হেযবুত তওহীদের প্রথম জুমার বক্তব্য [স্থান- শালবন, রংপুর। পরিচালনা- মসীহ উর রহমান, আমীর, হেযবুত তওহীদ]

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:৪৫:২৫ সকাল



প্রিয় ভাই ও বোনেরা। সালামু আলাইকুম। আজ আপনাদেরকে নিয়ে আমাদের প্রথম জুম’আ। আপনাদের সবাইকে স্বাগতম, আন্তরিক মোবারকবাদ, শুভেচ্ছা ও সালাম। জুম’আ শব্দের মানেই হোচ্ছে একত্রিত হওয়া, ঐক্যবদ্ধ হওয়া। মো’মেন-মোসলেমরা সপ্তাহে একদিন, এই জুম’আর দিনে একত্রিত হোয়ে তাদের ভ্রাতৃত্ববন্ধন দৃঢ় কোরবে। যে স্থানে একত্রিত হোয়ে এই সালাহ কায়েম করা হয় সেই স্থানের নামই জামে মসজিদ। আজকে আমরা এখানে জমায়েত হোয়েছি। কাজেই এই স্থানই আমাদের জন্য জামে মসজিদ।

একতাই বল-

পবিত্র কোর’আনের সুরা এমরানের ১০৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হোয়ো না।” এটা প্রাকৃতিক নিয়ম যে ঐক্য সবসময় অনৈক্যের উপর বিজয় লাভ করে। দশজন ঐক্যবদ্ধ লোক সব সময় একশজন ঐক্যহীন লোকের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ কোরবে।

রসুলের আগমনের উদ্দেশ্য-

আল্লাহ পাক মানব জাতির শান্তির জন্য, মুক্তির জন্য যুগে যুগে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আখেরি নবী, শেষ নবী, বিশ্ব নবী হুজুরে পাক (দ) কে আল্লাহ পাঠিয়েছেন। তাঁকে আল্লাহ দায়িত্ব দিয়েছেন মানবসৃষ্ট সকল জীবনবিধান বিলুপ্ত কোরে আল্লাহর দেওয়া সত্যদীন, দীনুল হককে সারা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তাঁর শেষ রসুলকে প্রেরণের উদ্দেশ্য তিনি কোর’আনের তিনটি আয়াতে সুস্পষ্টভাষায় বর্ণনা কোরেছেন। তিনি সুরা ফাতাহ ২৮, সুরা তওবা ৩৩, সুরা সফ ৯ নং আয়াতে বলেন, “আল্লাহ তাঁর রসুলকে সঠিক দিক-নির্দেশনা ও সত্য জীবনব্যবস্থা দিয়ে প্রেরণ কোরেছেন এই জন্য যে, রসুল যেন পৃথিবীতে প্রচলিত অন্য সকল জীবনব্যবস্থার উপরে একে বিজয়ী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন।” এই সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করার ফলে মানুষ অফুরন্ত সুখ, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা, প্রগতি এক কথায় শান্তিতে বসবাস কোরতে পারবে। এই জন্য এই দীনের নাম আল্লাহ দিয়েছেন এসলাম, এসলাম শব্দের অর্থই শান্তি। এই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রসুলাল্লাহ অক্লান্ত পরিশ্রম, কঠোর অধ্যাবসায় কোরে, একটি জাতি গঠন কোরলেন যে জাতির নাম উম্মতে মোহাম্মদী। তিনি নিজে আরবভূখণ্ডে ঐ অকল্পনীয় শান্তি কায়েম কোরে বাকি পৃথিবীর দায়িত্ব তাঁর জাতিটির উপর অর্পণ কোরে গেলেন। তাঁর জাতি সংগ্রাম কোরে, সর্বস্ব ত্যাগ কোরে ৬০/৭০ বছরের মধ্যে অর্ধ দুনিয়াতে সেই দীনকে প্রতিষ্ঠা কোরল। এই দীনটি প্রতিষ্ঠার ফলে মানুষের জীবন এবং সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হোল। কেমন ছিল সেই সমাজ?

একজন সুন্দরী যুবতী সারা গায়ে অলঙ্কার পরে একা শত শত মাইল পথ ভ্রমণ কোরতে পারতো, তার মনে কোন ক্ষতির আশঙ্কাও জাগ্রত হোত না। মানুষ রাতে ঘরের দরজা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব কোরত না। আদালতগুলিতে মাসের পর মাস কোন অপরাধ সংক্রান্ত মামলা আসতো না। অর্থনৈতিক মুক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, দান অথবা যাকাতের টাকা গ্রহণ করার কেউ ছিল না। শাসক শাসনকার্যকে এবাদত মনে কোরত, আর জনগণের সম্পদকে মনে কোরত পবিত্র আমানত। প্রতিটি মানুষ আল্লাহর দেয়া সিস্টেমে বাস করার ফলে সত্যবাদিতা, আমানতদারী, পরোপকার, মেহমানদারী, উদারতা, ত্যাগ দানশীলতা, ইত্যাদি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে পরিপূর্ণ হোয়ে গিয়েছিলো। শিক্ষাদানকে মনে কোরত এবাদত, আর সমাজে শিক্ষকের সম্মান ছিল পিতার মত। নারীরা পূর্ণ সম্মান ও মর্যাদার সাথে জাতীয় ও সামাজিক প্রয়োজনে নিশ্চিন্তে, নির্বিঘ্নে যে কোন ভূমিকা রাখতে পারতো। স্রষ্টার দেয়া সেই সিস্টেম সার্বক্ষণিক দ্বন্দ্ব বিবাদ, মারামারি, কাটাকাটিতে নিমজ্জিত সমাজের মানুষগুলিকে সোনার মানুষে রূপান্তরিত কোরল। শুধু সমাজটিই সুন্দর হোল না, জাহেলি যুগে যারা নিজের কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত তারা হয়ে গেল একেকজন সোনার মানুষ, যাদের নামের পরে আমরা আজও রাদিয়াল্লাহু আনহু বোলে থাকি।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরবর্তীতে আকিদা ভুলে যাওয়ার কারণে এই জাতি তার মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হোল। ফলে তারা আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম ত্যাগ কোরল এবং রাজা-বাদশাহদের মত শান-শওকতের সঙ্গে ভোগবিলাসপূর্ণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হোয়ে পড়লো।

কয়েক শতাব্দী এভাবে চলার পর ইউরোপীয় খ্রিস্টানরা সামরিক শক্তিবলে মোসলেম বিশ্বের অধিকাংশ ভূখণ্ড দখল কোরে নিল এবং তাদের নিজেদের তৈরি আত্মাহীন, জড়বাদী জীবনব্যবস্থা বা সিস্টেম মোসলেম নামক জাতিটির উপরে চাপিয়ে দিল। আমাদের এই উপমহাদেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় তিনশত বছর চোলল গোলামি। আজও আমরা তাদের তৈরি করা জীবনব্যবস্থাই মেনে চোলছি যার ফলে আজ আমরা সীমাহীন অন্যায় অশান্তিতে নিমজ্জিত হোয়ে আছি।

আল্লাহর অশেষ দয়া যে তিনি আবার তাঁর প্রকৃত এসলাম তাঁরই এক প্রিয় বান্দা এ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর মাধ্যমে আমাদেরকে দান কোরেছেন।

উম্মতে মোহাম্মদীর শ্রেষ্ঠত্বের জন্য প্রথম কাজই হোচ্ছে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হোতে হবে। হুজুর পাক (সHappy আরবের তৎকালীন আইয়্যামে জাহেলিয়াতের পরস্পর দ্বন্দ্ব সংঘাতে লিপ্ত ঐক্যহীন, ভ্রাতৃত্বহীন একটি জাতিকে আল্লাহর সত্যদীনের আওতায় এনে এমন একটি জাতিতে রূপান্তরিত কোরলেন যাদেরকে আল্লাহ কোর’আনে সীসাঢালা প্রাচীরের সঙ্গে তুলনা কোরলেন। গলিত সীসার প্রাচীরের মধ্য দিয়ে কি একটি সুঁই-ও ঢোকানো যায়? যায় না। কাজেই আল্লাহর রসুল এমন একটি জাতি গঠন কোরলেন যারা ছিল সীসা গলানো প্রচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ।

রসুলাল্লাহ (দHappy বিদায় হজ্বের ভাষণে পরিষ্কার কোরে বোলে দিলেন, যারা জাতির ঐক্য নষ্ট কোরবে তারা কুফর কোরবে। অর্থাৎ জাতির ঐক্য বিনষ্টকারী কাফের, সে মোমেন নয়, সে আল্লাহ ও রসুলের শত্রু, জাতির শত্রু। আল্লাহর রসুল কাউকে ঐক্য নষ্টের কোন কাজ কোরতে দেখলে রাগে তাঁর মুখমণ্ডল লাল হোয়ে যেত। তাই যেখানে বোসে জাতির ঐক্য নষ্ট করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়, যার কথায়, কাজে জাতির মধ্যে ঐক্য নষ্ট হয়, মানুষ হানাহানি, দাঙ্গা, ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও কোরতে উদ্বুদ্ধ হয় সে স্থান বা সে ব্যক্তি অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

জাতির বর্তমান অনৈক্য-

উম্মতে মোহাম্মদীর ঐক্যের তুলনায় আজ এই জাতির অবস্থা কি? আজ এই জাতির মধ্যে যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত, হানাহানি, জ্বালাও পোড়াও চোলছে তার পেছনে মূলত দায়ী আমাদের চরম অনৈক্য। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতাম তাহোলে আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস কেউ পেতো না। এখনও আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হোই, আমরা যদি ভাই-ভাই হোই, তাহোলে পৃথিবীর এমন কোন শক্তি নেই, যে আমাদের পরাজিত করে। আল্লাহ বলেন, ইন্নামাল মোমেনুনা ইখওয়াতুন। সকল মোমেন ভাই ভাই। আল্লাহর রসুল বোললেন, “সমস্ত মোমেন একটি অভিন্ন দেহের ন্যায়। দেহের একটি অঙ্গে আঘাত লাগলে সারা দেহেই তা অনুভূত হয়।”

সুতরাং একটি দেহের ন্যায়, একটি সীসার তৈরি প্রাচীরের ন্যায় আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হোই, তাহোলে আমাদের কোন সমস্যই আমাদের কাছে সমস্যা হোয়ে দাঁড়াবে না, কোন সংকট আমাদেরকে স্পর্শ কোরতে পারবে না। কোন অভাব অনটন আমাদের জীবনে আসবে না। কাজেই আমরা সর্বদা সজাগ ও সচেতন থাকবো, কেউ যেন আমাদের জাতির মধ্যে ঐক্য নষ্ট কোরতে না পারে। ধর্মকে নিয়ে যারা ব্যবসা কোরছে, ধর্মকে যারা রুটি রুজির বাহন বানিয়ে নিয়েছে তারা ধর্মের মধ্যে বিভিন্ন রকম তরিকা, ফেরকা, মাজহাব, মত-পথ সৃষ্টি কোরে জাতিকে হাজার হাজার ভাগে বিভক্ত কোরে রেখেছে, উম্মতে মোহাম্মদী জাতির ঐক্যকে ধ্বংস কোরে দিয়েছে। আর পশ্চিমা পরাশক্তিগুলি আমাদেরকে শোষণ ও শাসন করার উদ্দেশ্যে তাদের তৈরি করা কিছু রাজনৈতিক মতবাদ চাপিয়ে দিয়েছে। তাদের চাপিয়ে দেওয়া সেই তন্ত্র, মন্ত্র, মতবাদের উপর ভিত্তি কোরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে, উপদলে আমরা বিভক্ত হোয়ে আছি। এসব মিলিয়ে আজ এ জাতির মধ্যে হাজার হাজার বিভক্তি বিরাজ কোরছে। একটু আগেই বোলেছি, অনৈক্যের পরিণাম হোচ্ছে পরাজয়। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে হোলে এখন আমাদের সামনে একটাই পথ, আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হোতে হবে। ঐক্যবদ্ধ একটি জাতি হিসাবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু কোরে দাঁড়াতে হবে।

যামানার এমাম ও ঐক্যের আহ্বান-

এনশা’আল্লাহ আমরা বোলতে পারি, যামানার এমাম এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান কোরেছেন, সেই মহাসত্য তিনি মানবজাতির সামনে তুলে ধোরেছেন যেই মহাসত্য দিয়ে আল্লাহ চৌদ্দশ বছর আগে আখেরি নবীকে পাঠিয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রসুলের আনীত সেই দীন বিকৃত হোতে হোতে আজ সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী হোয়ে গেছে। মহান আল্লাহ অতীব দয়া কোরে সেই হারিয়ে যাওয়া সত্যদীনের প্রকৃত রূপ যামানার এমামের মাধ্যমে আমাদের সামনে তুলে ধোরেছেন। এমামুয্যামান বার বার বোলেছেন, ‘আমি কোন নবী-রসুল না, আমি একজন অতি সাধারণ মানুষ মাত্র। আল্লাহর শেষ নবী মোহাম্মদ (দHappy। তাঁর পরে আর কোন নবী আসবেন না। কিন্তু নবীর যে শিক্ষা ও আদর্শ হারিয়ে গিয়েছিল, মহান আল্লাহ সেই শিক্ষা আমাকে বোঝার তওফীক দিয়েছেন। সেটাই আমি তোমাদের সামনে তুলে ধোরেছি। আল্লাহর রসুল তাঁর জাতি উম্মতে মোহাম্মদীর উপরে যে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, আমি তোমাদেরকে শুধু সেই দায়িত্বের কথাই স্মরণ কোরিয়ে দিচ্ছি। আল্লাহর রসুল যে পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন, এই জাতি তার বিপরীত দিকে চোলছে। আমি মানবজাতিকে আবার সেই মুক্তির প্রকৃত পথের দিকে আহ্বান কোরছি।’

যামানার এমাম আবারও দেখিয়ে দিলেন কিভাবে আমরা ঐক্যবদ্ধ হোতে পারি। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হোই, তাহোলে পৃথিবীর বুকে আমরা হবো একটি পরাশক্তি। সমস্ত বিশ্বকে আমরা নেতৃত্ব দেবো এনশা’আল্লাহ।

শপথ গ্রহণ-

সম্মানিত ভাই ও বোনেরা। আসুন আমরা সীসাঢালা প্রাচীরের মত ঐক্যবদ্ধ হোই। আমরা সব সময় সজাগ ও সচেতন থাকবো, কেউ যেন আমাদের ভিতরে এই ঐক্য নষ্ট কোরতে না পারে। মনে রাখবেন, আমরা কে কি বোলি, কে কি কোরি আমাদের অন্তরে কি, বাহিরে কি সব আল্লাহ শোনেন, আল্লাহ সব দেখেন। তিনি সামিউম বাসীর। তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। তিনি আরও বলেন, তিনি পরিবেষ্ঠনকারী, তিনি আমাদের সবাইকে পরিবেষ্ঠন কোরে আছেন। আল্লাহ বলেন, তোমরা শেষে আমার কাছেই ফিরে আসবে। একদিন আমাদের সমস্ত আমল তাঁর কাছেই উপস্থাপিত হবে, আল্লাহর সামনে তাঁর রসুলের সামনে গিয়ে একদিন আমাদেরকে দাঁড়াতে হবে। কাজেই আমরা যেন ঐক্যনষ্ট কোরে জাতির ক্ষতি না কোরি, নিজেদের আমলকে ধ্বংস না কোরি।

আজকের এই পবিত্র জুম’আর দিনে আমরা এই এলাকার মানুষ একটি কথার উপরে শপথ নেবো, আমরা সবাই ভাই ভাই, আমরা সবাই এক আদম হাওয়ার সন্তান, আমরা শপথ নেবো যে আমরা একজনের অভাবে আরেকজন সহযোগিতা কোরব, সবাই সবার সুখে সুখী হবো, দুঃখে দুঃখী হবো। আমরা কেউ কারও ক্ষতি কোরব না, আমরা অন্যের সম্পত্তি নষ্ট কোরব না। অন্যায়ভাবে কারও সম্পত্তি গ্রাস কোরব না। কেউ কারও অগোচরে গীবত, নিন্দা কোরব না। আমরা ধর্মকে কারও স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহৃত হোতে দেব না। আমরা কারও প্ররোচনায় কোনরূপ জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর ও সহিংসতা কোরব না। আমরা কোন রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, রেললাইন নষ্ট কোরব না। মনে রাখতে হবে, এগুলি আমাদের জাতির সম্পদ, আমাদেরই সম্পদ। এই সোনার বাংলার উর্বর মাটিতে আল্লাহ আমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আমাদেরকে আর কারও মুখাপেক্ষী হোয়ে থাকতে হবে না। আমরা আজ সংখ্যায় ষোল কোটি। আমরা যদি সবাই মিলেমিশে থাকি, একে অন্যের প্রতি সমব্যথী হোই, সাহায্যকারী হোই তাহোলে আমাদের কোন অভাব অনটন থাকবে না, কেউ না খেয়ে থাকবে না। আমরা যেন সবাই একটি দেহের মত হোই, সবাই সবাইকে ভাই মনে কোরি।

আসহাবে রসুলগণের ঐক্য-

হুজুর পাক (দ) বোলেছেন, আমার আসহাবগণ হোচ্ছেন তারকার ন্যায়। যারা তাদেরকে অনুসরণ কোরবে তারাই পথ পাবে। সেই আসহাবদের পরস্পরের মধ্যে যেমন ঐক্য, যেমন ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হোয়েছিল আমাদেরকে সেই রকম ভাই-ভাই হোতে হবে। যুদ্ধের মাঠে আহত সাহাবীরা যখন নিজেদের প্রাণ ওষ্ঠাগত তখনও নিজেরা পানি না খেয়ে বোলেছেন, আমাকে না, ঐ ভাইকে পানি দাও, আমার চেয়ে সে বেশি তৃষ্ণার্ত। এভাবে তারা অনেক সাহাবী শহীদ হোয়ে গেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কারোরই পানি পান করা হয় নি। এসব ঘটনা আপনারা সবাই জানেন। মক্কা থেকে যখন সাহাবীরা মদিনায় হেজরত কোরে এসেছিলেন, তখন মদিনার আনসাররা তাদেরকে আপন ভাইয়ের মত গ্রহণ কোরে নিলেন। তাদের যা কিছু ছিল সবই অর্ধেক কোরে সেই ভাইকে দিয়ে দিয়েছিলেন। যার বাড়িতে দু’টি কামরা তিনি একটি কামরা ভাইকে দিয়ে দিয়েছিলেন, যার দু’টি বাগান ছিল তিনি একটি বাগান ভাইকে দিয়ে দিয়েছিলেন। এভাবে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর সময় তার মোহাজের ভাইকে বোলেছেন, তুমি আমার ভাই, তুমি আমার পৈত্রিক সম্পদের উত্তরাধিকারী। এভাবেই ভ্রাতৃত্বের, ঐক্যের এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন সাহাবাগণ। আসুন আমরা সেইভাবে ঐক্যবদ্ধ হোই, নবী করীম (দ) এর আদর্শে আমাদের জীবনকে সাজাই। আমরাও ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, রুহামার এক ইতিহাস গড়ি।

