উম্মতে মোহাম্মদীর উদ্দেশ্যচূতি, রসুলাল্লাহর কাজই তাঁর উম্মাহর কাজ
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ০৭ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৫:২৯:৫৫ বিকাল
রসুলাল্লাহর ওফাতের ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত উম্মতে মোহাম্মদী একদেহ একপ্রাণ হোয়ে সংগ্রাম চালিয়ে গেল। তারা বিশ্বের সকল জাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের আসন লাভ কোরল। এরপর ঘোটলো এক মহা-দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ঐ জাতি হঠাৎ তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ভুলে গেলো। জাতি ভুলে গেলো যে কাজের জন্য তাদেরকে সৃষ্টি করা হোয়েছে, গঠন করা হোয়েছে, প্রশিক্ষণ দেয়া হোয়েছে সেই কাজ ছেড়ে দেওয়া আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। কিন্তু জাতির লোকদের আকীদা অর্থাৎ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্বন্ধে ধারণা বিকৃত হোয়ে যাওয়ায় জাতি ঠিক তাই কোরলো, আল্লাহর দীন সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জেহাদ অর্থাৎ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, সংগ্রাম ত্যাগ কোরলো এবং ত্যাগ কোরে অন্যান্য রাজা বাদশাহরা যেমন রাজত্ব করে তেমনি শান শওকতের সঙ্গে তাদের মতই রাজত্ব কোরতে শুরু কোরলো। শান-শওকতের সঙ্গে রাজত্ব করার মোহ তাদের এমনভাবে পেয়ে বোসলো যে তারা ভুলে গেলেন আল্লাহ কোর’আনে মুমিন হবার যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তার মধ্যে ঐ জেহাদ অঙ্গীভূত করা আছে। সুরা হুজরাতের ১৫নং আয়াতে আল্লাহ বোলেছেন-“সত্যনিষ্ঠ মুমিন শুধু তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, তারপর (সে সম্বন্ধে) আর কোনো সন্দেহ করে না (অর্থাৎ এ বিশ্বাসের উপর দৃঢ়, অবিচল থাকে) এবং তাদের সম্পদ ও প্রাণ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে।” আল্লাহ প্রদত্ত মুমিনের এই সংজ্ঞা থেকে জাতি বিচ্যুত হোয়ে গেল।
রসুলাল্লাহর কাজই উম্মতের কাজ
বিশ্বনবী (দ) তাঁর উম্মাহকে পরিষ্কার কোরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাঁর চোলে যাবার পর তিনি যেমন কোরে সংগ্রাম কোরে সমস্ত আরবে দীন প্রতিষ্ঠা কোরলেন, ঠিক তেমনি কোরে বাকি দুনিয়ায় ঐ দীন প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত হবে। এটাকে নবীজী (দ) বোললেন “আমার প্রকৃত সুন্নাহ”, অর্থাৎ আমি সারা জীবন যা কোরে গেলাম, এবং এও বোললেন যে, যে আমার এই সুন্নাহ ত্যাগ কোরবে সে বা তারা আমার কেউ নয় (বোখারী, মুসলিম); অর্থাৎ আমার উম্মত নয়। তারা উম্মতে মোহাম্মদীর দাবী কোরতে পারে না।
রসুলাল্লাহর বিদায় নেওয়ার ৬০/৭০ বছর পর এই জাতি জেহাদ ত্যাগ কোরেই ক্ষান্ত হোলেন না। তারা রসুলের সুন্নাহরও ভিন্ন সংজ্ঞা আবিষ্কার কোরলেন। জেহাদ ছেড়ে দেবার পর নবীর সুন্নাহর বিকল্প হিসাবে নেয়া হোলো তাঁর ব্যক্তিগত অভ্যাস-অনভ্যাস, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি যে গুলোর সাথে তাঁর জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য, তাঁর উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্বের কোনো সম্বন্ধই নেই; যেগুলো নেহায়েৎ ব্যক্তিগত ব্যাপার। নিষ্ঠুর পরিহাস এই যে, জেহাদ ত্যাগকারীদের কাছে মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম বিপ্লবীর সুন্নাহ হোয়ে দাঁড়ালো, তাঁর বিপ্লব নয়, তাঁর মেসওয়াক করা, খাবার আগে জিহবায় একটু নিমক দেওয়া, খাবার পর একটু মিষ্টি খাওয়া, ডান পাশে শোয়ার মত ছোট-খাট অসংখ্য তুচ্ছ ব্যাপার। মানুষের ইতিহাসে কোনো জাতি তার নেতার এমন অপমানকর অবমূল্যায়ন কোরেছে বোলে আমাদের জানা নেই।
দাসত্বের যুগ: শিক্ষাব্যবস্থায় ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্র
আল্লাহ সুরা তওবায় ৩৮ এবং ৩৯ নং আয়াতে এই জাতিকে জেহাদ ছেড়ে দেবার পরিণতি সম্বন্ধে এই বোলে সাবধান কোরে দিয়েছেন- “যদি তোমরা সামরিক অভিযানে বের না হও তবে তিনি তোমাদের কঠিন শাস্তি দেবেন এবং তোমাদের স্থলে অন্য কোনো জাতিকে প্রতিষ্ঠা কোরবেন” অর্থাৎ তোমাদের অন্য কোনো জাতির দাস, গোলাম বানিয়ে দেবেন। এই কঠোর সতর্কবাণী সত্ত্বেও আকীদা অর্থাৎ জাতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্বন্ধে সঠিক সম্যক ধারণার (Comprehensive Conception) বিকৃতিতে এই জাতি জেহাদ ছেড়ে দিয়ে নফসের সাথে নিরাপদ জেহাদ শুরু কোরলো। আল্লাহও তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কিছুদিন পরই ইউরোপের খ্রিস্টান জাতিগুলিকে দিয়ে ঐ জাতিকে সামরিক ভাবে পরাজিত ও পর্যুদস্ত কোরে শাসনভার ও কর্তৃত্ব তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে খ্রিস্টানদের হাতে তুলে দিলেন। ঐ জাতিকে দাসে পরিণত করার পর খ্রিস্টান প্রভুরা তাদের উপরে আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে নিজেদের তৈরি করা জীবনব্যবস্থা চাপিয়ে দিলো। কোনো জাতি যদি আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থার বদলে অন্য কোনো জীবনব্যবস্থা মেনে নেয়, তখন তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে আর মুমিন মুসলিম থাকে না, কাফের ও মুশরিক হোয়ে যায়। এই জাতিও কার্যতঃ কাফের ও মুশরিক হোয়ে গেল। ভবিষ্যতে এই জাতিটি যেন আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য খ্রিস্টান শাসকরা কিছু সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা কোরল। তার একটি হোচ্ছে- তারা তাদের অধিকৃত মুসলিম দেশগুলিতে পাশাপাশি দু’টি শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন কোরল। একটি সাধারণ শিক্ষা এবং অপরটি মাদ্রাসা শিক্ষা। বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে শাসকরা তাদের পছন্দমত একটি ইসলাম শিক্ষা দেবার জন্য তাদের অধিকৃত সমস্ত মুসলিম দুনিয়ায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কোরল। এই মাদ্রাসায় “ইসলাম” শিক্ষা দেবার জন্য খ্রিস্টান পণ্ডিতরা বহু গবেষণা কোরে একটি নুতন “ইসলাম” দাঁড় করালেন, যে “ইসলামের” বাহ্যিক দৃশ্য ইসলামের মতই কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটার আকীদা এবং চলার পথ আল্লাহর রসুলের ইসলামের ঠিক বিপরীত। এই সিলেবাসে নামাজ, রোযা, বিয়ে-শাদী, বিবি তালাক, দাড়ি-টুপি, পাজামা, পাগড়ী, মেসওয়াক, কুলুখ, ওজু গোসল, হায়েয-নেফাস ইত্যাদি হাজার রকমের বিষয়গুলিকে ইসলামের অতি জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোলে উপরে স্থান দেয়া হোলো। পক্ষান্তরে তওহীদকে ব্যক্তিগত বিষয়ে পরিণত করা হোল এবং তওহীদের ঠিক পরেই যে জেহাদের স্থান সেই জেহাদকে অতি অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে পরিণত কোরে প্রায় বাদ দেওয়া হোলো। এই শিক্ষাব্যবস্থায় অংক, ভূগোল, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদির কোনো কিছুই রাখা হোল না, যেন মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে এসে আলেমদের রুজি-রোজগার কোরে খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য এই দীন, ধর্ম বিক্রি কোরে রোজগার করা ছাড়া আর কোনো পথ না থাকে এবং যেন তাদের ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে বিকৃত ইসলামটা এই জনগোষ্ঠীর মন-মগজে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হোয়ে যায়;
অপরদিকে ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থাটি তারা চালু কোরল স্কুল কলেজের মাধ্যমে। এ ভাগটা তারা কোরল তাদের এই বিরাট এলাকা শাসন কোরতে যে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের কেরাণীর কাজ করার উপযুক্ত জনশক্তি তৈরি কোরতে। তারা এতে ইংরেজী ভাষা, সুদভিত্তিক অংক, বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক, ভূগোল, প্রযুক্তিবিদ্যা অর্থাৎ পার্থিব জীবনে যা যা প্রয়োজন হয় তা শেখানোর বন্দোবস্ত রাখলো; সেখানে আল্লাহ, রসুল, আখেরাত ও দীন সম্বন্ধে প্রায় কিছুই রাখা হোল না। তাদেরকে এমনভাবে শিক্ষা দেওয়া হোল যাতে তাদের মন শাসকদের প্রতি হীনম্মন্যতায় আপ্লুত থাকে এবং পাশাপাশি তাদের মন-মগজে আল্লাহ, রসুল, দীন সম্বন্ধে অপরিসীম অজ্ঞতাপ্রসূত বিদ্বেষ (A hostile attitude) সৃষ্টি হয়। আজ আমাদের রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক জীবন পরিচালিত হোচ্ছে পাশ্চাত্যের খ্রিস্টানদের তৈরি করা নানা রকম তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে আর ব্যক্তিগত ধর্মীয় জীবন পরিচালিত হোচ্ছে খ্রিস্টান পণ্ডিতদের তৈরি করা বিকৃত “ইসলাম” দিয়ে, আল্লাহ রসুলের ইসলাম দিয়ে নয়। ভাবতে অবাক লাগে এর পরও আমরা নিজেদের মো’মেন, মুসলিম ও উম্মতে মোহাম্মদী বোলে বিশ্বাস কোরি এবং পরকালে আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাতের আশা কোরি।
আল্লাহ কোর’আনের বিভিন্ন স্থানে এবং সুরা নুরের ৫৫ নং আয়াতে মুমিনদের এই পৃথিবীর আধিপত্য ও কর্তৃত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে যতদিন ঐ জাতি, জাতি হিসাবে জেহাদ চালিয়ে গেছে ততদিন আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা কোরেছেন- অর্ধেক পৃথিবীতে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হোয়েছিল এবং ঐ জাতি যদি তখন জেহাদ ত্যাগ না কোরতো তবে অবশ্যই আল্লাহ বাকি অর্ধেকও তাদের হাতে তুলে দিতেন। আল্লাহর ঐ প্রতিশ্রুতির মধ্য থেকে আরেকটি সত্য ফুটে ওঠে- সেটা হোলো, আমরা নিজেদের মুমিন অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রসুলে বিশ্বাসী বোলে দাবি কোরি। তাহোলে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পৃথিবীর কর্তৃত্ব, আধিপত্য আমাদের হাতে নেই কেন? তাহলে সেই সর্বশক্তিমান কি তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা কোরতে অসমর্থ (নাউযুবিল্লাহ মিন যালেক)? এর একমাত্র জবাব হোচ্ছে- আমরা যতোই নামাজ পড়ি, রোযা রাখি, যতোই হাজার রকম এবাদত করি, যতোই মুত্তাকী হই, আমরা মো’মেন নই, মুসলিম নই, উম্মতে মোহাম্মদী হবার তো প্রশ্নই ওঠে না। এ জাতি আজ নিজেরা হাজার হাজার ভাগে বিভক্ত হোয়ে মারামারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, রক্তপাত কোরছি এবং ক্ষুধা, দারিদ্র্য, কুশিক্ষা, গোলামী এক কথায় চরম অশান্তিতে নিমজ্জিত হোয়ে আছে। সুতরাং এটা সন্দেহাতীত যে তারা মো’মেন মুসলিম নয় এবং এরা যে ইসলাম প্রাণপণে পালন করার চেষ্টা কোরে যাচ্ছে সেটাও আল্লাহ রসুলের প্রকৃত ইসলাম নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৩০০ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বি.দ্র. আমার আগের প্রশ্নের উত্তর কিন্তু এখনো পেলাম না........
http://www.bdtomorrow.org/blog/blogdetail/detail/7137/aryan_k/35350
মন্তব্য করতে লগইন করুন