সরকারের প্রয়োজন একটি সঠিক সিদ্ধান্ত

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৫:০৯:১৭ বিকাল

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ক্রমেই সারা দেশকে আচ্ছন্ন করে ফেলছে। রাজনৈতিক অঙ্গন এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, ভয়-ভীতি, আশঙ্কা আর নিরাশার চাদরে আবৃত। সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে সৃষ্ট অরাজকতায় প্রাণ হারানো মানুষের স্বজনদের আর্তনাদ আর অভিশাপে ভারী হয়ে উঠছে প্রিয় মাতৃভূমি। এই অবস্থার পেছনের কারণ কারো অজানা নয়, তাহলো নির্বাচন। গণতন্ত্র নামক সিস্টেমের ধারাবাহিকতা রক্ষায় এই নির্বাচন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনকেন্দ্রীক রাজনৈতিক অস্থিরতা যদিও আজকের নতুন নয়, তথাপিও এর বীভৎসতা ইতোমধ্যেই অতীতের যে কোন সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। আর জাতির আশা-আকাক্সক্ষাকে নিয়ে যে সংলাপ সংলাপ নাটক এতদিন রাজনীতিকরা প্রত্যক্ষ করিয়েছে সেটার মৌসুমও ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। কাজেই একথা বলতে বেগ পেতে হয় না যে, জাতি তার অনিবার্য পরিণতির দিকেই এগিয়ে চলছে, যে পরিণতি হয়তোবা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ভয়াবহ হবে।

নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার পরমুহূর্ত থেকেই শুরু হয় বিরোধী জোটের ডাকা অবরোধ। চলছে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। তফসীল ঘোষণার পর থেকে আজ পর্যন্ত ১১ দিন অতিবাহিত হয়েছে যার মধ্যে নয় দিনই ছিল অবরোধ। এই সময়ের মধ্যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা দুই দফা অবরোধে জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই ঘটছে প্রাণহানি, ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ। গত ৯ দিনের অবরোধে ১৯ টি জেলায় ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রথম দফা অবরোধের তিন দিনে মারা যান ২২ জন। দ্বিতীয় দফার ৬ দিনে মারা গেছেন ৩০ জন। এর মধ্যে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ১০ জন। এই অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর মিছিল থেকে পিছিয়ে নেই রেল ব্যবস্থায়ও। রেলের ৩২৬ টি স্থান সর্বদা ঝুঁকিতে রয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের টানা অবরোধের কারণে দেশের বেশ কয়েকটি জেলা এখন পুরোপুরি প্রশাসনিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এসব জেলা ও এর অধীন উপজেলাগুলোতে কোন ধরণের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নেই। না পুলিশ প্রশাসন না সিভিল প্রশাসন। যার ফলে অবরোধকারীরা রাস্তাঘাট কেটে ও রাস্তার দুই ধারে থাকা গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে নির্দিষ্ট কিছু জেলা ও উপজেলাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখছে। জেলা প্রশাসক এদেরকে দমন করা তো দূরের কথা উল্টো গত সপ্তাহে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা চেয়েছেন। এমন একটি পরিবেশে উপনীত হয়েও যেন সরকারের হুঁশ আসছে না। তারা ঐ যে, নির্বাচনের পথে হাঁটতে শুরু করেছেন সেই পথ স্বচ্ছ কি দুর্গম তা বোঝার কোন সাধ্য যেন তাদের নেই। যেখানে মাত্র ১০ দিনের অবরোধ কর্মসূচিতেই দেশের ২৬ টি জেলার উপর থেকে সরকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে সেখানে ৬৫ টি জেলায় কীভাবে তারা অবাধ নির্বাচন করবেন আর মানুষ কতটা নিরাপত্তাসহকারে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করবে তার সঠিক জবাব সরকারের কাছে আশা করা বৃথা। তারা হয়তোবা মনে করছেন যে, কোনরকমে একবার নির্বাচন করে ফেললেই সব ঠিক হয়ে যাবে; যদি এই তাদের মনের অবস্থা হয় তাহলে তা হবে অনেক বড় ভুল। কারণ নির্বাচন কোন সমস্যার সমাধান নয়, বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে ৪০টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে মাত্র ১০ টি নিজের জোটভুক্ত দলকে নিয়ে নির্বাচন করলে বরং সেটাই হবে চূড়ান্ত সমস্যার সূত্রপাত। সরকার যতটা নিজেকে চালাক ভাবছে তার চেয়ে বিরোধী জোট মোটেও কম চালাক নয়। অপরদিকে, দেশের জনগণ সহজ-সরল হলেও এটা বুঝতে পারে যে, সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা যতই দাপট দেখাক না কেন তাদের দৌঁড় ঐ রাজধানীর সীমানার ভেতরেই। এর বাইরে তাদের কথা খাটে না। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এখন গণপ্রজাতন্ত্রী রাজধানী সরকারে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কেন? সরকার তাদের সর্বশক্তি দিয়ে রাজধানীকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখছে, অরাজকতা থেকে মুক্ত রাখছে কিন্তু রাজধানীর বাইরের মানুষের দায়ভার কে নেবে? তাদের জ্বালাও-পোড়াও, সহিংসতা থেকে কে বাঁচাবে? দেশের কোটি কোটি মানুষকে নিরাপত্তাহীনতায় রেখে, বিরোধী জোটের তাণ্ডবের মাঝে নিক্ষেপ করে সরকার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যে নির্বাচনের আয়োজন করে চলেছে তা মানুষকে কতটুকু সন্তুষ্ট করতে সক্ষম? সরকারকে আগে বুঝতে হবে যে তাদের আসল কাজ কি। তারা যদি সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার চেয়ে নেহায়েত এক নির্বাচনকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তাহলে তারা কোনদিনই সাধারণ মানুষের সমর্থন পাবে না। তাদের প্রতি পরামর্শ হচ্ছে- আগে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন, তারপর নির্বাচন। আগে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপদ পরিবেশে অবাধ জীবনযাত্রার অধিকার নিশ্চিত করুন, তারপর ভোটের অধিকার বাস্তবায়ন করুন। মানুষ আপনাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকলে তারা কখনই আপনাদেরকে ক্ষমতা থেকে নামাবে না, কিন্তু মানুষের জীবন-সম্পদ নিয়ে খেললে, তাদেরকে মৃত্যুখাদের কিনারায় পাঠিয়ে দিয়ে নিজেরা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইলে মানুষ কখনও মেনে নেবে না। কাজেই এখন সময় এসেছে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যে, আপনারা আসলেই মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করবেন কি না। যদি করেন তবে এটা নিশ্চিত যে, যাদেরকে আপনারা সর্বশক্তি ব্যবহার করেও দমন করতে পারছেন না তাদের মূলোৎপাটন করে বাংলার সাধারণ জনতাই আপনাদেরকে ক্ষমতায় বসাবে। কাজেই ‘নির্বাচন-নির্বাচন’ খেলা বন্ধ করে আগে মানুষের জীবন-সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। দেশ থেকে ফেতনা নির্মূল করুন।

বিষয়: রাজনীতি

৮৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File