দৈনিক দেশেরপত্র পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন- (প্রথম পর্ব) ঘটনাবহুল ২০১৩, কী শিক্ষা পেলাম আমরা?
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ০১ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৭:৩৪:৪৪ সন্ধ্যা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিকতায় ২০১৩ সাল ছিল বেশ ঘটনাবহুল একটি বছর। মূলত রাজনীতিকে ঘিরেই ক্রমাগত ঘটে গেছে বহু অনাকাঙ্ক্ষিত ও মর্মস্পর্শী ঘটনাসমূহ। বছর জুড়ে বিরাজিত সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিষয়বস্তু ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা, যে অস্থিরতার অবসান বছর শেষেও হয় নি। সরকারের শেষ বছরে নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত ছিল রাজনীতির মাঠ। হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমা বিস্ফোরণ ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সিস্টেমের ২২ বছরে রেকর্ড পরিমাণ সহিংস ঘটনা ঘটে গেছে। বছরের শেষ মুহূর্তে এসে এই সহিংস কর্মকাণ্ডগুলি লাগামহীনভাবে বেড়ে যায়, যা এখন পর্যন্ত বহাল আছে। নতুন বছরের শুরুতেই ঘটতে যাচ্ছে আরো একটি বৃহৎ ঘটনা অর্থাৎ পাঁচ জানুয়ারির বিরোধী দল ছাড়া একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠান। আশঙ্কা করা হচ্ছে এই নির্বাচনেই ঘটে যাবে বড় ধরনের ঘটনা।
কাক্সিক্ষত ‘২০১৩ সাল’কে নিয়ে ‘জাতির স্বপ্ন’ বনাম ‘করুণ বাস্তবতা’:
নানা সফলতা-ব্যর্থতা, আশা-নিরাশার পর্ব ভেদ করে এবং ২০১২ সালের রাজনৈতিক সহিংসতার দগদগে ঘা সাথে নিয়েই দেশবাসী ২০১৩ তে পদার্পন করেছিল। যাবতীয় ব্যর্থতাকে ভুলে নতুন করে স্বদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় বুকে ধরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল তারা। কিন্তু তাদের সেই আশার গুড়ে বালী পড়ে খুব অল্প দিনের মধ্যেই জাতি নিমজ্জিত হয় হতাশার অন্ধগলিতে। যে অতীতকে তারা বারবার স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছে, দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সামনে এগুতে গেলে যে বীভৎস অতীত নিজের অকপটেই চোখের সামনে এসে নাড়া দিতো সেই অতীত যেন আরো বীভৎস আকার ধারণ করে নতুন আঙ্গিকে জাতির সামনে এসে কড়া নাড়ে। রাজনীতিতে নিত্য নতুন ইস্যু এবং সেই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বেড়ে চলে নানা রকমের ধ্বংসমুখী কর্মকাণ্ড। সাধারণ মানুষ যারা রাজনীতির আগেও থাকে না, পরেও থাকে না তাদের দিন অতিবাহিত হয় চরম শঙ্কায়, ভয়-ভীতি আর আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। জাতির স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যায়, বাস্তবতা তাকে নিয়ে যায় গভীর অন্ধকারে।
২০১৩ সালের রাজনৈতিক সহিংসতার ধারাবাহিক বীভৎস রূপ:
(১) কাদের মোল্লার রায় ও শাহবাগ:
রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল-অবরোধ, হত্যা-গুম, ধর্মীয় উন্মাদনা ইত্যাদির মানদণ্ডে বিচার করলে ২০১৩ সাল ছিল বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ একটি বছর যে ভয়াবহতার সূচক এখনও বেড়েই চলেছে। এই ভয়াবহ অবস্থার সূত্রপাত ঘটেছিল ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবার পর থেকেই। জামায়াতে ইসলামীসহ বিএনপির কয়েকজন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদেরকে এই বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয়। প্রথম থেকেই জামায়াত সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে নানারূপ প্রকাশ্য ও নেপথ্য কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে। অতঃপর ২০১৩ সালের শুরুতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষিত হয়। এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ জামাত-শিবির সারা দেশে সহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, সেই সাথে সরকারের পক্ষ থেকেও তাদের বিরুদ্ধে চলে ব্যাপক দমন-পীড়ন। ফলে জনজীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। সাধারণ মানুষের জান-মালের নিশ্চয়তা ব্যাপক হুমকিতে পতিত হয়।
অন্যদিকে কাদের মোল্লার যথাযথ শাস্তি হয় নি দাবি করে কতিপয় ব্লগারের ডাকে রাতারাতি গড়ে উঠে শাহবাগের প্রতিবাদ সমাবেশ এবং এই দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এক নাগারে চলতে থাকে হাজার হাজার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অবস্থান কর্মসূচী। মিডিয়াকর্মীদের ব্যাপক কাভারেজের মধ্য দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চ উঠে আসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে । তাদের অনুসরণে প্রতিটি বিভাগীয়, এমনকি জেলা শহরগুলোতে গড়ে উঠতে থাকে গণজাগরণ মঞ্চ। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে সৃষ্ট এই আন্দোলনের দাবি মোতাবেক সরকার তড়িঘরি করে সংসদে আইন পাশ করে ঐ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া এমনকি স্বয়ং সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা এই সমাবেশকে সমর্থন করে প্রকাশ্য সাহায্য-সহায়তা করে। তবে পরবর্তীতে ব্লগার রাজীব হত্যা এবং শাহবাগের কিছু ব্লগারদের ইসলামবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড দৈনিক আমারদেশসহ কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়লে সারা দেশে গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে শুরু হয় উল্টো স্রোত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শাহবাগীরা একটি বিরাট জনগোষ্ঠির সমর্থন হারায়, সেই সাথে তাদেরকে আশ্রয়-পশ্রয় দেওয়ার কারণে সরকারকেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এই সুযোগে জামাত-শিবিরসহ বিরোধীদলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে সরকারকেও নাস্তিক, ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে চিত্রায়িত করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়। বলা বাহুল্য, তাদের সে চেষ্টা সফলও হয়েছিল যার কারণে হঠাৎ করেই সরকার একটি বিরাট জনগোষ্ঠির সমর্থন হারায় যার প্রমাণ পাওয়া গেছে বিগত ৫ টি সিটিকর্পোরেশন নির্বাচনে।
(২) সাঈদীর ফাঁসির রায়:
এমনই একটি পরিবেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমীর দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণা করে। আবারো জামায়াতের ডাকা সেই হরতালের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশবাসী। সারা দেশ জুড়ে শুরু হয় হামলা-ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড। এখানে বলে রাখা ভালো- দেলোয়ার হোসেন সাঈদী যতটা না একটি ধর্মীয় দলের নেতা হিসেবে পরিচিত তার চেয়ে অনেক বেশি পরিচিত ছিল ধর্মের আল্লামা-মাওলানা-ওয়ায়েজ হিসেবে। বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জে এমন অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ রয়েছে যারা কোন রাজনৈতিক দল করে না কিন্তু তার ওয়াজের ভক্ত, তারা সাঈদীর মত তথাকথিত আলেম-মাওলানাদেরকে ইসলামের ধারক-বাহক, নবী রসুলদের উত্তরসূরী হিসেবে জ্ঞান করে। এমতবস্থায় যখন তাকে শাস্তি দেওয়া হয় তখন একটি বিরাট সংখ্যক ধর্মপ্রাণ (ধর্মান্ধ) মানুষ এটাকে ইসলাম বিদ্বেষী চক্রান্ত হিসেবেই জ্ঞান করেছে, কারণ ইতোমধ্যেই শাহবাগ আন্দোলনের কথিত নাস্তিক নেতা-কর্মীদের পক্ষ নেওয়ায় একটি মহল ঐ সকল সাধারণ মানুষদের কাছে সরকারকে ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে দায়ী করে আসছে। এই ঘটনায় পরিষ্কারভাবে দেশ দু’টি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়। ফলশ্র“তিতে দেখা গেছে- ২৮ শে ফেব্র“য়ারি জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পরবর্তী কয়েকটি দিন ছিল ২০১৩ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে সহিংস একটি সময়। বিভিন্ন গণমাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী - রায়ের পরবর্তী দু’দিনেই জামাত-শিবিরের কর্মী-সমর্থকদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে নিহত হয় প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ, যাদের মধ্যে কয়েকজন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যও ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কোন একদিনে এত বড় সংখ্যক হত্যাকাণ্ড আর কখনোই ঘটেনি।
(৩) হেফাজতে ইসলামের উত্থান ও ৫’মে:
রাজনৈতিক এই ডামাডোলে যখন দেশের মানুষ দিশাহারা এবং আতঙ্কিত তখন হঠাৎ করেই শাহবাগ মোড়ে গড়ে ওঠা প্রজন্ম চত্ব¡রের নেতা-কর্মীদের ইসলাম বিদ্বেষী প্রচার-প্রচারণা ও রসুলাল্লাহকে কটুক্তি করার প্রতিবাদে মার্চ মাসে অরাজনৈতিক দাবিদার হেফাজতে ইসলাম নামক একটি কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। হেফাজতে ইসলাম প্রথম থেকেই বলে আসছিল যে তারা কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয় বরং গণজাগরণের মঞ্চের বিপক্ষে। তাদের অভিযোগ ছিলো এই যে, শাহবাগে নাস্তিকদের নেতৃত্বে গণজাগরণ মঞ্চ চলছে, তাদের ব্যাপারে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ও ইসলামরক্ষাসহ ১৩ দফা দাবিতে ৫ ই মে ঢাকা অবরোধের ঘোষণা দেয়। এদিকে সরকারও তাদের এই কর্মসূচী যাতে সফল না হয় সে উদ্দেশ্যে বিভিন্নভাবে ব্যবস্থা নিতে থাকে। সরকারি বাধাকে উপেক্ষা করে ৫ ’মে হাজার হাজার হেফাজত কর্মী ঢাকায় উপস্থিত হয়ে সকাল থেকেই ঢাকার রাজপথ অবরোধ করে রাখে। একপর্যায়ে দুপুর নাগাদ শাপলা চত্ব¡রে শুরু হয় সমাবেশ। লক্ষাধিক কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতিতে চলতে থাকে হেফাজতের সমাবেশ, সেই সাথে দিনভর চলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা। ডিএমপির পক্ষ থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি থাকলেও হেফাজত নেতারা কোন এক অজানা কারণে সমাবেশস্থল ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকে। এসময় তাদের একাংশের পক্ষ থেকে আলোচিত ১৩ দফার পরিবর্তে -‘এক দফা এক দাবি - সরকার পতন’ এমন স্লোগানও শোনা যায়। অবশেষে মধ্যরাতের পরে তাদেরকে উচ্ছেদে পুলিশ-র্যাব-বিজিবির সমন্বয়ে শুরু হয় যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান। মাত্র ১০ মিনিটের ভেতরেই হাজার হাজার হেফাজত কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে- ঐ রাত্রে তাদের দুই হাজারেরও অধিক কর্মী মারা গেছে। তবে পুলিশের দাবি মোতাবেক- মৃতের সংখ্যা হলো ১১ জন। ওদিকে প্রধান বিরোধীদল বিএনপিও হেফাজতের দাবির সাথে সুর মেলায় যদিও তারা কেউই তাদের দাবির পক্ষে প্রমাণ হাজির করতে পারে নি। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ ঐ সহিংসতায় ৬১ জনের নিহতের খবর প্রকাশ করলেও তাদের তালিকা প্রকাশ করে নি, উল্টো তথ্য বিভ্রাটের দায়ে অধিকারের চেয়ারম্যান আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতারও হতে হয়েছিল। এখানে বলে রাখা ভালো- এই ঘটনায় অস্পষ্টতা থাকায় ক্ষমতাসীন দলটিকে বিরাট জনসমর্থন হারাতে হয়েছে। কারণ প্রকাশ্যে সরকারের শক্তির সাথে পেরে না উঠে হেফাজত সংশ্লিষ্ট দলগুলো গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে সরকার বিরোধী ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও গুজব চালায় যা সরকার তরফ থেকে সঠিক কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়। হাজার হাজার আলেমের মৃত্যুর কথা বলে ঐ ধর্মপ্রাণ মানুষগুলোর সরকারবিরোধী মানসিকতা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে তারা যথেষ্ট সফলও হয়।
(৪) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অন্যান্য রায়:
কাদের মোল্লা এবং সাঈদীর পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্রমান্বয়ে বছর জুড়ে আরো ৭ জনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ড দেয়। কামারুজ্জামান, গোলাম আজম, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আব্দুল আলীম, চৌধুরী মঈন উদ্দিন এবং আশরাফুজ্জামান খানকে বিভিন্ন সময়ে সাজা প্রদান করা হয়। এই প্রতিটি রায়ের দিন-ই ছিল জনতার আতঙ্কের দিন, ভয়-ভীতি এবং ক্ষয়ক্ষতির দিন। প্রায় প্রতিটি রায়ের দিনই ডাকা হয়েছে হরতাল এবং চালানো হয়েছে নারকীয় তাণ্ডব, যে তাণ্ডব থেকে বৃদ্ধ, শিশু, নারী এমনকি গাছগাছালিও রেহাই পায় নি। কথিত ইসলাম রক্ষার নামে সারা দেশ জুড়ে চলতে থাকে নারকীয় তাণ্ডব যা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করেও নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। জলকামান, রাবার বুলেট বা সাউণ্ড গ্রেনেড থেকে শুরু করে গুলি করতেও দ্বিধা করে নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উভয়পক্ষের গ্যাড়াকলে পড়ে জীবন হারিয়েছে সাধারণ মানুষ, বেড়েছে লাশের মিছিল, হাহাকার উঠেছে স্বজন হারানো মানুষের আর্তনাদে। তথাকথিত আস্তিক-নাস্তিক বিভেদকে যারা তাদের হীন স্বার্থে তুঙ্গে উঠিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষগুলোর জীবন-সম্পদকে অপরাজনীতির বলি করেছে তারা তাদের হীন স্বার্থ ঠিকই চরিতার্থ করেছে, তবে খেসারত দিতে হয়েছে পুরো জাতিকেই। অপরদিকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে যারা পরিচালনা করছে তারা শুধু অস্ত্রের বলেই বিশ্বাসী। ‘শক্তি প্রয়োগেই সকল সমস্যার সমাধান’ এই নীতিতে বিশ্বাসী শাসকরা শেষ পর্যন্ত শক্তির জোরে হয়তোবা সাময়িকভাবে নিজেদেরকে নিরাপদে রাখতে সক্ষম হচ্ছে কিন্তু বিনিময়ে সমস্ত জাতিকে দাঁড় করিয়েছে খাদের কিনারায়, নিক্ষেপ করেছে আতঙ্কপুরীতে। অথচ, ধর্ম নিয়ে যাবতীয় অপরাজনীতি, ধর্মীয় উন্মাদনা এবং ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণীটির প্রকৃত মুখোশ জাতির সামনে তুলে ধরার দায়িত্ব কিন্তু সর্বাগ্রে সরকারের। তারা যদি প্রকৃতপক্ষেই ধর্মের প্রকৃত রূপ মানুষের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হতো এবং বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নে উর্দ্ধে রাখতে পারতো তবে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষগুলোকে দিয়ে এমন অমানবিক এবং ধর্মপরিপন্থী কর্মকাণ্ড করানো সম্ভব হতো না। (চলবে)
বিষয়: রাজনীতি
১৩৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন