সংঘাতের মুখে যাচ্ছে দেশ, ফায়দা লুটবে বিশ্বমোড়ল (পর্যবেক্ষণ)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ২৪ নভেম্বর, ২০১৩, ০৭:৩১:৩৮ সন্ধ্যা
দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সকল মহলের মধ্যেই একটা আতংক, উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা কয়েক মাস থেকেই দেখা দিয়েছে। সরকার ও বিরোধীদলের নানান পদক্ষেপে বারবার মনে হয়েছে এই বুঝি সমাধানের একটা পথ বের হয়ে গেল, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি বরং সংকট দিনকে দিন আরো ঘনিভূত হয়েছে। মানুষ এখন আর বিশ্বাস করতে পারছে না যে, তারা এই সংকট থেকে আদৌ মুক্তি পাবে। গতকাল বিভিন্ন দৈনিকে যেভাবে নিরাশার বাণী প্রকাশ পেছেয়ে তাতে মানুষের হতাশাকে আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে। যেমন- তফসিলের দিন থেকেই দেশ অচল করে দেব: ফখরুল (ইত্তেফাক), সংলাপের সম্ভাবনা ক্ষীণ (যুগান্তর), সংলাপ হলেও ফল মিলবে না (কালের কণ্ঠ), ফের সংঘাতের আশঙ্কা (আমাদের সময়), রাজনৈতিক সংকটের আশঙ্কা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের (বাংলাদেশ প্রতিদিন), আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে (মানবকন্ঠ)। এ সংবাদগুলো যে একটি জাতির জন্য চরম হতাশাজনক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু বাস্তবতা আরো হতাশাজনক। এ কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জায়ামাতসহ বিভিন্ন দলের বিভিন্ন পেশার মানুষ যেভাবে নৃশংসভাবে খুন হয়েছে তাতে বলার অপেক্ষা রাখে না দেশ এক গৃহযুদ্ধের মুখে পতিত। দেশের বর্তমান এই পরিস্থিতিতে একটি কথা বলা যায়, যখন কোন গাড়ি পর্বত থেকে পতিত হয় তখন গাড়ির মধ্যে কে কত ভাল, কে কত মন্দ, কে উচ্চ পদস্থ আর কে নিম্ন পদস্থ কারো বেঁচে থাকার কোন সম্ভাবনা থাকে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানুষকে সাবধান করে আসছি, পাশ্চত্য সভ্যতা, দাজ্জাল আমাদের ওপর যে মরণঘাতী জীবনব্যবস্থা, যে সিস্টেম চাপিয়ে দিয়েছে তা পরিবর্তন করা অত্যাবশ্যক। কিন্তু এই সত্যটা সকলে যেন সচেতনভাবে প্রত্যাখ্যান করে চলেছেন। যার ফশ্রুতিতে পুরো জাতি আজ অন্ধকারের গহীন অতলে হারিয়ে যেতে বসেছে। আজ আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, সবকিছু ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, মানুষ নিজ ঘরেও নিরাপদ বোধ করছে না।
এতদিন সর্বমহল থেকে বলা হয়েছে নির্বাচনই হচ্ছে সঙ্কট উত্তরণের একমাত্র সমাধান। কিন্তু এখন নির্বাচনকে আর সমাধান বলে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না, বরং পরিস্থিতি বলছে, বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা দেশকে একটি স্থায়ী সংঘর্ষের ক্ষেত্ররূপে একটি রক্তস্নাত জনপদে পরিণত করবে। এদিকে তৃতীয় বিশ্বের হতদরিদ্র দেশগুলির প্রতি চিরকালই লোলুপ দৃষ্টি রয়েছে আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী এবং আঞ্চলিক মোড়লদের। এই বিশ্বমোড়লরা ইতিমধ্যে সিরিয়া সৃষ্টি করেছে, লেবানন সৃষ্টি করেছে, আফগানিস্তান ধ্বংস করে দিয়েছে, এক সময়ের শক্তিশালী ও সুসংগঠিত ইরাককে নরকপুরীতে রূপান্তরিত করেছে, সেখানে ১০ লক্ষ মানুষ হত্যা করে হার মানিয়েছে চেঙ্গিজ আর হালাকু খানকেও, মিশরকে নিয়ে রক্তের হলি খেলছে। এখন আর তারা নিজেদের দেশীয় সৈন্যদের প্রাণ খোয়ায় না, সর্বত্র তারা মুসলমানের বিরুদ্ধে মুসলমানকেই ব্যবহার করতে চায়। তাদের আছে শক্তিশালী কূটনৈতিক সিস্টেম, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, আন্তর্জাতিক বলয় এবং রয়েছে মিডিয়া। এগুলির মাধ্যমে ইসলাম ধর্মীয় ইস্যুতে মুসলমানদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল ও দাঙ্গা বাধিয়ে অস্ত্রবাণিজ্য করে নিচ্ছে এবং সরকারগুলির মাথার উপরে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। একই পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশও। এখানেও কার্যকরী শক্তি বা ভাইটাল ফোর্স হিসাবে জাগ্রত আছে ধর্মীয় ইস্যু। পটভূমি প্রস্তুত, কিন্তু আমরা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে অন্ধ আবেগে সেই অমোঘ পরিণতির দিকে ছুটে যাচ্ছি। আমরা তুচ্ছ রাজনৈতিক স্বার্থে (নাকি ব্যক্তিস্বার্থে?) এই যে নিজেদের মধ্যে মারামারি, হানাহানি, রক্তপাত আর যুদ্ধ করে নিজেদের নিঃশেষ করে দিচ্ছি, চিন্তা করে দেখুন, আমাদের কি এখনও ফেরার সময় হয় নি? ভাববার কি সময় হয়নি যে কোন দিকে যাচ্ছে পরিস্থিতি। আমরা কি এটা সামাল দিতে পারবো শেষ পর্যন্ত, নাকি মোড়লদেরকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দেব। আমরা এই পত্রিকার মাধ্যমে এত করে বলছি, আর নয়, থামুন এবার, সময় এখনও শেষ হয়ে যায় নি। এখনও ঐক্যবদ্ধ হন। আসুন সিস্টেমটা থেকে আমরা বেরিয়ে আসি, এই গণতন্ত্রের নামে চলমান নৈরাজ্যকর সিস্টেম আমরা বাদ দেই। কি দরকার এমন সিস্টেম যা আমাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে? ভুললে চলবে না আজ থেকে ২০০ বছর আগে তদানীন্তন বিশ্বমোড়ল ব্রিটিশরা আমাদের উপর এই প্রাণঘাতী সিস্টেম চাপিয়ে দিয়েছে। তারা চলে যাওয়ার পর ৭৩ বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা এখনও সেই সিস্টেমের অন্ধ দাসত্ব করে যাচ্ছি। আমরা কেন বুঝতে পারছি না যে, এই ব্যবস্থা আসলে আমাদের জন্য উপযুক্ত নয়। আমাদের সংস্কৃতি, ধর্ম বিশ্বাস, জীবনজীবিকা, সমাজব্যবস্থার সঙ্গে তাদের তৈরি এই আত্মাহীন বস্তুবাদী সিস্টেম জোর করে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা চলছে গত ৭০ বছর থেকে। আমরা ভুলে যাচ্ছি, ইউরোপের ধর্মবিশ্বাস অর্থাৎ খ্রিস্টধর্ম দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব নয়, খ্রিস্টানরাও এটা বোঝে। তাই তাদের ধর্মনিরপেক্ষ, বস্তুবাদী সিস্টেম দিয়ে দেশ চালানোর পক্ষে খোঁড়া হলেও একটা যুক্তি আছে। কিন্তু মুসলমান দেশগুলিতে এ বিশ্বাস এখনও প্রবলভাবে টিকে আছে যে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। তাই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিতে পাশ্চাত্য মতবাদগুলি বার বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, বিদ্রোহের মুখে পড়েছে, প্রায় প্রতিটি দেশেই তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল, যাদের মধ্যে বহুসংখ্যক আছে সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাসী। অর্থাৎ এক কথায় পশ্চিমা মতবাদ এখানে খাপ খাচ্ছে না, তা প্রমাণিত হয়ে গেছে।
তারা আমাদেরকে গণতন্ত্র শিখিয়েছে, গণতন্ত্র চাপিয়ে দিয়ে গেছে, গণতান্ত্রিক দল পর্যন্ত গড়ে দিয়ে গেছে। কিন্তু তারা কি কোনদিন এই এলাকায় গণতন্ত্র মেনে শাসন করেছে? যদি কোন ব্রিটিশ বড়লাট ভোটে দাঁড়াতেন তিনি কি কোনদিন ক্ষমতায় যেতে পারতেন? প্রশ্নই আসে না। তারা ২০০ বছর জোর করে মানুষকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে নীল চাষ করিয়েছে, তাদের কষ্টার্জিত সম্পদ জাহাজ ভর্তি করে নিয়ে ইউরোপকে সমৃদ্ধ করেছে। যাওয়ার সময় এমন একটা শিক্ষাব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সিস্টেম চাপিয়ে দিয়ে গেছে যে, এই জাতি যেন চিরকাল কামড়াকামড়ির মধ্যেই লিপ্ত থাকে, কোনদিন এক হতে না পারে। উপরন্তু তারা আমাদের এই কলহের সুযোগে মোড়লিপনার সুযোগ পাচ্ছে। আর আমরা একটি রুটি ভাগ করতে বানরের দরবারে গিয়ে রুটিই খুইয়ে আসছি।
কাজেই আমাদের কথা হল তাদের দেওয়া স্বাধীনতার ৭৩ বছর পর, আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪২ বছর পরও আমরা ছুটছি সেই পশ্চিমা দানবের পিছনে। ছুটতে ছুটতে সব হারিয়েছি। আজ আমাদের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, বিরোধীদলীয় নেত্রী কেউ নিরাপদ নন। আজ আমাদের সমাজপতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা নিরাপদ নন। দুইদিন হল আমাদের দেশে নতুন মন্ত্রিসভা করা হয়েছে, এর মধ্যেই বিমানমন্ত্রীর বাড়িতে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। কিছুদিন আগে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আর তার স্ত্রী নির্মমভাবে খুন হলেন সন্তানের হাতে। যেখানে মানুষ নিজের বাড়িতে নিরাপদ নয়, সেই সমাজ তো একটা জাহান্নাম। আজকে থানা রক্ষা করতে গেলে বালির বস্তা দিয়ে ঘেরাও করে রাখতে হয়। বাসে করে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ, পেট্রোল বোমা মেরে দিল, স্কুলে যাচ্ছে শিশু, পথে গুলি খেয়ে লাশ হয়ে ফিরল। আমাদের সমাজের কেন এই অবস্থা হল?
সতরাং প্রিয় দেশবাসী, আর না, আপনারা ঘুরে দাঁড়ান, একত্রিত হন। বৈদেশিক শক্তিগুলোর কাছে আমাদের জীবনের কোন দাম নেই, তারা চায় আমাদের মাটি, আমাদের খনিজ। তারা চায় আমাদের লাশ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ইত্যাদি বিশ্বমোড়লেরা এই সুযোগে কিছু অস্ত্রব্যবসা করতে চায়। তারা চায় তাদের টক-শো গুলি আরও প্রাণবন্ত হোক, তাদের মিডিয়াগুলি আরও কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করুক। তারা চায় যুদ্ধরত দেশগুলিতে ত্রাণ সরবরাহ করে তাদের মনবতা প্রকাশ করতে, তাদের সাংবাদিকরা চায় ওয়ার ফটোগ্রাফি করে, মর্মস্পর্শী কলাম লিখে পুলিৎজার জিততে। আমরা কি নিজেরা লাশ হয়ে তাদেরকে এই সুযোগ করে দিতে চাই? গত কয়েক মাসের রাজনৈতিক সহিংসতার চিত্রগুলি জোড়া দিলে যে ভয়াবহ দৃশ্য ভেসে ওঠে তার পরিণাম বড় ভয়াবহ। ইতোমধ্যেই মারা গেছে বহু মানুষ, পোড়ানো হয়েছে শত শত যানবাহন, কেটে ফেলা হয়েছে হাজার হাজার গাছ, ধ্বংস হয়েছে শত শত কোটি টাকার সম্পদ। আমারা সরকারী দলও নই, বিরোধী দলও নই। আমাদের কথা হল আমরা আর এই সিস্টেমে থাকতে চাইনা, আমরা এর থেকে মুক্তি চাই। মুক্তি চাই। এই আমাদের আহ্বান।
সুধীজনেরা, আমারা জানি, আপনাদের ভয় কোথায়। আপনারা ভাবছেন এই তথাকথিত গণতন্ত্র ত্যাগ করলে পশ্চিমা প্রভুরা বা আঞ্চলিক প্রভুরা নাখোশ হবে। ভয় পাবেন না। একটি ঐক্যবদ্ধ জাতির সামনে দুনিয়ার কোন শক্তি টিকে থাকতে পারে না। এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। আপনারা জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যবদ্ধ হন। ঐক্যবদ্ধ হওয়া নিশ্চয়ই কোন অন্যায় নয়। সুতরাং ভয় কি? আমরাতো এক আল্লাহকে বিশ্বাস করি। তাহলে আমরা সেই প্রভুর দেয়া সত্য জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করি না কেন? যারা আজকে সনাতন ধর্মাবলম্বী আছে তারাও বিশ্বাস করেন যে, যখন মহাভারত শাস্ত্রমতে পরিচালিত হত তখন সমাজে চূড়ান্ত শান্তি বিরাজ করত। আমরা সেই শান্তির নিশ্চয়তা দিচ্ছি। সাত সমুদ্র তের নদীর ওপার থেকে ধার করা জীবনব্যবস্থা আমরাতো দেখলাম ৭০ বছর পর্যন্ত। দয়া করে আর না। নির্বাচন নির্বাচন খেলা আর না। রক্ত নিয়ে হলি খেলা আর না।
বিষয়: বিবিধ
১০৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন