প্রচলিত ইসলাম ইসলাম নয় কেন?

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:৫৮:২৮ সকাল



আপনি একটি গাছের চারা রোপণ করলেন। আপনি সবাইকে বললেন যে, এটি একটি আমগাছ। কিন্তু সবাই বলল, এটা আমগাছ না, কাঁঠাল গাছ। আপনি কিছুতেই মানতে রাজি নন। এই নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলতে লাগলো। এই তর্কের সমাপ্তি কবে হবে? হ্যাঁ, যেদিন গাছটিতে ফল ধরবে সেদিনই সব কথা শেষ হয়ে যাবে। কয়েক বছর পরে দেখা গেল, আপনার গাছটিতে একটি কাঁঠাল ধরে আছে।

আল্লাহ তাঁর নাযেলকৃত জীবনব্যবস্থা বা দীনটির নাম দিয়েছেন ‘ইসলাম’। ইসলাম আরবি শব্দ, এর বাংলা হচ্ছে ‘শান্তি’। সুতরাং ইসলাম যদি গাছ হয় তার ফল হচ্ছে শান্তি। আজ ১৬০ কোটির এই মুসলিম দাবিদার জনসংখ্যা কতটা শান্তিতে দিনাতিপাত করছে তা নিশ্চয়ই আপনাকে বলে দিতে হবে না। যারা দুনিয়ার কিছুমাত্র খবরও রাখেন তাদের বলতে হবে না যে, এই পৃথিবীতে মুসলিম বলে পরিচিত ১৬০ কোটির এই জনসংখ্যাটির কী করুণ অবস্থা। পৃথিবীর অন্য সব জাতিগুলি এই জনসংখ্যাকে পৃথিবীর সর্বত্র ও সর্বক্ষেত্রে পরাজিত করছে, হত্যা করছে, অপমানিত করছে, লাঞ্ছিত করছে, তাদের মসজিদগুলি ভেংগে চুরমার করে দিচ্ছে অথবা সেগুলিকে অফিস বা ক্লাবে পরিণত করছে। এই জাতির মা-বোনদের তারা ধর্ষণ করে হত্যা করছে। কয়েক শতাব্দী আগে আল্লাহ ইউরোপের খ্রিস্টান রাষ্ট্রগুলিকে দিয়ে মুসলিম বলে পরিচিত এই জাতিটিকে সামরিকভাবে পরাজিত করে তাদের গোলাম, দাস বানিয়ে দিয়েছেন। এটা ছিল আল্লাহর গজব। এই সামরিক পরাজয়ের সময় তারা লক্ষ লক্ষ মুসলিম ট্যাংকের তলায় পিষে, জীবন্ত কবর দিয়ে, পুড়িয়ে, গুলি করে, বেয়নেট, তলোয়ার দিয়ে হত্যা করেছে, তাদের বাড়ি-ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে, লক্ষ লক্ষ মুসলিম মা-বোনদের ধরে নিয়ে ইউরোপের, আফ্রিকার বেশ্যালয়ে বিক্রি করেছে। আল্লাহর ঐ গযব আজ পর্যন্ত চলছে। বর্তমানে খ্রিস্টানরা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে, ইউরোপের বসনিয়া-হারযেগোভিনায়, আলবেনিয়া, কসভো, চেকোশ্লাভাকিয়া, চেচনিয়ায়, ইউরোপের বাইরে ইরাকে, আফগানিস্তানে, সুদানে, ইরিত্রিয়ায়, ফিলিপাইনে, ইহুদিরা প্যালেস্টাইন, লেবাননে; হিন্দুরা ভারতের সর্বত্র, বিশেষ করে কাশ্মীরে; বৌদ্ধরা আরাকানে, থাইল্যান্ডে, ভিয়েতনামে, কামপুচিয়ায়, চীনের জিংজিয়াং-এ (সিংকিয়াং) মুসলিম নামধারী এই জাতিটাকে যে যেভাবে পারছে পদদলিত, পরাজিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত করছে। মুসলিম হিসাবে মাথা তুলতে গেলেই তাদের গ্রেফতার, কারাবদ্ধ করছে, পাশবিক নির্যাতন করছে, ফাঁসি দিচ্ছে। বসনিয়ায় খ্রিস্টান চেক-স্লাভরা হাজার হাজার মুসলিম গণহত্যার পর দুই লক্ষ মুসলিম মেয়েকে ধর্ষণ করে গর্ভবতী করে এবং ঐ গর্ভবতী মেয়েরা খ্রিস্টানদের ঔরসজাত ঐ ভ্রুণ যাতে গর্ভপাত না করতে পারে সেজন্য ঐ মেয়েদের তারা আটকিয়ে রাখে। পরে ঐ দুই লক্ষ মুসলিম মেয়ে খ্রিস্টানদের ঔরসজাত সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হয়। মানব জাতির ইতিহাসে কোনো জাতি এমনভাবে অপমানিত হয় নাই। যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীতে দৈনিক অন্য জাতির হাতে নিহত হচ্ছে কোন জাতি? নিজ পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি এমন কি জন্মভূমি থেকে ছিন্নমূল হয়ে এখানে সেখানে পাহাড়ে জঙ্গলে নো ম্যনস ল্যান্ডে লাখে লাখে উদ্বাস্তু জীবন কাটাচ্ছে কারা? সেই শরণার্থী শিবিরে গিয়ে আবার যাদেরকে গণহত্যা ও মেয়েদেরকে গণধর্ষণ করা হচ্ছে তারা কোন হতভাগা জাতির সদস্য? এ সবকটি প্রশ্নের উত্তরে প্রত্যেকেই একবাক্যে বলবেন মুসলিম নামক এই জাতি। অথচ বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে পরাজিত, অপমানিত, লাঞ্ছিত জাতি হয়েও মুসলিম নামে পরিচিত এই জাতির অপমানবোধ নেই, তারা নির্বিকারভাবে খাচ্ছে-দাচ্ছে, চাকরি করছে, ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, যেন কিছুই হয় নাই, সব স্বাভাবিক আছে; ঐ পরাজয়, অপমান, লাঞ্ছনাই যেন তাদের জন্য স্বাভাবিক। এতো গেল বহিঃশত্রুর হাতে মার খাওয়ার চিত্র, নিজেদের মধ্যেও এই জাতিটি ধর্মীয় মতবাদ, রাজনৈতিক মতবাদ নিয়ে নিরন্তর হানাহানি, মারামারি, যুদ্ধ, রক্তপাতে লিপ্ত, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, কুসংস্কার, হীনমন্যতা ইত্যাদিতে জর্জরিত।

এই হোচ্ছে বর্তমানের ‘ইসলাম’ নামক বৃক্ষের উৎপন্ন করা বিষময় ফল। সুতরাং যে দীন অনুসরণ করেও মানুষ এমন অন্যায় ও অশান্তির অগ্নিকুণ্ডে প্রজ্জ্বলিত হয়, সেটা কখনও আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা হতে পারে না। এর প্রমাণ ইতিহাস। শেষ নবী মোহাম্মদের (দHappy মাধ্যমে যে শেষ জীবন বিধান স্রষ্টা প্রেরণ করেছিলেন তা মানবজাতির একাংশ গ্রহণ ও সমষ্টিগত জীবনে কার্যকরী করার ফলে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি অংশ অর্থাৎ নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে কী ফল হয়েছিল তা ইতিহাস। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পূর্ণ নিরাপত্তা যাকে বলে তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মানুষ রাতে শোয়ার সময় ঘরের দরজা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করত না, রাস্তায় ধনসম্পদ ফেলে রাখলেও তা পরে যেয়ে যথাস্থানে পাওয়া যেত, চুরি, ডাকাতি, হত্যা, রাহাজানি প্রায় নির্মূল হোয়ে গিয়েছিল, আদালতে মাসের পর মাস কোনো অপরাধ সংক্রান্ত মামলা আসতো না; আর অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রতিটি মানুষ স্বচ্ছল হয়ে গিয়েছিল। এই স্বচ্ছলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, মানুষ যাকাত ও সদকা দেওয়ার জন্য টাকা পয়সা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত কিন্তু সেই টাকা গ্রহণ করার মতো লোক পাওয়া যেত না। শহরে নগরে লোক না পেয়ে মানুষ মরুভূমির অভ্যন্তরে যাকাত দেওয়ার জন্য ঘুরে বেড়াত। এটি ইতিহাস। এক কথায় আল্লাহর দেওয়া সত্যিকার জীবনব্যবস্থার ফল হবে ন্যায়, সুবিচার, গৌরব, সম্মান, শ্রেষ্ঠত্ব, উন্নতি, প্রগতি, ঐক্য– এক কথায় শান্তি আর শান্তি। এজন্যই এই দীনের নাম ইসলাম।

সুতরাং বর্তমানে যেটাকে ইসলাম হিসাবে সর্বত্র মানা হচ্ছে এবং শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হোচ্ছে সেটাকে প্রকৃত ইসলাম হিসাবে বিশ্বাস করা আর তিক্ত মাকাল ফলকে সুমিষ্ট আম বলে বিশ্বাস করার মতই নির্বুদ্ধিতা। অথচ এই বিকৃত বিপরীতমুখী ইসলামটিকেই ধর্মব্যবসায়ী আলেম, মোল্লা, পীর, মাশায়েখ শ্রেণি বিক্রি করে খাচ্ছে। এটা আল্লাহর দেওয়া ইসলাম নয় তাই এর অনুসারীরাও মুসলিম নয়।

বিষয়: বিবিধ

১৭৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File