জনগণ এখন্ও রাজনীতিকদের চিনল না!!! (আম গাছে কি কোন দিন তেঁতুল ধরে?)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ২২ নভেম্বর, ২০১৩, ০৮:০৮:১৪ রাত
বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতি পছন্দ করে না, এর কারণ তাদের জীবনকে বার বার অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দেয় আমাদের দেশে প্রচলিত হিংসার রাজনীতি। সম্প্রতি বাংলাদেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং এর পরিনতি চিন্তা করে দেশের আপামর জনতা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দিন কাটাচ্ছে। রাজনীতির বীভৎস রণাঙ্গণে ক্ষয়ক্ষতি যা হওয়ার সব তাদেরই হয়। রাজনৈতিক আলোচনা মানুষের উত্তেজনাকে ক্রমবর্ধিত করে, যা প্রায়শই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এজন্য হোটেলে, চায়ের দোকানে লেখাও থাকে, “এখানে রাজনৈতিক আলোচনা নিষিদ্ধ”। তবু সময় সময় রাজনীতিই দেশের মানুষের মূখ্য আলোচনার বিষয়। এদেশে যত অন্যায়-আবিচার, দুর্নীতি, হত্যা-গুম হয়ে থাকে তার সিংহভাগই হয়ে থাকে এই রাজনীতির খপ্পরে পড়েই। গত ৪২ বছরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন একটি বছর নেই যখন স্থিতিশীলতা বজায় ছিল। বছরের পর বছর এদেশের রাজনৈতিক মাঠ গরম হয়েই থাকে। হরতাল-বিক্ষোভ, কর্মসূচি, পাল্টা কর্মসূচি, জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর, দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে প্রতিপক্ষকে হত্যা, সাধারণ মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন ইত্যাদি দিয়েই রচিত হয়ে আসছে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস। একের পর এক সরকার বদল হলেও বস্তুত জনসাধারণের ভাগ্যের এক বিন্দুও পরিবর্তন হয়নি। নির্দলীয়, বহুদলীয়, তত্ত্বাবধায়ক, রাষ্ট্রপতি শাসিত, গণতন্ত্র বা সৈরতন্ত্র যেটাই আসুক না কেন মানুষ শান্তির কোন নমুনা আজ পর্যন্ত দেখতে পায় নি। বাধ্য হয়েই এদেশের কোটি কোটি মানুষকে মেনে নিতে হচ্ছে অশান্তির লাগামহীন বাড়-বাড়ন্তকে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বেড়ে চলছে অপরাধের মাত্রা। কিন্তু রাজনীতিকরা জনসাধারণকে আশা দিয়ে রেখেছেন যে তারাই মানুষকে শেষ পর্যন্ত এই অন্যায়-অশান্তি থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম। মানুষ বিকল্প পথ, উপায় না থাকায় তাদের কথাতেই ঈমান রাখে। তারা ভাবে- ভালো সরকার গঠন করতে পারলে বা ভালো লোক নির্বাচিত করতে পারলেই তারা এই অশান্তি থেকে মুক্তি পাবে। জাতি হিসেবে সমৃদ্ধশালী হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই? জনতার মনের গভীরে লুকায়িত এই যুক্তিগুলোর যথার্থতা নিরূপণের আজ বড়ই দরকার পড়েছে। মুক্তির সঠিক পথনির্দেশের আজ বড়ই প্রয়োজন। এটা আজ জাতির অস্তিত্বের প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। আসুন দেখে নেই- আমাদের আশার সাথে বাস্তবতার কতটুকু মিল রয়েছে। বাস্তবে শান্তির পথই বা কোনটা?
অনেক স্বপ্ন নিয়ে জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের:
নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালির প্রাণের বিনিময়ে, নারীর ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম। পাকিস্তানিদের পাশবিক নির্যাতনের ক্ষত সমস্ত শরীরে নিয়েই শুরু হয় বাংলাদেশের পথচলা। নাজুক অর্থনীতি, শিক্ষার অভাব, কর্মসংস্থানের অভাব, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের অবকাঠামোগত দুরবস্থা, পরাজিত দোসরদের চক্রান্ত ইত্যাদি নতুন নতুন সমস্যা জাতির সামনে হানা দিতে থাকে। বিশেষভাবে খাদ্যের সঙ্কট চরম আকার ধারণ করে। কিন্তু তাই বলে এদেশ থেমে থাকে নি। দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন থেমে থাকে নি। তারা ঠিকই দেশকে জানপ্রাণ দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছে। নিজে না খেয়ে থাকলেও তার ছেলেমেয়ে বা নাতি নাতনিদের যেন না খেয়ে থাকতে না হয়, অনিরাপত্তায় দিনানিপাত করতে না হয়, ফুটপাতে পশুদের সাথে জীবনযাপন করতে না হয় তার জন্য সদা সচেষ্ট থেকেছে। তারা নিজের হীন সার্থ বাস্তবায়নের সুবিধার্থে দেশের ক্ষতি হবে, পুরো জাতির ক্ষতি হবে এমন কোনো কাজ করে নি। তাদেরকে হাজারো লোভ দেখালেও তারা তা করত না। কারণ তারা এদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখত। এদেশকে সোনার দেশে পরিণত করা ছিল তাদের আত্মার চাওয়া।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি:
বাস্তবতা হলো এই স্বপ্ন তার দীর্ঘ পথচলার শুরুতেই হোঁচট খায়। দেশের কোটি কোটি মানুষ যে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলো এবং এই কাজের কাণ্ডারির দায়িত্ব রাজনীতিকদের দিয়েছিল সেই রাজনীতিই একের পর এক জনগণকে আশাহত করতে থাকে। স্বাধীন বাংলাদেশে পরাধীনতার ছায়া কেই বা দেখতে চায়। কিন্তু সেটাই যেন দেখতে হলো এই দেশের জনতাকে। তবে এবার তারা বাইরের কোনো জাতিগোষ্ঠীর কাছে নয় বরং নিজেদের কাণ্ডারি বলে যাদেরকে জ্ঞান করতেন সেই তাদেরই কাছে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে থাকে। একের পর এক সমস্যা জাতির সামনে কড়া নাড়তে থাকে। হত্যা, গুম, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ধর্ষণ ইত্যাদি ধাঁ ধাঁ করে বাড়াতে থাকে। রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি চরম অসহ্য আকার ধারণ করে। আর এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির অধিকাংশ কৃতিত্বের মালিকই এদেশের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলরা। আর রাষ্ট্রীয় এই অস্থিতিশীলতার মাঝে নতুন মাত্রা যোগ হয় বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সিস্টেম প্রতিষ্ঠার পর। জাতির সর্বশেষ যে সম্পদটুকু ছিল অর্থাৎ জাতীয় ঐক্য সেটাও হুমকির মুখে পতিত হয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই জাতীয় ঐক্য ভেঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ স্বার্থ বাস্তবায়নে বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে নিজেদের মাঝে হানাহানি মারামারি শুরু করে দেয়। কে কাকে পশ্চাতে ফেলে ক্ষমতা দখল করতে পারে তার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা শুরু হয়ে যায়। জাতি যেন কড়াই থেকে লাফ দিয়ে চুলায় পড়ে।
রাজনৈতিক সহিংসতার বীভৎস রূপ:
বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে গত প্রায় ২২ বছরে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান, পঙ্গু হন বা নিস্ব হন। গত ২২ বছরে প্রাণ হারিয়েছেন ২,৫১৯ জন মানুষ। আর একই সময়ে কম-বেশি আহত হয়েছেন দেড় লাখ মানুষ। রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন, হরতাল, অবরোধ, নির্বাচনী সহিংসতা এবং দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। দেখা গেছে, বিরোধী দলে থাকার সময় রাজনৈতিক দলগুলো হরতালসহ নানা ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলেও ক্ষমতায় যাওয়ার পর তারাই হরতালের বিরুদ্ধে