পর্যবেক্ষণ: ধর্মজীবীদের কূপমণ্ডূকতা ও নারীর অবমূল্যায়ন
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ১৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৫:৩১:৩২ বিকাল
এসলাম নারীদেরকে যে স্বাধীনতা দিয়েছে সেটা বর্তমান এই ইহুদি খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’ অর্থাৎ দাজ্জালের তৈরি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি জীবনব্যবস্থাগুলোতে দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। তেমন স্বাধীনতা এখনও কেউ দিতে পারে নি। আমরা হেযবুত তওহীদ গত ১৮ বছর ধরে যে কথাটা বারবার বলে আসছি এবং এনশা’আল্লাহ বোলে যাবো, সেটা হোচ্ছে বর্তমানে সারা দুনিয়ায় যে এসলামটা চালু আছে, যার বহুরকম রূপ আছে, এর কোনটাই আল্লাহর দেওয়া এসলাম নয়। আল্লাহর রসুলের প্রকৃত এসলাম ১৩০০ বছর ধরে বিকৃত হোতে হোতে বর্তমানে একেবারে বিপরীতমুখী হোয়ে গেছে। সর্বশেষ বিকৃতি সাধন করে ব্রিটিশ খ্রিস্টানরা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কোরে। কয়েক শতাব্দী আগে সারা বিশ্বের যে মোসলেম প্রধান দেশগুলি ইউরোপীয় খ্রিস্টান জাতিগুলির উপনিবেশে পরিণত হোয়েছিল, সে এলাকাগুলিতে খ্রিস্টানরা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কোরে সেখানে তাদের নিজেদের তৈরি করা একটি বিকৃত এসলাম শিক্ষা দেয়। এই বিকৃত এসলামের উদ্দেশ্য ছিল, এই জাতি যেন দীনের ছোটখাটো বিষয়, ব্যক্তিগত মাসলা মাসায়েল নিয়ে মতভেদে লিপ্ত থাকে এবং সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে মাথা না ঘামায়। অর্থাৎ এসলামকে ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে আবদ্ধ কোরে ফেললো। আল্লাহর সার্বভৌমত্বের চেয়ে, আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রামের চাইতে এখানে দাড়ি-টুপির গুরুত্ব বেশী দেওয়া হোল। সেই এসলামটিই আজ সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন রূপে চর্চিত হোচ্ছে। ফলে আজ সারা দুনিয়াতে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, হুকুমদাতার স্বীকৃতি না থাকলেও দাড়ি ঠিকই আছে, কুলুখ ঠিকই আছে।
এসলামের অন্যান্য সকল দিক যেমন হারিয়ে গেছে তেমনি নারীর সম্পর্কে এসলামের সঠিক আকীদাও হারিয়ে গেছে। আজকে এসলামের প্রতিটা দিক বিপরীত। সত্য এসলামের নারী কেমন ছিল সেটা আজকের মানুষ কল্পনাও কোরতে পারে না। পরহেজগার নারী বোলতেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে আপাদমস্তক কালো কাপড়ে আবৃত একজন নারী, যার সাত চড়েও কোন রা নেই। সে এতই অবলা, সরলা যে চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড় কোরিয়ে দিলে বাড়ি ফিরে আসতে পারে না, ঐখানে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে, স্বামীর সহায়তা ছাড়া সে এক কদমও চোলতে পারে না, বাস থেকে নামতে পারে না, নিজের পোশাকের সঙ্গে আটকে যখন তখন হোঁচট খায়। এই নারীমূর্তি দেখেই মানুষ ভাবছে এসলাম নারীকে বুঝি এভাবেই অথর্ব, জড়বুদ্ধি, অচল, বিড়ম্বিত কোরেই রাখতে চায়। এজন্য কথায় কথায় মানুষ এসলামকে গালি দেয়, এসলামকে গালি দেওয়ার অর্থই আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে গালি দেওয়া।
তাদের উদ্দেশ্যে আমরা যে কথাটি বোলে আসছি বিগত ১৮ বছর ধরে, সেটা হোল: আপনারা যে এসলামকে গালি দিচ্ছেন, মন্দ বোলছেন সেটা আল্লাহ রসুলের এসলাম নয়। আল্লাহর রসুলের প্রকৃত এসলাম আছে হেযবুত তওহীদের কাছে। আজ যেমন সময় এসেছে এসলামের বিকৃতিগুলির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার, তেমনি সময় এসেছে প্রকৃত এসলামের অনিন্দ্য সুন্দর রূপ মানুষের সামনে তুলে ধরার।
আজকের অনেক আলেম ওলামা মুফতিরা তাদের ওয়াজ নসিহতে শ্রোতাতের আনন্দ দেওয়ার জন্য নারীদের সম্পর্কে বহু অশ্লীল, অরুচিকর উক্তি কোরে থাকেন। তাদের কথা শুনে কেউ যেন এটা মনে না করেন যে, এগুলি আল্লাহ-রসুলের কথা। এই আলেমদের সঙ্গে আল্লাহ ও রসুলের কোন সম্পর্ক নেই, কারণ তারা যে এসলামটিকে বিক্রি কোরে খান, সেটা আল্লাহর-রসুলের এসলামই নয়, সেটা ব্রিটিশ খ্রিস্টান এবং ১৩ শ’ বছরের হাজার হাজার তথাকথিত ধর্মজীবী আলেম-ওলামাদের করা সম্মিলিত বিকৃতির ফসল। এই বিকৃত এসলামকে আল্লাহ-রসুলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা তাঁদের অপমান। এই সব ভাড়াটে আলেমরা কেবল নারীদের ব্যাপারে নয়, এসলামের প্রায় প্রতিটি ব্যাপারেই বিকৃত মন্তব্য কোরে থাকে, বহু অকাট্য সত্য গোপন কোরে থাকে। এটা সবাই জানেন যে সুদ খাওয়া হারাম। এটা যেমন সত্য, তার থেকেও বড় সত্য হোল ধর্ম ব্যবসা হারাম (সুরা বাকারা ১৭৪ সহ আরও বহু আয়াত)। কিন্তু এটা তারা বলে না ব্যবসায় ধ্বস নামবে বোলে। এরকম আরও অনেক আছে।
যাহোক আমাদের কথা হোল নারীদের স্বাধীনতা। যে স্বাধীনতা এসলাম দিয়েছে সে স্বাধীনতা অন্য কেউ দিতে পারে নাই। প্রকৃত এসলাম কেমন ছিল তা ইতিহাসের পাতায় পাতায় লিখিত আছে। প্রকৃত এসলামে নারীদের যে ভূমিকা ছিল তা কি কেউ অস্বীকার কোরতে পারবেন?
১. নারীরা মহানবীর সামনা সামনি বসে আলোচনা শুনতেন, এ সময় মহানবী ও মেয়েদের মাঝে কোনো কাপড় টাঙ্গানো ছিল এই ব্যাপারে কেউ কোনো দলিল দেখাতে পারবে না। একবার নারী সাহাবীরা রসুলাল্লাহকে অনুরোধ কোরেছিলেন শুধু তাদেরকে নিয়ে আলোচনা সভা করার। কারণ পুরুষ সাহাবীদের উপস্থিতিতে মেয়েরা অনেক বিষয়ে প্রশ্ন কোরতে দ্বিধা কোরতেন। রসুলাল্লাহর সময় পুরুষ ও নারী একই সঙ্গে সালাহ কায়েম কোরত, নারীদের জন্য বিশেষ কক্ষের বন্দোবস্ত ছিল এমন কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। উল্লেখ্য, মেয়েরা তখন মসজিদের পাঁচ ওয়াক্ত জামাতে, জুমা’র সালাতে, দুই ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ কোরত। তখনকার জুম্মা এখনকার মত মৃত জুম্মা না। ঐ জুম্মা ছিল রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু, সেখানে মহানবী (দ) বাধ্য কোরেছেন মেয়েরা যেন জুম্মায় আসে। এমনকি যে সমস্ত মেয়ে বোলেছে যে তাদের রজঃকালীন অপবিত্রতা আছে তাদের বোলছেন যে, ‘তোমাদের সালাহ কায়েমের দরকার নেই, তবে খোতবা শুনতে হবে।’ কারণ জুম্মা হোচ্ছে এই উম্মাহর জাতীয় সম্মেলন।
২. নারীরা মহানবীর (দ) সাথে থেকে যুদ্ধ কোরেছেন, শত্রুদের হামলা কোরেছেন, আহতদের চিকিৎসা দিয়েছেন, নিহতদের দাফনে সহায়তা কোরেছেন, যুদ্ধ চলাকালীন সৈন্যদের খাবার, পানীয় ও অন্যান্য রসদ সরবরাহ কোরেছেন। যে যোদ্ধাদেরকে তারা চিকিৎসা ও সেবা দিয়েছেন তারা কিন্তু অধিকাংশই ছিলেন আলেমদের ভাষায় “বেগানা পুরুষ”। মসজিদে নববীর এক পাশে তৈরি করা হোয়েছিল যুদ্ধাহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা। এই বিশেষ চিকিৎসা ইউনিটে অধ্যক্ষ ছিলেন একজন নারী, রুফায়দাহ (রা)। ওহুদের যুদ্ধে রসুলাল্লাহ যখন সাংঘাতিক আহত হন, তখন কাফেরদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে রসুলাল্লাহকে প্রতিরক্ষা দেওয়ার জন্য তলোয়ার হাতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন উম্মে আম্মারা (রা)। পরবর্তীতে রসুলাল্লাহ বোলেছিলেন, ওহুদের দিন যেদিকে তাকাই কেবল উম্মে আম্মারাকেই (রা) দেখতে পেয়েছি।” পক্ষান্তরে, ব্রিটিশ, আজকে যাদের জীবনব্যবস্থা দিয়ে দুনিয়া চলে তারা নারীদেরকে ভোটের অধিকার দিয়েছে ১৯২৮ সনে, এখনও একশ বছরও হয় নি। তারা সেনাবাহিনীতে মেয়েদের অন্তর্ভুক্ত কোরেছে তারও একশ বছর হয় নি। যুদ্ধাহতদের সেবা দেওয়ার জন্য ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলকে নার্সিং জগতে প্রায় দেবীর আসনে অধিষ্ঠিত করা হয়, তাকে আধুনিক নার্সিং-এর পুরোধা বলা হয়, কিন্তু ১৪০০ বছর আগের রুফায়দাহর (রা) কথা এই এ জাতিকে ভুলিয়ে দেওয়া হোয়েছে।
৪. ১৪০০ বছর আগে নারীরা প্রচণ্ড ধাক্কাধাক্কির মধ্যেও পুরুষদের সঙ্গেই হজ্ব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ কোরত, যেটা এখনও চালু আছে।
৬. তারা কৃষিকাজে, শিল্পকাজে অংশগ্রহণ কোরেছেন, রসুলাল্লাহর প্রথম স্ত্রী আম্মা খাদিজা (রা) সে সময়ের একজন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী ছিলেন। ওমর (রা) এর আমলের সময় বাজারসহ সব ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন একজন নারী শেফা (রা)।
মূল কথা হোচ্ছে, যেখানে সবচাইতে বিপদ সংকুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হোচ্ছে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ, সেই যুদ্ধে মেয়েরা পুরুষের সঙ্গে সমানতালে অংশগ্রহণ কোরে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে সেখানে চাকুরী, শিক্ষা, ব্যবসায়, বৈষয়িক অন্যান্য কাজে কর্মে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ তো সাধারণ ব্যাপার। মেয়েরা পুরুষের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কোরে গেছে। সালাহ হোচ্ছে জেহাদের চরিত্র সৃষ্টির প্রশিক্ষণ অর্থাৎ ট্রেনিং। জেহাদেও মেয়েদের আলাদা করা হয় নি, জেহাদের প্রশিক্ষণ সালাতেও তাদের আলাদা করা হয়নি। কিন্তু এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা মেয়েদের সালাহকে বিকৃত কোরে ছেলেদের থেকে আলাদা নিয়ম বের কোরেছে। মেয়েদেরকে সবচেয়ে একেবারে নির্বাসিত কোরেছে বিকৃত পর্দা বা হেজাবের ফতোয়া দিয়ে। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহর পরিষ্কার কথা হোচ্ছে তাদের স্বাভাবিক প্রকাশমান অঙ্গসমূহ খোলা থাকবে, বক্ষ ও গ্রীবা বড় এক খণ্ড কাপড় দিয়ে আবৃত থাকবে এবং তাদেরকে যেন চিনতে পারা যায় (সুরা নুর ৩১, সুরা আহযাব ৫৯)। এই বিধানের বিষয়ে অগণিত হাদিস আছে। সেখানে কিম্ভুতকিমাকার ও ভৌতিক বোরকা পরিয়ে মেয়েদেরকে চলমান তাবুসদৃশ করা হোয়েছে, এটা এসলাম না। সুতরাং এই মোল্লাদের অপপ্রচার, অপব্যাখ্যা এসলামের ব্যাখ্যা নয়। নারীদের সম্পর্কে প্রকৃত এসলাম তারা জানে না। ১৩০০ বছরে এটা বিকৃত হোয়ে গেছে। সত্যিকারের এসলাম কোনটা? হেযবুত তওহীদ উল্লেখ কোরছে। আসুন সে এসলামে। আসুন আল্লাহর দেওয়া সিস্টেমে।
বিষয়: বিবিধ
১০৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন