গণতন্ত্রপ্রেমীদের প্রতি শান্তনার বাণী

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ১২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৭:৩৩:২০ সন্ধ্যা

গণতন্ত্রপ্রেমীদের ভাষ্যমতে- সাম্প্রতিক বাংলাদেশের গণতন্ত্র নাকি হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। কারো কারো মতে, বাঙ্গালিদের এতিম করে ইতোমধ্যেই নাকি গণতন্ত্র দেশ থেকে থেকে বিদায়ও নিয়েছে। এই নিয়ে আমাদের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ চিন্তার মহাসাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন। তাদের একেক জনের হা-হুতাশ দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ তার ইতিহাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় কোন কিছু হারাতে বসেছে। অবশ্য গণতন্ত্র তাদের কাছে অনেক বড় কিছু হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। যাই হোক, এই শোকের সাগরে হাবুডুবু খাওয়া গণতন্ত্রপ্রেমিদের কিছু সান্তনার বাণী শোনানোর প্রয়োজন বোধ করছি। এতে তাদের কিছুটা হলেও বিয়োগব্যথার উপশম ঘটলেও ঘটতে পারে।

যারা গণতন্ত্র-গণতন্ত্র চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে ফেলছেন, অতি দুঃখের বিষয় হলো তারা আজ পর্যন্ত কিন্তু গণতন্ত্রের কোন নির্দিষ্ট রূপ জনগণকে দেখাতে পারেন নি। তাদের এত প্রচার-প্রচারণা, ঢাক-ঢোল, চিৎকার চেঁচামেচি সব মিলিয়ে নুনে-ভাতে বাঙ্গালিরা গণতন্ত্র বলতে একটি জিনিসকেই বুঝেছে তাহলো নির্বাচন। তারা বোঝে- যতদিন ভোট আছে ততদিন গণতন্ত্র আছে, ভোট নাই তো গণতন্ত্র নাই। এটাকে কাজে লাগিয়ে তারা কিছুদিনের জন্য নেতাদের বশে আনে। নেতারা এই ভোট এলেই কেবলমাত্র তাদের কাতারে এসে দাঁড়ায়, অন্যসময় তাদের নাম-গন্ধও আম-বাঙ্গালির ধরা-ছোয়ার বাইরে থাকে। তাছাড়াও ভোটের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক আমজনতা উপলব্ধি করে থাকে। যেমন দীর্ঘ ৫ টা বছর তারা কোন না কোন রাজনৈতিক দলের অন্যায়-অবিচারের যাঁতাকলে পিষ্ট হবার পর তাদের জীবন যখন ওষ্ঠাগত তখন অভিমান দেখাবার সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে উপস্থিত হয় ভোট। আমজনতা এতদিনের ক্ষমতাসীনদের প্রতি জমা হওয়া অভিমানের বিরাট ফিরিস্তি এবং ৫ বছর যাবৎ ক্ষমতাবঞ্চিত আরেক দলের প্রতি তৈরী হওয়া সহানুভূতির সংমিশ্রণকে ভাঁজ করে ব্যালটবাক্সে ভরে দিয়ে আসে। এসময় তারা কঠিন সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে যাতে কোনভাবেই এক দল দু’বার ক্ষমতায় না যেতে পারে। এক দলকে দু’বার ক্ষমতায় বসানোকে তারা অন্যায় মনে করে। দেশের সম্পদ শুধু এক দল বসে বসে খাবে আর আরেক দল তাকিয়ে থেকে দেখবে তা তারা কোনকালেই মেনে নিতে পারে না। তাই উভয়কেই সমান সুযোগ দেবার ক্ষেত্রে জনগণ বদ্ধ পরিকর। এই ক্ষেত্রে তাদের বিবেচনায় থাকে মার্কা। কাকে ভোট দিচ্ছে সেটা পরের বিষয় কোন মার্কায় ভোট দিচ্ছে সেটাই হলো আসল।

এটাই মূলত আমজনতার তন্ত্র গণতন্ত্র। গণতন্ত্রকে তারা এই পর্যন্তই চিনে। গণতান্ত্রিক অধিকার বলতে আমজনতা ভোটের অধিকারের বাইরে অন্য কিছুকে কল্পনাও করতে পারে না। গণতন্ত্রপ্রেমীরা হয়ত বিস্মিত হয়ে বলবেন- কিন্তু গণতন্ত্র তো তা নয়! গণতন্ত্রে জনগণের অধিকার অনেক। তারা রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক! আমি বলব- এটা আপনাদের মুখের কথা যা কোন দিনই আপনারা বাস্তবায়ন করতে পারেন নি, আর এটাও আপনারা ভালো করেই জানেন যে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভবও নয়। গণতন্ত্র যে কথার জন্য সারা বিশ্বে আকর্ষণীয় হয়ে রয়েছে তা মূলত কথার মাঝেই সীমাবদ্ধ। পৃথিবীর কোন দেশেই ঐ কথার বাস্তবায়ন ঘটানো সম্ভব হয় নি, হবেও না। গণতন্ত্র হলো সরল দোলক যা আদর্শে আছে কিন্তু বাস্তবে ছিটে ফোটাও নেই। যে জিনিসের অস্তিত্বই নেই তা আপনারা আমজনতাকে দেখাবেন কী করে? আপনি-আমি যা দেখছি, আমজনতা যা দেখছে সেটাকেই তারা গণতন্ত্র বলে মনে করছে। কাজেই এই ভোটের অধিকার গেলে কি আমজনতার খুব বড় কোন ক্ষতি হবে? যেখানে জীবন-সম্পদের সামান্য নিরাপত্তাটুকুও সমাজে অবশিষ্ট নেই, আতঙ্ক-ভয়-ভীতি আর লাশের ক্রমবৃদ্ধি ঘটেই চলেছে অনবরত সেখানে ঐ ভোটের অধিকার তথা গণতন্ত্র থাকা বা না থাকা কতটুকু বিবেচ্য বিষয়? হয়তবা একারণেই আমজনতা গণতন্ত্রকে নিয়ে চিন্তিত নয়। ব্যর্থ গণতন্ত্রের জানাযা-দাফন-কাফন এমনকি চল্লিশা খেতেও জনগণ প্রস্তুত। তাই গুটিকয়েক গণতন্ত্রপ্রেমীদের অযথা হা-হুতাশ না করে জনগণের কাতারে দাড়িয়ে গণতন্ত্রের দাফন-কাফন সম্পন্ন করাই শ্রেয় হবে।

বিষয়: রাজনীতি

১১৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File