ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসা-ছাত্রদের পৈশাচিক নৃশংসতা, মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানালো
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ২৩ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:২১:৫৭ রাত
তাদের প্রত্যেকের মাথায় রড দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, মাথায় রড ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, পায়ের গোড়ালিতে রড দিয়ে পেটানো হয়েছে, পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়েছে, হাতের কব্জি কেটে দেওয়া হয়েছে, সমস্ত শরীরকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে, ঘাতক মোল্লাদের হাত থেকে তাদের মাথা, চোখ, হাত, পা অর্থাৎ শরীরের কোন অঙ্গই রক্ষা পায় নি।
গত বুধবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া
র পৌর শহরের রেলগেইট এলাকায় এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গুরুতর আহত হয় হেযবুত তওহীদের ৪ সদস্য। তারা প্রত্যেকেই বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তাদেরকে এমন নৃশংসভাবে নির্যাতন করা হয় যা দেখে শুনে সবার গা শিউরে উঠতে পারে। তাদের প্রত্যেকের মাথায় রড দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, মাথায় রড ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, পায়ের গোড়ালিতে রড দিয়ে পেটানো হয়েছে, পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়েছে, হাতের কব্জি কেটে দেওয়া হয়েছে, সমস্ত শরীরকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে, ঘাতক মোল্লাদের হাত থেকে তাদের মাথা, চোখ, হাত, পা অর্থাৎ শরীরের কোন অঙ্গই রক্ষা পায় নি। আইন শৃঙ্খলা-বাহিনী এবং অভিজ্ঞদের মতে এটি ছিল সুপরিকল্পিত আক্রমণ। কেননা সাধারণ জনগণ কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড় ছাড়া খুব বেশি একটা আঘাত করবে না। কিন্তু আহতদের সবার শরীরেই আছে ধারালো অস্ত্রের আঘাত যা দেখে যে কেউ বলতে পারবে এদেরকে সুপরিকল্পিতভাবেই হত্যা করার জন্য নির্যাতন করা হয়েছে। আহত প্রত্যেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। প্রশ্ন হলো, কেন এই নিরপরাধ ব্যক্তিদের এভাবে মারা হল? কি ছিল তাদের অপরাধ? তারা কি কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী? তারা কি তথাকথিত ইসলামি দলের মত বাসে আগুন দিয়েছে? মিছিল করেছে? আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল? তারা কি কওমী শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ? নাকি তারা রাজনৈতিক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছিল? তারা কি সেখানে কারও জমি দখল কোরতে গিয়েছিলেন? কোন ব্যবসায়িক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য গিয়েছিলেন? তাদের সঙ্গে ঐ এলাকার কারও পূর্ব পুরুষের শত্র“তা ছিল? কোনটাই না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা জনগণ কোন পক্ষই এ ধরণের কোন অপরাধের প্রমাণ দেখাতে পারবে না। তারা সকলেই দৈনিক দেশেরপত্র পত্রিকার হকারি করে। আর এটাই হল তাদের অপরাধ। এই পত্রিকায় হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমাম জনাব মোহাম্মাদ বায়াজীদ খান পন্নী’র লেখা ছাপা হয়, এতে বর্তমানের বিকৃত এসলামকে ত্যাগ করে প্রকৃত এসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করা হয়। এ ধরণের লেখা আগেও দৈনিক ইত্তেফাকসহ বড় বড় পত্রিকা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় পত্রিকাগুলিতেও ছাপা হয়েছিল। সে পত্রিকাগুলিও হেযবুত তওহীদের অনেক সদস্য হকারি করে সারা দেশে বিক্রি করেন। একটা সত্যকে প্রচার করার জন্য এর থেকে আর কি উত্তম পন্থা থাকতে পারে? আমরা কি জঙ্গিদের মত বাসে বোমা মারছি, সাধারণ মানুষের উপর পেট্রোল বোমা মারছি? আমরা এগুলোর কোনটিই করছি না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পত্রিকার মাধ্যমে মানবজাতির মুক্তির জন্য মহাসত্যকে প্রচার করছি। এর থেকে ন্যায়নীতির মধ্যে থেকে, আইন-শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে সত্য প্রচার করার আর কোন মাধ্যম আছে কিনা আমার জানা নেই।
অন্যান্য দিনের মত ঐ দিনও দৈনিক দেশেরপত্রের হকারি করতে যান আহত ঐ হকাররা। তারা স্থানীয় ধর্মব্যবসায়ী আলেম-মোল্লাদের ষড়যন্ত্রের কথা কিছুই জানতো না। একসময় পত্রিকা বিক্রি চলাকালীন চক্রান্তকারীরা তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। তারপর তাদের উপর শুরু হয় অতর্কিত আক্রমণ। হামলার একসময় হঠাৎ করেই তাদের উপর ধর্মব্যবসায়ী আলেম-মোল্লারা রাম-দা, টেটা ও ধারালো অস্ত্র, লাঠি, লোহার রড নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। অথচ এগুলো কোথা থেকে আসলো, এগুলো তো রাস্তার সাধারণ জনগণের কাছে থাকার কথা নয়। এগুলো ঐ ধর্মব্যবসায়ী মোল্লারা রেখেছিল পূর্বপরিকল্পিতভাবেই।
কী কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনিছিয়া মাদ্রাসার মোল্লারা মিছিল করলো, দেশেরপত্র পোড়ালো, আমরা তার কোন কারণ খুঁজে পাই না। আমরা কোন মাওলানা, মাদ্রাসা বা আলেমকে উল্লেখ করে তো লেখা ছাপাই নি। যদিও তাদের অপরাধের কোন শেষ নাই। তারা যে জঘন্য কাজে লিপ্ত আমরা সেটা বলি নি। আমরা শুধু সেই সত্যটাকে তুলে ধরেছি যে কথা স্বয়ং আল্লাহ কোর’আনে বলেছেন, আল্লাহ রসুল (দ হাদিসে বলেছেন। আমরা যেটা বলছি সেটা যদি মিথ্যাই হতো তাহলে এটা প্রতিবাদ করার বিভিন্ন ভাষা রয়েছে, আইনগত ব্যবস্থা আছে, সংবাদ সম্মেলন আছে, সরকার আছে। সরকার যদি দেখে হেযবুত তওহীদ যা করছে তা অবৈধ তাহলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে কিন্তু এভাবে যারা পত্রিকার হকারি করে তাদেরকে মারার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে আগের দিন অস্ত্র লুকিয়ে রেখে একেবারে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল ধর্মব্যবসায়ী জঘন্য মোল্লারা। যারা দাড়ি, টুপি নিয়ে আলখেল্লা পড়ে মানুষের সালাম কুড়িয়ে বেড়ায়, মানুষের ঘরে ঘরে দাওয়াত খেয়ে বেড়ায়, কোর’আন পড়িয়ে, নামাজ পড়িয়ে আল্লাহ্র সাথে নাফরমানি করে টাকা উপার্জন করে তাদের জোব্বার অন্তরালে কি জঘন্য, পাশবিক, নিকৃষ্টতা লুক্কায়িত আছে এটা সাধারণ জনগণ জানে না। হেযবুত তওহীদ এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। মাদ্রাসা ছাত্রদের এই সহিংসতা ও ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে নিরস্ত্র মানুষকে পরিকল্পিতভাবে ও স্বশস্ত্র আক্রমণ করে প্রাণনাশের চেষ্টাকে ‘গণপিটুনির’ রূপ দেওয়ার যে প্রবণতা দেখা গেছে সেটা কোন বিচারেই শুভ লক্ষণ নয়। মাদ্রাসার ছাত্র ও মোল্লারা জনগণকে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দেওয়ার জন্য তাদেরকে ‘কাদিয়ানী’ হিসাবে প্রচার করেছে যে কথাটি ‘যুগান্তরে’ও এসেছে। হেযবুত তওহীদের সদস্যরা যে যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর অনুসারী, তারা যে আখেরী নবী মোহাম্মদ (দ এর প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী হওয়ার প্রচেষ্টা করছে এ তথ্যটি ন্যূনতম সচেতন সকলেরই জানার কথা। তবু এই ডাহা মিথ্যা কথাটি ছড়িয়ে দিয়ে দিনে দুপুরে মানুষ হত্যা করাকে তারা বৈধ বানিয়ে দেয়। এসলামের নাম নিয়ে এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধর্মজীবী আলেম ওলামারা মসজিদে, মাদ্রাসায়, জুম’আর খোতবায় হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা কোরে আসছিলো। আর প্রশাসনের প্রতি কথা হচ্ছে, আইনভঙ্গ হলে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া আপনাদের দায়িত্ব। অপরাধীকে দণ্ডিত না করলে সমাজ অপরাধীতে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এখনও যদি এই জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তবে সেটা হবে বিষধর সাপ নিয়ে খেলা। বিষধর সাপের কাছে কেউই নিরাপদ নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন