একটি রূপক গল্প - হোটেল হ্যাভেনের খোঁজে একদিন (জান্নাতের সন্ধান যে পথে)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ১৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৫:১৫:৫১ বিকাল
আগের দিন রাতে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফোন দিয়ে বললো, “বন্ধু, আমি হোটেল হ্যাভেনে আছি, একটু দেখা কোরবি?” বয়সের বিস্তর ব্যবধান থাকলেও সে আমার খুব ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধু। নানাবিধ ব্যস্ততার কারণে তার সাথে আমার অনেকদিন কোনো যোগাযোগও হয় নি। কিন্তু সে ফোন দেবার পর থেকে আমার আত্মা যেন শরীর থেকে বের হয়ে যেতে চাচ্ছে তার কাছে। তাই দেরি না কোরে পরদিন সকালেই বের হয়ে পড়লাম হোটেল হ্যাভেনের খোঁজে। কিন্তু সমস্যার বিষয় হোল আমি হোটেলের লোকেশন জানি না এবং চীনের সাংহাই শহরে আমি নতুন। অনেকের কাছে শুনে শুধু এইটুকু বুঝতে পারলাম যে, একটি বড় রেল স্টেশন পার হয়ে কিছুদূর গেলেই আমি হোটেল হ্যাভেন পেয়ে যাব। একটা অস্পষ্ট ঠিকানা নিয়ে অজানা রাস্তায় আমার গন্তব্যের সন্ধানে চোল্লাম। প্রথমে খুঁজে বের কোরলাম সেই রেল স্টেশন। স্টেশনটি পেতে অবশ্য খুব বেশি বেগ পেতে হয় নি। স্টেশনে এসে আমার চোখ ধাঁধিয়ে গেল। স্টেশন তো নয় যেন বিশাল একটা শহর। স্টেশনের সম্পূর্ণ সীমানাকে একটা শহরই বলতে হবে, কারণ এই সীমানার মধ্যেই রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর এ্যাপার্টমেন্ট, বেশকিছু শপিংমল, পার্ক ইত্যাদি। সে এক এলাহী কাণ্ডকারখানা। এই সীমানা পার হোলেই হোটেল হ্যাভেন। আমি ভেতরে ঢুকেই খুঁজতে লাগলাম অপর প্রান্ত। আমার শুধু একটাই চিন্তা, কিভাবে এটি পার হবো। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর দেখলাম আমি পূর্বের জায়গায়ই (যেখান থেকে হাঁটা শুরু কোরেছিলাম) ফিরে এসেছি। এবার কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা কোরলাম, ‘কিভাবে আমি এটি অতিক্রম কোরে হোটেল হ্যাভেনের রাস্তা পাবো?’ অবাক ব্যাপার হোল, তাদের প্রত্যেকেই আমাকে আলাদা আলাদা পথ দেখিয়ে দিল। তাদের দেওয়া পথগুলি দিয়ে আমি চেষ্টা কোরে চোল্লাম আমার গন্তব্য খুঁজে বের কোরবার। সকাল গড়িয়ে দুপুর হোয়ে আসলো, আমি ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত। কিছু খাবার খেয়ে আবারও বের হোলাম হ্যাভেনের খোঁজে। কিছুদূর হাঁটার পর একজন আমায় বললো যে, আমি নির্দিষ্ট একটি সীমানার মধ্যে ঢুকে পড়েছি যেখানে ঢুকতে টিকেট লাগে; তাই, আমাকে জরিমানা গুণতে হোল। এবার যাও কিছু টাকা আমার কাছে ছিল কোনো এক পকেটমার তাও আর রাখলো না, আমার পকেটটিই তাকে কাটতে হোল! আমি অবাক হোলাম, গুলিস্তানের সঙ্গে সাংহাইয়ের অনেক পার্থক্য থাকলেও একটি মিল খুব চমৎকার, সেটা হোল পকেটমার। আমি বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হোয়ে পড়লাম। মন খারাপ কোরে বসে রোইলাম প্লাটফর্মের এক কোণে। অনেক মানুষ আসা-যাওয়া কোরছে, কেউ আমার দিকে চেয়েও দেখছে না। অবশেষে একজন ভদ্রলোক আমার কাছে আসলেন, আমার সব শুনে তিনি বোললেন যে আমি যেখানে যাব সেখানে যাবার জন্য তো টাকা প্রয়োজন, কাজেই আমাকে টাকা আয়ের কিছু রাস্তা বলে দিলেন এবং কিছু টাকাও দিয়ে গেলেন। এবার আমি টাকা উপার্জন কোরতে গেলাম এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ কিছু টাকা আয় কোরে ফেললাম। সেখান থেকেই পরিচয় হোল এক মেয়ের সাথে। সে আমার সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে আগ্রহ প্রকাশ কোরল। আমি তার সাথে পার্কে, শপিংমলে ইত্যাদি জায়গায় ঘুরে বেড়ালাম, একসাথে খাওয়াদাওয়া কোরলাম। কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই গেলাম কেন আমি এখানে এসেছি। আমাদের মতই অনেক যুগল দেখলাম মহানন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অনেক দৃষ্টিকটু ঘনিষ্ঠতাও চোখে পড়লো। সারাদিনে অনেক কিছুই দেখলাম। যখন সূর্য প্রায় অস্তমিত হবার পথে তখন আবার আমি আমার গন্তব্য খোঁজার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। অনেকেই দেখি আমার মতই ব্যস্ত হয়ে ছোটাছুটি কোরছে। জানতে পারলাম তারাও নাকি হোটেল হ্যাভেন যাবে। আমি তো মহাখুশি, তাদের পিছু পিছু গেলাম এক প্লাটফর্মে। সেখানে গিয়ে দেখি আমার মত অনেক লোকের ভিড়, সবাই হোটেল হ্যাভেনে যাবার জন্য টিকেট কাটছে। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে এক কোণে আমি বসলাম। কিছুক্ষণ পর সাদা পোষাকে একজন মানুষ আমার পাশে এসে বসলো, বললো- হোটেল হ্যাভেন যাবেন? এখানে একটি ট্রেনও হ্যাভেন যাবে না। আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, তাহলে সবাই যে টিকেট কোরছে হোটেল হ্যাভেনে যাবার, তাছাড়া ট্রেনগুলিতেও হোটেল হ্যাভেনের নাম লেখা। তখন সে বললো, “এখানে প্রতিটা ট্রেন আলাদা আলাদা রাস্তায় যাচ্ছে, একই গন্তব্যের ট্রেন হোলে তো একই রাস্তায় যাবার কথা। এই স্টেশনে যাদের দেখলে তারা সবাই এখানে এসেছিল তোমার মতই হোটেল হ্যাভেনে যাবার জন্য কিন্তু সবাই মত্ত হয়ে গেছে বিভিন্ন কাজে; কেউ অভাবে, কেউ বিলাসিতায়, কেউ নেশাগ্রস্ত আবার কেউবা অর্থ উপার্জনের লোভে তাদের গন্তব্যের কথা ভুলে গেছে। আর যারা গন্তব্যের দিকে ছুটছে তারা আসলে ভুল পথে ছুটছে, কারণ তাদেরকে যারা ট্রেনে কোরে নিয়ে যাচ্ছে তারাও রাস্তাটি চেনে না। তারা তো শুধু টাকা উপার্জনের ফাঁদ পেতে রেখেছে।” আমি বললাম, “তাহোলে কি হোটেল হ্যাভেনে যাবার কোনো উপায় নাই?” তার উত্তর- আছে, একটা বাচ্চা ছেলে তোমাকে কি ডাকেনি হ্যাভেনের রাস্তা দেখানোর জন্য? একটু ভেবে বললাম, “হ্যা, ডেকেছিল তো, কিন্তু তার পোষাক-পরিচ্ছদ, চেহারা, বয়স ইত্যাদি দেখে মনেই হয় নি যে সে হোটেল হ্যাভেনের রাস্তা চিনতে পারে।” সে বললো, “প্রতিদিন সূর্য ওঠার সাথে সাথে এখানে ভিড় বাড়তে থাকে, প্রত্যেকেই আসে হোটেল হ্যাভেনে যাবার জন্য, একবার সূর্য অস্তমিত হোলে আর তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রত্যেকেরই স্টেশন ছাড়তে হয় কিন্তু হোটেল হ্যাভেনে খুব কম সংখ্যক লোকই যেতে পারে। এখনও যদি হোটেল হ্যাভেনে যেতে চাও তবে ঐ কর্ণারে দেখ বাচ্চা ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে তোমার পথ চেয়ে। কোনো স্বার্থের জন্য ঐ ছেলেটি তোমার পিছু নেয় নি। ছেলেটি রাস্তা চেনে, তাই সে চায় দল বেঁধে সেখানে যেতে। ঐ রাস্তায় দল বেঁধেই যেতে হয়। সব শুনে আমি ঐ ছেলের কাছে এগিয়ে গেলাম এবং তাঁর সাথে একাত্মতা পোষণ কোরলাম। তখন সে আমাকে কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখাল। এক জায়গায় গিয়ে দেখলাম কিছু বাচ্চা ছেলে মেয়েদের নির্মমভাবে প্রহার করা হোচ্ছে, এক জায়গায় কিছু মানুষকে জবাই কোরে তাদের রক্ত, কিডনী, মগজ, গোস্ত খাওয়া হোচ্ছে। আমি জানতে চাইলাম এগুলি আমাকে কেন দেখানো হোচ্ছে, উত্তরে সে বললো- এগুলি বন্ধ না কোরলে আমরা হোটেল হ্যাভেনে ঢুকতে পারবো না। এই কাজের সাথে জড়িত রোয়েছে এই স্টেশনের সকল কর্মকর্তা তথা এর অবৈধ কর্তৃপক্ষ। আমি বললাম, “তাহোলে আমরা কিভাবে এটা কোরবো?” সে আমাকে অভয় দিয়ে বললো, “ভয় নেই, এর প্রকৃত মালিকই হোটেল হ্যাভেনের মালিক এবং হোটেলটি তাদের জন্যই তৈরি করা হোয়েছে যারা এই স্টেশনের কর্তৃত্ব এর প্রকৃত মালিকের হাতে ফিরিয়ে দেবে। যদিও মালিক ইচ্ছা কোরলেই তাঁর মালিকানা এক মুহূর্তেই নিজের হাতে নিতে পারে তবুও তিনি আমাদের পুরস্কৃত কোরতে চান। আর যাদেরকে তুমি দেখেছ উপাসনা কোরতে, তাদের ঐ উপাসনা কোনো কাজে আসবে না কারণ উপসনা কোরে তো আর প্রকৃত মালিকের হাতে কর্তৃত্ব ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আমি কিন্তু একা নই, আমার সাথে অনেকেই আছে, তারাও আমার মত অন্যদের এই প্রকৃত সত্যটি বোঝাচ্ছে।” আমি জানতে চাইলাম কিভাবে সে এগুলো জেনেছে। তখন সে বললো, “সেই প্রকৃত মালিক আমাদেরকে জানিয়েছে, এখন আমাদের কাজ সমস্ত স্টেশনেই সেই প্রকৃত মালিকের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এটা কোরতে পারলেই হোটেল হ্যাভেনের রাস্তা পাব”। প্রিয় পাঠক, বাস্তবতার সাথে কল্পনার রং লাগিয়ে রূপক অর্থে আমার এই গল্পটি লেখা। তাই কিছুটা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন বোধ কোরছি।
এই গল্পে-
হোটেল হ্যাভেন হোচ্ছে- জান্নাত; সবাই যেখানে যেতে চায়, কিন্তু হেদায়াতের আলো সবার কাছে পৌঁছে না, ফলে খুব কম সংখ্যক মানুষই জান্নাতে যেতে পারে। রেইল স্টেশনটি হোচ্ছে- পৃথিবী; পৃথিবীর রং, রূপ, রসে মানুষ ভুলে যায় তার লক্ষ্যের কথা, কিন্তু বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠলে এ স্বাদের পৃথিবী ছাড়তেই হয়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হোচ্ছে- একটা মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু; মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অর্থাৎ সম্পূর্ণ জীবনটাই একটি পরীক্ষা ক্ষেত্র। আল্লাহ পাক দেখতে চান মানুষ তার জীবন কোন পথে ব্যয় করে। ভুল দিকনির্দেশনা হোচ্ছে- এসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ লোকদের উপদেশ; আমাদের সমাজে কিছু লোক আছেন যারা নিজেরা দিকভ্রান্ত, কিন্তু কেউ এসলাম সম্পর্কে কোন প্রশ্ন কোরলে একটা না একটা উত্তর দিয়ে দেন। তারা হয়তো নিজেরা কোন দল বা পীরের অনুসারী, সেখানে যে জ্ঞান তারা পান সেটাকেই অবলম্বন কোরে অন্যকে দিকনির্দেশনা দেন যে এসলামের কোন কাজ কিভাবে কোরতে হয়, কোনটি জায়েজ কোনটি না জায়েজ ইত্যাদি। নির্দিষ্ট সীমানায় ঢোকার জন্য টিকেট চাওয়া- পাসপোর্ট, ভিসা; আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধিত্ব বা খেলাফত দান কোরেছেন। পৃথিবীর মালিকানা আল্লাহর, তাই মানুষের কোন এখতিয়ার নেই একে খণ্ড খণ্ড কোরে কোন মানুষের বসবাস ও বিচরণের অধিকারকে সীমিত করার। তাই পৃথিবীর যে কোন জায়গায় অবাধে যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ ইত্যাদি কোরতে পারা প্রতিটা মানুষের জন্মগত অধিকার। অথচ দাজ্জাল অর্থাৎ ইহুদি খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’ ভৌগোলিকভাবে মানবজাতিকে দুই শতাধিক ভাগে বিভক্ত কোরে রেখেছে। ভিসা, পাসপোর্ট ইত্যাদি বিধি-নিষেধের মাধ্যমে প্রবেশ সংরক্ষিত করার কোন অধিকার কারও দেওয়া হয় নি। কিন্তু ইহুদি খ্রিস্টান বস্তুবাদী সভ্যতা তথা দাজ্জাল ক্ষমতার জোরে এ ব্যবস্থা কায়েম কোরে রেখেছে। পকেট মারা- অসৎ ও দুর্নীতিবাজদের কাজ; রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিচালকরাই যখন অসৎ হয় তখন সাধারণ মানুষগুলিও নানারকম অসৎ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। যে ভদ্রলোকটি উপার্জনের রাস্তা দেখিয়ে দিল এবং খাবার জন্য টাকা দিল- সৎ চরিত্রের মানুষ (কিন্তু হেদায়াত প্রাপ্ত নয়); সততা ও হেদায়তপ্রাপ্ত এক জিনিস নয়। হেদায়াহ হোচ্ছে সঠিক পথপ্রাপ্ত হওয়া, এটিই জান্নাতে যাবার একমাত্র শর্ত। সঠিক পথ না পেলে যেমন গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না, তেমনি হেদায়াতপ্রাপ্ত অর্থাৎ তওহীদের উপর না থেকে কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। আর সততা বা তাকওয়া হোচ্ছে সাবধানে পথ চলা বা সাধারণ অর্থে ভাল কিছু গুণাবলী; ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ যে কেউই সৎ হতে পারে কিন্তু হেদায়াত না পেলে গন্তব্য জাহান্নাম। টাকা উপার্জনে আত্মনিয়োগ- পৃথিবীর বাস্তবতা; টাকা উপার্জন কোরতেই হয়, এটা জান্নাতে যাবার অন্তরায় নয়। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, টাকা উপার্জনের জন্যই আপনি পৃথিবীতে আসেন নি। আপনার গন্তব্য হোচ্ছে মৃত্যুর পরবর্তী জীবন। একটা মেয়ের সাথে পরিচয় ও তাকে নিয়ে পথচলা- দাম্পত্য জীবন; এটাও জীবনের একটা অংশ। তবে এর জন্য লক্ষ্য ভুলে গেলে চোলবে না। গন্তব্যের কথা কিছু সময়ের জন্য ভুলে যাওয়া- সাংসারিক জীবনের মোহে আখেরাতকে ভুলতে বসা; অধিকাংশ মানুষ সাংসারিক চাপে, ভোগ বিলাসিতায় মত্ত হোয়ে মূল উদ্দেশ্যই ভুলে যায়। যেমন আজ সমস্ত পৃথিবীর মানুষই ভুলে বসে আছে যে তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হোয়েছে মানবজাতিকে শান্তিপূর্ণ জীবনবিধান (সত্যদীন এসলাম) দিয়ে শাসন করার জন্য। দিন শেষে অনেক লোকের ভিড়- শেষ জীবনে ধার্মিক হওয়া; অধিকাংশ মানুষ জীবনের অতি মূল্যবান সময় নষ্ট কোরে বৃদ্ধ বয়সে ধার্মিক হবার চেষ্টা করে, মূলত তখন আর খারাপ কাজ কোরবার খুব বেশি হিম্মত ও সুযোগও থাকে না, তাই এই ধার্মিক হবার চেষ্টা। হোটেল হ্যাভেনে যাবার ট্রেন, টিকেট কাউন্টার ও এর সাথে জড়িত লোকগুলি- বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, দল, ফেরকা, মাযহাব ও এগুলি নিয়ে যারা ধর্মব্যবসা কোরে টাকা উপার্জন করে; আজ সমস্ত পৃথিবীব্যাপী চোলছে রমরমা ধর্মব্যবসা। বৌদ্ধ, হিন্দু, মোসলেম, খ্রিস্টান, ইহুদিসহ সকল ধর্মেই গজিয়ে উঠেছে এই পরধনলোভী, অতি নিকৃষ্ট একটা শ্রেণি, যারা অর্থের বিনিময়ে জান্নাতের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে অন্য অর্থে জান্নাতের টিকেট বিক্রি করে। বিভিন্নভাবে এরা ধর্মের অপব্যবহার কোরে চোলেছে। এদের দ্বারা সাধারণ মানুষ প্রতারিত হোচ্ছে প্রতিনিয়ত। কেউ ধর্মকে ব্যবহার কোরে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা কোরছে এই বোলে যে, অমুক মার্কায় ভোট দিলে জান্নাত অনিবার্য; কেউ পীর সেজে, কেউ নামাজ পড়িয়ে, মিলাদ পড়িয়ে, ওয়াজ কোরে, ফতোয়াবাজী কোরে ইত্যাদির মাধ্যমে টাকা উপার্জন কোরছে। তারা নিজেরাই জাহান্নামের পথিক আর মানুষকে দেখাচ্ছে জান্নাতের পথ। সাদা পোষাকের লোকটি- আমার আত্মা; যখন মানুষের বেলা পড়ে আসে তখন মানুষ পরচর্চা বাদ দিয়ে আত্মচর্চায় মগ্ন হয়। একটা মানুষ যখন প্রাণপণে সত্য পথ খুঁজে বেড়ায় ও আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত সত্যপথের দিশা পেতে প্রার্থনা করে তখন তার আত্মাই বলে দেয় কোনটি সত্য। জীর্ণ-শীর্ণ পোষাকের ছোট্ট ছেলেটি- হেদায়াত প্রাপ্ত একদল মানুষ; যারা বিনা স্বার্থে মানুষকে হেদায়াতের দিকে, আল্লাহ্ ও তাঁর রসুলের প্রকৃত এসলামের দিকে ডাকছে। বাচ্চা ছেলেমেয়েদের প্রহার করা ও মানুষকে জবাই কোরে রক্ত, কিডনী ইত্যাদি ভক্ষণ- দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার এবং শোষণ; যেটা সমস্ত পৃথিবীব্যাপীই চোলছে। প্রকৃত মালিক- আল্লাহ্; শুধু পৃথিবীই নয়, সমস্ত সৃষ্টি জগতের মালিক আল্লাহ পাক। তিনি আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এই পৃথিবীর সকল অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দূর কোরে তাঁর সত্যদীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য। এটাই আমাদের প্রকৃত এবাদত। অবৈধ কর্তৃপক্ষ- বর্তমান পৃথিবীর কর্তৃত্ব কোরছে যারা; অর্থাৎ ইহুদি খ্রিস্টান বস্তুবাদী সভ্যতা তথা দাজ্জাল, আজ সমস্ত মানবজাতি দাজ্জালের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়ে তার তৈরি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি দিয়ে নিজেদের জীবন পরিচালনা কোরছে, অথচ আল্লাহ মানবজাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন বিধান কোর’আন দিয়েছেন যার মধ্যে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু কোরে জাতীয়, আন্তর্জাতিক আইন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি সকল বিষয়ের পূর্ণ সমাধান রোয়েছে। কিন্তু এটি পৃথিবীর কোথাও পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠিতি নেই। এটি প্রতিষ্ঠিত না কোরে যত নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাতই করা হোক আল্লাহর কাছে তার কোন দাম নেই, কারণ ওগুলো করার জন্য আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেন নি, বরং এগুলি হোল সত্যদীন প্রতিষ্ঠার জন্য যে চরিত্র দরকার তা অর্জনের প্রক্রিয়া। আজকে নানা দল, নানা মত, নানা পথের ভিড়ে সঠিক রাস্তা চেনা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু যে ব্যক্তি সর্বক্ষণ সত্যের সন্ধান করে, হেদায়াহ্ খুঁজে বেড়ায় এবং আল্লাহর নিকট হেদায়াতের জন্য খালেস মনে চায় সে অবশ্যই সত্যের সন্ধান পাবে। মানুষ আজ সত্য ভেবে যেটাকেই গ্রহণ কোরছে, আখেরে প্রতারিত হোচ্ছে। কিন্তু সেই প্রকৃত সত্য, প্রকৃত হেদায়াহ্, প্রকৃত এসলাম এসে গেছে। সেই প্রকৃত এসলামের দিকে ডাকছে যামানার এমামের অনুসারীগণ, হেদায়াতপ্রাপ্ত একদল মানুষ তথা হেযবুত তওহীদ। লোকগুলিকে আপনার পছন্দ নাও হোতে পারে। তাদের দিকে না চেয়ে তারা যে সত্য আপনার সামনে তুলে ধরছে সেটার দিকে মনোযোগী হোন, কারণ সূর্য একবার অস্তমিত হোলে আর সে সূর্য আপনার জন্য উদীত হবে না।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন