জঙ্গিবাদ নির্মূলের পূর্বশর্ত হচ্ছে ধর্মব্যবসা নির্মূল করা

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০১:২০:২৪ দুপুর



কিছুদিন যাবৎ জঙ্গিবাদী ইস্যুটি মিডিয়াতে আবার ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আল কায়েদার নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরির একটি অডিও বার্তাকে কেন্দ্র করে এর সূত্রপাত। এরই অংশ হিসেবে গত শনিবার রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ সেন্টার ফর পিস এ্যাণ্ড ডেভেলপমেন্ট’ আয়োজিত “জঙ্গিবাদের হুমকি: বাংলাদেশ ভাবনা” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারটিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় মিডিয়াগুলির উপস্থিতিতে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবর্গ ও মিডিয়া-ব্যক্তিত্ব জঙ্গিবাদের উৎস ও প্রতিকার বিষয়ক মতামত তুলে ধরেন। কিন্তু জঙ্গিবাদ সম্পর্কে তাদের আলোচনা-পর্যালোচনা দেখে শেষ পর্যন্ত হতাশ হলাম এই জন্য যে, তারা কোন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত, পথ নির্দেশনা জাতির সামনে দিতে ব্যর্থ হলেন। দু’একজন ব্যতীত তাদের অধিকাংশের দৃষ্টিভঙ্গি ও দিক নির্দেশনা অবাস্তব ও অসার বলেই মনে হলো। তাদের অধিকাংশই কিছু কিছু দলকে জঙ্গি হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার জন্য দাবি জানিয়েছেন। আমার প্রশ্ন হল, কোন দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে দিলেই কি সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? অন্তত আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা কী বলে? এটা বাস্তবতা যে, যারা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড করে, বোমাবাজী করে, মানুষ হত্যা করে, এমনকি আত্মঘাতী বোমা হামলা করে তারা জীবনের মায়া করে না। তাই তাদেরকে আইনের ভয় দেখিয়ে, পুলিশের ভয় দেখিয়ে, জেল-ফাঁসির ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব।

বাংলাদেশে একাধিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আছে। মাঝেমধ্যেই সংগঠনগুলোর কর্মীদের পুলিশ-র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হতে দেখা যায়। অনেকের অপরাধ প্রমাণিত না হলে, বা জামিনযোগ্য অপরাধ হলে জামিনে মুক্তিও দেওয়া হয়, অনেকে অব্যাহতিও পায়। দেখা যায় মুক্তির পর তারা পূর্বের মতই জঙ্গি কার্যক্রম চালায়। পত্র-পত্রিকায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে এমনও দেখা যায় যে, জঙ্গিদের একজন গ্রেফতার হলে বা সাজাপ্রাপ্ত হলে তার দ্বারা অন্যরা আরো উজ্জীবিত হয়, অনুপ্রেরণা লাভ করে। এই যখন অবস্থা তখন নেহায়েত নিষিদ্ধ করার মাঝেই জঙ্গিবাদের বিলুপ্তি সাধনের পথ খোঁজা শুধু অবাস্তব নয়, অবান্তরও বটে। এই বুঝটি আমাদের বুদ্ধিজীবীদের যত শীঘ্রই হবে ততই মঙ্গল। উদাহরণ আরও আছে, উল্লেখিত সেমিনারের পরের দিন অর্থাৎ গত রবিবার দেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গিরা জানান দিল যে, তারা এখনও শেষ হয়ে যায় নি। এত জেল, এত বাধা-বিঘœ, এমনকি ফাঁসিতেও যে তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় নি, তা আমাদের চোখে অঙ্গুলি নির্দেশ করে দেখিয়ে দিল। পুলিশ হত্যা করে প্রিজন ভ্যান থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ছিনতাই করার মাধ্যমে তারা দেখিয়ে দিল যে, জোর জবরদস্তি করে জঙ্গিবাদকে সাময়িক নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও নির্মূল করা সম্ভব নয়। এটি এমন একটি আদর্শ যার জন্য মানুষ প্রাণ বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। তাই এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন আদর্শের যুদ্ধ। এক কথায় জঙ্গিদের আদর্শকে ভ্রান্ত প্রমাণ করতে পারলেই জঙ্গিবাদের অবসান হবে।

ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যা থেকেই জঙ্গিবাদের জন্ম। জঙ্গিদেরকে শেখানো হয় অমুক নাস্তিক, অমুক কাফের, অমুককে মারলে জান্নাত নিশ্চিত। এসব বলে ধর্মব্যবসায়ীরা তাদের অনুসারীদের মধ্যে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দেয়। ধর্ম নিয়ে ব্যবসাই হচ্ছে ধর্মভিত্তিক অপ-রাজনীতি ও জঙ্গিবাদের সুতিকাগার। আমাদের প্রাজ্ঞ সমাজ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার কিন্তু ধর্মব্যবসার ব্যাপারে নীরব। অর্থাৎ তারা বিষবৃক্ষকে রেখে দিয়ে ফল ধ্বংসের পক্ষপাতি। ধর্মব্যবসায়ীদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে, তাদের কাছে থেকে শিক্ষা লাভ করে যখন কেউ জঙ্গি হয় তখন তার বিরুদ্ধে সকলে উঠে পড়ে লাগে। কিন্তু এর উদ্গাতা ধর্মব্যবসায়ীরা থেকে যায় সমাজের সম্মানিত আসনে। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে বুঝতে হবে, ধর্মব্যবসায়ীরা যেটাকে ইসলাম বলে পালন করছে, মসজিদে-খানকায়, ওয়াজ মাহফিলে প্রচার করছে, মাদ্রাসার মাধ্যমে ছেলে-মেয়েদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে সেটা আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলাম নয়। প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা যারা লাভ করবে তারা কোনদিন জঙ্গি হবে না, তারা আইন অমান্যকারী হবে না, বিশৃঙ্খল হবে না, তারা হবে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ। কাজেই জঙ্গিবাদের বিলুপ্তি সাধনের পূর্বশর্ত হলো ধর্মব্যবসার বিলুপ্তি সাধন। কারখানা বন্ধ করে দিলেই যেমন পণ্যের বাজারজাত বন্ধ হয়ে যায়, তেমনি ধর্মব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিলে, তাদের অপকর্ম সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করলে ক্রমেই জঙ্গিবাদের বিলুপ্তি সাধন হবে।

ইসলাম ধর্মে ধর্মব্যবসা ও জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই এই মহাসত্য ইসলামের আলোকে অকাট্য যুক্তি ও প্রমাণ সহকারে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। এর বাইরে অন্য কোন পথে হাজারো চেষ্টা করা হলেও জঙ্গিবাদ নামক ভ্রান্ত আদর্শকে নিঃশেষ করা যাবে না। অতীতে যায় নি, বর্তমানে যাচ্ছে না, ভবিষ্যতেও যাবে না। আর তাই আমরা যদি সত্যই জঙ্গিবাদের বিলুপ্তি চাই, সমাজ থেকে যাবতীয় ধর্মীয় উন্মাদনা, ধর্মব্যবসার বিলুপ্তি চাই- তাহলে উপায় একটিই, ইসলামের সঠিক যে আদর্শ, প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা ব্যাপকভাবে মানুষের মাঝে বিস্তার ঘটানো এবং ধর্মব্যবসায়ীদের মুখোশ খুলে দেওয়া।

Click this link

বিষয়: বিবিধ

১১১১ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

183238
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:৪৩
এমরুল কায়েস ভুট্টো লিখেছেন : দুঃখিত "ধর্ম ব্যবসা" কথাটা মানতে পারলামনা
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:৫৯
135424
মোহাম্মদ আসাদ আলী লিখেছেন : সেটা আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমি যেটা লিখেছি তা বাস্তব সত্য। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
183243
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:৫০
আমি মুসাফির লিখেছেন : ধর্ম ব্যবসা কাকে বলে এক নজর দেখে নেই





২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:০৩
135428
মোহাম্মদ আসাদ আলী লিখেছেন : ধর্মব্যবসা করছে তারা, যারা প্রতিনিয়ত ধর্মের বুলি আউড়িয়ে আয়-উপার্জন করছে, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করছে।
183255
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:১৫
মুিনর লিখেছেন : বাংলাদেশে কারা ধর্মনিয়ে ব্যাবসা করে একটু পরিস্কার করে বলতে পারবেন কি? আর কারা সঠিক ধর্মের কথা বলে? কারা প্রয়োজনে ধর্মকে ব্যাবহার করে (যে কোন ধর্ম)? আবার প্রয়োজন পুরে গেল বলে আমরা ধর্মনিরপেক্ষ? এ সব দিলে খুলি হব।
183267
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৩৪
আনিসুর রহমান লিখেছেন : Thanks for your post.
এক রুগী ডাক্তারের কাছে তার রোগের চিকিৎসার জন্য গেল।
ডক্তারঃ কী সমস্যা আপনার
রুগীঃ ডাক্তার সাব মাথা ব্যাথায় বেচে থাকা দায়
ডক্তারঃ এর জন্য বোকার মত আমার কাছে আসছেন কেন? যান, বাড়ীতে যেয়ে শরীর থেকে মাথা কেটে আলাদা করে ফেলুন, তখন মাথাও নেই মাথার ব্যাথাও থাকবে না। Next
আমাদের বাংলাদেশ মাথা মোটা বোদ্ধাদের একই অবস্থা। জঙ্গী বিরোধী, সঠিক ইসলামের ধারক বাহক দলগুলর উপর সব দোষ চাপিয়ে ঐ ডাক্তারের ন্যায় তারা বাংলাদেশ নামক দেশ থেকে তাদেরকে কেটে আলাদা করে জঙ্গী নামক সমস্যার সমাধান খুজছে!!! সেলুকাজ কী বিচিত্র এ দেশ আর এর জ্ঞান বোদ্ধা!!



183274
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:০১
হতভাগা লিখেছেন : জঙ্গিদের চেয়ে উনারা বেশী জঙ্গি গিরি করছেন ।

এটা তো রাখাল ও বাঘের গল্পের মত হয়ে যাচ্ছে ।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:২৯
135448
মোহাম্মদ আসাদ আলী লিখেছেন : আংশিক সহমত।
183364
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৮
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : পুরোটাই ডিজিটাল রেন্ডিয়া।
183372
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৫
সজল আহমেদ লিখেছেন : ধর্ম ব্যাবসা তারাই বলে যাদের ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানেনা।তারা জানেনা কিভাবে প্রভূকে আদবের সাথে সেজদা করতে হয়।
183396
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪১
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য যারা জিন্দেগীতে নামাজ পড়ে নি ,তারা ইসলামের নামে কুত্সা রটাচ্ছে। জঙ্গিবাদের নামে দেশে হিংসা প্রতিষ্ট করতেছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File