মালায়েকরা কীভাবে বুঝলো মানুষ ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা কোরবে? ( মানুষ সৃষ্টি বিষয়ক একটি গবেষণাধর্মী লেখা)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ২৩ নভেম্বর, ২০১৩, ০৫:৩৬:৪৯ বিকাল
মানুষ সৃষ্টির গোড়ার কথা আল কোর’আনে যতটুকু জানা যায় তা এই যে, ‘অসংখ্য সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা, সীমাহীন মহাবিশ্বের অধিপতি তাঁর সৃষ্ট মালায়েক দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে তাঁর সকল সৃষ্টিকে পরিচালনা কোরছিলেন। এই সকল সৃষ্টি আল্লাহ কোরেছিলেন ‘কুন’ (হও) আদেশ দিয়ে। অতঃপর তাঁর ইচ্ছা হোল তিনি পৃথিবীতে তাঁর প্রতিভূ অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টি কোরবেন। তিনি মালায়েকদের ডেকে তাঁর এই পরিকল্পনার কথা জানালে মালায়েকরা বোললেন- কেন আপনি পৃথিবীতে আপনার প্রতিনিধি পাঠাতে চান, তারা তো সেখানে ফাসাদ (অন্যায়, অবিচার, অশান্তি) এবং সাফাকুদ্দিমা (যুদ্ধ, রক্তপাত) সৃষ্টি কোরবে (সুরা-আল বাকারা- ৩০)। কিন্তু তাদের মৃদু আপত্তি সত্ত্বেও আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি কোরলেন। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ্য যে, মানুষ পৃথিবীতে যে অন্যায়-অশান্তি, রক্তপাত কোরবে বোলে মালায়েকরা আশঙ্কা কোরেছিলেন তার সম্পূর্ণটাই মানবজাতির বেলায় অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হোচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আদম (আ এর ছেলে কাবিল কর্তৃক অপর ছেলে হাবিলকে হত্যা করা থেকে শুরু কোরে আজ পর্যন্ত মানবজাতির সর্বপ্রধান সমস্যা হোয়ে আছে এই ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা, শত চেষ্টা কোরেও যার কোন সমাধান মানবজাতি কোরতে পারে নি। বরং দিন দিন এটা বাড়তে বাড়তে বর্তমানে পুরো মানবজাতি ধ্বংসের দোড়গোড়ায় এসে উপনীত হোয়েছে।
আরেকটি বিষয় হোল, মানুষ সৃষ্টির বিরুদ্ধে যুক্তি হিসাবে মালায়েকরা এ কথা বলেন নি যে, মানুষ মন্দিরে, মসজিদে, গীর্জায়, প্যাগোডায়, সিনাগগে যেয়ে তোমার উপাসনা কোরবে না, উপবাস কোরবে না। তারা এসবের একটাও বলেন নি। বোলেছেন অশান্তি, অন্যায়, ঝগড়া আর রক্তপাত কোরবে। অর্থাৎ আসল সমস্যা ওটা নয়, এইটা। আল্লাহ কি বোঝেন নি মালায়েকরা কি বোলেছিলেন? তিনি ঠিকই বুঝেছিলেন এবং তা সত্ত্বেও তাদের আপত্তি অগ্রাহ্য কোরে মানুষ বানালেন। তাঁর প্রতিনিধি সৃষ্টির ব্যাপারে স্রষ্টা নিজে আমাদের যে সব তথ্য জানাচ্ছেন তা থেকে আমরা কয়েকটি বুনিয়াদি কথা জানতে পারছি। একটি - তাঁর এই নতুন সৃষ্টিটির গুরুত্ব ও মর্যাদা কত বেশি এবং এর উপর তার স্নেহ কতখানি তা বুঝা যায় এথেকে যে- যেখানে মালায়েকসহ এই বিশাল সৃষ্টি তিনি কোরলেন শুধু তার মুখের আদেশ দিয়ে- হও! আর সব হোয়ে গোলো (কোর’আন- সুরা আল বাকারা- ১১৯, সুরা আন নাহল- ৪০, সুরা ইয়াসিন-৮২)। সেখানে মানুষকে অর্থাৎ আদমকে (আ তৈরি কোরলেন তাঁর নিজ হাতে (কোর’আন-সুরা সা’দ-৭৫)। এবং আদমের দেহের মধ্যে তাঁর নিজের আত্মা থেকে ফুঁকে দিলেন (কোর’আন-সুরা আল হিজর-২৯)। ঠিক এই কারণেই মালায়েকরা মানুষ সৃষ্টির বিরোধীতা কোরেছিলেন। কারণ নিজের আত্মা থেকে ফুঁকে দেবার ফলে আল্লাহর যে গুণাবলী, সিফতসমূহ রোয়েছে সব মানুষের মধ্যে চোলে এলো। এমনকি স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিও মানুষের মধ্যে চোলে আসলো, যে ইচ্ছাশক্তি আল্লাহ ছাড়া আর কারো মাঝে ছিল না। প্রশ্ন আসতে পারে- স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির সাথে ফাসাদ, সাফাকুদ্দিমার সম্পর্ক কোথায়? সম্পর্ক আছে, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি মানেই হোল ইচ্ছা হোলে সে আল্লাহর হুকুম মোতাবেক চোলতে পারবে আবার ইচ্ছা না হোলেই সে আল্লাহর হুকুম প্রত্যাখ্যান কোরতে পারবে। যেহেতু মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি কাজেই তিনিই ভালো জানেন কোন সিস্টেম মোতবেক জীবন-যাপন কোরলে, কোন বিধি-বিধান মেনে চোললে মানবজাতি শান্তিতে থাকতে পারবে। আল-কোর’আনে আল্লাহ বোলেছেন- যিনি সৃষ্টি কোরেছেন তিনি কি জানেন না? তিনি সুক্ষ্মতম বিষয়ও জানেন (সুরা )। কাজেই অন্যায়, অবিচার, অশান্তি এবং যুদ্ধ, রক্তপাতহীন সমাজে বসবাস কোরতে চাইলে অবশ্যই মানুষকে আল্লাহর হুকুম মেনে চোলতে হবে। বনি আদম যদি আল্লাহর হুকুম-বিধানকে প্রত্যাখ্যান কোরে নিজের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের চলার পথ নিজেরাই তৈরি কোরে নেয় তাহলে অবশ্যম্ভাবীরূপে তারা ফাসাদ-সাফাকুদ্দিমাতে পতিত হবে, যেমন আজ হোয়েছে। এই বিষয়টি উপলব্ধি কোরেই মালায়েকরা মানুষ সৃষ্টির বিরোধীতা কোরেছিলেন। কিন্তু মালায়েকদের কথা অগ্রাহ্য কোরে সর্বজ্ঞানী আল্লাহ যখন মানুষকে তাঁর নিজের আত্মা থেকে ফুঁকে দিলেন তখন আল্লাহর যত রকম গুণাবলী, সিফত আছে সব মানুষের মধ্যে চলে এলো। এমনকি তাঁর যে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি এটাও ঐ আত্মার সঙ্গে মানুষের মধ্যে চলে এলো। এইটা সম্বন্ধেই আল্লাহ বোলেছেন- মানুষকে আমি আমার আমানত দিয়েছি (কোর’আন-সুরা আল আহযাব-৭২)। আল্লাহর এই গুণ, এই শক্তিগুলি সৃষ্টির আর কারো নাই- ফেরেশতা, মালায়েকদেরও নেই- সব তার বেধে দেওয়া আইন, নিয়ম মেনে চোলছে। এইগুলিকেই আমরা বলি প্রাকৃতিক নিয়ম। কারো সাধ্য নেই এই নিয়ম থেকে এক চুল পরিমাণও ব্যতিক্রম করে। কারণ তা করার ইচ্ছা শক্তিই তাদের দেয়া হয় নি। ইচ্ছা হোলে কোরব, ইচ্ছা না হোলে কোরব না, এ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি একমাত্র আল্লাহর। মানুষের মধ্যে যখন তিনি তার আত্মা ফুঁকে দিলেন তখন তার মধ্যে স্রষ্টার সমস্ত গুণাবলীর ও শক্তির সঙ্গে ঐ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিও চলে এলো। এটাই হোল তাঁর দেয়া আমানত যা অন্য কোন সৃষ্টি গ্রহণ কোরতে ভয় পেলো। কিন্তু মানুষ এটা নিয়ে নিজেকে অন্যায়কারী ও জ্ঞানহীন প্রমাণ কোরলো (কোর’আন-সুরা আল আহযাব-৭২)। আল্লাহ তাঁর নিজের আত্মা মানুষের মধ্যে ফুঁকে দেয়ার আগে পর্যন্ত মানুষ লক্ষ কোটি সৃষ্টির আরেকটি মাত্র ছিলো। কিন্তু স্রষ্টার আত্মা তার মধ্যে ফুঁকে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে এক অনন্য সৃষ্টিতে রূপান্তরিত হোয়ে গেলো। সে হোয়ে গেলো স্রষ্টার, আল্লাহর প্রতিনিধি যার মধ্যে রোয়েছে সেই মহান স্রষ্টার প্রত্যেকটি গুণ, শুধুমাত্র গুণ নয় প্রত্যেকটি শক্তি। শুধু তফাৎ এই যে, অতি সামান্য পরিমাণে। ব্যাখ্যা কোরতে গেলে বোলতে হয়- মহাসমুদ্র থেকে এক ফোঁটা পানি তুলে এনে তার যদি রাসায়নিক বিশ্লেষণ করা যায় তবে ঐ এক ফোঁটা পানির মধ্যে সেই মহাসমুদ্রের পানির প্রত্যেকটি গুণ পাওয়া যাবে, মহাসমুদ্রের মধ্যে যত পদার্থ আছে তার প্রত্যেকটি পাওয়া যাবে। কিন্তু তবু ঐ এক ফোঁটা পানি মহাসমুদ্র নয়-সে প্রলয়ংকর ঝড় তুলতে পারে না, জাহাজ ডোবাতে পারবে না। সূর্যের আগুন থেকে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে আনলে সেই মোমবাতির শিখায় সূর্য্যের আগুনের সমস্ত গুণ থাকবে। সেও জ্বালাতে পারবে, আলো দিতে পারবে কিন্তু সে সূর্য্যের মত গ্রহে গ্রহে আলো আর তাপ ছড়াতে পারবে না। তবুও ঐ মোমবাতির শিখা সেই সূর্য্য থেকেই আনা আগুন- একই জিনিস।
দ্বিতীয় হোল:- স্রষ্টা তাঁর এই নতুন সৃষ্টিটাকে সব জিনিসের নাম শেখালেন (কোর’আন-সুরা আল বাকারা-৩১)। এর অর্থ হোল তিনি যা সৃষ্টি কোরেছেন সেই সব জিনিসের ধর্ম, কোন জিনিসের কী কাজ, কেমন কোরে সে জিনিস কাজ করে ইত্যাদি, এক কথায় বিজ্ঞান, যে বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি কোরে তিনি তাঁর বিশাল সৃষ্টি কোরেছেন, মানুষকে সেই বিজ্ঞান শেখালেন। এই কথা বোলে তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন যে, মানুষ জাতি সৃষ্টির প্রত্যেক জিনিস সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ কোরবে। আজ থেকে হাজার বছর আগে মানুষ যে সব জিনিসের সম্পর্কে জ্ঞান লাভ কোরেছিল অর্থাৎ নাম জেনেছিলো, আজ তার চেয়ে বহু বেশি জিনিসের সম্বন্ধে জানে- আজ থেকে বহু বছর পর সে আরো বহু জিনিস সম্বন্ধে জানবে। মানুষকে বিজ্ঞান শেখাবার পর তিনি তাঁর মালায়েকদের ডেকে সব জিনিসের নাম জিজ্ঞাসা কোরলেন- তারা বোলতে পারলেন না (কোর’আন সুরা আল বাকারা-৩২)। কারণ আগেই বোলেছি, মালায়েকরা প্রাকৃতিক শক্তিমাত্র। তাদের যার উপর যে কাজের ভার দেয়া আছে তার বাইরের কোন জ্ঞান তাদের নেই- ইচ্ছাশক্তিও নেই। তৃতীয় হোল:- আল্লাহ তাঁর মালায়েকদের ডেকে হুকুম কোরলেন তাঁর এই নতুন সৃষ্টি আদম অর্থাৎ মানুষকে সেজদা কোরতে। এবলিস ছাড়া আর সমস্ত মালায়েক মানুষকে সেজদা কোরলেন (কোর’আন-সুরা আল বাকারা-৩৪)। এর অর্থ কী? এর অর্থ প্রথমতঃ মালায়েকরা মানুষকে তাদের চেয়ে বড়, বেশি উচ্চ বোলে মেনে নিলেন, কারণ মানুষের মধ্যে আল্লাহর আত্মা আছে যা তাদের মধ্যে নেই। দ্বিতীয়তঃ প্রাকৃতিক শক্তিগুলিকে আল্লাহ মানুষের খেদমতে নিযুক্ত কোরে দিলেন। আগুন, পানি, বাতাস, বিদ্যুৎ, চুম্বক, মাটি ইত্যাদি লক্ষ কোটি মালায়েক তাই মানুষের সেবায় নিয়োজিত।
বিষয়: বিবিধ
১১৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন