অসুস্থ গণতন্ত্রের অসুস্থ কর্মকাণ্ড আর সহ্য নয়

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৬:১২:১৪ সন্ধ্যা

গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আগুনে পুড়ছে বাংলাদেশ। সেই সাথে পুড়ছে বাংলা মায়ের সহজ-সরল, শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলেরা। তাদের অপরাধ- তারা সাধারণ মানুষ। তাদের ক্ষমতা নেই, তাদের দলীয় বাহিনী নেই, পুলিশ নেই। তারা ভোটার। যদিও গণতন্ত্র বলে তারা সকল ক্ষমতার মালিক, তারা সার্বভৌম, কিন্তু সেই সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হবার স্বাধ বাঙ্গালির ইতোমধ্যেই মিটে গেছে। যাদের এখনও মেটে নি তারাও খুব অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাদের সেই অলীক স্বপ্নকে ঝেড়ে ফেলতে বাধ্য হবে। কারণ একটাই- গণতন্ত্র নামক সিস্টেমে ক্ষমতা কারো নয়। না প্রধানমন্ত্রীর, না বিরোধী দলীয় নেত্রীর, না বিচারপতির, না রাষ্ট্রপতির, না সশস্ত্র বাহিনীর। আর সাধারণ মানুষের কথা উঠানোই তো অবান্তর। বরং সকল ক্ষমতা সে ভাগ বাটোয়ারা কোরে প্রত্যেককে একটু একটু কোরে দিয়ে রেখেছে। সরকারকে দিয়ে রেখেছে বিরোধী মতের মানুষকে ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করার ক্ষমতা, বিরোধীদলকে দিয়ে রেখেছে হরতাল, অবরোধ, ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও করার ক্ষমতা, বিচারককে দিয়ে রেখেছে সরকারের নাকে ছড়ি ঘোরানোর ক্ষমতা, আবার সেনাবাহিনীরও আছে সবগুলোকে ক্ষমতাহীন করার ক্ষমতা। জনগণের ক্ষমতা শুধু ভোটের। এটাই হলো গণতন্ত্রের বেধে দেয়া নিয়ম।

গণতন্ত্রের এই ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারার কথা বলতে গিয়ে আরেকটি কথা মনে পড়ে গেল। তাহলো স্রষ্টার একটি বাণী- ‘যদি আসমান জমিনে আমি ছাড়া অন্য কোন এলাহ থাকতো তাহলে তারা উভয়েই ধ্বংস হয়ে যেত।’ আমাদের সাম্প্রতিক অবস্থা অনেকটা এই আসমানী বাণীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। গনতন্ত্র যাকে যেটুকু ক্ষমতা দিয়েছে সে সেটুকুকে নিয়েই পরস্পরকে ধ্বংস করে নিজে সিংহাসন অধিকার করতে সচেষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তা কী সম্ভব? না, সম্ভব নয়। বরং অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ক্ষমতা প্রদর্শনের লড়াইয়ে স্রষ্টার ঐ বাণীরই বাস্তবায়ন হতে চলেছে অর্থাৎ উভয়েই ধ্বংস হতে বসেছে। এভাবে চলতে পারে না। পরস্পরঘাতী এই লড়াই তাদেরকে চালাতে দেওয়া যায় না। কারণ এই লড়াইয়ে কোন হার-জিত নেই, আছে শুধু ধ্বংস। তাদের ধ্বংস, পাশাপাশি আমরা যারা ভোটের ক্ষমতা প্রাপ্তরা আছি আমাদেরও ধ্বংস। হয়তবা এই ভয় থেকেই দেশের চিন্তা-চেতনার ধারক-বাহকরা, বিশিষ্ট জ্ঞানের আধাররা লড়াই থামাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন, সকল ক্ষমতাধরদের এক টেবিলে নিয়ে এসে মীমাংসার বন্দোবস্ত করছেন। কিন্তু পারছেন না আর পারার সম্ভাবনাও নেই। কারণ, সীমিত ক্ষমতায় কোন পক্ষই তুষ্ট থাকতে পারবে না। যতই আলোচনা-সংলাপ হোক না কেন তাদের বিচার মানতে কোন অসুবিধা নেই, শুধুমাত্র তালগাছটা তাদের প্রত্যেকেরই চাই। এখানে তাদের যেমন চূড়ান্ত ক্ষমতায় যাবার আকাক্সক্ষা আছে সেই সাথে চূড়ান্ত ধ্বংস হবার ভয়ও আছে। তাই কোনভাবেই তারা ছাড় দিতে নারাজ। তাদের এই নারাজীকে আমাদের চোখে আপাতত সঠিক মনে না হলেও বাস্তবে যে তারা খুবই ভুল কাজ করছেন তা বলা যায় না। তাদের জায়গায় আমরা বসলে আমরাও যে তা করতাম না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ এটা অস্তিত্বের ব্যাপার। মনে রাখতে হবে- গণতন্ত্রে ‘শিথিলতা’ মানেই হলো ‘দূর্বলতা’। অস্তিত্বের লড়াইয়ে তাই সবাই নিজেদের অবস্থান ‘হার্ড’ দেখাবেন সেটাই স্বাভাবিক। কাজেই তাদের মিথ্যা দোষ না দিয়ে আমাদের উচিত হবে তাদের এহেন কর্মকাণ্ডের পেছনের কারণ অনুসন্ধান করা। তবে অনুসন্ধানের কোন প্রয়োজন হবার কথা নয়, কারণ রাজীনতিকদের পরস্পরবিধ্বংসী লড়াই সৃষ্টি ও পরিচালনা উভয় দায়িত্ব পালন করছে গণতন্ত্র নামক সিস্টেম তা কে না জানে। মানুষকে শান্তি দেবার সক্ষমতা গণতন্ত্রের কোন কালেই ছিল না, আজও নেই। সে শুধু পারে একটি অখণ্ড জাতিকে ভেঙ্গে শত শত মতে, পথে ভাগ করতে এবং তাদের একে অপরকে পরস্পর-বিধ্বংসী তৎপরতায় লিপ্ত করতে। সে মানুষের জান-মালের নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম নয়, উল্টো সে তার শিষ্যদের মানুষের জান-মালের ক্ষতি করার অনুমতি দিয়ে রেখেছে। কাজেই আর নয় গণতন্ত্র, আর নয় গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে মানুষ মারার সুযোগ-সুবিধা, আর নয় গণতন্ত্রের মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাস। অসুস্থ গণতন্ত্রের অসুস্থ কর্মকাণ্ড আর সহ্য নয়।

বিষয়: রাজনীতি

১০০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File