বেশি সোচ্চার থাকেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে রাজনৈতিক সহিংসতায় মারা গেছেন ২,২৩৪ জন। এর মধ্যে ১৯৯৯ সালে ২৩৩, ২০০০ সালে ২০৮, ২০০১ সালে ৫০০, ২০০২ সালে ৩১০, ২০০৩ সালে ২০৩, ২০০৪ সালে ৫২, ২০০৫ সালে ৩৪, ২০০৬ সালে ১২০, ২০০৭ সালে সাতজন, ২০০৮ সালে চারজন, ২০০৯ সালে ৪২, ২০১০ সালে ৭৬, ২০১১ সালে ৫৮, ২০১২ সালে ৮৪ এবং ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৩০৪ জন নিহত হয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী (ইত্তেফাক, জনকণ্ঠ, ভোরের কাগজ ও সংবাদ) ১৯৯১ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সময়ে ২৮৫ জন মানুষ প্রাণ হারান। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে ১৮ জন, ১৯৯২ সালে ৪৫, ১৯৯৩ সালে ২০, ১৯৯৪ সালে ২৪, ১৯৯৫ সালে ২৯, ১৯৯৬ সালে ৪৯, ১৯৯৭ সালে ৬৯ এবং ১৯৯৮ সালে ৩১ জন প্রাণ হারান। শাসনামল ধরলে ১৯৯১ সালের জুন থেকে ১৯৯৬ সালের মে পর্যন্ত ১৭৪ জন, ১৯৯৬ সালের জুন থেকে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৯৮ জন, ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৮৭২ জন এবং বর্তমান সরকারের আমলে ৫৬৪ জন মারা গেছেন। তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও দেখা গেছে, গত ২২ বছরের মধ্যে প্রতিটি সরকারের শেষ বছরে, অর্থাৎ নির্বাচনী বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে ১৮ জন, ১৯৯৬ সালে ৪৯, ২০০১ সালে ৫০০, ২০০৬ সালে ১২০ (নির্বাচন হয় নি) এবং ২০১৩ সালের গত ১০ মাসে ৩০৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। গত ২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম রাজনৈতিক সহিংসতা হয়েছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে। ওই দুই বছরে ১১ জন মারা গেছেন। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের হিসাবে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি। অধিকার বলছে, শুধু ২০০১ সাল থেকে ২০১৩-এর আগস্ট পর্যন্ত সময়েই রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন তিন হাজার ৯২৬ জন এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৫৮ হাজার ২১১ জন। এর মধ্যে ২০০১ সালেই মারা গেছেন ৬৫৬ জন। [তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, ০৫-১১-২০১৩]
আওয়ামী লীগের শাসনামল:
২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মারা গেছেন ৫৬৪ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের দলীয় কোন্দলেই মারা গেছেন ১৩০ জন। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চলতি বছরের ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতালেই ১৫ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। এর আগে এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসের সহিংসতায় ২৮৯ জন মানুষ প্রাণ হারান। আসকের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৫ জন মারা গেছেন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে। আর ১৮ জন মারা গেছেন জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষে। হরতালের মধ্যে রাজনৈতিক সহিংসতায় মারা গেছেন ১৩৮ জন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে ১৩ জন এবং আওয়ামী লীগ ও জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে আরও পাঁচজন মারা গেছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলে ১৫ এবং বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ছয় জন মারা গেছেন। এর আগে ১৯৯৬ সালের জুনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। সে সময় থেকে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৯৮ জনের প্রাণহানী ঘটে। এর মধ্যে ২০০১ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে লতিফুর রহমানের তত্ত্বায়বধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। ওই দুই মাসে ১৩১ জনের প্রাণহানী ঘটে। [তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, ০৫-১১-২০১৩]
বিএনপির শাসনামল:
২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। সে সময় থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় ৮৭২ জন প্রাণ হারান। এর মধ্যে সন্ত্রাসী হামলায় আওয়ামী লীগের ২০০ নেতা-কর্মী মারা যান। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় মারা যান ২৪ জন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে ৭৫ জন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ৭৫ জন, বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষে ১০ জন ও আওয়ামী লীগের কোন্দলে ১৪ জন মারা যান। বাকিরা হরতাল ও অবরোধসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে মারা গেছেন। সেবার ক্ষমতার শেষ সময়ে ২০০৬ সালে ১২০ জন প্রাণ হারান। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারান ৩৬ জন। হরতাল ও অবরোধে প্রাণ হারান ৩৫ জন। এছাড়া ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালের মে পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে রাজনৈতিক সংঘর্ষে ১৭৪ জন প্রাণ হারান। [তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, ০৫-১১-২০১৩]
আমজনতার একই ভুলের পুনরাবর্তী ঘটে চলেছে:
বছরের পর বছর রাজনীতিকদের হাতে জিম্মি হয়ে থেকেছে দেশের আপামর জনতা। রাজনীতিকরা যত সহিংসতা, হামলা-মামলা, হরতাল বা অবরোধ করে থাকেন তাতে মূলত ক্ষতি যা হয় তা এই সাধারণ জনগণেরই হয়। উপর্যুপরি হরতাল-অবরোধ ইত্যাদি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যখন দেশের অর্থনীতি নাজুক হয়ে পড়ে তখন সাধারণ এই খেটে খাওয়া মানুষদেরকেই হারভাঙ্গা খাটুনি করে, উপোস করে কোনো রকমে বেঁচে থাকতে হয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদার কথা সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও সেগুলো মূলত এদেশে কোনো আলোচ্য বিষয় নয়, বরং এদেশে সংবিধানের সম্পর্কে আলোচনা আসে তখনই যখন ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকার জন্য সংবিধানের দরকার পড়ে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থেকেছে তারাই আমজনতার স্বার্থের আগে নিজেদের দলীয় স্বার্থকে বড় করে দেখেছে। এদেশে যত হরতাল অবরোধ হয় তার শতকরা নব্বই ভাগই হয়ে থাকে দলীয় কোনো দাবি দাওয়া বাস্তবায়নের দাবিতে। কিন্তু রাজনীতিকদের কাছে জনগণের যে হাজারো দাবি দাওয়া থাকে সেগুলো বরাবরই উপেক্ষিতই থেকে যায়। এভাবেই জনতার লাশের উপর দিয়ে একের পর এক সরকার বদল হলেও জনগণের কোনো ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। সরকারি দলের পাঁচ বছরের লাগামহীন দুর্নীতি আর ক্ষমতাপ্রীতির প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয় অপরদলকে ক্ষমতায় বসানোর মাধ্যমে। কিন্তু ক্ষমতায় বসেই তারা পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ উৎসাহ-উদ্দীপনায় লুট-পাট, দুর্নীতি, ক্ষমতার দম্ভ, বিরোধী শক্তিকে দমন ইত্যাদি শুরু করে দেয়। অল্প কিছুদিনের মাঝেই তারাও জনগণের সমর্থন হারায়। জনতা আবারো প্রস্তুতি নেয় অপরদলকে ক্ষমতায় বসানোর। এর বাইরে তারা অন্য কোনো কিছু চিন্তা করতে পারে না। তাদের দৃষ্টিকে এই বেড়াজালের ভিতরে আটকে রাখা হয়। ফলে বারবার নিজেদের হাতেই নির্বাচিত করতে হয় যে- ‘সামনের পাঁচ বছর তারা কোন দলের দুর্নীতি, লুটপাট, ক্ষমতার অপব্যবহার বা ক্ষমতালিপ্সা প্রত্যক্ষ করবে আর কোন দলের হরতাল, অবরোধ, ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও, বোমাবাজি ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করবে। নিজের হাতেই এভাবে নিজেদের ভাগ্যকে বরণ করে নিতে হয়। জেনে বুঝেই একই ভুল বারবার করা হয়। এই ক্ষমতা পরিবর্তনের চক্র থেকে তারা বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেন না বা বাইরে বেরিয়ে আসার কোনো রাস্তা দেখতে পান না। (চলবে......)
বিষয়: রাজনীতি
১১০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন