সাম্রাজ্যবাদীদের রক্তচক্ষু এবার বাংলাদেশে !

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:০৬:১৪ সকাল



তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোতে পশ্চিমা শক্তির খবরদারি আজকের নতুন নয়। পশ্চিমা মোড়লরা বরাবরই এই দেশগুলোর উপর আধিপত্য বিস্তার করে রেখে বিভিন্ন বৈধ ও অবৈধ উপায়ে তাদের স্বার্থ বাস্তবায়ন করে থাকে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামরিকভাবে ইতোমধ্যেই তারা দেশগুলোতে তাদের আধিপত্য কায়েম করে ফেলেছে। এটা করতে গিয়ে তারা কোথাও গভীর ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতেছে, কোথাও কোন দরিদ্রপীড়িত জাতির অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বের সুযোগ নিয়েছে আবার কোথাও দেখা গেছে যে- কোন অজুহাত দাঁড় করিয়ে সামরিকভাবে আক্রমণ করে ঐ জাতিকে পদানত করেছে, তাদের ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। অতঃপর ঐ তারাই আবার এই মজলুম জাতিগুলোকে সংকট থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য বিভিন্ন আত্মঘাতী পথনির্দেশনা দিয়েছে এবং এখনও দিয়ে চলেছে। ফলাফল হিসেবে জাতিগুলো শুধুই পেয়েছে অন্যায়-অবিচার আর অশান্তি-অরাজকতায় পরিপূর্ণ একটি দেশ যে দেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণও তাদের নিজেদের হাতে নেই।

এই পদানত দেশগুলোর উপরে কর্তৃত্ব করার একটি সহজ কৌশল হিসেবে পশ্চিমারা জাতিসংঘ, ইউনিসেফ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইত্যাদি মানবতার ফুলঝুরি সাজানো প্রতিষ্ঠানগুলোকে একচেটিয়া হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এর ভুরি ভুরি প্রমাণ মিলবে শুধুমাত্র বর্তমান পৃথিবীর দিকে একপলক তাকালেই। পৃথিবীর বহু দেশ রয়েছে যেখানে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত। পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারা হচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় শত শত-হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে অথচ সেখানে জাতিসংঘ তাদের দায়িত্বকে সীমিত রেখেছে কেবল নিন্দাসূচক বাণী প্রদানের ভেতরেই, যা আবার একান্তই প্রয়োজন না হলে উচ্চারিত হয় না। বরং সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘের কর্মকাণ্ডে দেখা গেছে যে, পশ্চিমা নেতাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই জাতিসংঘ তার কর্মতৎপরতা স্থির করেছে। মূলতঃ জাতিসংঘ কোন সমাধান নয় তা এর পূর্বে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী শক্তিগুলো যেভাবে জাতিসংঘের নাকের ডগায় থেকে এবং কার্যক্ষেত্রে জাতিসংঘকে ব্যবহার করে পৃথিবীময় অন্যায়-অবিচার আর অশান্তির রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে তা জাতিসংঘের ব্যর্থতারই প্রতিচ্ছবি। পৃথিবীময় যে ক’টি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের ব্যানারে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের কু-মতলব বাস্তবায়ন করে চলেছে তার মধ্যে জাতিসংঘ অন্যতম। কাজেই জাতিসংঘ আর ঐ সাম্রাজ্যবাদীদের আলাদা চোখে দেখা উচিত হবে না। এরা একে অপরের পরিপূরক।

অতি বিপদের কথা হলো বাংলাদেশে ইদানীং এই পশ্চিমা কু-চক্রীদের আনা-গোনা জাতিকে এক ভয়াবহ পরিণামের অশনি সংকেত দিচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদীদের নজর বর্তমানে বেশ ভালোভাবেই বাংলাদেশে পড়েছে। তারা আমাদের অতি ছোটখাটো অভ্যন্তরীণ বিষয়েও নাক গলাচ্ছে। যেন মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি। তাদের নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে একের পর এক বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বিশেষ সুবিধাও (জিএসপি) ইতোমধ্যেই তারা বন্ধ করে দিয়েছে। সর্বশেষ দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও তারা চিন্তা-ভাবনা করছে যা তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। এগুলো গেল বাইরের বিষয়। কূটনৈতিক পর্যায়ে তাদের দৌড়ঝাঁপ এর তুলনায় যে কয়েকগুণ বেশি তা বোঝা যায় নিমেষেই। এক কথায় তারা সরকারকে একটি চাপে ফেলার চেষ্টা করছে যা হয়তবা সফলও হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো সরকারের উপর চাপ সৃষ্টিতে তাদের লাভটা কী? উত্তর একটিই আর তা হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার। বর্তমানে আমরা সাম্রাজ্যবাদ বলতে বুঝে থাকি শুধু সামরিক আগ্রাসনকে। কিন্তু বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদ বিস্তার করার জন্য সামরিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয় না। বর্তমানে পশ্চিমা মোড়লরা সমস্ত পৃথিবীতে যে কর্তৃত্বের থাবা বিস্তার করে রেখেছে তা শুধু সামরিকভাবে মনে করলে ভুল হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা সামরিক আগ্রাসন না চালিয়েও সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার ঘটিয়ে চলছে। যেমন- আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ আফগানিস্তান বা ইরাকে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে তারা সুবিধা আদায় করে নিয়েছে এবং এখনও সেখান থেকে তাদের পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছে। এরকম আরো অনেক দেশেই তারা সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে এবং সে সকল দেশের সম্পদকে নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করেছে প্রত্যক্ষভাবে। কিন্তু পাকিস্তানে সামরিক হামলা না চালিয়েও আফগান বা ইরাকের মতই পাকিস্তানকে ব্যবহার করছে এবং সেখান থেকেও তাদের জাতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের দায় অস্বীকার করে একের পর এক ড্রোন হামলা চালিয়ে নির্বিচারে পাকিস্তানি সাধারণ মানুষকে মারছে। তাদের এই অমানবিক ও আইন-বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে বাধা দেবার সামর্থ্যও পাকিস্তান সরকারের নেই। কারণ ঐ সাম্রাজ্যবাদীরা ততদিনে সরকারকে বিভিন্ন ইস্যুতে জড়িয়ে সরকারকে কাবু করে ফেলেছে। যার কারণে তাদের অনুগত হয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছে।

এই একই ফাঁদে যে তারা বাংলাদেশকে ফেলবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কাজেই ঐ সকল বিদেশি মোড়লদের সম্পর্কে নিশ্চিন্ত থাকার কোন অবকাশ নেই। পাকিস্তানে যেমন তারা জঙ্গিবাদের অজুহাত পেশ করে আগ্রাসন চালাচ্ছে সেই একই অজুহাত যেন বাংলাদেশে না দেখাতে পারে সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আর এই কাজের দায়ভার সরকারের। সরকার যতই বলুক না কেন এই দেশে জঙ্গি নেই, জঙ্গিবাদ নেই কিন্তু ঐ পশ্চিমারা সেটা কোন দিনই মানবেনা। প্রয়োজন পড়লে তারা এদেশে জঙ্গি সৃষ্টি করবে। ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্মোন্মাদদেরকে গর্ত থেকে টেনে বের করবে এবং তাদের দ্বারা ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে বলবে- এই দেশে জঙ্গিবাদ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যা পশ্চিমের জন্য হুমকি!

কাজেই এখনই আমাদের বুঝতে হবে, আমাদের জাতীয় নেতৃত্বকে বুঝতে হবে যে, সমাধান পশ্চিমে নেই। তারা আমাদের কোন সমাধান দেবে না, তারা আমাদের শুধু বাঁচিয়ে রাখবে অন্যায়-অবিচার, অশান্তি আর দারিদ্র্যের মধ্যে যাতে সকাল বিকেল দু’বেলা তাদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা আমাদের উপর বোমা বর্ষণ করতেও দ্বিধাবোধ করবে না, যেমন করছে পাকিস্তানে, ইরাকে, আফগানিস্তানে বা সিরিয়ায়। তাই আর তাদের মুখাপেক্ষিতা নয়, আমাদের নিজেদের জাতিসত্ত্বাকে পুঁজি করে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আমাদের এক দেশ, এক জাতি এবং এক মতে আসতে হবে। আমরা যতই নিজেদের মধ্যে কোন্দলে লিপ্ত থাকবো ততই তারা আমাদের ভেতরে ভেতরে আরো উস্কে দিয়ে বাইরে থেকে ফায়দা লুটবে। তারা আমাদের তেলে আমাদেরই ভাজতে থাকবে, আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাবে। কিন্তু আমরা যখনই এক জাতি, এক মতে উপনীত হবো ইনশাল্লাহ তারা আমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, সেই সাথে পারবে না আমাদের উপর তাদের ছড়ি ঘুরাতে। কারণ পৃথিবীর এক চরম সত্য যে, ঐক্য সব সময় বিজয়ী হয়। মনে রাখতে হবে, অনৈক্য অবস্থায় ঐ সকল সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে আমরা এক মুহূর্তও নিরাপদ নই।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১০৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File