জনগণ এখনো রাজনীতিকদের চিনল না ! ! !(আম গাছে কোনদিন তেতুল ধরে?), শেষ পর্ব----

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ২৩ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:২১:২০ দুপুর

বছরের পর বছর রাজনীতিকদের হাতে জিম্মি হয়ে থাকে দেশের আপামর জনতা। রাজনীতিকরা যত সহিংসতা, হামলা-মামলা, হরতাল বা অবরোধ করে থাকেন তাতে মূলত ক্ষতি যা হয় তা এই সাধারণ জনগণেরই হয়। উপর্যুপরি হরতাল-অবরোধ ইত্যাদি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যখন দেশের অর্থনীতি নাজুক হয়ে পড়ে তখন সাধারণ এই খেটে খাওয়া মানুষদেরকেই হারভাঙ্গা খাটুনি করে, উপোস করে কোনো রকমে বেঁচে থাকতে হয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদার কথা সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও সেগুলো মূলত এদেশে কোনো আলোচ্য বিষয় নয়, বরং এদেশে সংবিধানের সম্পর্কে আলোচনা আসে তখনই যখন ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকার জন্য সংবিধানের দরকার পড়ে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থেকেছে তারাই আমজনতার স্বার্থের আগে নিজেদের দলীয় স্বার্থকে বড় করে দেখেছে। এদেশে যত হরতাল অবরোধ হয় তার শতকরা নব্বই ভাগই হয়ে থাকে দলীয় কোনো দাবি দাওয়া বাস্তবায়নের দাবিতে। কিন্তু রাজনীতিকদের কাছে জনগণের যে হাজারো দাবি দাওয়া থাকে সেগুলো বরাবরই উপেক্ষিতই থেকে যায়। এভাবেই জনতার লাশের উপর দিয়ে একের পর এক সরকার বদল হলেও জনগণের কোনো ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। সরকারি দলের পাঁচ বছরের লাগামহীন দুর্নীতি আর ক্ষমতাপ্রীতির প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয় অপরদলকে ক্ষমতায় বসানোর মাধ্যমে। কিন্তু ক্ষমতায় বসেই তারা পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ উৎসাহ-উদ্দীপনায় লুট-পাট, দুর্নীতি, ক্ষমতার দম্ভ, বিরোধী শক্তিকে দমন ইত্যাদি শুরু করে দেয়। অল্প কিছুদিনের মাঝেই তারাও জনগণের সমর্থন হারায়। জনতা আবারো প্রস্তুতি নেয় অপরদলকে ক্ষমতায় বসানোর। এর বাইরে তারা অন্য কোনো কিছু চিন্তা করতে পারে না। তাদের দৃষ্টিকে এই বেড়াজালের ভিতরে আটকে রাখা হয়। ফলে বারবার নিজেদের হাতেই নির্বাচিত করতে হয় যে- ‘সামনের পাঁচ বছর তারা কোন দলের দুর্নীতি, লুটপাট, ক্ষমতার অপব্যবহার বা ক্ষমতালিপ্সা প্রত্যক্ষ করবে আর কোন দলের হরতাল, অবরোধ, ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও, বোমাবাজি ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করবে। নিজের হাতেই এভাবে নিজেদের ভাগ্যকে বরণ করে নিতে হয়। জেনে বুঝেই একই ভুল বারবার করা হয়। এই ক্ষমতা পরিবর্তনের চক্র থেকে তারা বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেন না বা বাইরে বেরিয়ে আসার কোনো রাস্তা দেখতে পান না।

আবারো সেই পথেই হাঁটছে দেশবাসী:

বর্তমান বাংলাদেশের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে আবারো সেই পথেই হাঁটতে যাচ্ছে আপামর জনতা। উপর্যুপরি বিভিন্ন রাজনৈতিক সহিংসতায় যখন এদেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী সকল শ্রেণীর মানুষের জীবনই ওষ্ঠাগত, তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা এর সমাধান খুঁজে পেতে ব্যস্ত। অতীতের বছরগুলোতে এই ক্ষমতার পালাবদলের মুহূর্তটি কোনো কালেই অহিংস ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এটা সহিংসতার মাত্রা পেরিয়ে অনেক দূরে পৌছে গেছে। ফলে যারা রাজনীতির আগে বা পাছে কোনোখানেই থাকেন না, যারা নিজেদের স্বার্থ নিয়েই সারাটি দিন ব্যস্ত থাকেন, ব্যবসা করেন, চাকরি করেন আজ দেখা যাচ্ছে তারাও রাজনীতিকদের মাঝে সমঝোতা স্থাপনের ব্যাপারে আন্তরিকভাবে তৎপর। এরও পেছনে কাজ করছে ব্যক্তিসার্থ। তারা কোনো রকমে সমঝোতা বা সংলাপ যেটাতেই হোক না কেন দুই মেরুকে এক করে নির্বাচন করে ফেলতে পারলেই যেন বেঁচে যান। অবশ্য তাদের যে উদ্দেশ্য তা হয়তবা অর্জিত হবে। কিন্তু এদেশের কোটি কোটি সাধারণ জনতার এতে কি কোনো লাভ হবে? কোনো লাভ তো হবেই না বরং আরো একটি শ্রেনীর হাতে পাঁচ বছরের জন্য জিম্মি হবে। আবারো বিরোধী দলের হরতালের সহিংসতার মাঝে পড়ে জীবন হারাতে হবে, পঙ্গু হতে হবে বা জীবিকার একমাত্র উপায়টিকে চোখের সামনে পুড়তে দেখতে হবে। এটাই কি এদেশের আমজনতার নিয়তি? পত্র-পত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশনে এখন একটাই কথা বারবার তুলে আনা হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচন যেন এক ঐশী বিধান, এটাকে কার্যকর না করতে পারলে অনেক বড় কিছু হয়ে যাবে। নির্বাচনই যেন জাতির সর্বশেষ রাস্তা। এটাতেই যেন সকল সমস্যার সমাধান। রাজনীতির এই নোংরা খেলায় যারা উপকৃত হন তারা নির্বাচনের নতুন নতুন ফর্মুলা আবিষ্কার করতে ব্যস্ত।

বাংলাদেশের নির্বাচনকে নিয়ে বিদেশি মোড়লদের এত মাথাব্যথা কেন:

রাজনীতি নামক দূর্যোগ যখন বাংলাদেশকে একের পর এক আঘাত করে চলছে, মানুষ শান্তির অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে, মুক্তির পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে তখন বিদেশি পরাশক্তিরা সচেষ্ট হয়েছে নির্বাচন করানোর দৃঢ় শপথ নিয়ে। তারা যেভাবেই হোক যেন নির্বাচন এদেশে করাবেই। কেন তাদের এত নির্বাচনপ্রীতি? এতে তাদের কি লাভ? এর উত্তর হলো একটাই আর তাহলো তাদের প্রতি আমাদের দাসত্ত্ব। আমরা মানসিকভাবে অনেকটাই তাদের দাসত্ব করে থাকি। নিজেদের ভালো মন্দ যাচাই করার আগে তাদের মতামত কে প্রাধান্য দেই। কিন্তু তারা কোনোদিনও চায় না যে আমরা জাতিগতভাবে এক হই। তারা একের পর এক আমাদের মাঝে বিষবৃক্ষের চারা রোপন করে চলেছেন। তারা আবারো আমাদের একই ভুল করানোর চেষ্টায় লিপ্ত। একথা ভুললে চলবে না যে শুধু আমাদের দেশই নয়, পরোক্ষভাবে পৃথিবীর সমস্ত মিডিয়াকেই নিয়ন্ত্রণ করছে ঐ পরাশক্তিরাই। তারা তাদের পদলেহনকারী মিডিয়ার দ্বারা জনগণকে বোঝাচ্ছে সরকার আর বিরোধীদল ঐক্যমত পোষণ করলেই সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু জনগণকে এ কথা বুঝতে হবে, এটা সরকার আর বিরোধী দলের মধ্যে ক্ষমতা ছাড়া বা ক্ষমতায় আরোহনের যে জটিলতা তার সমাধান, কিন্তু জনগণের শতমুখী সমস্যার জর্জড়িত জীবনের মুক্তির জন্য যে ব্যবস্থা দরকার তার কোন সমাধান নয়। ইতোমধ্যেই মিডিয়াতে নির্বাচনকে ঘিরে যে আমেজ ছড়ানো হচ্ছে তা জাতির সাথে অনেক বড় একটা চালবাজি। জাতিকে পঙ্গু করার পর এবার টুটি চিপে হত্যা করার অপচেষ্টা। যেখানে নির্বাচনের প্রক্রিয়া কি হবে, সকল দল অংশগ্রহণ করবে কি করবে না তার অনিশ্চয়তাই দিন দিন বাড়ছে সেখানে জনগণকে নির্বাচনের বিষাক্ত ট্যাবলেট গেলানোর চেষ্টা আর চেষ্টা থাকে না, সেটা হয়ে যায় অপচেষ্টা। এটাই করা হচ্ছে। মোড়লদের রাষ্ট্রদুতগণ যে কোন মূল্যে নির্বাচন করানোর জন্য মরিয়া হয়ে আছে। আওয়ামীলীগ জিতুক আর বিএনপি জিতুক তা তাদের কাছে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয় তাদের একটাই চাওয়া নির্বাচন। কারণ এটাতেই তাদের মঙ্গল, তাদের সফলতা। এই জাতির গলায় শিকল বেঁধে নিজেদের দাস হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে এই নির্বাচনের দরকার। একটা পুতুলের সরকার দরকার। আর তাই বাংলাদেশের নির্বাচনকে নিয়ে বিদেশি মোড়লদের এত মাথাব্যথা।

নির্বাচন জাতিকে কতটুকু দিতে পারে?

যে নির্বাচনকে নিয়ে এত হানাহানি, রক্তারক্তি, হরতাল, অবরোধ, ভাংচুর, মানুষ হত্যা ইত্যাদি চলছে সেই নির্বাচন আসলে জাতিকে কতটুকু দিতে পারে সেটা একবার ভেবে দেখা দরকার। অতীতের আলোকে বিবেচনা করলে নির্বাচনকে রাজনীতির মাঠে রাজনীতিকদের দিক পরিবর্তন ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। নির্বাচন জাতির জন্য কোনো তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় নয় নির্বাচন হলো রাজনীতিকদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। কতখানি তাৎপর্যপূর্ণ? ঠিক যতটুকু তাৎপর্যপূর্ণ হলে নেহায়েত এক নির্বাচনের সময়কালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে তারা মাসের পর মাস হরতাল-অবরোধ করতে পারে, সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি করতে পারে, ইতিহাসের এক বছরের রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতের রেকর্ড ভাঙ্গতে পারেন, লগি-বৈঠা নিয়ে মানুষ মারার প্রস্তুতি নিতে পারেন বা শিশুর গায়ে ককটেল ছুড়তে পারেন। তাদের কাছে নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাদের সাথে তাল মিলিয়ে সাধারণ আমজনতা যদি নির্বাচনকে ‘বিকল্পহীন’ হিসেবে বিবেচনা করতে থাকেন তাহলে সেটা হবে বোকামী। আমাদেরকে বুঝতে হবে- যে সিস্টেমকে আমরা জাতীয় জীবনে গ্রহণ করেছি তা মূলত স্বেচ্ছায় কারাবরণের সামিল। কেবল সেই কারাগারের রক্ষণাবেক্ষণকারী কে হবেন তা নির্ধারণের ক্ষমতা রয়েছে নির্বাচনের। কাজেই নির্বাচনে যেই জিতুক না কেন আমজনতাকে ঐ কারাগারের জীবনই বয়ে বেড়াতে হবে অর্থাৎ রাজনীতিকদের হাতে জিম্মি হয়ে থাকতে হবে। এই হলো নির্বাচনের যথার্থতা, এই হলো নির্বাচনের গুরুত্ব। নির্বাচন জাতিকে এর বেশী কিছুই দিতে পারে না।

প্রকৃতপক্ষে এই অন্যায়-অশান্তির জন্য দায়ী কে?

বর্তমানের এই রাজনৈতিক জটিলতা, সহিংসতা, হানাহানি ইত্যাদির পেছনে কোনো একক ব্যক্তি বা দল দায়ী নয়, প্রধানত দায়ী হোচ্ছে আমাদের সিস্টেম বা জীবনব্যবস্থা। সেটা কিভাবে? মানুষ প্রকৃতপক্ষে কাদামাটির ন্যায়। এই কাদামাটিকে যে ডাইসের মধ্যে রাখা হয় তা সেই ডাইসের আকৃতি ধারণ করে। সমাজব্যবস্থাও এমনই একটি ডাইস। কখনও কোন মানুষ মায়ের গর্ভ থেকে চোর হোয়ে, ডাকাত হোয়ে, অন্যায়কারী, দুর্নীতিবাজ হোয়ে জন্ম নেয় না। কিন্তু অন্যায় সমাজব্যবস্থার প্রভাবে ধীরে ধীরে তারা এমন অপরাধী চরিত্রের হোয়ে যায়। আমরা যখন বৃটিশ খ্রিস্টানদের গোলাম ছিলাম তখন থেকেই তারা আমাদের উপর আত্মাহীন, স্রষ্টাহীন বস্তুবাদী এক সিস্টেম চাপিয়ে দিয়েছে। ভৌগোলিকভাবে বর্তমানে স্বাধীন হোলেও অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও মানসিকভাবে এখনও তারাই আমাদের প্রভু। সেই থেকে আজও তাদের দেওয়া সিস্টেমে আমাদের সবকিছু চোলছে। এই সিস্টেমে বাস কোরে কেউ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভাল হতে পারবে না; কোনভাবে আইন শৃঙ্খলার উন্নতি ঘটানো যাবে না; ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট ইত্যাদি ঠেকানো যাবে না। বরং দিন দিন পরিস্থিতি আরও ভায়াবহ ও জটিল আকার ধারণ কোরবে। গণতন্ত্র নামক সেই বিষাক্ত, জীবনঘাতি সিস্টেমই সকল অশান্তির হোতা।

এই অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র অব্যর্থ উপায়: জাতীয়ভাবে আজ আমাদের এমন একটি সিস্টেম দরকার যা প্রয়োগ করলে শত চেষ্টা কোরেও কেউ হরতাল অবরোধের নামে সাধারণ মানুষের জান মালের উপর হামলা করতে পারবে না, আন্দোলনের নামে মানুষের রুজি রোজগারে- নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটাতে পারবে না, প্রকাশ্য দিবালোকে বিশ্বজিৎ এর মত নিরীহ পথচারীদের কুপিয়ে হত্যা করতে পারবে না। যে সিস্টেমে অসহায় নিরীহ মানুষদের জিম্মি করে নিজেদের দলীয় সার্থ বাস্তবায়ীত করার কোনো সুযোগ থাকবে না। এজন্য আমাদের এই প্রচলিত সিস্টেমকে পাল্টাতে হবে। প্রশ্ন হোল, এমন সিস্টেম কোথায় পাওয়া যাবে? এর উত্তর হোল, স্রষ্টা আল্লাহর দেওয়া দীনুল হক, সত্য জীবনব্যবস্থাই হোচ্ছে সেই সিস্টেম। মানুষ নামক এই প্রাণী সৃষ্টি কোরেছেন আল্লাহ, কাজেই কোন রাস্তায় বা সিস্টেম-এ সে সুখে থাকবে সেটা ভালো জানেন মহান আল্লাহ। আল্লাহর দেওয়া সিস্টেম অর্থাৎ প্রকৃত দীনুল হক, সত্য জীবনব্যবস্থা’ই হোচ্ছে সরল পথ, তাই এর নামই আল্লাহর রেখেছেন সেরাতুল মোস্তাকীম বা সহজ-সরল পথ।

বিষয়: রাজনীতি

১০৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File