পাঠকের প্রশ্ন: টাকা ছাড়া এমাম সাহেবরা নামাজ না পড়ালে নামাজ পড়ব কার পেছনে? (দেশেরপত্র ০৪-০২-২০১৪)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৪৯:৫২ সন্ধ্যা
প্রশ্ন- বহুল প্রচারিত দৈনিক দেশেরপত্র পত্রিকাটি আমি নিয়মিত পড়ে থাকি। পত্রিকাটিতে যে সকল ইসলামী গবেষণামূলক আর্টিকেল প্রকাশিত হয় আমি সেগুলো নিয়মিত পড়ি। গত ৬ জানুয়ারির পত্রিকায় প্রকাশিত মনিরুজ্জামান (হেযবুত তওহীদের রাজশাহী অঞ্চলের আমীর) সাহেবের লেখাটি পড়ার পর আমার হৃদয়ে কিছু প্রশ্ন নাড়া দেয়। আর্টিকেলটির প্রতিপাদ্য ছিলো ধর্মব্যবসায়ীদের অনুসরণ করা আল্লাহর নিষেধ। এতে বলা হোয়েছে- যারা ধর্মের বিনিময় নেন, তাদের পেছনে নামাজও হয় না। আল্লাহ মো’মেনদেরকে তাদের অনুসরণ কোরতে নিষেধ কোরে দিয়েছেন যাতে কোনভাবেই এই দীনে কোনো পুরোহিত শ্রেণির আবির্ভাব হোতে না পারে।’
বর্তমানে যারা এমামতি কোরছেন তাদেরকে উপযুক্ত বিনিময় না দিলে তো তারা বিনামূল্যে কখনোই নামাজ পড়াবেন না। তাহলে নামাজ পড়াবেন কে? মানুষ মারা গেলে জানাজা পড়াবেন কে? তখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমার নামাজ, ঈদের নামাজ, জানাজার নামাজ, তারাবির নামাজ ইত্যাদি কে পড়াবেন? বাবা মারা যাওয়ার পর ছেলে জানাজা পড়ালে তাতে কি কোন অসুবিধা আছে? লোক মুখে শুনি সন্তান জানাজা পড়ালে ছওয়াব বেশি হয়।
মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন আলতাফ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা।
উত্তর- প্রথমেই আপনার চিঠির জন্য শুকরিয়া জানাচ্ছি। আপনার প্রশ্নের উত্তর এক কথায় পরিষ্কার করা সম্ভব নয়, তাই একটু বিস্তারিত লিখতে হোচ্ছে। প্রথম কথা হোল, নামাজ কার জন্যে? আল্লাহর দৃষ্টিতে মানুষ দুই ধরণের। তিনি বোলছেন, আমি মানুষ সৃষ্টি কোরেছি, অতঃপর তাদের কেউ মো’মেন, কেউ কাফের (সুরা তাগাবুন-২)। অর্থাৎ মো’মেন না হওয়ার মানেই কাফের, এর মাঝামাঝি আর কোন পথ নেই। আর এসলামের প্রতিটি হুকুম মো’মেনদের উদ্দেশ্যে। যারা মো’মেন নয় তাদের নামাজ, রোজা, হজ্ব, জানাজা, জুম’আ কোন কিছুই আল্লাহ গ্রহণ কোরবেন না। আপনি জানতে চেয়েছেন, কার পেছনে আমরা নামাজ পোড়ব। এই প্রশ্নের উত্তর হোল, প্রথমে আপনাকে আল্লাহর দেওয়া সংজ্ঞা মোতাবেক মো’মেন হোতে হবে, তারপর আরেকজন মো’মেনের পেছনে নামাজ পড়তে পারবেন।
আল্লাহ কোর’আনে মো’মেনের সংজ্ঞা দিচ্ছেন- “প্রকৃত মো’মেন শুধু তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে বিশ্বাস করে, তারপর (ঈমান আনার পর) আর তাতে কোন সন্দেহ করেনা, এবং তাদের জান ও সম্পত্তি দিয়ে আল্লাহর পথে জেহাদ করে” (সুরা হুজরাত ১৫)। আল্লাহর দেয়া মো’মেনের সংজ্ঞায় দু’টি শর্ত দেয়া হোয়েছে; প্রথম শর্ত হোচ্ছে আল্লাহ ও রসুলের ওপর ঈমান, অর্থাৎ তওহীদ, যার অর্থ হোচ্ছে জীবনের সর্বাঙ্গনে সেটা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি যাই হোক না কেন, যে বিষয়ে আল্লাহ বা তাঁর রসুলের কোন বক্তব্য আছে, কোন আদেশ-নিষেধ আছে সে বিষয়ে আর কাউকে না মানা। দ্বিতীয় শর্ত হোল ঐ তওহীদকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা। বর্তমানে মোসলেম বোলে পরিচিত জাতিটিতে এ দু’টি শর্তের একটিও নেই।
তাহোলে প্রশ্ন হোচ্ছে- আল্লাহর দেয়া এই সংজ্ঞা মোতাবেক এই জাতি কি মো’মেন? অবশ্যই নয়। আর মো’মেন না হওয়ার অর্থ হয় মোশরেক না হয় কাফের। তাছাড়াও আল্লাহ কোর’আনে কাফেরের যে সংজ্ঞা দিচ্ছেন তা হোল – আল্লাহ যে আইন, বিধান নাযেল কোরেছেন তা দিয়ে যারা হুকুম করে না অর্থাৎ শাসনকার্য, বিচার ফায়সালা পরিচালনা (এখানে বিচার অর্থে আদালতের বিচার, শাসনকার্য সব বুঝায়, কারণ শব্দটা হুকুম) করে না তারাই কাফের, জালেম, ফাসেক (সুরা মায়েদা- ৪৪, ৪৫, ৪৭)। অর্থাৎ যারা আল্লাহর কোর’আনে দেওয়া আইন, বিধান দিয়ে শাসনকার্য ও বিচার ফায়সালা সম্পাদন করে না তারা যত বড় মুসুল্লিই হন, যত বড় মুত্তাকি, আলেম, দরবেশ, পীর-মাশায়েখ হোন না কেন কার্যতঃ কাফের। এই আয়াতের অর্থে সমস্ত পৃথিবীর মোসলেম বোলে পরিচিত এই জনসংখ্যা কার্যতঃ কাফের, যালেম এবং ফাসেক।
সুতরাং এ জাতিটিই মো’মেন নয়। নামাজে যারা এমামতি করেন তারাও মো’মেন নয়, মুসল্লীরাও মো’মেন নয়। তাই কার পেছনে কে নামাজ পড়বে? কারওই তো নামাজ হয় না। এমন অবস্থায় নামাজ কীভাবে পড়তে হবে, জানাজা কে পড়াবেন, খুৎবা কে দিবেন-কীভাবে দিবেন ইত্যাদি প্রশ্নগুলো অবান্তর। আগে মো’মেন হোতে হবে, আমল করার প্রশ্ন আসবে তার পরে। আমরা যামানার এমামের অনুসারীরা মানুষকে তাই আগে মো’মেন হবার জন্য আহ্বান কোরছি।
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৪ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এমাম
এসলাম
যামানার এমাম! এবং তার অসুসারীরাই শুধু মো’মেন!!! হায় আল্লাহ্! রক্ষা করুন।
যেমন রাসূল(সাঃ) যখন মদীনায় গেলেন – তখন তো কারও কিছু ছিলো না, সবাইকে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়ে সেখানে জীবন-যাপনের অবলম্বনের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং রাসূল(সাঃ)ও সেখানে জমিতে ঘর তৈরী করে সেখানে ঈমাম ছিলেন; এভাবে মুহাজির অন্য সবাইও তাই।
ঈমামদের এ বিষয়কে বিনিময় আমি বলি না, কেননা – তাদেরকে যে টাকা দেয়া হয় তা খুবই অল্প – সেটা না দিলে তাদের জীবন-যাপনই কষ্টকর; তাই এটাকে আমি অবলম্বন বলি।
আপনার কি মত?
পীর সাহেবদের দরবারে আমার যাবার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এখনও যাওয়া হয়ে ঊঠেনি। তাই উনারা কি করে তা বিভিন্ন জনের মতামতে জানতে পারি। ধর্মকে ব্যবসা হিসেবে নেয়া যাবে না – তা ঠিক আছে। এবং যতদূর জানি – হাদিয়া গ্রহণ করা যায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন