মোসলেম জাতি ধ্বংসের কারণ
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ০৮ নভেম্বর, ২০১৩, ০৪:৫৫:৫৪ বিকাল
কোর’আনে বর্ণিত বনি এসরাইলদের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করার মাধ্যমে আমার এই লেখাটি শুরু কোরতে চাই। ঘটনাটি হলো আল্লাহ বনী এসরাইলদের একটি গরু কোরবানি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই যদি তারা আল্লাহর হুকুম মোতাবেক একটি ভালো গরু কোরবানি কোরে দিতো তাহলেই সব কাজ শেষ হোয়ে যেত। কারণ কোরবানির গরুটা কেমন হবে আল্লাহ তার কোনো শর্ত উল্লেখ করেন নি। কিন্তু আল্লাহ কোরানে বোলছেন- বনী এসরাইল তা করেনি। তারা মুসা (আঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহকে প্রশ্ন কোরতে লাগলো- গরুটার বয়স কত হবে, গায়ের রং কি হবে, সেটা জমি চাষের জন্য শিক্ষিত কিনা, ওটার গায়ে কোন খুঁত থাকতে পারবে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি (কোর’আন- সুরা আল বাকারা ৬৭-৭১)। তারা প্রশ্ন কোরে যেতে লাগলো আর আল্লাহ একটার পর একটা উত্তর দিয়ে যেতে থাকলেন। তারপর যখন প্রশ্ন করার মত আর কিছুই রইলো না তখন স্বভাবতঃই ঠিক অমন একটি গরু পাওয়া দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো। একটা সহজ সরল আদেশ “একটা গরু কোরবানি কর” এটাকে খুচিয়ে খুচিয়ে এমন কঠিন কোরে ফেলা হোল যে, ঐ আদেশ পালন করা অসম্ভব হোয়ে দাঁড়াল। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে আমাদের ক্ষেত্রেও। বনী এসরাইল আর আমাদের মাঝে তেমন কোন পার্থক্য নেই। হ্যাঁ আছে, একটি ব্যাপারে আছে, আর তাহোল বনী এসরাইল ৭২ ফেরকায় বিভক্ত হোয়েছিল, আর এই মোসলেম নামধারী জাতিটি তাদের পাণ্ডিত্য জাহির কোরতে গিয়ে ৭৩ ফেরকায় বিভক্ত হোয়েছে ( হাদীস আবদুল্লাহ বিন আমর (রা থেকে তিরমিযি, মেশকাত )।
আদম (আ থেকে শুরু কোরে শেষনবী (দ পর্য্যন্ত আল্লাহ যে জীবন বিধান মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন, স্থান, কাল ভেদে সেগুলোর নিয়ম-কানুনের মধ্যে প্রভেদ থাকলেও সর্বক্ষণ ভিত্তি থেকেছে একটি মাত্র। সেটা হোচ্ছে একেশ্বরবাদ, তওহীদ, একমাত্র প্রভু, একমাত্র বিধাতা (বিধানদাতা) আল্লাহ। যার আদেশ নির্দেশ, আইন-কানুন ছাড়া অন্য কারো আদেশ, নির্দেশ, আইন-কানুন কিছুই না মানা। একেই আল্লাহ কোর’আনে বোলছেন দীনুল কাইয়্যেমা। আল্লাহ মানুষের কাছে এইটুকুই মাত্র চান। কারণ তিনি জানেন যে, মানুষ যদি সমষ্টিগতভাবে তিনি ছাড়া অন্য কারো তৈরী আইন কানুন না মানে, শুধু তারই আইন-কানুন মানে তবে শয়তান তার ঘোষিত উদ্দেশ্য অর্থাৎ মানুষকে দিয়ে অশান্তি, অন্যায় আর রক্তপাত অর্জনে ব্যর্থ হবে এবং মানুষ সুবিচারে, শান্তিতে (এসলামে) পৃথিবীতে বসবাস কোরতে পারবে- অর্থাৎ আল্লাহ যা চান। কত সহজ। কাইয়্যেমা শব্দটা এসেছে কায়েম থেকে যার অর্থ চিরন্তন, শ্বাশ্বত, সনাতন। আল্লাহ এই দীনুল কাইয়্যেমার কথা বোলে বোলছেন- এর বেশী তো আমি আদেশ করিনি ( কোর’আন সুরা আল বাইয়েনাহ্ - ৫)। ‘এর বেশী তো আমি আদেশ করিনি’ তিনি বোলছেন এই জন্য যে, তিনি জানেন যে, ঐটুকু করলেই অর্থাৎ তাঁর বিধান ছাড়া অন্য কোন বিধান মানুষ না মানলেই মানব জাতির মধ্যে পূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। এই সামান্য দাবীটুকুই তিনি মানুষের কাছে আদম থেকে আজ পর্য্যন্ত কোরে আসছেন। পূর্ববর্তী বিকৃত জীবন-ব্যবস্থাগুলিতেও আল্লাহর দাবী ছিলো ঐ সহজ সরল দাবী- দীনুল কাইয়্যেমা, তওহীদ। ভারতীয় ধর্মের অনুসারীদের তারা কোন ধর্মে বিশ্বাসী জিজ্ঞাসা কোরলে তার জবাব দেবেন সনাতন ধর্ম। সনাতন এবং কাইয়্যেমা একার্থবোধক- যা চিরদিন প্রবহমান, চিরন্তন ও শাশ্বত, এবং তা ঐ তওহীদ। এর গুরুত্ব এত বেশী যে একে আল্লাহ আমাদের জন্য শুধু প্রতি সালাতে নয় প্রতি রাকাতে অবশ্য কোরে দিয়েছেন সুরা ফাতেহার মধ্যে। “আমাদের সেরাতুল মোস্তাকীমে চালাও” মোস্তাকীম অর্থ সহজ, সরল ও শ্বাশ্বত।
একটি জাতির মধ্যে চালাক, বোকা, শিক্ষিত, মেধাবী ইত্যাদি সব রকম লোকই থাকবে। তাই আল্লাহ ও তাঁর রসুল যে জাতি সৃষ্টি কোরলেন তার ভিত্তি কোরলেন অতি সহজ ও সরল- তওহীদ, একমাত্র প্রভু হিসাবে তাকেই স্বীকার করে নেওয়া। এরই নাম সেরাতাল মোস্তাকীম। আর সহজ বোলেই বিশ্বনবীর সৃষ্ট অত্যন্ত অশিক্ষিত জাতিটি, যার মধ্যে লেখাপড়া জানা লোকের সংখ্যা হাতে গোনা যেতো তারাও ভিত্তি ও লক্ষ্য পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছিলেন এবং তা থেকে চ্যুত হননি। এতে করে তাদের মধ্যে যে সীসাঢালা প্রাচীরের মত একতা সৃষ্টি হোয়েছিল তার সামনে অর্ধ পৃথিবী মাথা নোয়াতে বাধ্য হোয়েছিল। এভাবে চোলেছে ৬০/৭০ বছর যে কথা আল্লাহর রসুল ভবিষ্যদ্বাণী কোরেছিলেন যে তাঁর উম্মাহর আয়ু। বাস্তবিকই ৬০/৭০ বছর পর থেকেই শুরু হোল এই জাতির মৃত্যুর পর্ব, ধ্বংসের পর্ব। এই জাতির মধ্যেও সৃষ্টি হোল পুরোহিত, আলেম- মাওলানা, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, পীর, মাশায়েখ ইত্যাদি শত শত ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণীর। অতি বিশ্লেষণের বিষময় ফলে ঐ দীনুল কাইয়্যেমা, সেরাতুল মোস্তাকীম হোয়ে গেল অত্যন্ত জটিল, দুর্বোধ্য এক জীবন বিধান, যেটা সম্পূর্ণ শিক্ষা করাই মানুষের এক জীবনের মধ্যে সম্ভব নয়- সেটাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তো বহু দূরের কথা। ফকিহ-মোফাস্সিরদের সূক্ষতিসূক্ষ বিশ্লেষণের ফলে জাতির মধ্যে ভয়াবহ বিভেদ সৃষ্টি হোয়ে, বিভিন্ন মযহাব ও ফেরকা সৃষ্টি হোয়ে যে অনৈক্য সৃষ্টি হলো তার ফলে পুনরায় একতাবদ্ধ হোয়ে সংগ্রাম করার সম্ভাবনাও শেষ হোয়ে গেলো।
সেরাতুল মোস্তাকীমের সহজতার, সরলতার মহা গুরুত্ব উপলব্ধি কোরে রসুলাল্লাহ (দ এক হাদীসে বোললেন- দীন সহজ, সরল (সেরাতুল মোস্তাকীম) একে নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি কোরবে তারা পরাজিত হবে। অন্য হাদীসে বোললেন, জাতি ধ্বংস হোয়ে যাবে ( হাদীস - আবু হোরায়রা (রা থেকে - মুসলিম )। এই সাবধান বাণীতেও আশ্বস্থ না হোতে পেরে বিশ্বনবী (দ আরও ভয়ংকর শাস্তির কথা শোনালেন। বোললেন- কোর’আনের কোন আয়াতের অর্থ নিয়ে বিতর্ক কুফর। এবং কোন অর্থ নিয়ে মতান্তর উপস্থিত হোলে আমাদেরকে কি কোরতে হবে তারও নির্দেশ তিনি আমাদের দিচ্ছেন। বোলছেন, কোন মতান্তর উপস্থিত হোলে তা আল্লাহর উপর ছেড়ে দাও ( হাদীস- মুসলিম, মেশকাত )। অর্থাৎ দীনের ব্যাপারে যখনই মতান্তর উদ্ভব হবে তখনই চুপ হোয়ে যাবে, কোন তর্ক-বিতর্ক কোরবে না। অর্থাৎ বিতর্কে যেয়ে কুফরি কোরবে না, এবং যে বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই সেই সেরাতুল মোস্তাকীম, দীনুল কাইয়্যেমাকে আঁকড়ে ধোরে থাকো, এখানে লক্ষ্য করার একটা বিষয় আছে, দীনের ব্যাপার নিয়ে বিতর্ককে আল্লাহর রসুল (দ কোন পর্যায়ের গুনাহ, পাপ বোলে আখ্যায়িত কোরছেন। চুরি নয়, হত্যা নয়, ব্যভিচার নয়, বোলছেন- কুফর। যার চেয়ে বড় আর গোনাহ নেই, শুধু তাই নয় যা একজনকে এই দীন থেকেই বহিষ্কৃত কোরে দেয়। এতবড় শাস্তি কেন? শেষ নবীর (দ হাদীস থেকেই এর উত্তর পাওয়া যাবে। তিনি বোলছেন- তোমরা কি জান, এসলামকে কিসে ধ্বংস করবে? এই প্রশ্ন কোরে তিনি নিজেই জবাব দিচ্ছেন- শিক্ষিতদের ভুল, মোনাফেকদের বিতর্ক এবং নেতাদের ভুল ফতোয়া ( হাদীস- মেশকাত )। যে কাজ ইসলামকেই ধ্বংস কোরে দেয় সে কাজের চেয়ে বড় গোনাহ আর কি হোতে পারে! তাই বিশ্বনবী (দ এই কাজকে কুফ্রি বোলে সঠিক কথাই বোলছেন।
এই জাতির মহা দুর্ভাগ্য। আল্লাহর ও তাঁর রসুলের (দ এতসব কঠোর সতর্কবাণী এই উম্মাহর পণ্ডিতদের কিছুই মনে নেই। তারা সারা জীবন অক্লান্ত পরিশ্রম কোরে কোর’আন-হাদীসের সূক্ষèাতিসূক্ষè বিশ্লেষণ কোরে বিরাট বিরাট ফেকাহ শাস্ত্র গড়ে তুলতে থাকলেন। এদের মনীষার, প্রতিভার, অধ্যবসায়ের কথা চিন্তা কোরলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হোয়ে আসে, কিন্তু তাদের ঐ কাজের ফলে এই উম্মাহ ছিন্ন-বিছিন্ন হোয়ে ধ্বংস হোয়ে গেলো, শত্র“র কাছে পরাজিত হোয়ে গেলো। কাজেই বর্তমানের এই যে মোসলেমরা বিভিন্ন দলে- উপদলে, ফেরকা-মাযহাবে বিভক্ত হোয়ে নিজেরা নিজেরা শত মুখী সংঘাতে লিপ্ত রোয়েছে, হানাহানি- মারামারি, বোমাবাজি কোরছে তার পেছনের জ্বালানী হিসেবে কাজ কোরেছে কে? তথাকথিত ধর্মব্যবসায়ী আলেম-পুরোহিতরাই নয় কি?
বিষয়: বিবিধ
১৩১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন