থুতু কি শুধু এরশাদেরই প্রাপ্য? (বাস্তব কথায় কারো গা জ্বললে আমার করার কিছুই নেই)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ২৬ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:৫২:৫৮ রাত
বাংলাদেশের রাজনীতিকরা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে তাদের গতিপথ পরিবর্তন করেন। তারা কখন কী বলেন তার কোন নির্দিষ্টতা পাওয়া বড়ই মুশকিল। আজকের বৈধ জিনিস হঠাৎ করেই দেখা যাচ্ছে যে, কালকে অবৈধ হয়ে গেছে, আবার বহুদিন যাবৎ যেটা অবৈধ বলে প্রচার করা হচ্ছিল তাও এক মুহূর্তেই বৈধতা পেয়ে বসছে। রাজনীতির মাঠে অসম্ভব বলে যেন কোনকিছুই নেই। যে রাজনীতি দেশের ষোল কোটি মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করছে, মানুষের স্বপ্নকে, আবেগকে দিনের পর দিন আকাশ ছোয়া রূপ দিচ্ছে সেই রাজনীতিই আবার একের পর এক নিরাশার বানি শোনাচ্ছে, নাটকিয় কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করাচ্ছে। রাজনীতির মাঠে ডিগবাজি দেবার উদাহরণ আমাদের দেশীয় নেতাদের আজকের প্রথম নয়। কেউ এই ডিগবাজিতে সমালোচিত হয়েছেন আবার কেউবা দেখা গেছে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। সমালোচিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ এরাশাদ। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের রাজনীতিতে যাকে দুই পক্ষেরই টানাটানিতে পড়তে হয়েছে এবং এই সুযোগে যিনি দেশের মানুষেকে ব্যাপক বিনোদনও যুগিয়েছেন। সকালে বলেছেন এক কথা তো বিকেলে বলেছেন আরেক কথা। কখন কী বলবেন তা না বলা পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত করতে পারে নি। যখন যেদিকের টোপ পেয়েছেন, যখন যেটাকে ক্ষমতার অদূরবর্তী সোপান বলে মনে করেছেন সেদিকেই গা ভাসিয়েছেন। এমনকি সারা দেশে যে কওমী হুজুরদের নিয়ে তোলপার চোলছে, যারা দেশের মধ্যে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করছে, যারা ধর্মের আলখেল্লা পরিধান করে ধর্মের বুলি আউড়িয়ে ঐ ধর্মকেই বিক্রি করে খাচ্ছে তাদের নেতা, তেঁতুল তত্বের উদ্ভাবক বলে যাকে মিডিয়াতে প্রচার করা হচ্ছে তার কাছে হাত পাততেও এরশাদ সাহেবের দ্বিধা হয় নি। মূলতঃ এই ঘটনার কারণেই তাকে বেশী সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ যে কলঙ্ক তার চরিত্রে ও দলের পেছনে লেগেছে তার কারণ হলো- তিনি বলেছিলেন আমি যদি এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি তাহলে জনগণ আমাকে থুতু দেবে। কিন্তু পরবর্তীতে যখন ক্ষমতায় যাবার সম্ভাবনা তৈরী হলো তখন তিনি সেই কাজটিই করলেন। সরকারী জোট ও বিরোধী জোটের ডাকা নিলামে তিনি বিক্রি হলেন সরকারী জোটের কাছেই। কাজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তাকে থুতুমার্কা এরশাদ ট্যাগে বিদ্ধ হতে হয়। এই নিয়ে তার নিজের দল থেকে শুরু কোরে পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেল ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক উপহাসের মাধ্যম হিসেবে চিত্রায়িত হতে হয়। আমার কথা হলো দেশে কি এরশাদ একটাই? চোখ খুললেই দেখা যাবে-না, এদেশে এরশাদ একটি নয়, শত শত, হাজার হাজার এরশাদ আমাদের দেশে রয়েছে। তারা সকালে বলছেন এক কথা-বিকেলে বলছেন আরেক কথা। তারা শত শত ওয়াদা করছেন, শত শত ওয়াদা ভঙ্গ করছেন, শুধু তাই নয়, প্রতিশ্র“তির বীপরীত কাজটিই তারা কখনও কখনও করেছেন। কিন্তু তাতে তো তাদেরকে থুতু রাজনীতিক বলা হয় নি! তারা যে সকালে বলেন আলোচনা হয় নি, বিকেলে বলেন আলোচনা হয়েছে কিন্তু ফলপ্রশু হয় নি কৈ তাদের তো কেউ থুতু দিতে চাইলেন না। কেন এই দ্বৈতনীতি? আর যদি নিরপেক্ষভাবে আরো একটু গভীরে গিয়ে চিন্তা করা যায় তাহলে দেখা যাবে এই থুতুর প্রাপ্যতা এদেশের কোটি কোটি জনতার যারা আজ পর্যন্ত কোনদিন একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে নি। এই দেশের জনগণ নামক যে প্রাণীটি রয়েছে তারা প্রতি ৫ বছর পর পর তাদের মত পাল্টান। এবারে এক সরকার তো সেবারে আরেক সরকার। এই বার নৌকা ভালো তা সেইবার ধানের শীষ ছাড়া চলেই না। এরশাদ সাহেব তার নিকট অতীত তো পরের কথা তাঁর সেনা জীবনের ইতিহাসও স্পষ্টভাবে মনে রেখেছেন যা তিনি মাঝে মাঝেই বলে থাকেন কিন্তু দেশের কোটি কোটি জনতা তাদের মাত্র ৫/৭ বছর আগের ইতিহাসও মনে রাখতে পারে না। যারা নিজেদের ভালো নিজেরা না বুঝে এভাবে স্রোতের সাথে গা ভাসায় তারা নিজেদেরকে যাচাই করলে হয়তবা এরশাদের চেয়ে নিজেদেরকে ভালো ভাববার কোন অবকাশ পাবে না।
বিষয়: রাজনীতি
১১৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন