কি বীভৎস! ভয়াবহ! কে রুখবে এই সব নিষ্ঠুরতা?

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ০৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:০১:৫৯ দুপুর

এক--ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার আগে মা-বাবাকে ছয়পাতা ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় ঐশী: দায় স্বীকার।

দুই-- লোহাগড়ায় মধ্যযুগীয় কায়দায় শিশু সন্তানকে হত্যা, ঘাতক পিতা আটক।

তিন-- পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় প্রেমিকার প্ররোচণায় নিজ পিতাকে হত্যা।

চার-- ধর্ষক পিতাকে হত্যা করল ধর্ষিতা মেয়ে!

পাঁচ-- পারিবারিক কলহের জের ধরে ২ সন্তানকে হত্যা করল মা।

ছয়-- চৌদ্দগ্রামে শিশু সন্তানকে হত্যা করল পাষণ্ড পিতা।

সাত-- বড় ভাইকে হত্যা করল ছোট দুই ভাই।

আট-- বাবুগঞ্জে স্ত্রী-সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করল স্বামী।

নয়-- বড় ভাইকে হত্যা করে ২২ বছর কারাভোগের পর এবার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ও ছেলেকে খুন।

দশ-- শাজাহানপুরে ভাগ্নে খুন করল মামাকে।

প্রতিনিয়ত ঘটে চলা হাজারো ঘটনার মাঝে মাত্র ১০ টি ঘটনা এখানে নমুনাস্বরূপ উল্লেখ করলাম। অতীতে আমাদের দেশে এই জাতীয় ঘটনাগুলো ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে প্রতিনিয়তই কোথাও না কোথাও ঘটে চলেছে এই অমানবিক নৃশংসতা। পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হল মায়ের কোল ও তার পরিবার। জন্মের পর সর্বপ্রথম একটি শিশু তার মা-বাবাকে চেনে। মা-বাবার ভালোবাসাই হচ্ছে শিশুর জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। রক্তের বন্ধন এমনই এক বন্ধন যা শত বাধা-বিঘ্ন, বিপদ-আপদেও ছিন্ন হবার নয়। রাষ্ট্র, সমাজ, বন্ধু-বান্ধব সবাই যাকে প্রত্যাখ্যান করে সেখানে পরিবার তাকে বুকে তুলে নেয়। কিন্তু আজ যেন সকল নিয়ম-নীতি, দয়া-মায়া, ভালোবাসা, মানবতার কবর রচনা হয়েছে। মানুষ মানুষের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে। শুধু রাষ্ট্র, সমাজ, বা বন্ধু-বান্ধব নয় এক সময়ের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল পরিবারই যেন মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিতে পরিণত হয়েছে। মায়ের কাছে ছেলে নিরাপদ নয়, ছেলের কাছে মা নিরাপদ নয়, ভাই ভাইয়ের বড় শত্রু, পিতার কু-লালসা থেকে বাঁচতে পারছে না আপন যুবতী মেয়ে, ছেলের সামান্য স্বার্থের বেদিতে বলি হোচ্ছে আপন জন্মদাতা পিতা। এটা কি সভ্যতা? এটা কি মানব সমাজ? কিছু দিন আগেও প্রতিটি পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠদেরকে যে সম্মান করা হত তা অতুলনীয়। কেবল সম্মানই করা হত না, প্রত্যেকে সেই কর্তাব্যক্তির হুকুম পালন করতো। উপার্জনের সামর্থ্য না থাকলেও মুরব্বিরাই পরিবারের কর্তা ছিলেন, যে কোন সিদ্ধান্ত তারাই নিতেন। মা স্বাভাবিকভাবেই সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ ও বড় আশ্রয় ছিল। মা মারা গেলে বাবার কাছে আশ্রয় নিত সন্তান। মা-বাবার অবর্তমানে বড় ভাই বাবার ভূমিকা নিত, ছোট ভাই-বোনদেরকে সন্তানের মতো ছায়া দিয়ে লালন-পালন করতো। বড় বোনের ভূমিকা ছিল মায়ের মতো। মায়ের মতো আদর দিয়ে, সোহাগ দিয়ে ছোট ভাই-বোনদের আগলে রাখত। এটাই ছিল পরিবারের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু কেন বর্তমানে রাষ্ট্র, সমাজ এবং সর্বশেষে পরিবার পর্যন্ত মানবতাকে কবর দিয়ে, বস্তুবাদী ভাবধারায় প্রবেশ করল? কেন আজকে পরিবারও নিরাপদ আশ্রয় নয়?

এর কারণ হল পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী স্রষ্টাহীন-আত্মাহীন সভ্যতা, আল্লাহর রসুল মোহাম্মদ (সাঃ) যাকে দাজ্জাল বোলে সতর্ক কোরে দিয়েছিলেন। আমরা নিজেদেরকে মুমিন, মুসলিম এমনকি উম্মতি মোহাম্মদী হিসাবে দাবি করে থাকি, কিন্তু হাস্যকর এবং দুঃখজনক বিষয় হল আমরা আল্লাহর প্রদত্ত তওহীদভিত্তিক দীনকে জাতীয় জীবন থেকে প্রত্যাখ্যান কোরে জাতীয় জীবনে দাজ্জাল তথা ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতার তৈরি সিস্টেমকে প্রতিষ্ঠা করে রেখেছি। ফল হয়েছে এই যে মানুষ আজকে আত্মা বিবর্জিত, একটা দেহসর্বস্ব প্রাণীতে পরিণত হয়েছে যার কাছে মানবতার কোন মূল্য নেই, ন্যায়-অন্যায়বোধের কোন মূল্য নেই, মানুষ হয়ে পড়েছে জন্তু-জানোয়ারের মতো কেবল দেহসর্বস্ব, ভোগসর্বস্ব প্রাণী। সত্যবাদীতা, আমানতদারী, পরোপকার, মেহমানদারী, উদারতা, ত্যাগ, দানশীলতা, ইত্যাদি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষের চরিত্র থেকে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। মানুষ আজ পশুর মত কেবল আহার-বিহার-সম্ভোগে লিপ্ত রয়েছে। আরও বেশি অর্থ উপার্জন এবং আরও বেশি ভোগ করাই এখন মানবজাতির উদ্দেশ্য, স্বার্থকতা ও পরম প্রাপ্তিতে পরিণত হয়েছে। এই উপার্জনের পথে নীতি-নৈতিকতার কোন বালাই থাকে না, তাই খুব সহজেই মানুষের সদগুণাবলী অসদগুণাবলী দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে, যা প্রচলিত সিস্টেমের অন্যতম কুফল। ধারণা করা হয়েছিল যে জাতীয় জীবনে তথা ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতাকে গ্রহণ করে নিলেও ব্যক্তিগত জীবনে মানুষ স্রষ্টার ভয়ে, ধর্মের অনুশাসন মেনে চলবে ফলে তারা ব্যক্তিগতভাবে ভাল হয়ে চলার প্রয়াস পাবে। কিন্তু বাস্তবতা তা বলছে না। জাতীয় জীবনের দুর্নীতি, অসততা, অস্থিরতা, অন্যায়-অবিচার মানুষের ব্যক্তিগত জীবনকেও প্রভাবিত করে ফেলছে। ফলে হাজারো চেষ্টা করেও মানুষ ব্যক্তিগত এবং পারিবারিকভাবে ভালো হয়ে থাকতে পারছে না। ক্রমাগতভাবে ব্যক্তিজীবন থেকেও ধর্ম বিদায় নিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই দেখা যায় মসজিদ-মন্দিরের ভেতর থেকেও জুতো চুরি হচ্ছে, মাইক, ফ্যান ইত্যাদিও সেখানে নিরাপদ নয়। ছিনতাই, অপহরণ, হত্যা, গুম, ডাকাতি, ধর্ষণসহ সর্বরকম অপরাধে আমাদের এই সমাজ কানায় কানায় পূর্ণ। রাষ্ট্র, সমাজ এবং পরিবার কোনটাই এখন বসবাসের নিরাপদ জায়গা নয়। এই অনিরাপদ পরিবেশ প্রচলিত দাজ্জালীয় সিস্টেমের বিষময় ফল। এই দাজ্জাল তথা ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতার তৈরি তন্ত্রমন্ত্র মানবজাতি যখন থেকে মেনে নিয়েছে তখন থেকেই তাদের ধ্বংসের পর্ব শুরু হয়েছিল। আজকে দাজ্জাল তার শৈশব, কৈশোর পার হয়ে যৌবনে উপনীত সেই সাথে মানবজাতিও তাদের ধ্বংসের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছেছে। তাই আজকে যত দ্রুত সম্ভব মানবজাতিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি এখনও এই বস্তুবাদী সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত রাখবে নাকি তাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান কোরে স্রষ্টার দেওয়া ভারসাম্যযুক্ত সিস্টেমকে সমষ্টিগত জীবনে প্রয়োগ করে শান্তিতে বসবাস করবে। তবে যে কথা না বললেই নয় তাহল সময় বেশি নেই।

বিষয়: বিবিধ

১১৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File