খ্রিস্টান জগতের কাঙ্ক্ষিত “কিংডম অব হ্যাভেন” কোন পথে?

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ১৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৪:৫৬:১৯ বিকাল



আজ দুনিয়াময় প্রায় দুইশ’ দশ কোটির উপরে খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী রোয়েছেন যাদের মধ্যে অধিকাংশই প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাথেলিক এই দু’টি মতের অনুসারী। এর বাইরেও ছোটখাটো আরও অনেক ধর্মীয় শাখা বা দল আছে। ধর্মীয় মতবাদের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে যত বিভক্তিই থাকুক, তারা প্রত্যেকেই নিজেদেরকে যিশু খ্রিস্টের অর্থাৎ ঈসা মসীহ (আ) এর অনুসারী বোলে দাবি করেন। আজ আমরা খ্রিস্টধর্ম ও ঈসা (আ) প্রসঙ্গে কিছু মহাসত্য তুলে ধরছি।

এক. একজন গোত্রীয় নবীর গোত্রীয় জীবনব্যবস্থা:

ঈসা (আ) মূলত ইহুদি জাতির নবী ছিলেন। বনী এসরাইলের মধ্যেই তাঁর দায়িত্ব ছিল সীমিত। ঈসা (আ) যেটা তার জাতিকে বোলেছেন, “আমি প্রেরিত হোয়েছি শুধুমাত্র বনী এসরাইলের পথভ্রষ্ট মেষগুলিকে উদ্ধার কোরতে (ম্যাথু ১৫: ২৪)। তাঁর প্রধান বারো জন শিষ্যকে তিনি যখন প্রচার কাজে বিভিন্ন দিকে পাঠিয়ে দিলেন তখন তাদের উপদেশ দিয়েছিলেন- “তোমরা অন্য জাতিগুলির মধ্যে যেওনা এবং কোন সামারিয়ান শহর নগরে প্রবেশ কোরো না। শুধু মাত্র এসরাইলী বংশের পথভ্রষ্ট মেষগুলির কাছে যেতে থাকবে (Matt 10:6) । সুতরাং যারা নিজেদেরকে ঈসা (আ) এর অনুসারী দাবি করেন তাদের পক্ষে ইহুদি জাতির বাইরে অন্য জাতির লোকের কাছে তাঁর বাণী প্রচার করা, তাদেরকে ঈসার (আHappy অনুসারী বানানো নিষিদ্ধ এবং অসম্ভব কর্ম। এই নিষেধাজ্ঞার কারণ, ইহুদিদের ওপর নাজেলকৃত জীবনব্যবস্থা বিশ্বজনীন (টহরাবৎংধষ) ছিল না, সেটি শুধু বনী এসরাঈলের মানুষের জন্যই প্রযোজ্য ছিল। কাজেই বনী এসরাইলের বাইরে যারাই খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ কোরেছেন এবং তাদের যে বংশধরেরা নিজেদেরকে জেসাসের অনুসারী দাবি করেন, তাদের এই দাবি অবান্তর। ঈসা (আ) নিজে কোনদিন খ্রিস্টধর্মের নামও শোনেন নি। তিনি প্রায়শ্চিত্তবাদ, সন্ন্যাসবাদ, ত্রিত্ববাদ, ঈশ্বরের পুত্রত্ববাদ শিক্ষা দিয়েছেন বোলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না, কিন্তু বাস্তবে এই ধারণাগুলিই খ্রিস্টধর্মের ভিত্তিরূপে দাঁড়িয়ে গেছে।

একত্ববাদ: ঈসা (আ) আজীবন এক আল্লাহর কথাই প্রচার করেছেন। তার বিশিষ্ট শিষ্যগণও জীবনভর এক আল্লাহর দিকেই মানুষকে ডেকেছেন। আল্লাহর তিন সত্তা বা ত্রিত্ববাদের কথা ¯পষ্টভাবে তো নয়ই, ইশারা-ইঙ্গিতেও তারা কেউ বলে যান নি। একবার এক ইহুদি তাকে জিজ্ঞেস কোরেছিল, তওরাত শরীফের মধ্যে সবচেয়ে দরকারী হুকুম কোনটা? জবাবে ঈসা বললেন, সবচেয়ে দরকারী হুকুম হল, হে ইস্রায়েল, শুন; আমাদের ঈশ্বর প্রভু একই প্রভু, Hear, O Israel; The Lord our God is one Lord (Mark 12:29)। এছাড়া আল্লাহর ইচ্ছামত চোলতে বলা, আল্লাহর এবাদতে রত থাকার আদেশ দেওয়া, আল্লাহর শুকরিয়া জানানো, আল্লাহকে সর্বশক্তিমান বলা, আল্লাহকে সর্বজ্ঞ বোলে উল্লেখ করা, আল্লাহর রাজ্যে প্রবেশে উৎসাহিত করা, আল্লাহর কালাম প্রচার করা, আল্লাহর নিকট থেকে আসা ও আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার কথা বলা, মোটকথা প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহকেন্দ্রিকতার যে দৃশ্য গোটা ইঞ্জিলজুড়ে দেখা যায়, তা কি তওহীদ ও আল্লাহর একত্বই নির্দেশ করে না? সুতরাং এতে কোন সন্দেহ নেই অন্যসব নবী-রসুলের মত ঈসা (আ)-ও আল্লাহর তওহীদ ও একত্বই শিক্ষা দিয়েছিলেন। কোর’আন মজীদও তাঁর শিক্ষা সম্পর্কে সেই সাক্ষ্যই প্রদান করে। যেমন ত্রিত্ববাদ সম্পর্কে আখেরাতে যখন ঈসা (আ) জিজ্ঞাসিত হবেন তখন তিনি বোলবেন, ‘তুমিই মহিমান্বিত! যা বলার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার পক্ষে শোভন নয়। যদি আমি তা বোলতাম, তবে তুমি তো তা জানতে। আমার অন্তরের কথা তুমি অবগত আছ, কিন্তু তোমার অন্তরের কথা আমি অবগত নই; তুমি অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে খুব ভাল কোরেই জান। তুমি আমাকে যে আদেশ কোরেছ তা ছাড়া তাদেরকে আমি কিছুই বোলি নি, তা এই যে, ‘তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর এবাদত কর এবং যত দিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম তত দিন আমি ছিলাম তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী, কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং তুমিই সকল বিষয়ের সাক্ষী (সুরা মায়েদা ১১৬-১১৭)।

ঈসা (আHappy মনুষ্যপুত্র: ইঞ্জিলের পাঠক ইঞ্জিলের পাতায়-পাতায় দেখতে পাবে কিভাবে তিনি বারবার মনুষ্যপুত্র(Son of man) বলে নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন। চারটি ক্যানোনিকাল গসপেলের হিব্র“ টেক্সট-এ একশত বারেরও অধিকবার ঈসা (আHappy নিজেকে ‘বেন আদম’ বোলে আখ্যায়িত কোরেছেন (Matt 9:6; 10:23; 11:19; 12:32, 40; 13:40, 41; 16:13, 27, 28; 17:9, 12; 19:28; 20:18, 28; 24:30, 31, 33, 37, 39, Mark 2:10, 28; 8:31, 38; 9:9, 12, 31 অন্যান্য।)

ঈসা (আHappy আল্লাহর নবী ও দাস: নিজের স¤পর্কে তিনি এও বোলেছেন যে, তিনি আল্লাহর প্রেরিত নবী(Matt 10:40, 41; 13:57; Mark 6:4; Luke 13:33; 4:43, 44)। তিনি আল্লাহর গোলাম (John 13:16), আল্লাহর গোলাম হিসেবে তাঁরই এবাদতকারী (John 4:12) । তিনি নিজের থেকে কিছু করার ক্ষমতা রাখেন না, বরং তিনি আল্লাহর আজ্ঞাবহ ও তাঁর ইচ্ছা পালনকারী মাত্র (John 5:19, 30, 36; 7:16, 17; 4:34) এবং আল্লাহ তা’আলাকে সন্তুষ্ট করাই তার পরম লক্ষ্য (John 8:28, 29)।

বৈরাগ্যবাদ: খ্রিস্টান যাজকেরা বিবাহ না করাসহ বিবিধপ্রকার ইন্দ্রিয়দলনকে (Monasticism) ধর্মের নিয়ম বোলে সাব্যস্ত করেন। এ প্রসঙ্গে ঈসার (আ) কোন সুস্পষ্ট নির্দেশ বাইবেলে নেই, শুধু ধর্মের ব্যাখ্যাতাগণ তাঁর কিছু কিছু উক্তির (যেমন- Matt 19:12) ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এই আধিক্য নিজেদের উপর আরোপ কোরেছেন। আল্লাহ বলেন, “বৈরাগ্যবাদ তো তারা নিজেরাই উদ্ভাবন কোরে নিয়েছে। আমি ওটা তাদের ওপর চাপিয়ে দেই নি। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তারা নিজেরাই এটা অবলম্বন কোরেছে। তারপর সেটি যেভাবে মেনে চলা দরকার, সেভাবে মেনেও চলে নি (সুরা হাদিদ ২৭)।

খ্রিস্টধর্মে প্রক্ষিপ্ত বিষয়াদি নিয়ে এবং যিশু (আ) এর মূলনীতি থেকে সোরে আসার বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে অতি সংক্ষেপে কয়েকটি তথ্য উল্লেখ করা হোল। আশা কোরি খোলা মনের পাঠকের জন্য এগুলিই বোঝার জন্য যথেষ্ট হবে যে, পৃথিবীর দুইশ দশ কোটি খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীদের কাছে ঈসার (আ) প্রকৃত শিক্ষা নেই।

দুই. মুসার (আ) শরিয়তের সত্যায়ন ও ভারসাম্য পুনস্থাপনের জন্যই ঈসার (আ) আগমন:

ঈসা (আ) এসেছেন মূলত মুসার (আ) দীনের আধ্যাত্মিক ভাগকে সঠিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য, মুসার (আ) আনীত শরিয়াহ মোটামুটি ঠিকই ছিল। ঈসা (আ) বলেন, “শরিয়াতের শিক্ষা দেবার ব্যাপারে আলেমরা ও ফরিশিরা মুসা নবীর জায়গায় আছেন। এইজন্য তাঁরা যা কিছু কোরতে বলেন তা কোরো এবং যা পালন কোরবার হুকুম দেন তা পালন কোরো। কিন্তু তাঁরা যা করেন তোমরা তা কোরো না, কারণ তাঁরা মুখে যা বলেন কাজে তা করেন না (Matt 23-1)।” ঈসা (আ) এর এই ঘোষণার কারণে ইহুদি ধর্ম ব্যবসায়ী রাব্বাই, সাদ্দুসাই, ফরিশিরা তাঁর প্রবল বিরোধিতায় অবতীর্ণ হয়। সুতরাং ঈসা (আ) নতুন কোন ধর্ম নিয়ে আসেন নি, কোন শরিয়ত নিয়েও আসেন নি। তিনি মুসার (আ) শরিয়তকেই সত্যায়ন কোরেছেন, তাই তাঁর প্রচারিত শিক্ষার মধ্যে জাতীয়, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক, আইনকানুন, দণ্ডবিধি ইত্যাদি অনুপস্থিত। বরং তাঁর প্রায় প্রতিটি কথাই ছিল মানুষের আত্মিক উন্নয়নের জন্য অমূল্য শিক্ষায় পূর্ণ।

সুতরাং খ্রিস্টধর্মের অনুসারীরা ঈসা মসীহর (আ) প্রকৃত শিক্ষা থেকে সোরে আসার ফলে তারা যে পরকালে জান্নাতের আশা কোরছেন তাদের এই আশা ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হোয়েছে। তবে তারা যদি ঈসা (আ) এর প্রকৃত অনুসারী হোতেন তবে অবশ্যই তারা জান্নাতের আশা কোরতে পারতেন। তারা যদি প্রকৃতপক্ষেই ঈসা মসীহর (আ) অনুসারী হোতেন, তাঁর নির্দেশনা মোতাবেক মুসার (আ) কেতাব, শরিয়াহকে বহাল রেখে, ঈসা (আ) এর উপদেশ অনুযায়ী আত্মিক ও মানবিক গুণাবলীকে নিজেদের মধ্যে ধারণ কোরতে পারতেন তবে আজকে তাদের দ্বারা চরম বস্তুবাদী এই সভ্যতার সৃষ্টি হতো না। ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে সৃষ্ট এই ধর্মনিরপেক্ষ, বস্তুবাদী ‘সভ্যতা’য় পরকালকে, আত্মার দিককে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হোয়েছে। তারা জাতীয় জীবনে বস্তুতপক্ষে স্রষ্টার বিধানকে অমান্য করে নিজেরা নিজেদের বিধান রচনা করে নিয়েছেন এবং সেটা বাকি বিশ্বের উপরে জোর কোরে চাপিয়ে দিয়েছেন। কাজেই খ্রিস্টানরা প্রকৃতপক্ষে মুসা (আ), ঈসা (আ) কারোরই প্রকৃত অনুসারী নন। খ্রিস্টধর্মসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি আল্লাহর সুস্পষ্ট কথা হোচ্ছে, “হে আহলে কেতাবগণ, তোমাদের কোন ভিত্তি নেই, যতক্ষণ না তোমরা তওরাত, ইঞ্জিল ও তোমাদের রবের পক্ষ হতে যা নাজিল করা হোয়েছে তা পুরোপরি পালন কোরবে।” (সুরা মায়েদা ৬৮)। খ্রিস্টধর্মটি টিকে আছে কেবলমাত্রই কয়েকটি উৎসব যেমন: ঐশ্বরিক নৈশভোজ (Holy Communion), ক্ষমাপত্র (Indulgence) বিক্রি, ইস্টার সান ডে, বড়দিন, পাসওভার ইত্যাদি আনুষ্ঠানিকতাকে আশ্রয় কোরে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মোসলেম দাবিদার জনসংখ্যারও একই অবস্থা হোয়েছে।

তিন. Antichrist ও দাজ্জাল:

হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমাম, এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে আল্লাহ তাঁর প্রেরিত সত্য জীবনব্যবস্থার অবিকৃত রূপরেখা দান কোরেছেন। আজকে সারা পৃথিবীর সব ধর্মের সকল মানুষই আল্লাহর দেয়া জীবনবিধান ত্যাগ কোরেছে, এবং আপনাদের তৈরি করা জড়বাদী এক সভ্যতার অনুসরণ কোরছে। মাননীয় এমামুয্যামান কোর’আন, হাদিস, বিজ্ঞান ও বাইবেলের আলোকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ কোরেছেন যে, এই বস্তবাদী সভ্যতাই হোচ্ছে বাইবেলে বর্ণিত এন্টি ক্রাইস্ট ( Antichrist- John 1:7, 2:18-22, 4:3, Revelation 13:1-18, 19:20) । কথা ছিল, ঈসা (আHappy এর অনুসারীরা এন্টি ক্রাইস্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরবে, অথচ দুর্ভাগ্যজনক হোলেও সত্যি এন্টি ক্রাইস্টের জন্মই হোল খ্রিস্টানদের কাজের ফলে। তারা হোচ্ছে এমন একজন নবীর অনুসারী যার শিক্ষা মানুষকে আধ্যাত্মিকতার সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়ার কথা। সেই নবীর অনুসারী দাবিদাররাই একটি কঠোর বস্তুবাদী সভ্যতার জন্ম দিলো কারণ খ্রিস্টধর্মের উপর অটল থেকে ঐশ্বরিক বিধান দিয়ে জাতীয় জীবন পরিচালনা করার কোন সুযোগ নেই, ঈসা (আHappy মানবজাতির জন্য কোন রাষ্ট্রীয়, জাতীয়, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা দণ্ডবিধি নিয়ে আসেন নি, বাইবেলে সেগুলি নেই। কিন্তু ঐ সমস্ত বিধান ছাড়া মানুষের জীবন চোলতে পারে না। তাই জাতীয় জীবন চালাতে ঐ সমস্ত বিধানগুলি রচনার ভার তাদের খ্রিস্টানদের হাতেই তুলে নিতে হোয়েছে। যার পরিণতিতে সৃষ্টি হোয়েছে বর্তমান সভ্যতা যা প্রকৃতপক্ষে কোন সুস্থ-সভ্যতা নয়। এটা আসলে আত্মাহীন বিবেকহীন একটা যান্ত্রিক প্রগতি মাত্র, যে প্রগতি মানুষকে যত সে যান্ত্রিকভাবে এগুচ্ছে, তত তাকে মানুষ হিসাবে টেনে নিচে নামাচ্ছে। পৃথিবীর মানুষ আজ বিক্ষুদ্ধ। বাইরে যত সফলতার অহংকার থাকুক মনের গভীরে মানুষ আজ দেউলিয়া, দিশাহারা। যে কোন দিনের সংবাদপত্র খুলুন, দেখবেন পৃথিবীময় অশান্তি, ক্রোধ, রক্তারক্তি, অন্যায়, অবিচার আর হাহাকারের বর্ণনা। রাষ্ট্রগত ভাবে যুদ্ধ, দলগত ভাবে হানাহানি, ব্যক্তিগতভাবে সংঘাত আর রক্তারক্তির হৃদয়বিদারী বর্ণনা। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে, বিশেষ কোরে যে সব দেশ এই যান্ত্রিক সভ্যতাকে গ্রহণ কোরেছে, সেগুলোতে প্রতি বছর খুন, যখম, ডাকাতি, ধর্ষণ, বোমাবাজি আর অপহরণের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। এক দিক দিয়ে মানুষ যেমন বিজ্ঞানের শিখরে উঠছে অন্য দিক দিয়ে ঠিক তেমনি ভাবে সে সব রকমের অন্যায়ের চূড়ান্তে গিয়ে পৌঁছুচ্ছে। মানুষের আত্মা আজ ত্রাহী সুরে চিৎকার কোরছে কেন? কেন মানুষ তার জ্ঞান আর বিজ্ঞানের প্রগতিকে মনুষ্যত্বের উন্নতির পরিবর্তে তাকে অবনতির গভীর অতলে নিয়ে যাচ্ছে? এই প্রশ্নের জবাব হোচ্ছে, মানবজাতি আজ পর্যন্ত এমন একটা জীবনব্যবস্থা তার নিজের জন্য সৃষ্টি বা প্রণয়ন কোরতে পারে নি যেটা পালন কোরলে যান্ত্রিক উন্নতি সত্ত্বেও মানুষ এই পৃথিবীতে শান্তিতে বাস কোরতে পারে। এটা মানুষের সীমাবদ্ধতা। এই সীমাবদ্ধতা স্বীকার কোরে নিয়ে সময় হোয়েছে স্রষ্টার শরণে ফিরে যাবার। তাহোলেই বাঁচবে মানুষ, বাঁচবে পৃথিবী।

চার: Kingdom of Heaven

মানবজাতির আত্মাহীন এই সভ্যতা গ্রহণ করে নেওয়ার পরিণতি কি হোয়েছে তাও আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। এসলাম থেকে মোসলেম বহিঃকৃত, সনাতন ধর্ম থেকে হিন্দুরা বহিঃকৃত, ঈসার (আ) শিক্ষা থেকে আপনারা বহিঃকৃত, বৌদ্ধধর্ম থেকে বৌদ্ধরা বহিঃকৃত। সুতরাং তারা প্রত্যেকেই যে স্বর্গ পরকালে পাওয়ার আশা করেন, কেউই সেটা পাবেন না। আর পৃথিবীর আখেরী যুগে (Last hour) ঈসার অনুসারীদের দ্বারা যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা সেটাও আপনাদের দ্বারা হবে না। যে স্বর্গরাজ্যের (Kingdom of Heaven) কথা বাইবেলে বলা হোয়েছে, সেই স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য যে ভারসাম্যপূর্ণ উত্তম জীবনব্যবস্থা প্রয়োজন সেটা কোথায়? এই বর্তমান সভ্যতা অর্থাৎ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, পুঁজিবাদ এসব দিয়ে কি সেই স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব? না। সেটা চিন্তা করাও হাস্যকর ও চরম বোকামি। সেটা করার জন্য যে ব্যবস্থা প্রয়োজন তা ১৪০০ বছর আগেই আল্লাহ তাঁর শেষ রসুল মোহাম্মদ (দ) এর উপর নাজেল কোরেছেন, যা তখন অর্ধ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার ফলে মানবজীবন থেকে সকল প্রকার অন্যায়, অবিচার, বর্ণবৈষম্য, রক্তপাত দূর হোয়ে অভূতপূর্ব শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হোয়েছিল, সকল ধর্মের মানুষের সর্বপ্রকার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোয়েছিল। এটা ইতিহাস। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই জাতি তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলায় বাকি দুনিয়া সত্যদীনের সুফল থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। তবে আল্লাহর রহমে এখন সময় এসেছে সেটি সম্পূর্ণরূপে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। আল্লাহ ২ ফেব্র“য়ারী ২০০৮ তারিখে এক মহান ও পবিত্র মো’জেজার মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে, দুনিয়াময় অচিরেই সত্যদীন প্রতিষ্ঠা হবে। সেই সত্যদীন প্রতিষ্ঠা হোলে এমন শান্তি আসবে দুনিয়াতে যে নেকড়ে আর ভেড়া একত্রে থাকবে (Isaiah 11:6)। আল্লাহর সত্যদীন সারা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হোলেই আসবে সকল ধর্মের অনুসারীদের কাক্সিক্ষত সেই শান্তিময় সভ্যতা, বাইবেলে ঘোষিত স্বর্গরাজ্য, সনাতন ধর্মগ্রন্থাদিতে বর্ণিত সত্যযুগের পুনরাবর্তন (বিষ্ণু পুরাণ ও ভাগবত পুরাণ)।

চার: সকল আদম সন্তান হবে এক পরিবার

সকল নবী ও রসুলের প্রতি বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা রাখা সকল ধর্মের অনুসারীদের জন্যই ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সে হিসাবে ইহুদি ধর্মের সকল নবী যাদের কথা তওরাত, যবুর, ইঞ্জিল, বৈদিক ধর্মগ্রন্থাদিসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে এবং কোর’আনে এসেছে তাদের প্রতি আমরা যামানার এমামের অনুসারীরা ঈমান ও শ্রদ্ধা পোষণ কোরি এবং তাদের শিক্ষা থেকে নিজেদের জীবনের পাথেয় সংগ্রহের চেষ্টা কোরি। আমরা মানবজাতিকে একটি সাধারণ কথার উপরে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান কোরছি, যে বিষষটি সকল ধর্মের মর্মবাণী, সেটা হোল- আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম মানবো না। এ কথাটিই আমাদের সকলের আদি পিতা আদম, মানবজাতির দ্বিতীয় পিতা নূহ (মনু) (আ) এবং জাতির পিতা আব্রাহাম, এব্রাহীম (আ) বোলে গিয়েছেন। যার প্রতিধ্বনি ঝংকৃত হোয়েছে পবিত্র কোর’আনের আয়াতে, “বলো, গ্রন্থের অধিকারী সকল সম্প্রদায়, একটি বিষয়ের দিকে এসো যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সাধারণ, তা হোল- আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারও এবাদত কোরব না, তাঁর সাথে কোন অংশীদার সাব্যস্ত কোরব না, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে প্রভু বোলে মানবো না (সুরা এমরান ৬৪)”। আল্লাহর শেষ নবী মোহাম্মদ (দ) এর মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতির জন্য সর্বশেষ জীবনব্যবস্থা পাঠিয়েছেন। ঈসা (আ) এর শিক্ষার অধিকাংশ জুড়ে ছিল তাঁর পরবর্তী নবী আখেরী নবী মোহাম্মদ (দ) এর ভবিষ্যদ্বাণী। ঈসা (আ) এর ঘনিষ্ঠ সাহাবী বার্নাবাস তাঁর গসপেলের বহুস্থানে রসুলাল্লাহ (দ) সম্পর্কে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী উদ্ধৃত কোরেছেন, তাতে কোথাও ঈসা (আ) নবী মোহাম্মদ (দ) এর নাম নিয়েছেন, কোথাও রসুলাল্লাহ বোলেছেন, কোথাও বা তাঁর জন্য মসীহ শব্দ ব্যবহার কোরেছেন, কোথাও প্রশসংনীয় (আহমদ, Admirable) কোথাও এমন সুস্পষ্ট বাক্য ব্যবহার কোরেছেন যা একেবারে “লা এলাহা এল্লাল্লাহ মোহাম্মাদুর রসুলাল্লাহ” এর সমার্থবোধক। এখানে একটি মাত্র ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ কোরছি। ঈসা (আ) তাঁর আসহাবদেরকে বোলছেন, “বিশ্বাস করো আমি তাঁকে দেখেছি এবং তাঁকে সম্মান জানিয়েছি। এভাবে সকল নবী তাঁকে দেখেছেন। তাঁর রূহকে দর্শনের মাধ্যমে নবীগণ নব্যুয়তপ্রাপ্ত হোয়েছেন। আমি যখন তাঁকে দেখলাম আত্মা প্রশান্ত হোয়ে গেল। আমি বোললাম,O Muhammad;, God be with you, and may he make me worthy to untie your shoelatchet; for obtaining this I shall be a great prophet and holy one of God. হে মোহাম্মদ! আল্লাহ আপনার সহায় হোন। আমাকে তিনি আপনার জুতার ফিতা বাঁধার যোগ্যতা দান কোরুন। কারণ আমি যদি এই মর্যাদা লাভ কোরি তাহোলে আমি একজন বড় নবী হবো এবং আল্লাহর একজন পবিত্র মানুষ হোয়ে যাবো। (The Gospel of Barnabas, Chapter 44)”.

ঈসার (আHappy ৫৭০ বছর পর যখন মহানবী আসলেন তখন বহু খ্রিস্টান তাঁকে প্রতিশ্র“ত নবী হিসাবে চিনতে পেরে এসলাম গ্রহণ করেন। কিন্তু খ্রিস্টধর্মের যারা মূল ধারক-বাহক তারা কায়েমী স্বার্থে শেষ নবীকে স্বীকার করেন না এবং বাইবেল থেকে তাঁর প্রসঙ্গে যত কথা আছে সব মুছে দেয়ার চেষ্টা করেন। এই বিকৃতির অতি দীর্ঘ ইতিহাস আছে। বিকৃতির ধারাবাহিকতায় ১৬৬১ সনে পূর্বের বাইবেলগুলিকে সংশোধন কোরে প্রকাশ করা হয় King James Authorised Version যা আরও সংশোধন, পরিমার্জন ও মানোন্নয়ন অর্থাৎ Revision কোরে ১৮৮১ সালে আবারও প্রকাশ করা হয় Revised King James New Testament নামে। তবুও মহানবীর কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাইবেলের পাতায় এখনও খুঁজে পাওয়া যায় যা মূল সুরিয়ানী (Koine Greek) থেকে গ্রীক, গ্রীক থেকে ইংরেজি হোয়ে যখন বাংলায় অনুদিত হয় তখন সেটার রূপ এতটাই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন হোয়ে পড়ে যে প্রকৃত অর্থ খুঁজে পেতে রীতিমত গবেষণা কোরতে হয় (যিশু খ্রিস্টের অজানা জীবন- আব্দুল্লাহ ইউসুফ মোহাম্মদ)। John 14:15 তে একজন সাহায্যকারীর (Advocate, Helper) আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী কোরেছেন ঈসা (আHappy। গ্রীক বাইবেলে এই সাহায্যকারী ব্যক্তিকে বলা হোয়েছে ফারক্লিত (Paracletus/Periclytos), আর মূল সুরিয়ানী ভাষায় লিখিত ইঞ্জিলে এ শব্দটি ছিল মুন্হামান্না যা ইবনে এসহাক তার সেরাত গ্রন্থে উল্লেখ কোরেছেন। এই মুন্হামান্নাই হোচ্ছে মোহাম্মদের উচ্চারণভেদ (পরধর্মগ্রন্থে শেষ নবী- মোহাম্মদ আবুল কাশেম ভুঞা)। সুতরাং ঈসা (আHappy নবী মোহাম্মদ (দHappy এর নাম নিয়েই তাঁর আগমনের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। তিনি বোলেছেন, “আমি এরপরে আর তোমাদের সাথে বেশি কথা বোলব না। কারণ দুনিয়ার শাসনকর্তা(Ruler of this world) আসছেন (John 14:30)। খ্রিস্টানরা তাদের নবীর সেই ভবিষ্যদ্বাণীকে অস্বীকার কোরেছে। এখন মোসলেমরাও রসুলাল্লাহর আনীত সেই দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত নেই, তারাও দাজ্জালের দেওয়া জীবনব্যবস্থা গ্রহণ কোরে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের মতই পথভ্রষ্ট হোয়ে কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের এ পরিণত হোয়েছে।

এখন মানবজাতিকে ঘোর সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেতে হোলে একটাই উপায়, আল্লাহর সত্যদীনের কাছে ফিরে যেতে হবে, যা পালন কোরলে যান্ত্রিক উন্নতির পাশাপাশি মানুষ এই পৃথিবীতে শান্তিতে বাস কোরতে পারবে। মাননীয় এমামুয্যামান আবার আল্লাহর দয়ায় সেই সত্যদীনে প্রকৃত আলো মানবজাতির সামনে তুলে ধরেছেন। তাঁর পক্ষ থেকে আমরা আহ্বান কোরছি আসুন আমরা একটা কথার ওপর এক হোই, আপনাদের এবং আমাদের প্রভু এক। আমরা শুধু তাঁর হুকুম মানবো, আর কারও হুকুম মানবো না। তাহোলেই পৃথিবীতে আপনাদের যে আকাক্সিক্ষত Kingdom of Heaven আসবে এনশা’আল্লাহ। সনাতন ধর্মের সত্যযুগ, গান্ধীজির ভাষায় রামরাজ্য বা Kingdom of God, আর বিশ্বনবীর ভবিষ্যদ্বাণী করা নবুয়্যতের আদলে খেলাফত (দালায়েলুম নবুয়াত- বায়হাকী, মুসনাদ- আহমদ বিন হাম্বল, মেশকাত) অতি শীঘ্রই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হোতে যাচ্ছে এনশা’ল্লাহ। খ্রিস্টিয় নববর্ষে আমরা আপনাদেরকে এই শুভ সংবাদ দিচ্ছি এবং সত্য গ্রহণের জন্য উদাত্ত আহ্বান কোরছি।

(হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম)

এমাম, হেযবুত তওহীদ

বিষয়: বিবিধ

১২০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File