মদীনা সনদ এবং বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের ঐক্যের ডাক

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ১৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৮:৩২:১৬ রাত



মহানবীর মদীনা হেজরত কোরে আসার সময় মদীনাবাসীদের ঘরে-ঘরে পাড়া-মহল্লায় সাজ সাজ রব উঠেছিল। আনন্দের আতিশয্যে উদ্বেলিত মদীনাবাসী নারী-পুরুষ-আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা বাদ্য-বাজনা, গান-কবিতা, আনন্দ-কোলাহল ও মুহুর্মুহু আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে তাঁকে বরণ কোরে নিলেন। পরম কাক্সিক্ষত মেহমানের মুখদর্শন কোরতে মদীনার রাস্তা গলিপথ লোকে লোকারণ্য হোয়ে গিয়েছিল, এমনকি মহিলারা বাড়িঘরের ছাদের উপর উঠেও এই মর্যাদাপূর্ণ কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ কোরে নিজেকে ধন্য কোরেছিল। রসুলকে বরণ কোরে নেওয়ার সময় বালক বালিকারা যে আনন্দ সঙ্গীত পরিবেশন কোরছিল তা আজও বিশ্বের মোসলেমদের মনে শিহরণ জাগায়। বিশ্বশান্তির দূত আল্লাহর নির্দেশিত উটের উপর আরোহণ কোরে আবু আইয়ুব আনসারীর গৃহের সামনে উপনীত হোলেন। আবু আইয়ুবও সম্ভ্রমের সঙ্গে সম্মানিত অতিথিকে অভ্যর্থনা কোরলেন। মদীনায় পৌঁছেই রসুলাল্লাহ কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কার্য দ্রুত সমাধা কোরলেন। নিজ পরিবার পরিজনদেরকে আনয়ন, মসজিদ নির্মাণ, আহলে সুফফাদের জন্য মসজিদে নববীর দেয়াল ঘেঁষা বাসস্থান নির্মাণ, মক্কা থেকে আগত মোহাজেরদেরকে মদীনার আনসারদের সাথে নিবীড় ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধকরণ, সকলের বাসস্থান, ঘরসংসার, পারিবারিক কাজ ইত্যাদি সমাধা কোরেই মদীনায় শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতি মনোযোগ দিলেন। বস্তুত এটাই ছিল অর্ধ-বিশ্বজয়ী এসলামী সভ্যতার সূচনাপর্ব।

মদীনায় কিছুদিন অবস্থান কোরেই রসুলাল্লাহ পর্যবেক্ষণ কোরলেন যে, মদীনা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বি যথা ইহুদি, পোত্তলিক ইত্যাদি শ্রেণির বিভিন্ন গোত্রের বসবাস ছিল। এদের প্রত্যেকের ধর্ম, আদর্শ, সংস্কৃতি, কৃষ্টি স্বতন্ত্র। এছাড়াও তাদের মধ্যে পারস্পরিক ও দলগত হিংসা বিদ্বেষও ছিল প্রকট। ইহুদিরা প্রধান তিনটি দলে বিভক্ত ছিল: বনু নযীর, বনু কোরায়যা ও বনু কায়নুকা। আনসারগণ প্রধানত দুইদলে বিভক্ত ছিল, আউস ও খাজরাজ। পোত্তলিকরাও আলাদাভাবে বৃহত কয়েকটি গোত্রে বসবাস কোরতো। আবার প্রত্যেক দল ছোট-বড় গোত্র-উপগোত্র ইত্যাদিতে বিভক্ত ছিল। প্রভাব প্রতিপত্তি বজায় রাখার নিমিত্তে গোত্রীয় দ্বন্দ্বে তখনকার এই সমাজ বিভক্তির চূড়ান্তে অবস্থান কোরছিল। বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে আদর্শগত বড় বিষয় তো ছিলই বরং ছোট ছোট খুঁটি-নাটি বিষয় নিয়েও এই সকল গোত্রের মধ্যে মনোমালিন্য, দীর্ঘস্থায়ী রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্ব সংঘাত সর্বদাই লেগে থাকতো। ধূর্ত ইহুদিগণ হীনস্বার্থ উদ্ধারের জন্য অন্যান্য সকল গোত্রের মধ্যে বিবাদ বিসম্বাদ সৃষ্টিতে ইন্ধন ও ষড়যন্ত্র বিস্তারে বিরাট ভূমিকা পালন কোরত। কার উপর কে প্রভুত্ব কোরবে এই প্রতিযোগিতায় তারা মত্ত ছিল।

পৌত্তলিকগণ প্রথমে রসুলের আগমনের বিরোধিতা করে নাই, বরং তাদের গোত্রের অনেকেই এসলাম গ্রহণ কোরেছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সত্যদীনের চিরশত্র“ ইহুদিরা এবং তাদের সাথে দীর্ঘদিনের মেলামেশা ও মৈত্রিসম্পর্কের ফলে পৌত্তলিকরাও গোপনে রসুল এবং মোসলেমদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। তাদের অনেকে প্রকাশ্যে কলেমা গ্রহণ কোরেও পশ্চাতে ঠাট্টা বিদ্রুপ ও নানা প্রকার কূটচালে লিপ্ত হয়। ইহুদিদের কারণেই মদীনায় মোনাফেকদের উৎপত্তি ঘটে। তারা প্রায়ই রসুলাল্লাহর প্রতি অহেতুক দোষারোপ ও অভিযোগ উত্থাপন কোরে মোসলেমদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ বাধাতে চেষ্টা কোরত, আনসার-মোহাজের ইত্যাদি ভাগে তাদেরকে বিভক্ত কোরে ফেলার চেষ্টা কোরত। এছাড়া আরবের অন্যান্য গোত্রসমূহকেও নানা প্রকারের প্রলোভন দ্বারা প্রভাবিত কোরে রসুলাল্লাহর শত্র“ বানাবার হীন চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। এই মোনাফেকরাই পরবর্তীকালে আয়েশা (রাঃ) এর পবিত্রতার প্রতি দোষারোপ, মসজিদে দেরার নির্মাণ এমনকি রসুলাল্লাহকে (সাঃ) হত্যার দুরভিসন্ধিও কোরেছিল।

ব্যক্তিগত ও দলবদ্ধ আলোচনায় মদীনার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মনোভাব, ইচ্ছা, আকাক্সক্ষা বুঝতে তাঁর বেশি সময় অতিবাহিত হয় নাই। তাই তিনি খুব দ্রুতই অবস্থার পরিবর্তন অনুধাবন কোরতে সক্ষম হন। পরশমণির সংস্পর্শে যেভাবে সামান্য ধাতুও স্বর্ণে পরিণত হয় তদ্রƒপ মদীনার নবদীক্ষিত মোসলেমগণ রসুলাল্লাহর সংস্পর্শে এসে এবং সত্যদীনের আলোয় আলোকিত হোয়ে দ্রুতই আদর্শ মানবে রূপান্তরিত হোয়েছিলেন। তাদের এই আদর্শকে সমুন্নত রাখা এবং এর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তাও রসুল অনুভব কোরলেন। তিনি ভাবলেন, যে কোনভাবেই হোক প্রথমে এদের সবাইকে একটি বিষয়ের উপর ঐক্যবদ্ধ কোরতে হবে, নতুবা এদের থেকে কল্যাণকর কিছুই আশা করা যাবে না। দেশের স্বার্থ, শান্তি, শৃংখলা, নিরাপত্তা, উন্নতি, প্রগতি, সমৃদ্ধি ইত্যাদি নির্ভর করে ঐদেশে বসবাসকারীদের ঐক্য ও সংহতির উপর। যেখানে বিভিন্ন জাতির বসবাস সেখানে পরমতসহিষ্ণুতার প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি। এই উদ্দেশ্যে তিনি সকল সম্প্রদায় গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে আহ্বান করতঃ একটি সম্মেলনের আয়োজন কোরলেন। উক্ত সম্মেলনে তিনি অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ ও বাস্তবসম্মত আলোচনার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে সকলকে ঐক্য, সম্প্রীতি ও সংহতির প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হোলেন। এই শুভ উদ্দেশ্যের প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি কোরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্মতি দিয়েই সকল সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ঐতিহাসিক লিখিত চুক্তিপত্রটি সম্পাদন কোরলেন। এটাই ‘মদীনার সনদ’ নামে পরিচিত।

পৃথিবীতে সর্বপ্রথম এটাই লিখিত সংবিধান। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিজ নিজ ধর্মকে স্বীকৃতি দিয়ে ও নিজস্ব স্বাতন্ত্র বজায় রেখে এই সনদে তিনি আনসার, মোহাজের ও অন্যান্য মোসলেমদের এবং ইহুদি, পৌত্তলিক সকলের সম্বন্ধ, স্বত্বাধিকার, সামাজিক সমস্ত বিষয়ের শাসন, বিচারব্যবস্থা লিপিবদ্ধ কোরেছেন। সনদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি শর্ত এখানে উদ্ধৃতি কোরছি।

১. মদীনায় বসবাসকারী ইহুদি, পৌত্তলিক এবং মোসলেম সকলেই এক উম্মত, একজাতি হিসাবে ঐক্যবদ্ধ থাকবে।

২. এই সাধারণতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত সকলেই নিজ নিজ ধর্ম সম্বন্ধে স্বাধীন থাকবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ কোরবে না।

৩. চুক্তির অন্তর্ভুক্ত কোন সম্প্রদায় শত্র“ কর্তৃক আক্রান্ত হোলে সকলে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত কোরবে।

৪. প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মিত্র গোত্রের স্বত্বাধিকারের মর্যাদা রক্ষা কোরতে হবে।

৫. বহিশত্র“ কর্তৃক মদীনা আক্রান্ত হোলে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরবে এবং প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজেদের যুদ্ধব্যয় বহন কোরবে।

৬. নির্যাতিত-উৎপীড়িতকে রক্ষা কোরতে হবে।

৭. মদীনায় রক্তপাত করা আজ থেকে হারাম বোলে গণ্য হবে।

৮. দিয়াত বা খুনের বিনিময়পণ পূর্ববৎ বহাল থাকবে।

৯. কোন সম্প্রদায় বাহিরের কোন শত্রুর সাথে গোপন কোন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হোতে পারবে না।

১০. নিজেদের মধ্যে কেউ বিদ্রোহী হোলে অথবা শত্র“র সাথে কোনরূপ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হোলে তার সমুচিত শাস্তি বিধান করা হবে, সে যদি তার পুত্রও হয় তবুও ক্ষমা করা হবে না।

১১. কোন সম্প্রদায় কোরাইশদের সাথে কোন প্রকার গোপন সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হোতে পারবে না, কেউ তাদের কোন লোককে আশ্রয় দিতে পারবে না।

১২. অমোসলেমদের মধ্যে কেউ অপরাধ কোরলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ বোলে গণ্য হবে।

১৩. মোহাম্মদ (সাঃ) এই সাধারণতন্ত্রের প্রধান নির্বাহী হিসাবে দায়িত্বপালন কোরবেন। যে সকল বিষয়ের মীমাংসা সাধারণভাবে না হয় সেগুলির মীমাংসা তাঁর উপরই ন্যস্ত হবে। তিনি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মীমাংসা কোরে দিবেন।

১৪. যারা এই চুক্তি ভঙ্গ কোরবে তাদের উপর আল্লাহর লানৎ ও গজব পতিত হবে।

বাংলাদেশে হিন্দু, মোসলেম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব ধর্মের অনুসারীরাই বসবাস কোরছে। প্রত্যেকের নিজ নিজ উপাসনালয়, স্বাতন্ত্র, আদর্শ ইত্যাদির ভিন্নতা রয়েছে। প্রধান ধর্মীয় অনুসারীদের মধ্যেও শিয়া, সুন্নি, ওহাবী, হানাফি, হাম্বলি, খারেজি, সরকারী, বেসরকারী, আহলে সুন্নাহ, আহলে হাদিস, তবলিগ, মিলাদে কেয়ামকারী ও বে-কেয়াম, গোল পাঞ্জাবী, কাটা পাঞ্জাবী, পাঁচকল্লি টুপি, গোল টুপি, লম্বাটুপি, জালিটুপি, হাজারো পীরের অনুসারী, রাজনৈতিক বিভিন্ন মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত গোষ্ঠী, উগ্র জঙ্গিপন্থী ইত্যাদি বিভিন্ন ভাগ বিদ্যমান। এছাড়াও আছে বহুসংখ্যক উপজাতি। দেশীয়ভাবে আঞ্চলিক, গ্রাম্য, শহুরে ইত্যাদি বিভাজন রয়েছে। ভাষাগত তারতম্যও বেশ পরিলক্ষিত হয়। রাজনৈতিকভাবে প্রধান কয়েকটি দল ছাড়াও ডান বাম কয়েকটি ক্ষুদ্র দল রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের মধ্যে আবার দল উপদল ইত্যাদির মধ্যে মারামারি চলে সারা বছর। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে শত্র“তার সম্পর্ক তো আছেই, দাঙ্গা হাঙ্গামা, মারামারি, মিছিল, মিটিং, অবরোধ, হরতাল, জ্বালাও পোড়াও ইত্যাদি তাদের জন্য নিয়মিত কর্মসূচি। ব্যক্তি ও সামাজিক পর্যায়ে ধনী দরিদ্রের বৈষম্যও প্রকট আকার ধারণ কোরছে। শিক্ষার মধ্যেও আরবি/ইংরেজি প্রধান দুটি ভাগ রয়েছে। আবার শিক্ষিত অশিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিতও আছে। সব মিলিয়ে আমাদের এই ছোট্ট দেশের মানুষ শত শত নয় হাজার হাজার ভাগে বিভক্ত।

আমাদের জাতি আজ আত্মার দিক থেকে চরম কলুষিত। প্রত্যেকটা বিষয়েই মিথ্যা আর প্রতারণায় পরিপূর্ণ আমাদের সমাজ। প্রায় ২০০ বছরের গোলামির জিন্দেগীতে আমরা নিজেদের স্বাতন্ত্র, বৈশিষ্ট্য, সংস্কৃতি সবই হারিয়ে ফেলেছি। ময়ূরের নাচকে অনুকরণ কোরতে যেয়ে কাক যেমন তার হাঁটাও ভুলে যায় তেমনি দশা আজ আমাদের। আমাদের মধ্যকার এই বিভক্তিকে পুঁজি কোরে বিশ্বের মোড়লরা আমাদের উপর খবরদারী কোরছে। আমাদের সার্বভৌমত্ব হোচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ। আমাদের দ্বন্দ্ব মীমাংসা করার নামে ইঁদুর বিড়ালের রুটি ভাগ করার মত আমাদের সম্পদের অবশিষ্টাংশটুকু থেকেও আমাদেরকে বঞ্চিত করার সুযোগ পাচ্ছে। একদিকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে আমরা একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র আখ্যা পাচ্ছি, অন্যদিকে অপসংস্কৃতি, বস্তবাদী মতবাদ, মাদক ইত্যাদির করালগ্রাসে আমাদের যুব সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। জাতির কর্ণধাররা সামান্য ব্যক্তিস্বার্থে বিদেশী প্রভুদের নিকট দেশ বিক্রি কোরে দিয়েছেন। ভেজালযুক্ত খাদ্য খেয়ে, পরিবেশ দূষণের শিকার হোয়ে হাজারো রোগ ব্যাধি নিয়ে বেড়ে উঠছে শারীরিকভাবে প্রায় অক্ষম পরবর্তী প্রজন্ম। এই অবস্থায় পড়ে মানুষ চরম হতাশায় নিমজ্জিত।

জাতির এই অবস্থায় আশার আলো দেখাচ্ছে একমাত্র আল্লাহর সত্যদীন। যার মাধ্যমে আমরা ফিরে পেতে পারি আমাদের সোনালী অতীত। আরবের সেই ঐক্যহীন, বিশৃঙ্খল, অসভ্য, বর্বর, অখ্যাত, অবজ্ঞাত, পশ্চাদপদ লোকেরা যখনই মহানবীর আহ্বানে ঐক্যবদ্ধ হোয়েছিল, তখনই তাদের জীবন থেকে মুছে গিয়েছিল যাবতীয় অন্ধকার, হতাশা, গ্লানি, জাহেলিয়াত। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তারা হোয়েছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। আমাদের দেশের এবং বিশ্বের সামাজিক অবস্থা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন, অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন, রক্তপাত ইত্যাদিতে আমরা অতীতের সকল জাতিকে ছাড়িয়েছি বহুকাল পূর্বে। যান্ত্রিক উন্নতি ছাড়া বর্তমান সভ্যতা আমাদেরকে আর কী দিয়েছে? আত্মিক দিক থেকে মানুষ এখন পশুপর্যায়ে নেমে গেছে। এখনও সময় আছে, আমরা চূড়ান্ত ধ্বংস থেকে বেঁচে যাবো যদি আমরা নিজেদের মধ্যে মদীনা সনদের অনুরূপ একটি ঐক্যসনদে উপনীত হোই।

হয়ত বলতে পারেন বর্তমান যুগের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সাথে মদীনার সনদ সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কিন্তু তাতে মৌলিক ভিন্নতা ও পার্থক্য নির্দেশ কোরে প্রত্যেক জাতি গোত্রের স্বাতন্ত্র বজায় ছিল। আজকেও আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে ঐক্যের প্রতীক বিবেচনা কোরে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকের অধিকার ও স্বাতন্ত্র বজায় রেখে আমরা ঐক্যবদ্ধ হোতে পারি, যা আমাদেরকে একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত কোরতে সহায়ক ভূমিকা পালন কোরবে।

পৃথিবীর সফলতম রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন আল্লাহর রসুল। একদিন তাঁর প্রিয় সাহাবী আবু ওবায়দা (রাঃ) তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমরা যারা এসলাম গ্রহণ কোরলাম এবং আপনার সাথে থেকে কঠিন সংগ্রাম কোরলাম আমাদের চেয়েও কি উত্তম কেউ আছে? জবাবে মহানবী (দঃ) বোললেন- “হ্যাঁ, আছে। আমার পর (ভবিষ্যতে) তেমন মানুষ আসবে যারা আমাকে না দেখেও বিশ্বাস কোরবে [আবু ওবায়দা (রাঃ) থেকে- আহমদ মেশকাত]। অন্য হাদিসে পাওয়া যায় সেই মানুষগুলোর মর্যাদা হবে সাহাবীদের চেয়েও সত্তর গুণ বেশি। কারণ, তখন তাদের সাথে নবীর মত মহামানবের পবিত্র উপস্থিতি থাকবে না কিন্তু ফেকাহ তফসীর আর মাসলা মাসায়েলের পাহাড়ের নীচে চাপা পড়ে থাকা নবীর দেখানো সেই সঠিক হেদায়াহ এবং এসলামের প্রকৃত আকীদা তারা ফিরে পাবে। সেই সত্যদীনের জ্ঞান আল্লাহ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে দান কোরেছেন। এখন দরকার কেবল জাতীয় ঐক্যের। সুতরাং আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো, আমরা শ্রেষ্ঠ হবো, আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু কোরে দাঁড়াবো, এটাই হোক আমাদের আজকের শপথ

বিষয়: বিবিধ

১২৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File