ধর্মব্যবসা প্রসঙ্গ:

ভাই ও বোনেরা, ধর্ম এসেছে মানুষের কল্যাণের জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য। নবী করিম (দ) হোলেন রহমাতাল্লিল আলামীন। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি নির্বিশেষ প্রত্যেকটি মানুষের জন্য তিনি রহমতস্বরূপ। নবী করিম (দ) এর উপরে যে দীনুল হক আল্লাহ নাজেল কোরেছেন সেই দীন অনুসরণ কোরলে সমস্ত মানবজাতি থাকবে শান্তিতে, সমৃদ্ধিতে, ন্যায়বিচারের মধ্যে। কাজেই এই দীনের প্রতিটি কাজ হবে নিঃস্বার্থভাবে, মানবতার কল্যাণে, মানুষের মুক্তির জন্য। এই দীনকে কেউ যেন রুটিরুজির মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার কোরতে না পারে, সেজন্য সুরা বাকারার ১৭৪ ও ১৭৫ নং আয়াতে আল্লাহ ধর্মের যে কোন কাজের বিনিময় নেওয়াকে হারাম কোরে দিয়েছেন। সুতরাং কেউ যেন ধর্মকে বিক্রি কোরতে না পারে, ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার কোরতে না পারে সেদিকে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখবো।

এই পবিত্র জুম’আর দিনে আমরা সবাইকে মোবারকবাদ জানাই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করেন, তাঁর পথে চলার তওফিক দান করেন। সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য আমাদেরকে সর্বোত্তম দৃঢ়তা দান করেন। আমরা যেন আমাদের জীবন ও সম্পদ আল্লাহর দীনকে সমুন্নত করার কাজে কোরবান কোরতে পারি। আল্লাহ আমাদেরকে সীসাঢালা প্রাচীরের মত ঐক্যবদ্ধ করেন, আমাদেরকে ভাই-ভাই, এক পরিবার কোরে দেন। আমাদের মধ্যে রুহামা দান করেন। আল্লাহ আমাদের সকল অপরাধ, গোনাহ ক্ষমা কোরে দেন এবং তাঁর জান্নাতে আমাদেরকে স্থান দেন। পৃথিবী ও আখেরাতে মহা সফলতা দান করেন। আল্লাহ হাফেজ। সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতাল্লাহে ওয়া বারাকাতুহু।

বিষয়: বিবিধ

২১১৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

177258
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৫২
মিষ্টি স্বপ্ন আরিফ লিখেছেন : ভাই, আপনারা নতুন বাঙলা ব্যাকরণ আবিষ্কার করলেন নাকি?
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:২৯
130452
মোহাম্মদ আসাদ আলী লিখেছেন : জি না, বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারেই লিখা হয়েছে। কনফিউজ হলে খোজ নিয়ে দেখতে পারেন।
177307
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৫৬
বেআক্কেল লিখেছেন : কথাগুলো তালবিক জামায়াতের চাইতে ভাল লাগলো। মনে হয় আগে কোনদিন শুনিনি, আমনে কোথায় শুনছেন?
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৩২
130453
মোহাম্মদ আসাদ আলী লিখেছেন : সত্য ধারণ করার ক্ষমতা যাদের আছে তাদের কাছে কথাগুলো ভালো লাগা-ই স্বাভাবিক। আর আগে শোনেন নি কারণ এই সত্য এর আগে কেউ এভাবে তুলে ধরে নি।
177312
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:১১
মাজহার১৩ লিখেছেন : বক্তব্যের যে স্পিরিট এটা মানুষের কাছে যাওয়া দরকার। কিন্তু হিজবুত তওহীদ যা পরিবর্তন করতে চাচ্ছে তা গ্রহন করার দরকার নেই। সেটা ফেতনা।
জামাত শিবিরের বক্তব্যের স্পিরিট ও সেইম। পার্থক্য শুধু নির্বাচনী গনতন্ত্রে।
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৩
130490
মোহাম্মদ আসাদ আলী লিখেছেন : হেযবুত তওহীদ সেটাই পরিবর্তন করতে চাচ্ছে যা এই বক্তব্যে বলা হয়েছে। আপনি একদিকে বলছেন এই পরিবর্তনের ডাক প্রতিটি মানুষের কাছে যাওয়া দরকার অপরদিকে বলছেন কেউ যেন সেটাকে গ্রহণ না করে; অর্থাৎ আপনার মতামতটা হচ্ছে- আমি আছি কিন্তু আমি নাই- এই গোছের। যাই হোক শকুনের দোয়ায় যেমন গরু মরে না, তেমনি দরকার নেই বললেই মানুষের কাছে হেযবুত তওহীদের দরকার শেষ হয়ে যাবে তেমনটি হবে না। হেযবুত তওহীদের দরকার আছে, মানুষের নিজেদের প্রয়োজনেই দরকার আছে, সমাজ থেকে অন্যায়-অশান্তি-হানাহানি, রক্তপাত নির্মুল করার জন্য হেযবুত তওহীদের দরকার আছে। জামাত-শিবির আর হেযবুত তওহীদ এক নয়, কোনকালেই এক ছিলো না। স্পিরিটের এখনো কিছুই দেখেন নি। দেখবেন সামনে।
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৫
130492
মাজহার১৩ লিখেছেন : আমি আপনাদের এমামুজ্জামানতত্ত্ব, জুমা , মোজেজা ইত্যাদি ইত্যাদির বিরুদ্ধে।
177340
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৩
মোহাম্মদ ওমর ফারুক ডেফোডিলস লিখেছেন : হিজবুত তাহরীর, আর হিজবুত তৌহিদ এরা নিজের কিছু মনগড়া মতবাদ আবিস্কার করেছে যেটা গত ইন্ডপেন্ট টিভিতে তালাশ প্রোগ্রামে সরাসরি দেখায়েছেন মনজুরুল করিম ভাই, সেই থেকে আমি হিজবুত তৌহিদকে চিনি এবং জানি, এখনো মানুষ মানুষকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে এবং যে যা বলে তা মেনে চলতে গিয়ে ফেতনার সৃষ্টি হয়,
ধর্ম বিষয়ে মানুষের জ্ঞান অর্জন অন্যের মাধ্যম হওয়ায় ফেতনার সৃষ্টি হয়, মানুষ যদি নিজে কিছু ধর্ম জ্ঞান তালাশ করার চেষ্টা করতো তাহলে কিছুটা প্রার্থক্য করতে পারতো কোনটা সটিক কোনটা বেটিক।
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৩
130489
মোহাম্মদ আসাদ আলী লিখেছেন : আপনার ঐ মনজুরুল করিম ভাইয়ের মুখনিসৃত হেযবুত তওহীদ সম্পর্কিত প্রতিটি কথা একটা একটা কোরে মিথ্যা প্রমাণ কোরে দিতে পারব। সামান্য একটি টিভি প্রোগ্রামের মাধ্যমে হেযবুত তওহীদকে যাচাই করা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনার কমেন্টের শেষ তিন লাইনের সাথে সহোমত পোষণ করছি। হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে জানতে চাইলে হেযবুত তওহীদের কাছে থেকেই জানুন, মনজুরুল করিমের মাধ্যমে নয়।
177349
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:১১
লাঠীপেটা লিখেছেন : হিজবুত তাহরীর,হিযবুত তাওহীদ তুদেরকে বলছি তুরা এই বাংলাদেশে ধর্মান্ধতা প্রচার করে পার পাবি না.আব্দুর রহমানের মতো তুদের সবার এক অবস্হা হবে.তালেবানী মাল তালেবিন আফগানে থাকাই ভালো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File