শিশু গণতন্ত্র কবে বড় হবে?
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ০৬ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:১৮:২৬ সকাল
অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, সাম্প্রতিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট চরম আকার ধারন করেছে। সরকার ও বিরোধীদল উভয়ে নিজেদের অবস্থানে অনড় হয়ে আছে। ফলে কোন সমাধান ছাড়াই নিজেরা নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার কর্মসূচি গ্রহণ করছেন। সরকার বিরোধী আন্দোলন যেমন ব্যাপক হচ্ছে অপরদিকে সরকার এসব আন্দোলন দমন করতেও ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করছে। জনসাধারণের প্রাত্যহিক জীবনে এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। অতীতের আলোকে বিবেচনা করলে সকলেই একমত হবেন যে, এটা আজ নতুন নয়। আমাদের ইতিহাসও মোটামোটিভাবে এই। সরকার আর বিরোধীদের মাঝে বছরের পর বছর টান টান উত্তেজনা বিরাজমান থাকে। সেই সাথে চলে একে অপরকে উপেক্ষা কোরে কিভাবে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করা যায় তার হীন প্রতিযোগীতা। এই একই বিষয়ের পুনারাবর্তী দেখে দেখে দেশের আপামর জনতা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারাই আজ দেশের ১৬ কোটি মানুষ পদে পদে নির্যাতিত হচ্ছে, অপদস্ত হচ্ছে। বলা হোয়ে থাকে গণতন্ত্র হোল জনগণের দ্বারা পরিচালিত শাসনব্যবস্থা। এটা নাকি গণতন্ত্রের নীতি। আদর্শ বা ঐতিহাসিক সফলতা ইত্যাদি দ্বারা যতটা না গণতন্ত্র বিশ্বপরিচিতি এবং ব্যাপকতা লাভ করেছে তার চেয়ে ঢের বেশী ব্যাপকতা লাভ করেছে এর এই নীতিকথার কারণে। কাজেই এর বাস্তবতা ব্যাখ্যা করা আবশ্যক। আমি এখানে উদাহরণ হিসেবে অন্য কোনো দেশকে তুলে আনতে চাই না কারণ আলোচ্য সমস্যা যেহেতু আমাদেরই, কাজেই সমাধানের ব্যাপারেও আমাদেরকেই অগ্রগামী হতে হবে। তবে একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, শুধু আমাদের দেশেই যে এরকম রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে তা কিন্তু নয় বরং সমস্ত পৃথিবীজুড়েই চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতার লাগামহীন বাড়বাড়ন্ত।
কথা বলছিলাম গণতন্ত্রের নীতিকথা নিয়ে। আমি কোনো আদর্শকে হেয় করার জন্য কিন্তু লিখছিনা। আমি বাস্তবতাকে তুলে ধরছি। আদর্শ আর বাস্তবতা যদি এক না হয় তাহলে ঐ আদর্শের আর কোনো দাম থাকে না। কাজেই হয় ঐ বাস্তবতাকেই আদর্শ হিসেবে মেনে নিতে হয় নইলে দুটোকেই প্রত্যাখ্যাত করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।
“আমরা হলাম জনগণ। আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেন সংসদ সদস্যগণ। তারাই আমাদের ইচ্ছা-আকাঙ্খা অনুযায়ী দেশ পরিচালনার শর্তে সরকার গঠন করেন। অর্থাৎ সরকার যা করেন তা জনগণের ইচ্ছারই প্রতিফলন। জনগণ যা চায়, সরকার তাই কোরতে বাধ্য থাকে।” এই হলো তাত্তিকভাবে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা তথা গণতন্ত্রের গালভরা বুলি। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? ঠিক উল্টো। বোলুন তো, জনগণ কি হরতাল চায়? জনগণ কি গুলি, বোমা, ককটেলের আওয়াজ শুনতে চায়? জনগণ কি রাজনীতিক আর পুলিশের মারামারির মাঝে পড়ে জীবন হারাতে চায়? গুলিবিদ্ধ হোতে চায়? পঙ্গু হোতে চায়? চায় না। তাহোলে এটা কিসের গণতন্ত্র? মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধোরে একটি সংলাপের মুলো জাতির সামনে ঝুলিয়ে রাখা হোয়েছে। যারা জনগণের মুখের পানে চেয়ে, দেশের স্বার্থে এক মিনিটের জন্য নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদকে সোরিয়ে আলোচনা পর্যন্ত করতে সক্ষম নয়, তারা কি মানুষের জন্য রাজনীতি করে? তারা কি দেশের আপামর জনসাধারণের প্রতিনিধি?
হয়ত বলবেন তারা আমাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন না বলেই তো দেশের মানুষ আজ শঙ্কিত। তাহলে এর সমাধান কি? দিশাহারা জনগণের সামনে সমাধান একটাই। তাহলো সরকার পরিবর্তন। সরকার পরিবর্তন করলেই যেন তাদের ঘাড়ের বোঝা নেমে যায়। সাম্প্রতিক ঘটনাবলির আলোকে বলা যায় জনগণ আবারো সেই কাজটিই করতে যাচ্ছে। এটা নিছক আত্মতুষ্টি যোগানো ছাড়া আর কিছুই নয়। আর যারা জাতির সম্মানিত চেয়ারগুলোতে বসে সুসিল, বুদ্ধিজীবী ইত্যাদি বিশেষণ ধারণ করে আছেন তাদের কাছে সমাধান অন্য। তারা আরো একটু গভীরে চিন্তা করে থাকেন কিন্তু যতটা গভীরে গেলে প্রকৃত মুক্তি আসবে ততটা গভীরে যেতে পারেন না। তাদের ভাষায়- “আমাদের দেশে এখনও প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শিশু গণতন্ত্র এখনো অনেক ছোটই রয়েছে। এটা বড় হলেই দেশের মানুষ সত্যিকারের শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।” আমি বলব, এটা অনেক পুরোনো মত। এটা তারা সেই পাকিস্তান আমল থেকেই বলে আসছেন। যুগের পর যুগ চলে যাচ্ছে, শত শত মানুষ অন্যায়-অবিচারের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে, শত শত মায়ের বুক খালি হচ্ছে, রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে রাজপথ কিন্তু শিশু গণতন্ত্র তো বড় হওয়ার কোনো আভাষ পাওয়া যাচ্ছে না। বরং কার্যক্ষেত্রে মনে হচ্ছে সেটা আরো ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হচ্ছে। এর পরিণতি চিন্তা করার সময় কি এখনও আমাদের আসেনি? এখনও যদি আমরা প্রকৃত মুক্তির পথে, শান্তির পথে ধাবিত না হই তাহলে ভবিষ্যৎ পরিণতি হয়তবা আরো ভয়াবহ হতে পারে যখন গণতন্ত্রও থাকবে না আবার সরকার পরিবর্তনের সুযোগও থাকবে না, থাকবে শুধু অন্যায়-অশান্তি। আমাদেরকে সত্যটি মেনে নিতেই হবে। বুঝতে হবে আমরা পছন্দ করি বা না করি, বুঝি বা না বোঝার ভান করে থাকি সমাধান কিন্তু একটাই, আর তাহলো আল্লাহর দেওয়া সিস্টেম। নিখুঁত সিস্টেম।
বিষয়: রাজনীতি
১১৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন