১৬ কোটি মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এখনই সময় - হেযবুত তওহীদ
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:১৩:৪৩ দুপুর
আজ থেকে ৪২ বছর আগে ১৯৭১ সালে সাত কোটি মানুষ অন্যায়-অবিচার আর যুলুমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল। গত ৪২ বছরে আমরা যদি একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসাবে থাকতাম, তবে এই দেশটি শক্তিতে, উন্নতিতে, অগ্রগতিতে, প্রগতিতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো তা কল্পনারও বাইরে। সকল উন্নতি, প্রগতি, শক্তি, সমৃদ্ধির মূল হচ্ছে ঐক্য। ঐক্য অনৈক্যের উপর বিজয় লাভ করবে এটা জগতের চিরন্তন ও প্রাকৃতিক নিয়ম। একারণেই দশজন ঐক্যবদ্ধ লোক একশ জন ঐক্যহীন লোকের সঙ্গে বিজয়ী হয়। কিন্তু আমরা আজ জাতিগতভাবে এই চিরন্তন নিয়মটি অস্বীকার করেছি, ফলে আমরা আজ সংখ্যায় ১৬ কোটি হলেও পৃথিবীতে আমাদের কোন প্রভাব নেই, আমাদের সমাজে শান্তি নেই। এই অনৈক্যের কারণ প্রধানত দু’টি- (ক) ধর্মব্যবসা, (খ) বিভিন্ন পরাশক্তির চাপিয়ে দেওয়া রাজনৈতিক মতবাদ। ধর্মব্যবসায়ী আলেম মোল্লা শ্রেণি যারা ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি, সন্ত্রাস করে এবং ধর্মকে জীবিকার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে। তারা ফতোয়াবাজি করে, মাযহাব-ফেরকা সৃষ্টি করে, আধ্যাত্মিক তরিকা বানিয়ে, ইসলামের ব্যানারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করে এমন বহুভাবে জাতিটাকে বিভক্ত করে রেখেছে। টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী দীর্ঘ আঠারো বছর যাবত এই মহাসত্যটিই জাতির সামনে উপস্থাপন করে যাচ্ছেন। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেমন অধিক মুনাফার স্বার্থে সিন্ডিকেট তৈরি করে বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করে থাকে তেমনি ধর্ম ব্যবসায়ীরাও তাদের ব্যবসায়ীক স্বার্থে বিভিন্ন জোট গঠন করে, সিন্ডিকেট করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রকৃত ইসলামকে আড়াল করে রাখছে। সকল অসাধু ব্যবসায় যেমন গোমর থাকে, তেমনি ধর্মব্যবসায়ীদেরও কিছু গোমর আছে। কেউ এই গোমর ফাস করে দিতে চাইলে তারা একজোট হয়ে ‘ধর্ম গেল ধর্ম গেল’ বলে চিৎকার শুরু করে দেয়। তারা তাদের মুখোস উন্মোচনকারী সত্যনিষ্ঠ মানুষদেরকে মুরতাদ, নাস্তিক, খ্রিস্টান ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে তোলে। আর সাধারণ মানুষ ধর্মভীরু, তারা আল্লাহ-রসুলকে মনে প্রাণে ভালোবাসে, তারা মনে করে এই মাদ্রাসা-শিক্ষিত শ্রেণিই ধর্মের রক্ষক। কাজেই এই লেবাসধারী ধর্মব্যবসায়ী মোল্লাদের কথায় তারা প্রভাবিত হয়। এই সুযোগে তারা ধর্মভীরু মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে বাধিয়ে দেয় দাঙ্গা, ফাসাদ, মারামারি, রক্তপাত। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না যে, এই ধর্ম ব্যবসায়ীরাই ইসলামের প্রধান শত্র“, মানবতার বড় শত্র“। আজকে যে ধর্মের নামে ব্যবসা করা হচ্ছে এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, অন্যায়-অবিচার, জ্বালাও-পোড়াও করা হচ্ছে তা মোটেও আল্লাহ-রসুলের ইসলাম নয়। আল্লাহ কোর’আনে ধর্মকে পার্থিব স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার বানাতে এবং ধর্মীয় কাজের বিনিময় নিতে নিষেধ করেছেন (সুরা বাকারা ১৭৪)। অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও এটাকে বড় অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এরাই সেই শ্রেণি যাদেরকে রসুলাল্লাহ আসমানের নিচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব হিসেবে বর্ণনা করেছেন (আলী রা. থেকে বায়হাকী, মেশকাত)।
৪২ বছর পর আজ আবারও এই দেশকে ধ্বংস করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। একটি শ্রেণি ‘ধর্ম গেল-ধর্ম বাঁচাও’ যিকির তুলে আমাদের দেশটিতে একটি গৃহযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বৈদেশিক পরাশক্তিগুলি বিভিন্ন মতবাদ চাপিয়ে দিয়ে আমাদের এই জাতিকে রাজনৈতিকভাবে শত শতভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে এবং আমাদেরকে শাসন ও শোষণ করে চলছে। কিন্তু মানুষ এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে চায়, আর বাঁচতে হলে একটাই পথ – আবার ১৬ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আমরা মানবতাবিনাশী সমস্ত দল-মত, মতবাদ পরিত্যাগ করে এক দল, এক জাতিতে পরিণত হবো। আমরা সবাই হবো ভাই ভাই, এক পরিবার। আমরা রাজনীতির নামে এই সহিংসতা, ধর্মের নামে এই সন্ত্রাস, অরাজকতা আর দেখতে চাই না। আমরা চাই শান্তি, নিরাপত্তা ও স্বস্তি। এখন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হলে প্রথমেই আমাদেরকে ধর্মব্যবসায়ীদের স্বরূপ উন্মোচন করতে হবে, তাদের লেবাসের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা কুৎসিত চেহারা প্রকাশ করে দিতে হবে। নতুবা জাতি কোনদিনও সত্যের উপরে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না। আপনারা কোন বৈদেশিক শক্তিকে ভয় পাবেন না। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে যা দিয়েছেন সেটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আমাদেরকে কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। কাজেই আসুন, আমরা ১৬ কোটি মানুষ শপথ নিই যে আমরা এক জাতি, আমাদের এক মত। যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে, হকের পক্ষে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। ইনশা’আল্লাহ ১৬ কোটি মানুষ এক হলে পৃথিবীর কোন শক্তি নেই আমাদের উপর মাথা তুলে দাঁড়ায়।
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন