ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতি একগুচ্ছ প্রশ্ন (?) - (জবাব চাই)

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৭:৫২:৫৫ সন্ধ্যা

যারা ইতোপূর্বে আমার লেখাগুলো পড়েছেন তারা একটি বিষয় হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন যে, আমি বর্তমান সমাজে প্রচলিত কিছু প্রতিষ্ঠিত বিষয়ের বিপরীতে মত প্রদান করেছি এবং স্বপক্ষের যথাযথ যুক্তিও তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সমাজের একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়ের বিরুদ্ধে (তা সঠিক বা ভুল যাই হোক) অবস্থান নেয়া এবং সেটার বিরুদ্ধে নিজের যুক্তি তুলে ধরা মোটেও কোন স্বাভাবিক বিষয় বা ছোটখাটো বিষয় নয়। নিঃসন্দেহে এর জন্য অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়। সেই বিষয়টি যদি হয় কোন ধর্মীয় বিষয় তবে তো কথা-ই নেই। হ্যা, সেই বিষয়টি হোল বর্তমান সমাজে প্রচলিত ধর্মীয় নেতাদের কিছু কর্মকাণ্ড যার দ্বারা আজ দেশ জাতি, উম্মাহর অনেক বড় ক্ষতি সাধিত হয়ে চলেছে। এটা কেউ অস্বীকার কোরতে পারবেন না যে বর্তমান মুসলিম সমাজে যাবতীয় ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে এক শ্রেণির মানুষ যারা নিজেদেরকে মাওলানা, আল্লামা, হুজুর, পীরসাহেব, আলেম, কামেল ইত্যাদি হিসেবে পরিচয় দেয়। বলা যায় এই জাতির ধর্মীয় চোখ হোল এরাই। এই শ্রেণিটি যা বলে জাতি তাই শোনে, এরা যা বোঝায় জাতি তাই বোঝে, এরা যা ভাবায় জাতি তাই বোঝে। কিন্তু জাতি একটি বারের জন্যও এটা ভাবে না যে, এরা যা বলে তা সত্য বলে কি না, যা করে তা ঠিক করে কি না। প্রকৃতপক্ষেই ইসলাম কি বলে, ইসলামে আদৌ এই ধর্মীয় শ্রেণিটির স্থান আছে কি নেই বা ইসলামের আসল আদর্শই বা কি তা জানার ইচ্ছা-আকাঙ্খা জাতির নেই। এখানে ওখানে যে দুই-একটি লোক প্রকৃতপক্ষেই ইসলামের কথা বলে এবং বর্তমানের ইসলামের নাম দিয়ে প্রচলিত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় তাদেরকে আমাদের এই আলেম-মাওলানারা প্রশ্ন তোলেন-

তুই কি মাদ্রাসায় পড়েছিস? তুই কি আরবি জানিস? তুই কি হাদীস-কোর'আন-ফিকাহ-তফসীর, এই বই-ঐ বই এইগুলো মুখস্ত করেছিস? ত্ই কি দাড়ি রেখেছিস? তুই কি পাঞ্জাবি-পাজামা পরেছিস? অতঃপর ফতোয়া জারি করে দেয় যে- এ মুরতাদ, এর কথা তোমরা শুন না। সাধারণ মানুষ তাই করে।

এই আলেম মাওলানারা যে ইসলামের ঠিকাদারি নিয়ে রেখেছে তাদের যদি কেউ বলে- আপনি যে ইসলামের কথা বলে, কুর'আনের আয়াত বলে, হাদিসের বাণি শুনিয়ে টাকা নিচ্ছেন, মসজিদের ইমামতি করে, আযান দিয়ে, ওয়াজ করে, মিলাদ পড়িয়ে, মুর্দা দাফন করে, বিয়ে পড়িয়ে, চল্লিশা করে, মাহফিল করে ইত্যাদি করে টাকা নিচ্ছেন এগুলো কি ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েজ হচ্ছে? নবী-রসুলরা কি দীনের বিনিময় নিতেন? রসুলাল্লাহর ওফাতের পর মাত্র ৬০-৭০ বছরের মধ্যে যে উম্মতে মোহাম্মদী তাদের সর্বস্ব কোরবান করে জেহাদ চালিয়ে গেলেন এবং অর্ধপৃথিবীকে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের অধীনে নিয়ে এসে অর্ধপৃথিবীকে শান্তিপুরিতে পরিণত করলেন তখন কি তাদের মধ্যে আপনাদের মত মাওলানা-ওয়ায়েজরা ছিল? যদি থেকে থাকে তাহলে তারা কোথায় ছিল? তখন তো পুরো জাতি জেহাদ নিয়ে ব্যস্ত, তারা বসে বসে প্যাণ্ডেল টানিয়ে ওয়াজ শুনতো কখন? তাছাড়া ইতিহাসেও আপনাদের কোন অস্তিত্ব দৃষ্টিগোচর হয় না। আপনাদের জন্ম হলো এই সেদিন, যেদিন জাতি জেহাদ ছেড়ে দিয়েছিল এবং নিজেরা নিজেরা ফতোয়াবাজী করে, সহজ-সরল ইসলামকে জটিল ও দূর্বোধ্য কোরে সেটা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল। সেখান থেকেই আপনাদের উতপত্তি। কাজেই আপনারা কোন যুক্তিতে নিজেদের অস্তিত্বকে সঠিক প্রমাণ করেন?

তখন ঐ ধর্মের ধ্বজাধারী আলেম-মাওলানাদের মনে আঘাত লাগে। আঘাত লাগে তাদের ধর্মব্যবসাতে। তখন তারা তাদের নিজেদের গুমর ফাঁশ হবার আশঙ্কায় ঐ প্রশ্নকারীর বিরুদ্ধে লিপ্ত হয়। তার বিরুদ্ধে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে উত্তেজিত করে তোলে এবং ঐ প্রশ্নকারীর পেছনে লেলিয়ে দেয়। এমনই এক প্রশ্নকারী হলাম আমি। কাজেই আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে অসমর্থ কাপুরুষ-ভীতু-পরগাছা-সমাজের কীট এই ধর্মব্যবসায়ীদের রক্তচক্ষু পড়ছে আমার গায়ে। আমি হয়ে যাচ্ছি নাস্তিক, কাফের, মুরতাদ ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু আমার প্রশ্ন থামবে না। আমি আরো প্রশ্ন করবো, করেই যাব। আমি প্রশ্ন করবো-

ইসলামের কোথায় আছে রাস্তার গাছ কেটে নিরীহ মানুষের পথ রোধ করে রাখার বিধান?

ইসলামের কোথায় আছে কুপিয়ে মানুষ মারার বিধান?

ইসলামের কোথায় আছে জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর, মানুষ পোড়ানোর বিধান?

ইসলামের কোথায় আছে ধর্মের নামে উন্মাদনা, জঙ্গিবাদ সৃষ্টির বিধান?

ইসলামের কোথায় আছে ২ ঘণ্টা ওয়াজ করে ২০,০০০ টাকা বিনিময় নেবার বিধান?

ইসলামের কোথায় আছে নামাজের ইমামতি করে বেতন নেবার বিধান?

ইসলামের কোথায় বলা আছে- মাদ্রাসায় না পড়লে ইসলামের বিষয়ে কথা বলা যাবে না?

ইসলামের কোথায় বলা আছে- পাঞ্জাবি-পাজামা, টুপি-দাড়ি না থাকলে ইসলামের কথা বলা যাবে না?

জানতে চাই.....

বিষয়: বিবিধ

১৮৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File