বর্তমান প্রেক্ষাপটে জান্নাতি ফেরকার কাজ -পর্বঃ ০১

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ১৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০৭:৪৯:০৬ সন্ধ্যা

রহমানুর রহীম সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু আল্লাহ পৃথিবীর মানুষের জন্য, সম্পূর্ণ মানবজাতির জন্য যে জীবনব্যবস্থা তাঁর সর্বশেষ রসুল মোহাম্মদের (দHappy মাধ্যমে দিলেন তা তিনি কোরলেন অতি সহজ, অতি সরল, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না কারণ তা কোরানেও উল্লেখ রোয়েছে। (সুরা আল-ফাতেহা- ০৫)। একমাত্র তাঁকেই জীবন বিধাতা বোলে বিশ্বাস ও গ্রহণ করা এবং মোহাম্মদের (দHappy মাধ্যমে যে জীবন-ব্যবস্থা, দীন পাঠানো হোয়েছে তা সমগ্র জীবনে প্রতিষ্ঠা করা বিশেষ কোরে জাতীয় জীবনে, ব্যস। এইটুকুই তিনি চান, এইটুকুই কোরলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন অন্যান্য ব্যক্তিগত গোনাহের মাফ এবং জান্নাতের। এমনকি চুরি এবং ব্যভিচারের মতো গুনাহও তাকে জান্নাত থেকে ফেরাতে পারবে না। একেই তিনি বোলছেন সেরাতুল মোস্তাকীম, এইটুকুই তিনি আদম (আHappy থেকে মোহাম্মদ (দHappy পর্যন্ত চেয়ে আসছেন। তাই একে তিনি বোলছেন দীনুল কাইয়্যেমা। যার সরাসরি অর্থ হোচ্ছে যে, দীন জীবনব্যবস্থা, কায়েম, চিরস্থায়ী, সনাতন। আল্লাহর এই একমাত্র দাবি এই উপমহাদেশেও তাঁর পূর্ববর্তী নবীদের (আHappy মাধ্যমে এসেছে। কারণ তিনি পৃথিবীর কোন মানব গোষ্ঠীকে শান্তির পথ, ব্যবস্থা দিতে ভুল করেন নি (কোরান-সুরা আল-ফাতির ২৪)। কারণ ভুল-ত্রুটি তাঁর জন্য অসম্ভব। এই উপ-মহাদেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের তারা কোন ধর্মের অনুসারী প্রশ্ন কোরলে তারা জবাব দেন-সনাতন ধর্ম। এই সনাতন ধর্ম কি তা আল্লাহ কোর’আনে আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন। বোলছেন- অকপট, অকৃত্রিম হৃদয়ে, একাগ্র লক্ষ্যে (হানিফ) তাঁর এবাদত করা, সালাহ কায়েম করা ও যাকাত দেয়া হোচ্ছে দীনুল কাইয়্যেমা, চিরন্তন, সনাতন দীন। এবং বোলছেন এর বেশী তো আমি আদেশ কোরিনি (কোরান-সুরা আল-বাইয়্যেনাহ ০৫)। তারপর এই দীনুল কাইয়্যেমা সম্বন্ধে অন্যত্র উল্লেখ কোরতে যেয়ে তিনি একাগ্র লক্ষ্য ও (হানিফ) শব্দটা আবার ব্যবহার কোরেছেন। বোলেছেন, “তোমাদের মুখ একাগ্র লক্ষ্যে দীনের প্রতি নিবদ্ধ রাখ, ঐ হোচ্ছে দীনুল কাইয়্যেমা (কোরান-সুরা আর-রুম ৩০)।” তারপর আবার বোলছেন, “তোমাদের মুখ একাগ্র লক্ষ্যে দীনুল কাইয়্যেমার প্রতি নিবদ্ধ রাখ (কোরান-সুরা আর-রূম ৪৩)”। দেখা যাচ্ছে দীনুল কাইয়্যেমাকে বোলতে যেয়ে আল্লাহ দু’টি শব্দ বারবার ব্যবহার কোরেছেন। একটি মুখ, অন্যটি হানিফ। হানিফ শব্দের অর্থ হোল মনকে অন্য কোন দিকে বিক্ষিপ্ত হোতে না দিয়ে একাগ্র লক্ষ্যে কোনো কিছু করা। এগুলিকে একত্র কোরলে পাওয়া যাচ্ছে- আল্লাহ বোলছেন তোমরা মনকে অন্য কোন দিকে বিক্ষিপ্ত হোতে না দিয়ে একাগ্র লক্ষ্যে দীনুল কাইয়্যেমার দিকে তোমাদের মুখ নিবদ্ধ রাখ, এবং দীনুল কাইয়্যেমা হোচ্ছে-

(ক) একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর দেয়া দীন (তওহীদ), (খ) সালাত (নামাজ) কায়েম করা ও (গ) যাকাত দেয়া। কত সংক্ষিপ্ত, কত সহজ, কত সরল। আর এই সহজ-সরল পথই হলো সেরাতুল মোস্তাকীম। এই সরল, সহজ সংক্ষিপ্ত দীনের দিকেই আল্লাহ আমাদের মুখ ও মন একাগ্র লক্ষ্যে স্থির রাখতে বোলছেন এই জন্য যে, তাহোলে জাতির মধ্যে অতিরিক্ততা আসবে না, মতভেদ হোয়ে ফতোয়াবাজী হোয়ে জাতি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হোয়ে যাবে না, ধ্বংস হোয়ে যাবে না, ঐক্য অটুট থাকবে।

দীনুল কাইয়্যেমা এবং সেরাতুল মোস্তাকীম মাত্র তিনটি ব্যাপারের সমষ্টি-তওহীদ, সালাত আর যাকাত। এ কথা কোর’আন এবং হাদীস থেকে প্রমাণিত। কত সহজ। কিন্তু এই সহজ কথাই আজকের এই মোসলেম নামধারী জাতির কাছে দুর্বোধ্য। কারণ মানুষের মন যখন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, ক্ষুদ্রতম ব্যাপারে, জটিল ব্যাপারে জড়িয়ে যায়, তখন সে আর বিরাট সহজ-সরল সত্য দেখতে পায় না। যেমন একটি পিঁপড়া একটা পাহাড় বা পর্বত সমগ্রভাবে দেখতে পায় না। এই জন্যই বোধহয় সর্বজ্ঞানী স্বয়ং, আল্লাহ এই দীনুল কাইয়্যেমার মতো, সেরাতুল মোস্তাকীমের মতো সহজ-সরল ব্যাপার সম্বন্ধে বোলছেন- এই হোচ্ছে দীনুল কাইয়্যেমা, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা বোঝে না (রূম- ৩০)। কোর’আনে দীনুল কাইয়্যেমাকে তিনটি ব্যাপারের সমষ্টি হিসাবে পেলেও হাদীসে পাচ্ছি, আল্লাহর রসুল (দHappy একে আরও সহজ কোরে একেবারে একটিমাত্র ব্যাপারে সীমাবদ্ধ কোরে ফেলেছেন- সেটা হোচ্ছে তওহীদ। অবশ্য আজকের দুনিয়ায় যে ব্যক্তিগত তওহীদ চালু আছে, অবশ্যই সে তওহীদ নয়। আল্লাহ যে তওহীদ আমাদের কাছে চান, সেই তওহীদ, জীবনের সর্বস্তরে বিশেষ কোরে জাতীয় জীবনের তওহীদ। এ ব্যাপারে পেছনে বোলে এসেছি। তবে কি আল্লাহর রসুল (দHappy কোর’আনের সীমা অতিক্রম কোরে দীনুল কাইয়্যেমাকে তিনটির বদলে একটা ব্যাপারে সীমাবদ্ধ কোরেছেন? অসম্ভব! কারণ কোন নবীই তা পারেন না। তার উপর মহানবী (দHappy ছিলেন জীবন্ত কোর’আন। এর অর্থ হোচ্ছে রহমানুর রহীম আল্লাহর কাছ থেকে অনুমতি পেয়েই তিনি ঐ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বোলেছেন- নিশ্চয়ই আল্লাহর হক তাঁর বান্দার উপর এই যে, সে শেরক কোরবে না এবং আল্লাহর উপর বান্দার এই হক, যে শেরক কোরবে না তাকে তিনি কোন শাস্তি দেবেন না (মু’য়াজ (রাHappy থেকে- বোখারী, মোসলেম, মেশকাত)। এই সহজ-সরল পথ সেরাতুল মোস্তাকীম, দীনুল কাইয়্যেমা থেকে দীনকে কোথায় টেনে নিয়ে আসা হোয়েছে। ফলে জাতি আর আজ মোসলেম নেই, অতি মোসলেম হোয়ে গেছে। এই জাতি আজ আর রসুলাল্লাহর (দHappy সৃষ্ট শুধু মোসলেম হোয়ে খুশি নয় সে অতি মোসলেমে পরিণত হোয়েছে। এই বাড়াবাড়ি, সীমালঙ্ঘন আল্লাহ ও রসুল (দHappy বহুবার নিষেধ করা সত্ত্বেও তা করা হোয়েছে খুব সওয়াবের কাজ মনে কোরে। এই ধ্বংসকারী প্রবণতা আজকের নয়, স্বয়ং নবী করিমের (দHappy সময়ও ছিলো। রমযান মাসে স্ত্রীদের চুমু দেওয়া ও সফরে রোজা না রাখার অনুমতি এই জীবন-ব্যবস্থায় আছে বোলেই স্বয়ং বিশ্বনবী (দHappy তাই কোরতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু লোক গজালেন যারা তাকওয়ায় স্বয়ং আল্লাহর রসুলের (দHappy চেয়েও ওপরে যেতে চাইলেন। তারা রমজান মাসে তাদের স্ত্রীদের চুমু দেয়া থেকে বিরত হলেন এবং সফরে বের হলেও রোজা রাখতে লাগলেন। এই খবর শুনে মহানবী (দHappy রাগান্বিত হোয়ে মসজিদে যেয়ে মিম্বরে উঠে বোললেন-“তাদের কি অবস্থা হবে যারা আমি নিজে যা কোরি তা থেকে বিরত হোয়েছে? আল্লাহর কসম! তাদের চেয়ে আমি আল্লাহ সম্বন্ধে বেশি জানি, তাদের চেয়ে আমি আল্লাহকে বেশি ভয় কোরি (হাদীস-আয়েশা (রাHappy থেকে, বোখারী, মোসলেম, মেশকাত)।” বিশ্বনবীর (দHappy সময়ের ঐ অতি মোসলেমদের সঙ্গে আজকের দুনিয়ার অতি মোসলেমদের তফাৎ এই যে, ঐ সময়ের ঐ অতি মোসলেমরা শুধুমাত্র স্ত্রীদের চুমা আর সফরের রোজার ব্যাপারে অতি মোসলেম হবার চেষ্টা কোরেছিলেন, কিন্তু নিজেরা প্রকৃত তওহীদে বিশ্বাসী অর্থাৎ মো’মেন ছিলেন, দুর্ধর্ষ যোদ্ধা ছিলেন এবং বিশ্বনবীর (দHappy তাড়া খেয়ে নিশ্চয়ই বাড়াবাড়ি ত্যাগ কোরে তওবা কোরে আবার সীমার মধ্যে ফিরে গিয়েছিলেন। আর আজকের অতি মোসলেমরা যোদ্ধা তো ননই এবং ঐ দুই ব্যাপার ছাড়াও আরও হাজারো খুঁটিনাটিতে অতি মোসলেম, কিন্তু ডুবে আছেন খাঁিট শেরকের মধ্যে এবং তাদের তাড়া দিয়ে সীমার মধ্যে ফিরিয়ে নেবার কেউ নেই। তাদের একথা বুঝিয়ে দেয়ার কেউ নেই যে, যে তওহীদে বিশ্বাস আনলে অর্থাৎ জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে একমাত্র আল্লাহর দেয়া জীবন-বিধান, দীনকে প্রতিষ্ঠা কোরলে ছোটখাট ব্যাপার বাদ দেন, চুরি ও ব্যভিচারের মত কবীরা গোনাহ কোরেও মানুষ জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে যাবে, জান্নাতে প্রবেশ কোরবে, সেই তওহীদকে বাদ দিয়ে হাজারো তুচ্ছ অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার নিয়ে অতি মোসলেম হোয়ে কোনো লাভ হবে না। শুধু অতিরিক্ততার, আল্লাহ রসুলের (দHappy দেয়া সীমালঙ্ঘনের গোনাহ করা হবে। কে এদের বোলে দেবে যে যাদের মধ্যে তওহীদই নেই (কারণ শুধু ব্যক্তিগত তওহীদ আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় তওহীদ নয়) যাদের পায়ের তলে মাটিই নেই, তাদের অত কষ্ট কোরে নিজেদের একমাস না খাইয়ে রেখে, গভীর রাত্রে ঘুম নষ্ট কোরে কোনো লাভ নেই, মহানবীর (দHappy হাদীস মোতাবেকই নেই। স্মরণ কোরুন আল্লাহর রসুলের (দHappy সেই হাদীসটির কথা আরেকবার। যেটায় তিনি একটি সরল-সোজা লাইন থেকে ডান দিকে কতকগুলি এবং বাম দিকে কতকগুলি লাইন টানলেন এবং বোললেন-শয়তান এই রাস্তাগুলিতে ডাকতে থাকবে। এই বোলে তিনি কোর’আন থেকে এই আয়াত পড়লেন- নিশ্চয়ই এই হোচ্ছে আমার (আল্লাহর) সহজ-সরল পথ সেরাতুল মোস্তাকীম। সুতরাং এই পথেই চলো, অন্য পথে চোলো না, (অন্যপথে) চোললে তা তোমাদের তাঁর (আল্লাহর) পথ থেকে (চতুর্দিকে) বিচ্ছিন্ন কোরে দেবে। এইভাবে তিনি (আল্লাহ) নির্দেশ দিচ্ছেন যেন তোমরা সাবধানে পথ চোলতে পার (আল-আনাম -১৫৪) এবং হাদীস-আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাHappy থেকে-আহমদ, নেসায়ী, মেশকাত)। আল্লাহ ও তাঁর রসুলের (দHappy সরাসরি আদেশকে অমান্য কোরে সেরাতুল মোস্তাকীমকে ত্যাগ কোরে এই জাতি আজ অতি মোসলেম হোয়ে শতধা বিচ্ছিন্ন হোয়ে গেছে।

বিষয়: বিবিধ

৯৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File