শান্তি নেই মানেই ইসলাম নেই
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ৩০ মার্চ, ২০১৪, ০৭:৩০:০৪ সন্ধ্যা
বর্তমানে সারা দুনিয়াতে ইসলামের যে বিভিন্ন রকম রূপ আমরা দেখছি তার কোনটিই আল্লাহর প্রেরিত ইসলাম নয়। এর সবগুলিই বিকৃত। কিভাবে এই বিপুল বিকৃতি সাধিত হোল সেই ব্যাপক আলোচনা আমার আলোচ্য নয়, এটা যে আল্লাহ ও রসুলের প্রকৃত ইসলাম নয় তা সন্দেহাতীতভাবে এবং অকাট্যভাবে তুলে ধরাই আমার আলোচনার পরিসীমা। এটা সহজ সূত্র যে, ইসলামের অনুসারীই হোচ্ছে মুসলিম, সুতরাং আমি যদি এটা প্রমাণ কোরতে সক্ষম হোই যে, বর্তমানে প্রচলিত ইসলাম আল্লাহর নাযেলকৃত ‘ইসলাম’ নয়, তাহোলে এটাও স্বতঃপ্রমাণিত হবে যে, বর্তমান প্রচলিত ‘ইসলাম’-এর যারা অনুসারী তারাও প্রকৃত মুসলিম নয়, প্রকৃত মো’মেনও নয়। আসুন, একটি চূড়ান্ত সত্যের উদ্ঘাটনে যাত্রা শুরু কোরি।
আপনি একটি গাছের চারা রোপন কোরলেন। আপনি সবাইকে বোললেন যে, এটি একটি আমগাছ। কিন্তু সবাই বোলল, এটা আমগাছ না, কাঠাল গাছ। আপনি কিছুতেই মানতে রাজি নন। এই নিয়ে তর্ক বিতর্ক চোলতে লাগলো। এই তর্কের সমাপ্তি কবে হবে? হ্যাঁ, যেদিন গাছটিতে ফল ধোরবে সেদিনই সব কথা শেষ হোয়ে যাবে। কয়েক বছর পরে দেখা গেল, আপনার গাছটিতে একটি কাঁঠাল ধোরে আছে। তখন আর বুঝতে বাকি থাকবেনা যে, সে গাছটি আসলে কোন গাছ।
আল্লাহ তাঁর নাযেলকৃত জীবনব্যবস্থা বা দীনটির নাম দিয়েছেন ‘ইসলাম’। এসলাম আরবি শব্দ, এর বাংলা হোচ্ছে ‘শান্তি’। সুতরাং এসলাম যদি গাছ হয় তার ফল হোচ্ছে শান্তি। আজ ১৬০ কোটির এই মুসলিম দাবিদার জনসংখ্যা কতটা শান্তিতে দিনাতিপাত কোরছে তা নিশ্চয়ই আপনাকে বোলে দিতে হবে না। যারা দুনিয়ার কিছুমাত্র খবরও রাখেন তাদের বোলতে হবে না যে, এই পৃথিবীতে মোসলেম বোলে পরিচিত ১৬০ কোটির এই জনসংখ্যাটির কী করুণ অবস্থা। পৃথিবীর অন্য সব জাতিগুলি এই জনসংখ্যাকে পৃথিবীর সর্বত্র ও সর্বক্ষেত্রে পরাজিত কোরছে, হত্যা কোরছে, অপমানিত কোরছে, লান্ছিত কোরছে, তাদের মসজিদগুলি ভেংগে চুরমার কোরে দিচ্ছে অথবা সেগুলিকে অফিস বা ক্লাবে পরিণত কোরছে। এই জাতির মা-বোনদের তারা ধর্ষণ কোরে হত্যা কোরছে। কয়েক শতাব্দী আগে আল্লাহ ইউরোপের খ্রীস্টান রাষ্ট্রগুলিকে দিয়ে মুসলিম বোলে পরিচিত এই জাতিটিকে সামরিকভাবে পরাজিত কোরে তাদের গোলাম, দাস বানিয়ে দিয়েছেন। এটা ছিল আল্লাহর গজব। এই সামরিক পরাজয়ের সময় তারা লক্ষ লক্ষ মুসলিম ট্যাংকের তলায় পিষে, জীবন্ত কবর দিয়ে, পুড়িয়ে, গুলি কোরে, বেয়নেট, তলোয়ার দিয়ে হত্যা কোরেছে, তাদের বাড়ি-ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে, লক্ষ লক্ষ মুসলিম মা-বোনদের ধরে নিয়ে ইউরোপের, আফ্রিকার বেশ্যালয়ে বিক্রি কোরেছে। আল্লাহর ঐ গযব আজ পর্যন্ত চোলছে। বর্ত্তমানে খ্রীস্টানরা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে, ইউরোপের বসনিয়া-হারযেগোভিনায়, আলবেনিয়া, কসভো, চেকোশ্লাভাকিয়া, চেচনিয়ায়, ইউরোপের বাইরে ইরাকে, আফগানিস্তানে, সুদানে, ইরিত্রিয়ায়, ফিলিপাইনে, ইহুদীরা প্যালেস্টাইন, লেবাননে; হিন্দুরা ভারতের সর্বত্র, বিশেষ কোরে কাশ্মীরে; বৌদ্ধরা আরাকানে, থাইল্যান্ডে, ভিয়েতনামে, কামপুচিয়ায়, চীনের জিংজিয়াং-এ (সিংকিয়াং) মুসলিম নামধারী এই জাতিটাকে যে যেভাবে পারছে পদদলিত, পরাজিত, লান্ছিত, অপমানিত কোরছে। মুসলিম হিসাবে মাথা তুলতে গেলেই তাদের গ্রেফতার, কারাবদ্ধ কোরছে, পাশবিক নির্য্যাতন কোরছে, ফাঁসি দিচ্ছে। বসনিয়ায় খ্রীস্টান চেক-স্লাভরা হাজার হাজার মুসলিম গণহত্যার পর দুই লক্ষ মুসলিম মেয়েকে ধর্ষণ কোরে গর্ভবতী করে এবং ঐ গর্ভবতী মেয়েরা খ্রীস্টানদের ঔরসজাত ঐ ভ্রুণ যাতে গর্ভপাত না কোরতে পারে সেজন্য ঐ মেয়েদের তারা আটকিয়ে রাখে। পরে ঐ দুই লক্ষ মুসলিম মেয়ে খ্রীস্টানদের ঔরসজাত সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হয়। মানব জাতির ইতিহাসে কোন জাতি এমনভাবে অপমানিত হয় নাই। যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীতে দৈনিক অন্য জাতির হাতে নিহত হোচ্ছে কোন জাতি? নিজ পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি এমন কি জন্মভূমি থেকে ছিন্নমূল হোয়ে এখানে সেখানে পাহাড়ে জঙ্গলে নো ম্যনস ল্যান্ডে লাখে লাখে উদ্বাস্তু জীবন কাটাচ্ছে কারা? সেই শরণার্থী শিবিরে গিয়ে আবার যাদেরকে গণহত্যা ও মেয়েদেরকে গণধর্ষণ করা হোচ্ছে তারা কোন হতভাগা জাতির সদস্য? এ সবকটি প্রশ্নের উত্তরে প্রত্যেকেই একবাক্যে বোলবেন মুসলিম নামক এই জাতি। অথচ বর্ত্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে পরাজিত, অপমানিত, লান্ছিত জাতি হোয়েও মুসলিম নামে পরিচিত এই জাতির অপমানবোধ নেই, তারা নির্বিকারভাবে খাচ্ছে-দাচ্ছে, চাকরি কোরছে, ব্যবসা-বাণিজ্য কোরছে, যেন কিছুই হয় নাই, সব স্বাভাবিক আছে; ঐ পরাজয়, অপমান, লান্ছনাই যেন তাদের জন্য স্বাভাবিক। এতো গেল বহিঃশত্র“র হাতে মার খাওয়ার চিত্র, নিজেদের মধ্যেও এই জাতিটি ধর্মীয় মতবাদ, রাজনৈতিক মতবাদ নিয়ে নিরন্তর হানাহানি, মারামারি, যুদ্ধ, রক্তপাতে লিপ্ত, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, কুসংস্কার, হীনমন্যতা ইত্যাদিতে জর্জরিত।
এই হোচ্ছে বর্তমানের ‘ইসলাম’ নামক বৃক্ষের উৎপন্ন করা বিষময় ফল। সুতরাং যে দীন অনুসরণ কোরেও মানুষ এমন অন্যায় ও অশান্তির অগ্নিকুণ্ডে প্রজ্জ্বলিত হয়, সেটা কখনও আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা হোতে পারে না। এর প্রমাণ ইতিহাস। শেষ নবী মোহাম্মদের (দ) মাধ্যমে যে শেষ জীবন বিধান স্রষ্টা প্রেরণ কোরেছিলেন তা মানবজাতির একাংশ গ্রহণ ও সমষ্টিগত জীবনে কার্য্যকরী করার ফলে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি অংশ অর্থাৎ নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে কী ফল হোয়েছিল তা ইতিহাস। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পূর্ণ নিরাপত্তা যাকে বলে তা প্রতিষ্ঠিত হোয়েছিল। মানুষ রাতে শোওয়ার সময় ঘরের দরজা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব কোরত না, রাস্তায় ধনসম্পদ ফেলে রাখলেও তা পরে যেয়ে যথাস্থানে পাওয়া যেত, চুরি, ডাকাতি, হত্যা, রাহাজানী প্রায় নির্মূল হোয়ে গিয়েছিল, আদালতে মাসের পর মাস কোন অপরাধ সংক্রান্ত মামলা আসতো না; আর অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রতিটি মানুষ স্বচ্ছল হোয়ে গিয়েছিল। এই স্বচ্ছলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, মানুষ যাকাত ও সদকা দেওয়ার জন্য টাকা পয়সা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো কিন্তু সেই টাকা গ্রহণ করার মত লোক পাওয়া যেত না। শহরে নগরে লোক না পেয়ে মানুষ মরুভূমির অভ্যন্তরে যাকাত দেওয়ার জন্য ঘুরে বেড়াতো। এটি ইতিহাস। এক কথায় আল্লাহর দেওয়া সত্যিকার জীবনব্যবস্থার ফল হবে ন্যায়, সুবিচার, গৌরব, সম্মান, শ্রেষ্ঠত্ব, উন্নতি, প্রগতি, ঐক্য, এক কথায় শান্তি আর শান্তি। এজন্যই এই দীনের নাম ইসলাম।
সুতরাং বর্তমানে যেটাকে ইসলাম হিসাবে সর্বত্র মানা হোচ্ছে এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হোচ্ছে সেটাকে ইসলাম হিসাবে বিশ্বাস করা আর তিক্ত মাকাল ফলকে সুমিষ্ট আম বোলে বিশ্বাস করার মতই নির্বুদ্ধিতা। অথচ এই বিকৃত বিপরীতমুখী ইসলামটিকেই ধর্মব্যবসায়ী আলেম, মোল্লা, পীর, মাশায়েখ শ্রেণী বিক্রি কোরে খাচ্ছে। কাজেই যেহেতু এটা আল্লাহর দেওয়া ইসলাম নয়, তাই এর অনুসারীরাও মুসলিম নয়।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন