এক জাতি, এক দেশ - ঐক্যবদ্ধ বাংলাদশে

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৭:৫২:২৭ সন্ধ্যা



মাতৃভূমি বাংলাদেশ বর্তমানে তার ইতিহাসের ভয়াবহতম অস্থিরতায় পতিত হোয়েছে। সামাজিক অন্যায়, অসততা, অঙ্গীকারভঙ্গ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, সামাজিক বৈষম্য, হানাহানি ইত্যাদি এতটাই মহামারী আকার ধারণ কোরেছে যে, ইতিহাসের গৌরবান্বিত এই জাতিটি আজ ধ্বংসের দোড়গোড়ায় উপনীত হোয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। যে জাতিটি একদা ছিলো লৌহকঠিন ঐক্যবদ্ধ, যাদের একতার কাছে, আনুগত্যের কাছে এবং সর্বোপরি দেশপ্রেমের কাছে শক্তিশালী যালেমরা হার মানতে বাধ্য হোয়েছিল সেই জাতিটি এখন একতা, আনুগত্য ও দেশপ্রেম কী জিনিস তা জানেনা। তারা এখন শত শত মত-পথ, সিদ্ধান্তে বিভক্ত এবং একে অপরের সাথে ভয়াবহতম বিরোধে লিপ্ত। সাম্প্রতিককালে তাদের এই বিরোধকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে প্রচলিত রাজনৈতিক সিস্টেম। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো ঠিক এই উদ্দেশ্যেই আমাদের ঘাড়ে গণতন্ত্র নামক সিস্টেম চাপিয়ে দিয়েছিল যার ফলশ্র“তিতে আজ আমরা টুকরো টুকরো ভাগে বিভক্ত এবং ঐ সাম্রাজ্যবাদীদের মুখাপেক্ষি হোয়ে আছি। রাজনৈতিক অস্থিরতা ক্রমেই সহিংসতার প্রাথমিক পর্বগুলো ভেদ করে এখন যেন চূড়ান্ত পর্বে এসে পৌঁছেছে। সারা দেশজুড়ে বিরাজ কোরছে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। জাতির মুক্তির আশা-আকাক্সক্ষা ক্রমেই ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতি আজও তাদের প্রকৃত মুক্তির পথ চিনতে পারে নি। তারা বহুদিন থেকেই অন্ধকারে হাতড়াচ্ছেন কিন্তু শান্তির কোন চিহ্ন তারা মোটেও দেখতে পাচ্ছে না। তবে তারা এতটুকু বুঝতে পারছেন যে, এখনও যদি তারা প্রকৃত মুক্তির পথ, মানবতার পথ এবং ঐক্যের পথ না চিনতে পারে তবে এর পরের ধাপ ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই নয়। কাজেই জাতির সময় এসেছে তাদের প্রকৃত মুক্তির পথ, শান্তির পথ চিনে নেওয়া এবং সেই পথেই অগ্রসর হওয়া। এখন প্রশ্ন হোচ্ছে সেটা কোন পথ?

সেই পথ হোল এসলাম। এসলাম মানেই হোল শান্তি। প্রকৃত এসলামের ইতিহাস হোল শান্তির ইতিহাস। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্র যেখানেই এসলাম থাকবে সেখানে শান্তি আসতে বাধ্য। আল্লাহ তাঁর রসুলের মাধ্যমে যে এসলাম দুনিয়াতে প্রেরণ কোরেছিলেন আল্লাহর রসুল এবং তাঁর আসহাবরা সেই এসলাম অর্ধ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরে এমন এক শান্তিময় সমাজ গড়ে তুলেছিলেন যে সমাজে কোনো লোক না খেয়ে থাকতো না। সম্পদের এমন প্রাচুর্য তৈরি হোয়েছিলো যে, যাকাত/সদকা নেওয়ার মত লোক খুঁজে পাওয়া যেতো না। নিরাপত্তা ছিলো এমন যে, একজন যুবতী মেয়ে সমস্ত গায়ে অলংকার পরিহিত অবস্থায় শত শত মাইল পথ অতিক্রম কোরতে পারতো, তার মনে একমাত্র আল্লাহ এবং বন্য জন্তু ছাড়া অন্য কিছুর ভয় জাগ্রত হোতো না। ঘুমানোর সময় মানুষ ঘরের দরজা বন্ধ করার প্রয়োজনবোধ কোরত না। প্রকৃত এসলাম প্রতিষ্ঠিত হবার ফলে প্রায় নিরক্ষর আরবের মধ্য থেকে এমন একটা শক্তির উন্মেষ ঘটেছিল যারা জ্ঞানে বিজ্ঞানে সামরিক শক্তিতে সকল জাতির শিক্ষকের আসনে অধিষ্ঠিত হোয়েছিলেন। তবে সেটা হোয়েছিল প্রকৃত যে এসলাম আল্লাহ তাঁর রসুলের মাধ্যমে মানবজাতিকে দিয়েছেন সেটার বাস্তবায়নের ফলে। বর্তমানে এসলাম নামে যে দীনটি মোসলেম নামধারী জাতিটি পালন কোরছে এবং ধর্মের আলেম-মাওলানা শ্রেণি কঠোর পরিশ্রম কোরে অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে শেখাচ্ছে সেটা আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত এসলাম নয়। এটা প্রকৃত এসলামের বিপরীত এবং বিকৃত একটা অনুষ্ঠানসর্বস্ব ধর্মবিশ্বাস যা কখনোই মানুষকে প্রকৃত শান্তির সন্ধান দিতে পারে নি এবং পারবেও না।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই বিকৃত এসলামও এখন ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণির হাতে কুক্ষিগত হোয়ে আছে। আমাদের দেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রধান কারণই হোল এই ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটির উস্কানি। এসলামের ধারক-বাহক, রসুলের উম্মাহর দাবিদার এই আলেম-মাওলানারা আল্লাহর দেওয়া সেই একই এসলামের নাম কোরে সমস্ত দেশটাকে একটা চরম অন্যায়, অত্যাচার, জ্বালাও পোড়াও কোরে, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে এক চরম অশান্তিময় পরিবেশ তৈরি কোরে ফেলেছে। তারা ধর্মের নামে সন্ত্রাস কোরছে, বোমাবাজি কোরছে, মানুষ হত্যা কোরছে, এক কথায় ধর্মের নামে প্রতিনিয়তই তারা অপরাজনীতির জন্ম দিচ্ছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মভীরু। তারা মনে প্রাণে আল্লাহ-রসুল এবং এসলামকে বিশ্বাস করে। এই ধর্মব্যবসায়ীরা যখন কোর’আন হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা কোরে আল্লাহ রসুলের হুকুম পরিপন্থী কর্মকাণ্ডকে জায়েজ বোলে প্রচার করে, তখন সাধারণ মানুষ সেটাকেই আল্লাহর কথা বোলে বিশ্বাস করে। ফলে আল্লাহর ভয়ে ধর্মের ধারক বাহকদের শত অন্যায় অত্যাচার অনাচারের প্রতিবাদ করে না। সাধারণ মানুষ তাদের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ কিন্তু প্রকৃত এসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় তারা এইসব ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্ম নিয়ে রাজনীতিকারী শ্রেণির বিরুদ্ধে সোচ্চার হোয়ে উঠতে পারছে না। ফলে দিন দিন বেড়েই চোলেছে ধর্মের নামে নাশকতা আর মানুষের জীবন ও সম্পদের ধ্বংসসাধন। ধর্মব্যবসায়ীদের এই অপকর্ম প্রকাশ করার মতো যুক্তি-প্রমাণ-সাহস এবং তাদের বিরুদ্ধে সত্য এসলামের পতাকাবাহী কোন সত্ত্বা এতদিন পৃথিবীতে ছিল না। কিন্তু আজ আমরা প্রকৃত এসলামের সন্ধান পেয়েছি, পেয়েছি ধর্মব্যবসায়ীদের প্রকৃত মুখোশ খুলে দেওয়ার যাবতীয় যুক্তি-প্রমাণ এবং সৎ সাহস। ধর্মব্যবসায়ীদের তৈরি মিথ্যার বিরুদ্ধে প্রকৃত এসলাম নিয়ে দাঁড়িয়েছেন এ যামানার এমাম টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। তিনি ধর্মের অপব্যবহারকারীদের মিথ্যার স্বরূপটি সবার সামনে উন্মোচন কোরেছেন। তিনি কোর’আন হাদিস দিয়ে স্পষ্টভাবে প্রমাণ কোরে দিয়েছেন যে ধর্মব্যবসা ও জঙ্গিবাদের স্থান এসলামে নেই। ধর্মের নামে সন্ত্রাস সৃষ্টি করা এবং ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ অবৈধ। তিনি জাতিকে কোর’আন খুলে দেখিয়ে দিয়েছেন যে কীভাবে ধর্মব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে আল্লাহর বিধানকে গোপন করে, বিকৃত করে। তারা আল্লাহর নিষেধ থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর দীন বিক্রি কোরে খায়। তারা দীনের অতি বিশ্লেষণ কোরে মতভেদের সৃষ্টি কোরে জাতির ঐক্য ধ্বংস করে। তারা সমাজের অন্যায়, অবিচার, অত্যাচারের প্রসার দেখলেও মানুষকে সেটা থেকে ফেরানোর চেষ্ট করে না বরং তাদেরকে আরো উস্কে দেয়। কাজেই এখন জাতির সময় এসেছে এই ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে এবং অনৈক্যের বীজ বপনকারীদের বিরুদ্ধে এক হওয়ার। সময় এসেছে এদের যাবতীয় চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দিয়ে সত্যকে বিজয়ী করার। এটা প্রাকৃতিক নিয়ম যে, ঐক্য সব সময় অনৈক্যের উপর বিজয় লাভ করবে। যাবতীয় উন্নতি, অগ্রগতি, প্রগতি, শক্তি, সমৃদ্ধি ঐক্যের মধ্যে। ’৭১ সালে সাত কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ হোয়েছিল অন্যায়-অবিচার যুলুমের বিরুদ্ধে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তির আশায়। আজ আবার আমাদের এই সোনার দেশকে ধ্বংস কোরে দেওয়া চক্রান্ত চোলছে। এখন সময় এসেছে ১৬ কোটি মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। আমাদের বাঁচার জন্য এখন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আমরা সমস্ত দল-মত, মতবাদ পরিত্যাগ কোরে এক দল, এক জাতিতে পরিণত হবো। আমরা সবাই হবো ভাই ভাই, একটি পরিবার। আজকে এই যে একটি শ্রেণি ধর্ম গেল-ধর্ম বাঁচাও যিকির তুলে আমাদের দেশটিতে একটি গৃহযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি কোরেছে, মানুষ এর থেকে বাঁচতে চায়। আমরা এই অরাজকতা আর দেখতে চাই না। আমাদের গণতন্ত্র দরকার নেই, আমাদের দরকার শান্তি, নিরাপত্তা ও স্বস্তি। গণতন্ত্রের নামে এই সহিংসতার রাজনীতি, ধর্মের নামে এই সন্ত্রাস আমরা আর দেখতে চাই না। এটা বাস্তবায়ন কোরতে হোলে প্রথমেই আমাদেরকে ধর্মব্যবসায়ীদের স্বরূপ উন্মোচন করার সিদ্ধান্তে আসতে হবে। নতুবা জাতি কোনদিনও সত্যের উপরে ঐক্যবদ্ধ হোতে পারবে না। আমাদের কারও মুখাপেক্ষী হোয়ে থাকার দরকার নেই। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি তাহোলে আল্লাহ আমাদেরকে যা দিয়েছেন সেটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। পৃথিবীর কোন শক্তি নেই যে আমাদের এই জাতির কোন ক্ষতি কোরতে পারে। ধর্মব্যবসায়ী ফেতনাবাজদের সৃষ্ট ফেতনাকে অকার্যকর করার জন্য ঐক্যই যথেষ্ট। আমাদের ভুলে গেলে চোলবে না যে, ’৭১ সালে আমরা সাত কোটি মানুষ একত্রিত হোয়ে যুদ্ধ কোরেছি। সেদিন যদি আমরা একত্রিত না থাকতাম তবে কোনভাবেই জয়ী হোতে পারতাম না। গত ৪২ বছরে আমাদের মাঝে যে অনৈক্য সৃষ্টি হোয়েছে সেই অনৈক্যকে না মেটানো পর্যন্ত আমাদের অবস্থার কোন উন্নতি হওয়া অসম্ভব। এই এক্যহীন অবস্থায় যতই আমরা ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে, অপরাজনীতির ধারক-বাহকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম কোরি না কেন তা আমাদের জন্য মোটেও সুফল বোয়ে আনবে না। সফলতার পূর্বসূত্রই হোল ঐক্যবদ্ধ হওয়া অতঃপর ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সংগ্রাম করা। মনে রাখতে হবে ধর্মব্যবসায়ী ও দাজ্জালের পূজারী বিভিন্ন তন্ত্র-মন্ত্রের ধারক বাহকরা আল্লাহ এবং আল্লাহর রসুলের শত্র“।

বিষয়: বিবিধ

১১৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File