বর্তমান পরিস্থিতির জন্য প্রকৃতপক্ষে দায়ী কে?
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আসাদ আলী ০২ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:৪৭:০৯ সকাল
কেন মানুষ ধীরে ধীরে তার নীতি নৈতিকতা হারিয়ে ফেলছে?
কেন তারা সততা হারিয়ে দুর্নীতিবাজ,ওয়াদা খেলাপকারী হয়ে যাচ্ছে, সন্ত্রাসী, মিথ্যাবাদী, মানুষের সম্পদ লুণ্ঠনকারী হোয়ে যাচ্ছে?
যে ছাত্ররা শিক্ষাগুরুর পায়ে হাত দিয়ে আশীর্বাদ নিত, শ্রদ্ধা জানাতো, শিক্ষককে দেবতুল্য জ্ঞান কোরত ,সেই ছাত্ররাই এখন কেন শিক্ষককে আটক কোরে রাখে, মারধোর করে?
যে ছাত্রদের শিক্ষা অর্জন কোরে মানবসেবার জন্য আত্মনিয়োগ করার কথা, সেই ছাত্ররা টেন্ডারবাজী করে, সন্ত্রাসী করে, বোমাবাজি করে , ছাত্রাবাসের আধিপত্য নিয়ে পরস্পরকে খুন করে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসাবে খাটে।
এর প্রকৃত কারণ হোচ্ছে ,সিস্টেমই তাদেরকে এমন বানায়।
কোন চালক যদি চেষ্টা করে একটা গাড়িকে সোজা চালাতে ,কিন্তু রাস্তাটা যদি বাঁকা হয় তবে সে শত ইচ্ছা কোরেও সোজা চালাতে পারবে না। চালাতে গেলে সে রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে যাবে। একই ভাবে যদি রাস্তা সোজা থাকে তাহলে সে চাইলেও আঁকাবাঁকা হোয়ে চোলতে পারবে না, রাস্তাই তাকে সোজা চোলতে বাধ্য কোরবে। এই রাস্তা হোচ্ছে একটি সিস্টেম যা মানুষের জীবনের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। সমাজের অধিকাংশ মানুষই হয়তো অন্যায় কোরতে চায় না। কিন্তু সিস্টেমের কারণে তারা অন্যায় কোরতে বাধ্য হোচ্ছে। আপনি শত চাইলেও ভালো থাকতে বা ভালো কোরতে পারবেন না। সিস্টেমের যাঁতাকলে পড়ে আপনার চরিত্রের সব সৎগুণাবলী ধীরে ধীরে লোপ পেয়ে যাবে|
বর্তমানে আমরা এক ভয়াবহ দুঃসময় অতিক্রম কোরছি। সামাজিক অন্যায়,নেতৃবৃন্দের অসততা,অঙ্গীকারভঙ্গ,রাজনৈতিক অস্থিরতা,দুর্নীতি,অর্থনৈতিক বৈষম্য,হানাহানি ইত্যাদির মধ্যে মানবজাতি নিমজ্জিত হোয়ে আছে। কিন্তু বাস্তবতা হোচ্ছে এই যে, এই অবস্থাটি সৃষ্টির পেছনে কেবল কোন একক ব্যক্তি বা দল দায়ী নয়, প্রধানত দায়ী হোচ্ছে আমাদের সিস্টেম বা জীবনব্যবস্থা।
সেটা কিভাবে?
আল্লাহর রসুল বলেন, প্রত্যেক মানবশিশু জন্ম নেয় ফেতরাতের (প্রকৃতির)উপর, অতঃপর তার বাবা মা তাকে ইহুদী, খ্রিস্টান অথবা যরোথুস্ট্রিয়ান বা অগ্নিপূজক বানিয়ে ফেলে (আবু হোরায়রা রা.থেকে বোখারী)। পরিবার একটি সিস্টেম। এই সিস্টেমের প্রভাবে পরিবার থেকে যেভাবে মানুষের ধর্মনির্ধারণ হয়, ঠিক তেমনি সমাজব্যবস্থাও মানুষকে নিজস্ব কাঠামো অনুযায়ী গড়ে তোলে।
সমাজব্যবস্থা যদি বস্তুবাদী, ভোগবাদী হয়, মানুষও হবে বস্তুবাদী ও ভোগবাদী, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, মানুষগুলিও ধীরে ধীরে হবে দুর্নীতিগ্রস্ত । পক্ষান্তরে সমাজব্যবস্থা যদি ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, মানুষগুলিও হবে ন্যায়নিষ্ঠ।
মানুষ প্রকৃতপক্ষে কাদা মাটির ন্যায়। এই কাদামাটিকে যে ডাইসের মধ্যে ফেলা হবে, কাদামাটি সেই ডাইসের রূপ, আকৃতি ধারণ কোরবে। সমাজব্যবস্থাও এমনই একটি ডাইস। কখনও কোন মানুষ মায়ের গর্ভ থেকে চোর হোয়ে, ডাকাত হোয়ে, অন্যায়কারী, দুর্নীতিবাজ হোয়ে জন্ম নেয় না। কিন্তু অন্যায় সমাজব্যবস্থার প্রভাবে ধীরে ধীরে তারা এমন অপরাধী চরিত্রের হোয়ে যায়।
যারা আইন শৃংখলা বাহিনীতে চাকরি কোরতে যান তাদের অনেকেই এই অভিপ্রায় নিয়ে যান না যে ইচ্ছা মত ঘুষ খাবেন, বরং সৎ জীবনযাপনের ইচ্ছা নিয়েই যান চাকুরিতে। কিন্তু সিস্টেমই তাদের অধিকাংশকে ঘুষখোর, দুর্নীতিপরায়ণ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, অসৎ বানিয়ে ফেলে। তারা এমন পরিস্থিতির শিকার হন যে অসৎ না হোয়ে তাদের কোন উপায় থাকে না।
যারা ব্যবসা কোরতে যান তারা অনেকেই হয়তো এই নিয়তে যান না যে তিনি মাপে কম দিবেন, ভেজাল মেশাবেন। কিন্তু এক সময় তাকে বাজারে টিকে থাকার জন্য অন্যদের মতই সততা বিসর্জন দিতে হয়।
রাজনীতিতে যারা যান তারাও হয়তো এই মানসিকতা নিয়ে যান না যে দুর্নীতি কোরবেন, সন্ত্রাসী লালন কোরবেন, জনগনের সম্পদ লুট কোরবেন, বিদেশে টাকা পাচার কোরবেন। এমন কি অনেকের হয়তো জনসেবা করার ইচ্ছাও থাকে কিন্তু পরে তাদের কী অবস্থা হয় সেটা সকলেরই জানা।
কাজেই বর্তমানে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার সময় এসেছে।
বিষয়: রাজনীতি
১১০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন