দাজ্জালের আদেশে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০২:৩১:১৩ দুপুর



মানবসভ্যতার এমন এক ক্রান্তিলগ্ন আজ আমরা অতিক্রম কোরছি যেখানে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির কাছে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। মানুষ আজ যা ইচ্ছা কোরছে তাই কোরতে পারছে। গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অবিশ্বাস্য দ্রুততায় পৃথিবী প্রদক্ষিণ কোরে আসছে, পৃথিবীর কোথায় কি হোচ্ছে তা এক জায়গায় বোসে থেকে দেখতে ও শুনতে পারছে। ভুপৃষ্ঠের গভীর তলদেশ থেকে খনিজ সম্পদ উপরে তুলে আনছে। এটা সম্ভব হোচ্ছে ইহুদি-খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’র বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং গবেষণার উপর ভিত্তি কোরে। মানবজাতির এই প্রযুক্তিগত প্রগতির কথা রূপক ভাষায় আল্লাহর রসুল আজ থেকে ১৪০০ বছর আগেই বোলে গেছেন। এই বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির অপর পিঠে আছে এই অগ্রগতির রূপকার ইহুদি-খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’র দানবীয় রূপ যা মানবজাতিকে অবর্ণনীয় অন্যায় অশান্তির অর্থাৎ ফেতনার মধ্যে নিমজ্জিত কোরে রেখেছে এবং মানুষের পার্থিব ও পরকাল উভয় জীবনই ধ্বংস কোরে দিয়েছে। এই হোচ্ছে সেই ভয়াবহ এক চক্ষু দানব দাজ্জাল যার প্রসঙ্গে নুহ (আHappy থেকে শুরু কোরে সকল নবী-রসুল তাঁদের জাতিকে সাবধান কোরে গেছেন এবং যার আবির্ভাবের ফেতনা থেকে স্বয়ং বিশ্বনবী আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী কোর’আন, হাদিস, বাইবেল ও বিজ্ঞানের আলোকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ কোরেছেন যে, বর্তমানের এই বস্তুবাদী, যন্ত্রনির্ভর পশ্চিমা সভ্যতাই হোচ্ছে রসুলাল্লাহ বর্ণিত সেই দাজ্জাল। এমামুয্যামান তাঁর লেখা “দাজ্জাল? ইহুদি-খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’!” বইটিতে দাজ্জাল সংক্রান্ত রসুলাল্লাহর প্রতিটি হাদিস আলোচনা কোরে যুক্তি দিয়ে প্রমাণ কোরেছেন যে এই সেই দানব। আমি এখানে তাঁর বই থেকে একটি হাদিস ও যুক্তি তুলে ধোরছি।

আল্লাহর রসুল বোলেছেন- দাজ্জালের আদেশে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হবে। [নাওয়াস বিন সা’মান (রাHappy থেকে-মোসলেম, তিরমিযি]

হাদিসটি শোনামাত্রই একথা বুঝতে বাকি থাকে না যে এখানে রসুলাল্লাহ দাজ্জালের আদেশে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হবে বোলে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতকে বোঝাচ্ছেন। বৃষ্টি বর্ষিত হয় প্রাকৃতিক নিয়মে। কিন্তু যখন বলা হোল দাজ্জালের আদেশে হবে তখন অবশ্যই সেটা প্রাকৃতিক নয়, আর প্রাকৃতিক না হবার অর্থই হোল কৃত্রিম। বর্তমান ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতার বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি সম্পর্কে যাদের সামান্য পরিমাণও ধারণা আছে তারা মাত্রই জানেন কৃত্রিম উপায়ে বিশ্বের অনেক জায়াগাতেই বৃষ্টিপাত ঘটানো হচ্ছে। কৃত্রিম বৃষ্টিপাত হোল প্রকৃতির উপর বৈজ্ঞানিক প্রভাব খাটিয়ে সংঘটিত বৃষ্টিপাত। এজন্য প্রথমে মেঘ সৃষ্টি কোরতে হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে এই মেঘকে বৃষ্টিপাতের উপযোগী অবস্থায় নিয়ে আসতে হয় এবং শেষতঃ মেঘকে বৃষ্টিতে রূপান্তরিত কোরতে হয়। তবে সচরাচর আকাশে ভাসমান মেঘকে পানির ফোঁটায় পরিণত কোরে বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়। এই বিষয়ে আরো একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ কোরলে এটা স্পষ্ট হবে। কারণ দাজ্জালের ক্ষমতা বুঝতে চাইলে এই বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকা আবশ্যক। মূলত চারটি পর্যায়ে বৃষ্টিপাত সংঘটিত করা হয়ে থাকে। প্রথম পর্যায়ে যেখানে বৃষ্টিপাত আবশ্যক সেখানে রাসায়নিক ব্যবহার কোরে মেঘ সৃষ্টি করা হয়। ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ক্যালসিয়াম অক্সাইড, ইউরিয়া এবং লবণ মিশ্রিত একটি রাসায়নিক অথবা ইউরিয়ার সঙ্গে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মিশিয়ে প্রস্তুত একটি রাসায়নিক পদার্থ মেঘ সৃষ্টিতে ব্যবহার করা হয়। এই রাসায়নিক পদার্থ বায়ু থেকে আর্দ্রতা আহরণরত ঘনীভবন প্রক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে রাসায়নিকের সাহায্যে মেঘপুঞ্জ তৈরি করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় রান্নার লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড, টি-১ ফর্মুলা, ইউরিয়া, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, শুকনো বরফ এবং কখনো কখনো ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করা হয়। এতে মেঘের দ্রুত ঘনীভবন হয় এবং তা পতনশীল অবস্থায় পৌঁছে। তৃতীয় পর্যায়ে বিমানের সাহায্যে মেঘরাশির ওপর সিলভার আয়োডাইড নামক রাসায়নিক পদার্থের স্ফটিকদানা (বা কখনো কখনো বিচূর্ণ শুকনো বরফ) ছড়িয়ে দিয়ে মেঘধৃত আর্দ্রতাকে বড় বড় পানির ফোঁটায় পরিণত করা হয় যা আর বাতাসে ভাসতে না পেরে মাটিতে নেমে আসে এবং বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। বিকল্পে, মেঘপুঞ্জ লক্ষ্য কোরে রাসায়নিকপূর্ণ রকেট ছোঁড়া হয়ে থাকে। তাছাড়াও অনেক সময় দেখা যায় যে, আকাশে মেঘ আছে অথচ বৃষ্টি হোচ্ছে না। অতি শীতল মেঘে তুষার কণা জমে যায়। পানি আর থাকে না। তখন বিমান থেকে রাসায়নিক ছিটিয়ে অতি শীতল (ঝঁঢ়বৎপড়ড়ষরহম) অবস্থা নষ্ট কোরে দেয়া হয়; মেঘ তখন পানিতে পরিণত হয় এবং বৃষ্টির ফোঁটায় মাটিতে নিপতিত হয়। Kitrim-brishti-1

পৃথিবীর বহু দেশেই এভাবে কৃত্রিম উপায়ে দাজ্জালের বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বৃষ্টিপাত ঘটানো হোচ্ছে। পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করা হোচ্ছে বৈজ্ঞানিক উপায়ে। কলারাডোর বিস্তৃতি স্কি জোন, ক্যালিফোর্নিয়ার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বরফ জমিয়ে হরহামেশাই কৃত্রিম তুষারপাত ঘটানো হয়। তাছাড়া চীনের মরুময় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের মাধ্যেমে শস্য উৎপাদনের ঘটনাও অন্তত বিশ বছরের পুরনো। ২০০৮ সালের চীনের অলিম্পিক টুর্নামেন্টকে উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়। ঐ অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলাকালীন একখণ্ড মেঘ ভেসে আসছিল যার দ্বারা অনুষ্ঠানটি পণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হোয়েছিল। অতঃপর কর্তৃপক্ষ মেঘখণ্ডটি দূরে থাকা অবস্থাতেই ১১০৪ টি রাসায়নিকপূর্ণ রকেট নিক্ষেপ করে। ফলে রাসায়নিক ব্যবহার কোরে দূরেই ঐ মেঘখণ্ডটির বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন পণ্ড হওয়া থেকে রক্ষা করে। তাছাড়াও শীত প্রধান দেশের বিমানবন্দর, নৌবন্দরকে অত্যাধিক তুষারপাতের হাত থেকে বাঁচাতেও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এই ঘটনাগুলোই কি দাজ্জালের আদেশে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হওয়ার নামান্তর নয়? কাজেই একথা অনস্বীকার্য যে, এই ইহুদি খ্রিস্টান বস্তুবাদী সভ্যতাই হোল রসুলাল্লাহ বর্ণিত দানব দাজ্জাল যার সুতোর টানে বর্তমান পৃথিবী চোলছে। আর বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি হোল দাজ্জালের বাহন। যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী দাজ্জালকে সন্দেহাতীতভাবে চিহ্নিত কোরেছেন। এখন মোসলেম নামক জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় কর্তব্য হোল ঐক্যবদ্ধ হোয়ে এই দাজ্জালের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়োগ করা।

দাজ্জাল ও বর্তমান ইহুদি-খ্রিস্টান বস্তুবাদী সভ্যতা একই বস্তু ও যান্ত্রিক শক্তিই এর বাহন কিন্তু তাই বোলে বৈজ্ঞানিক যান্ত্রিক প্রযুক্তিটাই খারাপ বা বর্জনীয়, এই লেখা পড়ে এ ধারণা যেন কারো মনে না আসে। কোন জিনিস ভালো কি মন্দ তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে সেই জিনিসের ব্যবহারের ওপর। একটা অস্ত্র দিয়ে ডাকাতি বা খুন করা যায়, সেই অস্ত্র দিয়েই আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা যায়, খুনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার কোরে অসহায়কে রক্ষা করা যায়। অস্ত্র নিজে দায়ী নয়, যে সেটাকে ব্যবহার কোরবে দায়ী সে। দাজ্জাল বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার কোরছে অন্যায়ভাবে। চিকিৎসা, কৃষি, আবহাওয়া ইত্যাদি কতকগুলি বিষয়ে ঐ প্রযুক্তি ব্যবহার কোরলেও তার প্রধান অংশই ব্যবহৃত হোচ্ছে সামরিক ক্ষেত্রে। এ কথা প্রমাণ করার দরকার করে না, পাশ্চাত্য সভ্যতার সরকারগুলির সামরিক খাতে ব্যয়ের সাথে অন্যান্য খাতে ব্যয়ের একটি তুলনাই এ কথা পরিষ্কার কোরে দেবে। সামরিক খাতে ঐ ব্যয়ের প্রধান উদ্দেশ্যই হোচ্ছে বাকি পৃথিবীকে পদানত কোরে রাখা। তেমনিভাবে দাজ্জালের সৃষ্ট রেডিও টেলিভিশন মানুষকে ভালো অনেক কিছু শিক্ষা দেবার সঙ্গে সঙ্গে হত্যা, সহিংসতা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অপরাধ, নগ্ন যৌনতা ইত্যাদি শিক্ষা দিয়ে তাকে পশুর পর্যায়ে নামিয়ে দিচ্ছে। দাজ্জাল অন্যায় ও অপব্যবহার কোরছে বোলেই বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ও যন্ত্র বর্জনীয় হোতে পারে না- বর্জনীয় হোচ্ছে ওর অপব্যবহার।





বিষয়: বিবিধ

১৫৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File