“গাছের আগা কেটে গোড়ায় পানি ঢালা” আর কত দিন?
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ১৭ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৭:১৩:১২ সন্ধ্যা
ত্রুটি-বিচ্যুতি বা ব্যর্থতা যাই থাকুক না কেন শাসনব্যবস্থা হিসেবে আমাদের দেশে এখনও গণতন্ত্রই চালু আছে। এই গণতন্ত্রের কাঁধে সওয়ার হয়েই আমাদের কতিপয় শাসকগোষ্ঠি মাঝে মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে থাকেন। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার স্বপ্ন তাদের অনেক দিনের। এটাও তারা পুরণ করতে চান গণতান্ত্রিক সিস্টেমে রাষ্ট্র পরিচালনা করেই। কিন্তু, বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এই কাজে সফলতা লাভের সম্ভাবনা কতটুকু রয়েছে সেটাই হলো চিন্তার বিষয়। কারণ বাস্তবতা বলছে অন্য কথা।
একটি দেশের যাবতীয় উন্নতি-অগ্রগতি অনেকাংশেই নির্ভর করে রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর। এটা চিরন্তন সত্য যে - সম্পূর্ণ জাতির লক্ষ্য এক না হওয়া পর্যন্ত কোনভাবেই কোন জাতি তাদের গন্তব্যে পৌছাতে পারবে না। তার জন্য যেমন সৎ, সাহসী এবং বিজ্ঞ নেতা প্রয়োজন তেমনি ঐ নেতার প্রতি জাতির পূর্ণ আনুগত্যেরও প্রয়োজন। ইতিহাসের পাতায় যে জাতিগুলোর অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছিল, দেখা গেছে ঐ জাতিগুলোর নেতা ও প্রজার মধ্যে কোন দূরত্ব ছিল না, ছিল না রাজ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে অনৈক্য-বিভেদ বা রাষ্ট্রীয় শক্তির প্রতি আনুগত্যহীনতা। বস্তুত, সেই সুযোগও তখন ছিল না কারণ - রাষ্ট্রব্যবস্থাটাই ছিল ঐক্যমুখী এবং রাষ্ট্রের মধ্যে বিভেদ, দলাদলি ছিল নিষিদ্ধ যা বর্তমানের ঠিক বিপরীত। আবার ইতিহাসে যে কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে - দেখা গেছে সেখানকার শাসকগোষ্ঠির সাথে সাধারণ মানুষের ছিল বিস্তর ফারাক। এই ফারাক যতই বেড়েছে ততই শাসকগোষ্ঠি স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিতে আগ্রহী হয়েছে যার ফলে নিরুপায় জাতি তাদের পারস্পরিক ঐক্যকে ধরে রাখতে পারে নি। এই কারণে একটি রাষ্ট্রের যাবতীয় উন্নতি-অগ্রগতির পথে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে শাসক ও শাসিতের মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্ক এবং সমগ্র জাতির ঐক্য।
কিন্তু এই বহু প্রয়োজনীয় ঐক্যের বিপরীতে সর্বপ্রথম যে সিস্টেম অনৈক্যকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় তাহলো গণতান্ত্রিক সিস্টেম। ‘‘সকল ক্ষমতার উৎস জনসাধারণ, জনগণ নিজেরাই নিজেদেরকে পরোক্ষভাবে শাসন করবে, জনগণ যা ফয়সালা দেবে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী রাজনীতিবিদরা সেটাই করতে বাধ্য থাকবে’’ - কথাগুলো শুনতে যতটা সুন্দর লাগে বাস্তবে কিন্তু গণতন্ত্র তার ধারে-কাছেও নেই, থাকার কথাও নয়। কারণ একটি জাতির মধ্যে ভালো-খারাপ, বুদ্ধিহীন-পণ্ডিত, শিক্ষিত-মূর্খ, আত্মত্যাগী-স্বার্থবাদী সব রকমের মানুষই থাকবে। ভালো মানুষ যেমন চাইবে উত্তম মানুষের দ্বারা সমাজ পরিচালিত করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে তেমনি একজন কপট-স্বার্থবাদী মানুষ চাইবে সমাজে যে কোনরকমে ফেতনা-ফাসাদ, অশান্তি সৃষ্টি করে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে। সমাজে এই স্বার্থবাদী মানুষের কোন মূল্য না থাকলেও গণতন্ত্র কিন্তু তাদেরকে ঐ ভালো-আত্মোৎসর্গকারী মানুষের সমান অধিকার দিয়ে রেখেছে। এর ফল হয়েছে এই যে - সমাজের স্বার্থবাদী গোষ্ঠি প্রতিনিয়ত অন্যায়-অবিচার, ফেতনা-ফাসাদ ও অশান্তির সৃষ্টি করছে। এই অশান্তিমূলক কর্মকাণ্ডকে তারা তাদের অধিকার বলে মনে করছে, এটা তাদের কাছে গণতান্ত্রিক অধিকার। গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে সম্প্রতিক হরতাল-অবরোধ, মানুষ পেড়ানো, যানবাহন পেড়ানো, গাছপালা কর্তন ইত্যাদি করে সাধারণ মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিই তার চাক্ষুস প্রমাণ। এক কথায় বলা যায় - যে আশাতে মানুষ গণতন্ত্রকে ভালোবেসে গ্রহণ করেছে এবং এটাকে অবলম্বন করে উজ্জল ভবিষ্যতের আশায় ছুটে চলেছে সেই গণতন্ত্রই যেন তাদের চলার প্রতি পদে পদে কাঁটা বিছিয়ে রেখেছে।
পূর্বেই বলেছি - যাবতীয় উন্নতির মূল হলো ঐক্য। মানুষ যত শক্তভাবে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে, নিজেদের মধ্যে কোন মতভেদ করবে না, পরনিন্দা করবে না, পারস্পরিক সহযোগিতার হাত বিস্তার করে রাখবে ততই তারা শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। অথচ তথাকথিত শান্তির দূত গণতন্ত্র এর ঠিক বিপরীত কাজটি করছে। যে দেশে যত বেশি রাজনৈতিক দল-মতাদর্শ এক কথায় মতভেদ বা অনৈক্য সে দেশের গণতন্ত্র নাকি তত বেশি পরিপক্ক। এই পরিপক্ক গণতন্ত্রের আশায় আমরাও ছুটছি। ৫০ টির বেশি রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করে, স্বভাবতই বিরোধীমতের মানুষদের উপর আক্রমণ করে, হত্যা-গুম করে, মানুষ পুড়িয়ে আমরা দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। বাস্তবে এই গণতন্ত্রের কতটুকু প্রয়োজন আছে আমাদের?
যে গণতন্ত্র মানুষকে অনৈক্য শিক্ষা দেয়, যার মূল নীতিতেই রয়েছে মতভেদের স্থান, যে গণতন্ত্র ভালো-মন্দ বিবেচনার আগে সংখ্যাধিক্যকে গুরুত্ব দেয় সেই গণতন্ত্র কীভাবে বিশ্বের বুকে আমাদেরকে উন্নত জাতি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেবে তা মোটেও স্পষ্ট নয়। আবার আজ যখন নিজেরা-নিজেরা মতভেদ, অনৈক্য সৃষ্টি করে জাতি হানাহানি-রক্তপাতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে তখন জাতির অনৈক্য মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে এক শ্রেণির স্বর্থবাদীরা গণতন্ত্রের জন্য যে মায়াকান্না করছেন সেটাও অগ্রহণযোগ্য। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে যখন দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে থেকে অনবরত এই জাতির বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা হচ্ছে তখন আমরা কি পারি না ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাতকে শক্তিতে পরিণত করে একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে? এই তন্ত্র-মন্ত্রের জালে আমরা আর কতকাল আঁটকা পড়ে থাকব? এখন সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হবার, অন্যথায় গাছের আগা কেটে গোড়ায় পানি ঢালা যেমন নিরর্থক তথাপি নিজেদের মধ্যে অনৈক্যকে না মিটিয়ে যতই চেষ্টা করা হোক, আলোচনা-সংলাপ বা সভা-সেমিনার করা হোক না কেন প্রকৃত শান্তি যে আসবে না তা স্পষ্ট।
বিষয়: বিবিধ
২১৪৮ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখানে ফকিন্নীর আয় থাকবে ১০০ টাকা এবং মন্ত্রীর আয় থাকবে ১ লাখ টাকা। এভাবেই মধ্যম আয় কিংবা উচ্চ আয়ের দেশ হয়।
বিশ্বে এমন কোন দেশ নাই যেখানে এরকম ফকিন্নী না আছে!
মূলা আমাদের অত্যন্ত প্রিয় জিনিস, ঝুললেই হইছে খালি – আর কোন কথা নাই, আমরা শান্তিতে আছি কারণ ঐ যে মূলা ঝুলতেছে – লইলেইতো হয়!
চরিত্রই আমাদের এমন – এখানে খালি ধর-মার-কাট হবে, কোন ঐক্য থাকবে না; তবে মারামারির দলগুলার মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে, নইলে মারামারি জমবে না!
ঐক্য চাই কিন্তু হাসিনা আর ভারতের পায়ের নীচে থেকে আর তাদের অধীনে - এই ত কথা?
নিজেকে বেশী চালাক মনে করার দরকার নাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন