, আরফাজা (রা) থেকে মোসলেম)।
আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি কোরতে নিষেধ কোরেছেন এবং আল্লাহর রসুলও বিদায় হজ্বের ভাষণে দীন, জীবনব্যবস্থা নিয়ে বাড়াবাড়ি কোরতে নিষেধ কোরেছেন। বাড়াবাড়ি অর্থ হোচ্ছে অতি বিশ্লেষণ এবং যতটুকু বলা হোয়েছে তার চেয়ে বেশি বেশি করা, আধিক্য (তাশাদ্দুদ) করা। এমন কোনো কাজ দেখলে রসুলাল্লাহ রেগে লাল হোয়ে যেতেন এবং যারা তা কোরত তাদেরকে কঠিনভাবে তিরস্কার কোরতেন। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কোন বিষয়ে মসলাহ জানতে চাইলে বিশ্বনবী (দ) প্রথমে তা বোলে দিতেন। কিন্তু কেউ যদি আরও একটু খুঁটিয়ে জানতে চাইতো তাহোলেই তিনি রেগে যেতেন। একদিন একজন পথে পড়ে থাকা জিনিসপত্র কী করা হবে এ ব্যাপারে রসুলাল্লাহর (দ) কাছে মসলাহ জিজ্ঞাসা করায় তিনি তার জবাব দিয়ে দিলেন। ঐ লোকটি যেই জিজ্ঞাসা কোরলেন যে যদি হারানো উট পাওয়া যায় তবে তার কী মসলাহ? অমনি সেই জিতেন্দ্রীয় মহামানব এমন রেগে গেলেন যে তার পবিত্র মুখ লাল টকটকে হোয়ে গেলো (হাদীস-যায়েদ এবনে খালেদ জুহানী (রা) থেকে বোখারী)। কিন্তু তার অত ক্রোধেও অত নিষেধেও কোন কাজ হয় নি। আজকে তাঁর জাতিটিও ঠিক পূর্ববর্তী নবীদের (আ) জাতিগুলির মত দীন নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি কোরে অতি মুসলিম হোয়ে এবং মসলা-মাসায়েলের তর্ক তুলে বিভেদ সৃষ্টি কোরেছে। অতঃপর শক্তিহীন হোয়ে শত্র“র কাছে পরাজিত ও তাদের গোলামে পরিণত হোয়েছে।
দীনের যে কোন বিষয় নিয়ে তর্ক, মতভেদ করাকে তিনি বার বার কুফর বোলে আখ্যায়িত কোরেছেন, কারণ এতে জাতির ঐক্য বিনষ্ট হয়। জাতির অখণ্ডতা ও অবিভাজ্যতা সম্পর্কে আল্লাহ ও রসুলের এমন স্পষ্ট উদাহরণ ও নীতিমালা সত্ত্বেও বাস্তবে এক মোসলেম জাতি আজ শরিয়াহগতভাবে শিয়া সুন্নি, হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী, আহলে হাদীস ইত্যাদি ভাগে, আধ্যাত্মিকভাবে, কাদেরিয়া, নক্শবন্দিয়া, মোজাদ্দেদিয়া, আহলে বাইত ইত্যাদি হাজারো ভাগে, ভৌগোলিকভাবে ৫৫টিরও বেশি রাষ্ট্রে বিভক্ত এবং ইহুদি খ্রিস্টানের নকল কোরে হাজারো রাজনৈতিক দলে কেউ গণতন্ত্রী, কেউ সমাজতন্ত্রী, কেউ সাম্যবাদী, কেউ রাজতন্ত্রী, কেউ পুঁজিবাদী; গণতন্ত্রীদের মধ্যে কেউ সংসদীয় গণতন্ত্রী, কেউ পুঁজিবাদী গণতন্ত্রী, সমাজতন্ত্রীদের মধ্যে কেউ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী, কেউ চীনাপন্থী, মাওবাদী, কেউ মার্কসপন্থী, লেলিনবাদী ইত্যাদি মতাদর্শকে ভিত্তি কোরে হাজার হাজার দলে বিভক্ত। আল্লাহ বলেন, “সকল মো’মেন ভাই ভাই (সুরা হুজরাত ১০)”। রসুলাল্লহ (দ) বোলেছেন, ‘সমগ্র উম্মতে মোহাম্মদী জাতি যেন একটা শরীর, তার একটা অঙ্গে ব্যথা পেলে সারা শরীরেই ব্যথা অনুভূত হয়’ (আব্দাল্লাহ ইবনে ওমর রা থেকে বোখারী মোসলেম আবু দাউদ)। সেই উম্মতে মোহাম্মাদীর দাবিদার, এক মোসলেম জাতির দাবিদার হাজারো লক্ষ ভাগে বিভক্ত হোল, বিভক্ত হোয়ে নিজেরা নিজেরা মারামারি, যুদ্ধ, রক্তপাত, দাঙ্গা ইত্যাদি কোরল; এতে জাতির যে সংজ্ঞা রসুল দিলেন অর্থাৎ ‘এক দেহ’ তা থাকলো কিনা?
ব্যক্তিগত তাকওয়া এবং সওয়াব কামাতে এই জাতি এতটাই ব্যস্ত যে, পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে যে অগণ্য বনী আদম যারা তাদের মতই মোসলেম দাবিদার, তাদের মতই এক আল্লাহ, এক রসুল ও এক কোর’আনে বিশ্বাসী, তারা অন্যান্য জাতিগুলির দ্বারা পশুপাখির মত গুলি খেয়ে মরছে, মেয়েরা ধর্ষিত হোচ্ছে, অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হোচ্ছে, লাখে লাখে বাস্তুহারা হোচ্ছে তাদের প্রতি অন্যান্য মোসলেমরা কোনরূপ সহানুভূতির হাত বাড়ান না, খবরও রাখেন না। এই হতভাগ্য ‘মোসলেম’ জাতিরই একটা অংশ রোহিঙ্গা নামক জনগোষ্ঠীকে বৌদ্ধরা সাগরে নিয়ে ডুবিয়ে মারছে হাজারে হাজারে, আগুনে পুড়িয়ে মারছে নারী ও শিশুদের, যাদের অধিকাংশ নারীই জীবনে একাধিকবার ধর্ষিতা হোয়েছেন, যাদের জীবনটাই মৃত্যুর মত ভয়ঙ্কর, সেই রোহিঙ্গাদের খোঁজ নেওয়ার কোন সময় এই অতি মুসল্লীদের নেই, তাদের এস্তেঞ্জার পর ঢিলা কুলুখ নেওয়ার অধিকার থাকলেই হোল, চেক রুমাল কাঁধে চাপিয়ে দিনে পাঁচবার মসজিদে যেতে পারলেই হোল, এভাবেই তারা যিকিরে ফিকিরে জীবন কাটিয়ে দিতে চান। ফিলিস্তিনের আজন্ম নির্যাতিত মোসলেমদের জন্য তাদের প্রাণ কাঁদে না, আফ্রিকায়, সোমালিয়ায় না খেয়ে খেয়ে জীবন্ত কঙ্কাল হোয়ে ঘুরে বেড়ানো হাজার হাজার মোসলেমের ক্ষুধা অনুভব করার মত আত্মা তাদের নেই। কারণ তারা আর এক উম্মাহ নেই, একটি দেহের মত তাই এক অঙ্গে আঘাত পেলে সর্বাঙ্গে যন্ত্রণা অনুভব করারও প্রশ্ন ওঠে না।
এ তো গেল বহিঃশত্র“র দ্বারা নিষ্পেষিত হওয়ার বৃত্তান্ত, তথাকথিত মোসলেমরা নিজেরাই ভিন্ন মাজহাব ফেরকার অনুসারী মোসলেমদের নির্যাতন ও নিপীড়ন কোরতে কম পটু নন। বিগত কয়েক শতাব্দীতে শুধুমাত্র শিয়া সুন্নি সংঘর্ষ এবং নিজেদের দুঃখজনক ভৌগোলিক রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘর্ষ-সংঘাত, যুদ্ধ কোরে যে পরিমাণে নিহত ও আহত হোয়েছে তা বহিঃশত্র“র হামলার চাইতেও কয়েক গুণ; অথচ রসুলাল্লাহ বোলেছেন, ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে নিহতদের উভয়পক্ষই জাহান্নামী। শিয়া-সুন্নি, সরকারি-কাওমী, ওয়াহাবি-খারেজী-কাদিয়ানী ইত্যাদিরা এসলাম থেকে কে কতটুকু দূরে গেছে সেটা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়, সোজা কথা এরা মো’মেন নয়, মোসলেম নয়, উম্মতে মোহাম্মদী নয়। তারা প্রত্যেকেই এসব কোরে জাতির ঐক্য নষ্ট কোরে রসুলের কথা মোতাবেক কুফর কোরেছে, ফলে কার্যতঃ কাফের হোয়ে গেছে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যারা কাফের তাদের নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব কোন কিছুই কবুল হবে না এবং তারা জাহান্নামী। সুতরাং ঐক্য নষ্ট কোরে এই জাতি আল্লাহ ও রসুলের এসলাম থেকে বর্হিগত হোয়ে গেছে বহু আগেই। এখন আবার সকল ভেদাভেদ ভুলে আল্লাহর তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। আর এ আহ্বানই কোরছে হেযবুত তওহীদ।
বিষয়: বিবিধ
১২১৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন