চরিত্রহীন নেতৃত্ব: স্রষ্টাহীন জীবনব্যবস্থা ধার করার পরিণতি
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ০৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৫:৪৯:০৩ বিকাল
মহানবী (দ) অক্লান্ত পরিশ্রম আর কঠোর অধ্যবসায় কোরে উম্মতে মোহাম্মদী নামক একটি জাতি গঠন কোরলেন, যে জাতি এমন ঐক্যবদ্ধ ছিল যেন সীসা গলানো প্রাচীর। তাদের শৃঙ্খলা, আনুগত্য এবং নেতৃত্বের প্রতি এত অগাধ ভালবাসা ও বিশ্বাস ছিল যে, সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের নেতার হুকুম তামিল কোরত। তা কোরতে গিয়ে যদি প্রত্যেকটা লোকের জান এবং সমুদয় সম্পদ বিসর্জন দিতে হোত- তারা তাও দিত। সমগ্র জাতি ছিল এক জাতি। জাতির জীবনব্যবস্থা ছিল আল্লাহর নাযেল করা, যেটা শেষ নবীর উপর অবতীর্ণ হোয়েছিল। জাতির মধ্যে মাসলা মাসায়েল নিয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছিল না। ধর্মকে ব্যবসায়ীক পণ্য কোরে জীবিকা নির্বাহকারী আলাদা একটি আলেম মোল্লা শ্রেণি ছিল না, আধ্যাত্মিক সাধনাকারী বিকৃত তাসাউফপন্থী অন্তর্মুখী খানকাবাসী পীর মুরিদ ছিল না। সমস্ত উম্মাহ ছিল দুর্ধর্ষ যোদ্ধা যাদের জীবনের লক্ষ্য ছিল এক এবং অভিন্ন, আর তা হোল – আল্লাহর দেওয়া সত্যদীন এই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরে মানবজীবন থেকে অন্যায় অবিচার দূর কোরে ন্যায় সুবিচার শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
উম্মতে মোহাম্মদীর পঁচন ও পতন
মহানবীর এন্তেকালের পর ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত তারা জীবন উৎসর্গকারী একটি মহাজাতি ছিল যার নাম উম্মতে মোহাম্মদী। এরপর তাদের মধ্যে দেখা দিল দুর্ভাগ্যজনক উদ্দেশ্যচ্যুতি । তারা ভুলে গেল কেন তাদেরকে সৃষ্টি করা হোয়েছিল। দীন প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনপণ সংগ্রাম ত্যাগ কোরে তারা অন্যান্য রাজা বাদশাহদের মত ভোগ বিলাস ও আরাম আয়েশে মত্ত হোয়ে পড়লো। এই সময়ে জাতির মধ্যে গজিয়ে উঠলো দীনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণকারী ফকীহ, আলেম ও এমামগণ। তারা অখণ্ড জাতিটিকে ভেঙ্গে বহু মাযহাব, ফেরকা, দল উপদলে খণ্ড বিখণ্ড কোরে ফেললো। অপরদিকে ভারসাম্যহীন সুফি মতবাদের প্রভাবে জাতির মধ্যে সুফি, দরবেশ, আধ্যাত্মিক সাধক, পীর ও মুরিদের প্রকোপ শুরু হোল। তারা জাতির বহিঃর্মুখী সংগ্রামী প্রেরণাকে উল্টিয়ে অন্তর্মুখী কোরে দিল। জাতির সংগ্রামী চরিত্র দিন দিন অদৃশ্য হোয়ে যেতে লাগলো। এই শুরু হোল জাতির পঁচন ক্রিয়া আর পতনের পর্ব। একদিকে জাতি পার্থিব সর্ববিষয়ে সমৃদ্ধ হোয়ে উঠতে লাগলো, আর অপর দিকে জাতির যোদ্ধা চরিত্র লুপ্ত হোতে লাগলো। আল্লাহর রসুল বোলেছিলেন, এসলাম নামক বাড়ির ছাদ হোচ্ছে জেহাদ। ছাদই বাড়ির বাসিন্দাদের রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ের হাত থেকে নিরাপত্তা দেয়। এই ছাদ জেহাদ যখন পরিত্যক্ত হোল উম্মতে মোহাম্মদীর হাতে একদা পরাজিত শত্র“রা এবং আভ্যন্তরীণ শত্র“রা সক্রিয় হোয়ে উঠলো। কয়েকশ’ বছর শান শওকতের সঙ্গে রাজত্ব করার পর এল তাদের পতনের পালা। আল্লাহ বোলেছেন জাতি যদি জেহাদ ত্যাগ করে তিনি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেবেন এবং তাদেরকে অন্যজাতির গোলামে পরিণত কোরে দেবেন (সুরা তওবা ৩৯)। আল্লাহর এত কঠোর সাবধানবাণী সত্ত্বেও জাতি ফিরলো না। সুতরাং ওয়াদা মোতাবেক আল্লাহ এই জাতিকে ইউরোপিয়ান খ্রিস্টান জাতিগুলির গোলামে পরিণত কোরে দিলেন এবং তাদের হাতে মর্মন্তুদ শাস্তি দিলেন।
চাপিয়ে দেওয়া হোল স্রষ্টাহীন ব্যবস্থা
এই ইউরোপীয় প্রভুরা প্রথমেই যে কাজটি কোরল তা হোচ্ছে, তারা মোসলেম দুনিয়ায় বিকৃতভাবে হোলেও এসলামের যে আইন-কানুন, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি অর্থাৎ জীবনব্যবস্থা চালু ছিল সেটাকে বাদ দিল এবং নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থা ও আত্মাহীন বস্তুবাদী সভ্যতা কার্যকরী কোরল। তাদের জীবনব্যবস্থাটি ছিল সম্পূর্ণরূপেই মানবরচিত, সেখানে আল্লাহ অর্থাৎ ধর্মের কোন অংশ ছিল না। যেহেতু মানব সভ্যতার সকল ন্যায়-নীতি, আদর্শ, নৈতিকতার শিক্ষার একমাত্র উৎস হোচ্ছে ধর্ম তথা স্রষ্টা আল্লাহ। যে জীবনব্যবস্থা স্রষ্টার শিক্ষাহীন তাতে কোন ন্যায় নীতি আদর্শের লেশ থাকবে না এটা তো জানা কথা। তাই কয়েক শতাব্দী ধরে ঔপনিবেশিক শাসনামলে এবং তৎপরবর্তী সময়ে এই ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি ব্যবস্থার চর্চার ফলে মোসলেম নামক জাতিটি হোয়ে পড়েছে আত্মাহীন, নৈতিকতাহীন, অসৎ চরিত্রের অধিকারী। বিশেষ কোরে সবচেয়ে দুরাবস্থা এই জাতির যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের। সমস্ত মোসলেম দুনিয়াকে ৫৫টির বেশি ভৌগোলিক রাষ্ট্রে বিভক্ত কোরে ফেলা হোল। পশ্চিমা বস্তুবাদী, স্রষ্টাহীন সভ্যতা দুনিয়াকে উন্নত বিশ্ব, উন্নয়নশীল বিশ্ব ইত্যাদি ভাগে ভাগ কোরল। মোসলেম দুনিয়ার নেতারা বিশেষ কোরে আরব বিশ্বের নেতারা যে জঘন্য ও পাশবিক বিলাসিতায় জীবন অতিবাহিত করেন তা আমাদের মত দরিদ্র মোসলেম দেশের মানুষ কল্পনাও কোরতে পারবে না। আর তৃতীয় বিশ্বের নেতত্বের জন্য ষড়যন্ত্র, দাঙ্গা, মিথ্যাচার, রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠন ইত্যাদি তো অতি সাধারণ ঘটনা। তারা সর্বক্ষণ তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে বিবাদে এবং শত্র“তায় লিপ্ত, পরস্পরকে প্রকাশ্যে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ কোরতে তারা কসুর করেন না, মিথ্যা গল্প বানিয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের চরিত্র হনন করা তাদের একটি প্রিয় কাজ। প্রশ্ন হোল তাদের এই দুঃশ্চরিত্রের কারণ কি?
মোসলেম বিশ্বের নেতৃত্ব কেন চরিত্রহীন
এর কারণ- মানুষ কাদামাটির ন্যায়। নরম কাদামাটিকে যে ছাঁচে বা ডাইসের ভিতরে রাখা হবে সেই মানুষ সেই ডাইসের আকৃতি লাভ কোরবে। ডাইসটি গোলাকার হোলে সেটা মাটির গোলক তৈরি কোরবে, ডাইসটি যদি ইটের আকৃতি হয় তবে সেটার মাধ্যমে মাটি ইটের মত দৈর্ঘ্য প্রস্থ নিয়ে বের হবে। একইভাবে মানুষকে যে সিস্টেমের মধ্যে রাখা হবে মানুষের চরিত্রও তৈরি হবে সে মোতাবেক। আজ যে আমাদের নেতারা দুর্নীতিবাজ, ওয়াদাখেলাফকারী, মিথ্যাবাদী, স্বার্থপর, বৈদেশিক শক্তির তাবেদার এবং অশ্লীল খিস্তিকারী তার কারণ, তারা দুনিয়াতে চলমান সিস্টেমের উৎপাদিত ফসল। তাই তাদের মুখে অশ্লীল গালাগালিই মানানসই। দিন দিন আরও নিকৃষ্ট চরিত্রের মানুষ জাতির নেতৃত্বে আসবেন এবং তাদের চরিত্র জঘন্য থেকে জঘন্যতর হবে যদি না এই সিস্টেমের পরিবর্তন করা হয়। ১৪০০ বছর আগের আরবের অবস্থাকে বলা হোত আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ বা অন্ধকার যুগ। সেই যুগে আল্লাহর রসুল সত্যদীন প্রতিষ্ঠা কোরলেন। এই নতুন সিস্টেম বা জীবনব্যবস্থা সেখানকার মানুষকে এমন উন্নত চরিত্র দান কোরল এবং সেই সমাজকে এমন নিরাপত্তা, ন্যায় ও সুবিচারে পূর্ণ কোরে দিল যে স্বয়ং মহানবীসহ পরবর্তী খলিফা আবু বকর (রা), ওমর (রা) কয়েক দশক পর্যন্ত অর্ধ পৃথিবী শাসন কোরেছেন, তাদের কোন দেহরক্ষীর প্রয়োজন পড়ে নি। পক্ষান্তরে বর্তমানে আমরা যে সিস্টেম মেনে চোলছি তা এমন একটি সমাজ আমাদের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে যে জনগণ ও এদের নেতাদের মধ্যে লক্ষ যোজনের ব্যবধান। প্রতিটি রাষ্ট্রে জনগণ তাদের নেতাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করে। ফলে নেতারা ভোগেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়, তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে চলাচল করার সাহস পান না। তারা বিপুল অর্থ ব্যয়ে দেহরক্ষী রাখেন, রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ে আলাদা জবমরসবহঃ তৈরি করেন তবুও নিরাপদ বোধ কোরতে পারেন না। কেন? কারণ এই সিস্টেম তাদেরকে কোরে দিয়েছে অর্থলোলুপ, তারা জনগণের অর্থ চুরি কোরে, স্বজনপ্রীতি কোরে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নিজের আখের গোছায়। দেশের অর্থে বিদেশে বাড়ি বানায়। নির্বাচনের সময় যত ওয়াদা তারা কোরেছিল অধিকাংশই তারা পূরণ করেন না। ফলে জনগণও তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এই সিস্টেম মানুষের মধ্য থেকে সর্ব প্রকারের ঐক্য, শৃঙ্খলা, ভালোবাসা, দয়ামায়া, ভক্তি, শ্রদ্ধা ইত্যাদি তুলে নিয়ে সেখানে অনৈক্য, সন্দেহ, বিশ্বাসভঙ্গ, হানাহানি, হিংসা, ঘৃণা, প্রতিশোধপরায়ণতা ইত্যাদি প্রতিস্থাপন কোরেছে। এই অশান্তির বিষবাষ্পে সারা পৃথিবীতে সৃষ্টি হোয়ে আছে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ। পশ্চিমা সভ্যতার অন্ধানুকরণকারী এই চরিত্রহীন নেতৃত্ব মোসলেম জাতিকে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি দাঁড় কোরিয়েছে।
চরিত্রবান নেতৃত্ব সৃষ্টির উপায়
এই অবস্থা থেকে জাতির মুক্তি পাওয়ার একটি মাত্র পথ আছে, তা হোল এই জাতিটির কাছে আল্লাহ প্রদত্ত যে নিখুঁত জীবনব্যবস্থা রোয়েছে, সেই জীবনব্যবস্থার দিকে ফিরে যাওয়া- যে জীবনব্যবস্থা কার্যকরী করার ফলে চরিত্রে ও কর্মে এমন মানুষ তৈরি করে যারা সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, ওয়াদারক্ষা, দয়া-মায়া, ভদ্রতা, শিষ্ঠতার প্রতিরূপ। আসুন, আমরা বর্তমান সিস্টেমটা পাল্টাই। আল্লাহর দেওয়া সত্য জীবনব্যবস্থা চালু কোরি। এ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী আল্লাহর অশেষ দয়ায় সেই প্রকৃত জীবনব্যবস্থাটির প্রকৃত রূপ মানবজাতির সামনে উপস্থাপন কোরেছেন। এখন মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি এই অযোগ্য, চরিত্রহীন নেতৃত্বের হাত থেকে নিষ্কৃতি চায় নাকি তাদের অধীনেই জীবন কাটিয়ে যেতে চায়।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই বন্দীদের সংখ্যাই প্রত্যেক দেশের কম করে হলেও ৭০%। ২০%-২৫% হচ্ছে জেলার (শাসককূল এবং ব্যবসায়ী)। আর বাকী পার্সেন্টেজ আপনার-আমার মতন হতাশ আপাতত।
কিভাবে আসবে সবাই?
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন