একটি দুঃসংবাদ ও কিছু কথা আমি কি শহীদ হতে পেরেছি..........................?

লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী বাংগালী ০১ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:৩৩:২৩ রাত

একটি দুঃসংবাদ ও কিছু কথা ।

আমি কি শহীদ হতে পেরেছি ……………?

জম্ন ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী সময়কে জীবন বলে । জম্ন হওয়ার পর থেকে মানুষ এই পৃথিবীর আলো বাতাস ও মানুষের মায়া মমতায় বড় হতে থাকে ।

বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথে তার মাঝে ছম্ন নেয় আমি কে ? আমাকে কে সৃষ্টি করেছেন ? এই সৃষ্টিকর্তা বা কে ? আমাকে কেন সৃষ্টি করা হল ?

কিছু সময় পর আবার ফিরে যেতে হবে এই ফিরে যাওয়াটাকে মৃত্যু বলে ।

মৃত্যুর পর আমার কি হবে ? পৃথিবীর মানুষগুলো বদল হচ্ছে ব্যাংক যেভাবে পুরাতন মুদ্রাকে সংগ্রহ করতে থাকে আর তার বিপরীতে নতুন মুদ্রা বাজারে ছাড়ে ঠিক তেমনিভাবে মানুষগুলো ও বদলে যায় এই বদলে যাওয়াকে মৃত্যু বলে ।মৃত্যু কখন কিভাবে হবে কেউ জানে না ।এই অবধারিত সত্যটা সবাই জানে কিন্তু কখন কিভাবে হবে কেউ জানেনা,একমাত্র আল্লাহ ছাড়া ।সবাই এই পৃথিবীতে দীর্ঘায়ূ চায় অন্তত কাল বাচঁতে চায় তাইত প্রাচীন মিশরীয়রা মমীর মাধ্যমে লাশকে রাখত যুগের পর যুগ । প্রিয়জনের লাশকে মমী করে রাখা যায় কিন্তু এই লাশের আবেগ অনুভূতি কিছুই বুঝা যায় না । নিজের সহানুভূতিও বুঝানো যায় না ।হয়ত তার আত্না এই সব কিছুই দেখে ও শুনে কিন্তু জীবিত অবস্থার মত নয় । ঐটা অন্য জগৎ যে জগতের খবর শুধু আল্লাহই ভাল জানেন । প্রিয়জনের বিয়োগান্তে সবাই কম বেশী ব্যথিত হয় এই ব্যথিত হওয়ার অনুভূতিটা আল্লাহই আমাদেরকে দিয়েছেন ।এই আবেগ অনুভূতি ভালবাসা ভাল লাগা হাসি কান্না আনন্দ বেদনা কিসের জন্য ?

আম্মা কেন আমকে এত আদর করে ?

কেন সব কিছু বিসর্জন দিয়ে এত ভালবাসে ?

আমি ও মাকে কেন এত বেশী ভালবাসি তাকে দেখলে কেন সব দুঃখ হতাশা দূর হয়ে যায় । ভাই বোনেরা কেন এত বেশী সহানুভূতিশীল ?

পড়ার সাথী পাড়া প্রতিবেশী আত্নীয় স্বজন কেন আমাকে সঙ্গ দেয় ?

সূর্যটা লাল কেন এত আলো দিতে কে তাকে বাধিত করেছে ?

বাতাস সর্বদা প্রবাহমান কেন ?

কোন বৈদুতিক পাখা তাকে এই পৃথিবীতে প্রবাহিত করছে ?

এত বড় পাখাটা কোথায় ?

এই পাখার সুইচটা কে টিপ দেয় ?

এই মহাকাশট এত বড় কেন ?

এর শেষ কোথায় ?

মিটি মিটি তারাগুলো কতদূরে ?

কতগুলো তারা মিলে এই নীল আকাশটা কে তারার মেলায় পরিণত করেছে?

তারাগুলোতে কি হচ্ছে ঐখানে কি মানুষ বসবাস করে ?

মৃত্যুর পর আত্নটা কোথায় লুকিয়ে থাকে ? যে বাবা আমাকে এত আদর করে প্রতিদিন ফল খাইয়ে দিত । সেই বাবার আত্নটাকি এখন ও আমাকে দেখছে?

সে কি এখনও আমাকে ভালবাসে ?তার জন্য যে আমি কাঁদি , তাকে চিৎকার করে ডাকি সে কি শুনে না ?

কিসের জন্যই বা ডাকি ? শুধু ফল খাওয়ানোর জন্য ডাকি আর ভালবাসি ?

কেন জানি আত্নটা ছানাবড়া দিয়ে উঠে ।

আত্নটা আসলে কি ?

কিসের জন্য এই আত্নটা কিছু জিনিস দেখলে আনন্দিত হয় আর কিছু জিনিস দেখলে দুঃখ পায় ,সেই দুঃখটা কি ? আবার দুঃখ কত প্রকার ? দুঃখ চোখে দেখা যায় না শুধু অনুভব করা যায় ।

কতটুকু দুঃখ পেলে চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে ?

আর কতটুকু ব্যাথা পেলে মানুষ হার্ট ফেল করে ?

এ রকম হাজারো প্রশ্ন প্রতিদিন মানব মনের দুয়ারে হাজির হয় কিছু প্রশ্নের উত্তর সে নিজ , নিজ থেকেই পেয়ে যায় ,কিছু প্রশ্নের উত্তর অন্যর মাধ্যমে প্রাপ্ত হয় । কিছু প্রশ্ন তাকে প্রতিনিয়ত বিব্রত করে । কিছু প্রশ্নের উত্তর জড় বস্তুর সাথে জড়িত বিধায় বিজ্ঞান তাকে দিয়ে থাকে ।কিছু প্রশ্নের উত্তর পরিবার সমাজ বেড়ে ওটার সাথে সাথে ওঠা বসা খাওয়া দাওয়া ,চাল চলনে শিক্ষা পায় । তাই একটি শিশু তার পরিবার যে বিশ্বাসে বিশ্বাসী সেই বিশ্বাস নিয়েই বড় হতে থাকে ।

তেমনি একটি দরিদ্র মুসলিম পরিবারে আমার জম্ন হয় । আমার মায়ের প্রশব ব্যাথা যখন তীব্র থেকে তীব্র্র হচ্ছিল তখন আমার আব্বা মামার বাড়ীর পিছনে নির্জনে বসে আল্লাহর দরবারে সিজদার মাধ্যমে পানাহ্ চাইতে লাগলেন । আল্লাহর্ অসীম কুদরতে যখন আমি পৃথিবীতে আগমন করলাম এই সংবাদ শুনে আবারো সিজদায় লুঠিয়ে পড়লেন এবং শুকরিয়া আদায় করলেন ঠিক সেই মুহূর্তে আল্লাহ্ তার {আব্বার}মনে প্রোথিত করে দিলেন একটি নাম “আল হামদ” ।

নানার ভিটার সামনে দাড়িয়ে তিনিই {আব্বাই}আজান দিলেন , আজানের মাধ্যমে নবজাতকের{আমার}কানে পৌঁছে দিলেন তাওহীদের আহব্বান ।এবং সবার মাঝে ঘোষণা করলেন আমার ডাক নাম “আল হামদ” ।

এরপর ঘড়ির কাটা ঘুরতে লাগল ………………………………………………………………………..। সংসারে ছিল নুন আনতে পান্তা পুরায় । কিন্তু আব্বা আম্মা দুজনেই ছিলেন ঈমানের বলে বলীয়ান ।দুজনের সম্পর্কের কোন ঘাটতি ছিল না{good partner ship} অভাব অনটন দুঃখ দুর্দশা কোন দিন আমাকে বুঝতে দেননি ।ক্ষুদ্র ব্যবসা আয়ও ক্ষুদ্র কিন্তু শান্তি ছিল বেহেশত সম ।ছোট বেলা থেকেই কালেমা শিখিয়েছেন নবী রাসূলদের ইতিহাস গুলো কিসসা আকারে শুনিয়েছেন । বেহেশত দোজকের পুরস্কার ও শাস্তির কথা শুনিয়েছেন ।আর এগুলো আমি আমার খেলার সাথিদের সাথে শেয়ার করতাম সবাই আগ্রহ সহকারে শুনত। আমার বয়স বাড়ার সাথাসাথি ,আমার পড়ালেখার জন্য তিনি হয়ে পড়েন পেরেশান ।উনার ইচ্ছা ছিল আমি যেন দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষীত হই ।তাই আমাকে ভর্তি করলেন জাহাঙ্গীরপুর দাখিল মাদ্রাসায় মামাদের এলাকায় এবং আমাদের পুরো পরিবার ঐ এলাকায় স্থানান্তরিত হল থানার নাম মদন। আব্বা ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি ইকামতে দ্বীনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন । তখন আমাদের নেত্রকোনা জেলাতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ চলত নিভু নিভু । এই মহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ব্যবসা আস্তে আস্তে ছোট হতে লাগল কিন্তু এই ব্যাপারে তিনি কোন চিন্তিত হতেন না যে ব্যবসা বন্ধ হয়ে পড়লে সংসার চালাবেন কি করে ।আম্মাও এ ব্যাপারে বাধা দিতেন না । তখনকার অনেক স্মৃতিই আমাকে আবেগ তাড়িত করে ,ছোট্র একটি থানা শহর মদন প্রশাসনিক কার্যক্রম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ত্রিভুজ আকৃতির এককোনে দেওয়ান বাজার অপর দু কোনের নাম মদন বাজার ও শেনটার মাঝের অংশটা আগে খালি ছিল এখন আস্তে আস্তে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে । আমাদের দোকানটা ছিল শেনটারে ,যখন রাজনৈতিক মিছিল মিটিং হত প্রায় সময়েই বাতিল শক্তি আমাদের দোকানটা ঘেরাও করত …………………………………………………….! দোকানের দরজা জানলা ভাংগার জন্য উদ্ধর্ত হত ………………………………………………………! আমি ছোট্র শিশু ভয় পেতাম অনেক সময় কাঁদতাম ।রাতের বেলায় বাসায় আক্রমন হতে পারে এইজন্য অর্ধেক রাত্রি আম্মা সজাগ থাকতেন আর বাকী সময় আব্বা ।এই সময়গুলিতে মাগরিবের নামাজের পরপরই আম্মা আমাদেরকে ভাত খাইয়ে বলতেন প্রসাব পায়খানা করলে এখন করে নেও রাত্রে বাসার বাহিরে বের হওয়া যাবে না আর টিনশেটের বাসা হওয়ার কারনে টয়লেট ছিল খানিকটা দূরে । আমার নানা ছিলেন আগেকার মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা ছিল না তাই তিনি মাঝে মাঝে বলতেন ঐ “হাঁসকুড়ি মইদাম” গ্রামের নূর মিয়াও ত নামাজ কালাম পড়ে খুব বুর্জগ ব্যাক্তি তাহাকে ত কেহ মারার জন্য আসে না । {নাম গুলো রুপক} আর আপনাকে মানুষ মারতে আসে কেন? আপনি ওর সাথে ঐ কাজ করেন আর এই কাজ বাদ দেন আল্লাহ্ কে একভাবে ডাকলেই হল আল্লাহ্ শুনবে ।উনি উনার জ্ঞান অনুযায়ী বলতেন আর আব্বা ও বুঝানোর চেষ্টা করতেন ,মাঝে মধ্যে নীরব থাকতেন ।ইকামতে দ্বীনের কাজ আজ্ঞাম দেয়ার জন্য প্রায়ই বাহিরের এলাকা মানে প্রত্যন্ত অজ্ঞলে যেতে হত আব্বাকে । তেমনি একসময় দাওয়াতী পক্ষ পালন করার জন্য দাওয়াতী গ্রুপ নিয়ে বাহির হবেন পুরো একসপ্তাহের জন্য কিন্তু বাসায় কোন খাবার নাই …………………………………..! যথারীতি আম্মাকে বলে বাসা থেকে বাহির হলেন যে তিনি এক সপ্তাহ আসবেন না । আম্মা ঘরের অবস্থা আব্বাকে আগেই জানিয়ে ছিলেন আর আব্বা জানতেনও কিন্তু কিছু করার উপায় নেই থানা আমীরকে অবশ্যই যেতে হবে । আব্বা আম্মাকে বললেন সবর কর আর ছেলে দোকানে পাঠিও । কিন্তু দোকানে তেমন বেশী মালামাল ছিলনা যে বিক্রি করে সংসারের খরচের পয়সা দিয়ে যাবেন ।দোকান খুলে বসে আছেন যদি কিছু বিকিকিনি হয় অথবা যারা বাকীতে মালামাল নিয়েছে ঐ রকম টাকা যদি দেয় । কিন্তু সম্ভবনা খুবই ক্ষীণ । আমি দোকানে গেলাম প্রাইমারীর ছাত্র সব মুর্হূত সঠিকভাবে আঁচ করতে না পারলেও দোকানে গিয়ে যখন দেখলাম আব্বা বসে রয়েছেন একা কি যেন ভাবছেন……………………………………………………………………………………………………!

আমি আব্বাকে খুবই ভালবাসতাম দোকানে গিয়েই আব্বার খোলে উঠে বসে পড়লাম , আব্বা বিষন্ন মনে আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন । ঈমানের অগ্নি পরীক্ষায় আব্বা তখন অবর্তীণ । কিছুক্ষন পর বাহির হবেন কিন্তু আমাদের জন্য কি রেখে যাবেন………………………………………………………………………………..?

তিনি সিদ্ধান্তে অটল নিজ পরিবারের জন্য যদি দ্বীনের দায়ীর বিচলিত হতে হয় তাহলে যে দায়ীর পথ পানে চেয় আছে অসংখ্য মুস্তাদআফিন ।{মুস্তাদআফিন অর্থ নির্যাতিত} এই মহান দায়িত্ব যারা নিয়েছে কাঁধে হতাশা কি আর তাদের তাকতে পারে ।আল্লাহর সাহয্য অতি নিকটবর্তী ……………………………………………………………………….হঠাৎ একটি হোন্ডা এসে মদীনা বাইন্ডার্স এন্ড্ কায়েছ আর্টের সামনে থামিয়ে। আব্বাকে সালাম দিয়ে ও হ্যান্ড শেকের পর সামনে রাখা চেয়ার বসে পড়ল আগন্তুক ।মনে হচ্ছিল দুজন দুজনকে অনেক দিন ধরে চিনেন । আব্বা উনাকে বললেন চা খাবেন ,আগন্তুক বলল চা খাওয়র আগে একটু পানি খাব তারপর চা । পার্শ্বেই চায়ের দোকানে দুটি চায়ের অর্ডার দিলেন এবং আগে পানি দিয়ে যেও ।আগন্তুকে চা খাওয়ানোর মত দু চার টাকা পকেটে ছিল । এখন এই সম্বলটুকু ও শেষ হয় যাচ্ছে এ ব্যাপারে কোন দুঃখ নেই । অনেক সময় দায়িত্বশীলকে নিজে না খেয়ে অন্য জনকে খাওয়াতে হয় আর তাকে বুঝাতে হয় আমিও খেয়েছি ।

চা খাওয়ার পর্ব শেষ ,আগন্তুক উঠে আব্বার সাথে হ্যান্ড শ্যাক করে পাঁচশত টাকার একটি নোট দিয়ে যে দিক থেকে এসেছিল ঐ দিকে রওনা দিল আর বলল আপনার জন্যই এসেছিলাম ।

আব্বা আগন্তুকের পথ পানে চেয়ে রইলেন ……………………………………………………….!

হঠাৎ স্মভ্বি ফিরল ।আব্বা ভাবতেছেন আমি কি কোন খোয়াব দেখছি না কি তাহা সত্যি ………………………………………………………………………………………………………!

ইতিমধ্যে অনেক সহকর্মী এসে হাজির এবং বলতেছেন আমীর সাব আর কতক্ষণ পর আমরা রওনা দিব ? আব্বা বললেন আপনারা বসেন সবাই আসুক আমরা একসাথেই রওনা দিব । এই ফাঁকে আমাদের জন্য খোদার পক্ষ হতে সাহায্যর টাকা দিয়ে পুরো এক সপ্তাহের সব কিছু কিনে আমাকে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন আর কিছুক্ষণ পর তিনিও রওনা দিলেন দায়ীইলাল্লাহর কাজে ।

এই কাহিনীটি তিনি আমাদেরকে বলতেন আর বলতেন যে ঐ ব্যাক্তিটিকে আর কখনও তিনি দেখেন নি ………………………..তাহলে এটাকি আল্লাহর ফেরেশতা…………………………………………………………………………………………………..?

আশির দশকের শেষার্ধ্বে এক রমজান মাসের শুরুতে ইসলামী আন্দোলনের নেতা কর্মীদেরকে নিয়ে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার জন্য মিছিল শুরু হল ,মিছিলটি মদন শহরের বিভিন্ন অলিগলি বেয়ে হাজির হল নতুন বাজারে ঐ দিন ছিল হাটবার ,বাজারের মিষ্ঠির দোকানগুলো খোলা অবস্হায় রমজানের পবিত্রতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেচাকেনা করছে । মিছিলের সাথে একটি টিম ছিল যারা রাস্তার দু পার্শ্বের দোকানগুলিতে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ হতে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার লিফলেট সবাইকে দিচ্ছে । কিন্তু মিষ্টির দোকানদার লিফলেট নিচ্ছে না ,এই নিয়ে শুরু হল তর্ক এক পর্যায়ে উত্তেজনা ।সবাইকে থামাতে নেতৃবৃন্দ তৎপর ইতিমধ্যে ছাত্রলীগের ও এই অজ্ঞলের ছেলেরা গরম দেখাতে হাজির পরিস্থিতি খুবই নাজক ।বাজারের মানুষ এদিক ওদিক ছুটাছুটি শুরু ,পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সব নেতৃবৃন্দ তৎপর আর আমীর সাহেবত সবার সামনে । মিছিলটিকে ক্রমান্বয়ে বাজারের বাহিরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এই সুযোগে বাতিল শক্তি নেতৃবৃন্দের উপর চড়াও হল………………………………………………………………………! হঠাৎ খালি আকাশে একখন্ড মেঘের মত হাজির এক ব্যাক্তি আমীর সাবকে আড়াল করে দাড়াল আর বলতে লাগল হুজুর আপনি চলে যান আমি দেখতেছি…………………………………………!

{আব্বা}আমীর সাব বলছেন এই ব্যাক্তিটিকে তিনি আগে পরে আর কখনও দেখেন নি ……………………………………………………….তাহলে কি ঐ ব্যাক্তিটি আল্লাহ্র ফেরেশতা……………………………………………………….?আশির দশকের প্রথম সারা বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের অফিস বাসা বাড়ী পুড়াতে শুরু করল বামপন্হীরা নেত্রকোনা এর ব্যাতিক্রম নয় ,সারা জেলার জনশক্তি চল্লিশের মত আর তখন জামাতের অফিস ছিল কলেজ রোড বায়তুল আমান জামে মসজিদের পার্শ্বে । জেলা আমীর ছিলেন মাওলানা ফজলুল করিম সাব ,পুরো জেলার জনশক্তিকে একত্র করা হল ,প্রতিদিন উত্তেজনা বাড়তে লাগল আর হঠাৎ উড়ো খবর আসে এই যে মিছিল আসছে ঐ রোড দিয়ে ………………ইত্যাদি ইত্যাদি ।

আর এই ছোট্র কাফেলার লোকদের ঈমান আরো বাড়তে থাকে ,আল্লাহ্ র কাছে দোয়া পড়তে থাকে আর বলতে থাকে আমাদের একজনের জীবন থাকতেও অফিস পুড়াতে দিব না ।আব্বাকে দেয়া হল অবস্থা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব । আব্বা সাধারণ পোশাক পরে ভীড় ঠেলে বামপন্থীদের অফিসে ঢোকেন তাদের অবস্থা আচঁ করেন এভাবে কয়েক দিন………………………………………………… সরকারের ইন্টেলিজেন্সের লোকেরা বামপন্থীদের অফিসেও যায় গোয়েন্দাগিরির জন্য আবার জামাত অফিসেও আসে । আল্লাহর রহমত গোয়েন্দাকে আব্বা ছিনে ফেললেন ।তখন গোয়েন্দা ও নিজের পরিচয় গোপন রাখেনি কিন্তু আব্বা হেকমত করে প্রায় নামাজের সময় গোয়েন্দাকে সাথে নিয়ে নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করতেন হে আল্লাহ্ তুমিত মুসলমানদের বদর ওহুদ খন্দকে সাহায্য করেছ এখন আমাদেরকেও সাহায্য কর আমাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল কর……………………………………………………………………………………আমীন ।এভাবে চোখের পানি ফেলতেন ও হৃদয় নিংড়িয়ে দোয়া করতেন। গোয়েন্দা তখন একটা কথা বলত আপনারা ত সংখ্যায় অনেক কম আর ওরা অনেক বেশী ইত্যাদি ইত্যাদি । আল্লাহ্ এই সব জানবাজ মুজাহিদদের সাহায্যর জন্য এই সরকারী গোয়েন্দাকেই পছন্দ করলেন । গোয়েন্দার মনে সহানুভূতি সৃষ্ঠি করে দিলেন । হঠাৎ একরাত্র এশার নামাজের পর পালাক্রমে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত ,নিরাপত্তা বেষ্ঠনী তৈরী করে আছেন অফিসের চারদিকে । গোয়েন্দা বামপন্থীদের অফিসের বারান্দায় দাড়িয়ে জোরে চেচিয়ে বলল এই যে জামাত শিবির আসছে ভারী অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে পালাও পালাও বলে সে নিজেই এত জোরে দৌড় দিল যে অন্য লোকেরা ও যে যার মত প্রাণ নিয়ে পালাতে শুরু করল ।এই বিশৃঙ্কলায় অনেক আহত হল ।অফিস খালি পড়ে আছে যেন শশান কলা । গোয়েন্দা রিকসা যোগে এসে জেলা আমীরকে বলল দিলামত তাড়িয়ে ।ওরা সব চলে গেছে বিশ্বাস না হলে আমার সাথে আসুন ।আমীর বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তাই একদলকে অফিস পাহারায় রেখে অন্য দল নিয়ে গোয়েন্দাকে অনুসরণ করলেন আব্বাও এই দলে । হায় আল্লাহ্ তোমার কি মহিমা এরা সংখ্যাও সরজ্ঞামাদিতে বেশী হয়ে পালিয়ে গেল ! হে আল্লাহ্ তুমিই সব পার ।অপর দিকে বামপন্হীদের এক লোক আমাদের আত্নীয় আমার চাচাত ভাইয়ের চাচা শশুর এলাকায় এসে গুজব ছড়াল যে শহরে অনেক গন্ডগোল হয়েছে আর এই গন্ডগোলের সামনের সারিতে তাকে {আব্বাকে} দেখেছি মনে হয় মারা গেছে আরো কত মুখরোচক গল্প…………………………………………………………………………!

এভাবে কেটে যেতে লাগল সময় । আমরাও বড় হতে লাগলাম ।এরমধ্যে কত চড়াই উৎরাই । দারিদ্রের কর্ঘাঘাতে আমাদের পরিবার প্রায় ওষ্ঠাগত ।কিন্তু এ কাজে আব্বাকে কখনও পিছপা হতে দেখিনি ।কারণ তিনি ইসলামী আন্দোলনকে বুঝছিলেন অন্য নিয়মে। কাহারো দাওয়াতের মাধ্যমে এই কাফেলায় শরিক হননি । উনার বয়স যখন বিশ কিংবা একুশ তখন আল্লাহ্ কে পাওয়ার আশায় পীর ধরেছিলেন ।পীর সাহেব তাহাকে বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করল যেমন তুমি এখন যাবে ঐ থানার ঐ ইউনিয়নের ঐ গ্রামের পিছেনে একটি কবরস্থান দেখবে সেখানে তুমি থাকবে নব্বই দিন আর সুবহানআল্লাহ্ জপ করবে এককোটি বার কাহারো কাছে সাহায্য চাওয়া যাবেনা ।কেহ যদি ইচছা করে খাওয়াতে চায় তাহলে ভিন্ন কথা ।এই ভাবে চলল বিশ বছর ,কিন্তু এই বিশ বছরের মধ্যে তিনি পীরের দেয়া কাজ জিকির আসকার,মুরাকাবা মুশাহেদা ইত্যাদি সমপন্ন করে ও নিয়মিত পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ সহ অন্যান্য নফল ইবাদত করেও বই পড়তেন অত্যাধিক ।কবিতা,গল্প,গান,গজল রচনা করতে লাগলেন ।অধ্যয়নের তীব্র আকর্ষণ তাকে নিয়ে যেত গণ পাঠাগার গুলিতে ।সেখানে তিনি বই পড়ার জন্য পাঠাগারের সদস্য হতেন ।পাঠাগারের এক প্রান্ত হতে বই পড়া শুরু করতেন অপর প্রান্ত পর্যন্ত শেষ করতেন ।প্রতিদিন সকালের নাস্তার আগে দুই আড়াইশ পৃষ্ঠা শেষ না করলে নাস্তা করতেন না। যার জন্য কোরআন হাদিস থেকে শুরু করে সব ধরনের বই পড়েছেন ।আমরা যখন একসাথে খেতে বসতাম বা অবসর সময় কাটাতাম তখন আব্বা এই সব গল্প করতেন। আমি একদিন আব্বকে জিজ্ঞাস করছিলাম আব্বা আপনি কি কি ধরনের বই পড়েছেন ? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন কোরআন হাদীস বিভিন্ন মহামণিষীদের জীবনী থেকে শুরু করে কালমার্কস,লেলিন,লিওটলস্টয়,ইমাম গাজ্জালীরবই, গল্প উপন্যাস ,কবিতার বই এমনকি নিজের মায়ের পেটে আটটি সন্তানের জন্ম দিয়েছে এমন বইও পড়েছি ।

বিশ বছর পর যখন আব্বার পীর আব্বাকে খিলাফতি দিল । তিনি তখন তা গ্রহণ করেন নি । পীর সাহেবত অবাক যে আমি এত এত শিষ্যকে বাদ দিয় তোমাকে খেলাফতি দিলাম আর তুমি বলছ তাহা গ্রহণ করবেনা ।কারণ কি তিনি তখন বললেন ইসলামে পীরালী সিস্টেম নাই । আল্লাহ আমাদরকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তার এই তার বিধান আলকোরআনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য । এই পীরালী নামে ভন্ডামী ও ব্যবসা করার জন্য নহে ।

এর মধ্যে তিনি বই পড়তে পড়তে হঠাৎ একদিন বই পেলেন “মাওলানা মওদূদী একটি জীবন একটি ইতিহাস” বইটি পড়ে তিনি হতবাক হলেন যে একটি মানুষের জীবন এতবৈচিত্রময়।তাই এই লেখকের বই খোঁজা শুরু করলেন ।এটা স্বাধীনতার কিছুদিন পরের ঘটনা ।অনেক লোককে জিজ্ঞাস করলেন এই লেখকের বইয়ের জন্য । তন্মধ্য দু একজন বলল সর্বনাশ এই লেখকের দলসহ বই নিষিদ্ধ । যদি সরকারের লোকেরা জানতে পারে তাহলে আপনাকে জেলে পাঠাবে । একজন বলল আমার কাছে কিছু বই আছে আপনাকে দিতে পারি একটা শর্তে তা হচ্ছে কাউকে এই বিষয়ে বলা যাবেনা যে আমি এই বই দিয়েছি এবং আমি আপনাকে একটি ঠিকানা দিতে পারি তা হচ্ছে বৃহত্তর ময়মনসিংহে এরা কাজ করে “পকেট”নামে ।

যিনি এই সন্ধান দিয়েছিলেন উনি দেওয়ান মাহবুব।মদন থানাধীন দেওয়ান বাড়ীর লোক ।আব্বার মহব্বতের বন্ধুদের একজন ।

এরপর থেকে পকেটের সাথে যোগাযোগ ও ইসলামী আন্দোলনে কাজ শুরু । আমাদের নেত্রকোনা জেলার মোহনগজ্ঞ ও মদন থানায় তিনিই ইসলামী আন্দোলনের কাজ শুরু করেন ।মদন থানায় আব্বার দাওয়াতের ফলে অনেকেই ইসলামী আন্দোলনের সাথে শরীক হয়েছেন তন্মধ্য একটি মজার ঘটনা, একজন তরুন ছাত্র আব্বার দাওয়াতের ফলে ইসলামী আন্দোলনে শরীক হয়ে কাজ শুরু করল ।খুবই মেধাবী ছাত্র নিজের ক্যারিয়ারকে গঠনের জন্য ভর্তি হল ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ।উনি পড়ালেখার পাশাপাশি দ্বীনি কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। এই খবর এলাকার দুষ্ঠ প্রকৃতির বামপন্থীরা জানতে পেরে ছাত্রের বাবাকে বুঝাল তোমার ছেলে ত পড়ালেখা করে না ।সে মারামারি শিখে মানুষের রগ কাটে ।আর এই কাজে ভর্তি করিয়েছে {নিজাম উদ্দীন ফকির}আব্বাকে দোষী বানাল। ছাত্রের পিতা আব্বার প্রতি খুবই অসন্তুষ্ট তাই আব্বাকে আড় চোখে দেখা শুরু করল এবং ছেলের পড়ালেখার খরচ দেওয়া বন্ধ করে দিল ।কিন্তু শিবিরের ভাইয়েরা তাকে{ছাত্রকে}পড়ালেখার খরচ বহন করতে লাগল।অনেকদিন পর ছাত্রের মায়ের কান্না কাটির ফলে তার {ছাত্রের} বাবা ছেলের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেল এবং দেখল যে অন্য ছেলেরা{শিবিরের}তাহার ছেলের পড়াশুনার খরচ চালাচ্ছে । আল্লাহর রহমত ঐ দিন বিকালে ছিল সুধী সমাবেশ । আলোচনা রাখলেন ময়মনসিংহ জেলা শিবিরের সভাপতি । ছাত্রের বৃদ্ধ পিতা আলোচনা শুনে কেঁদে ফেললেন এবং নিজের ভুল বুঝতে পারলেন পরবর্তীতে আব্বার কাছে এসে মাফ চাইলেন । উল্লেখ্য উক্ত ছাত্র এখন সরকারের ব্যাংকিং বিভাগে সচিব বা সহকারী সমপর্যায়ে চাকরীরত।নেত্রকোণা জেলার শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আঃ ওয়াহেদ সাহেব উনার {আব্বার}দাওয়াতের ফলেই ইসলামী আন্দোলনে আসেন এবং আব্বার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যে কয়জন প্রিয় হিতাঙ্কাকী ছিলেন তন্মধ্য তিনি অন্যতম । {আল্লাহ্ আঃ ওয়াহেদ সাহেবকে ও দ্বীনের খাঁটি সেবক হিসেবে কবুল করুক,আমীন}।

আব্বার এই জীবনটা ছিল অদ্ভুদ সব ঘটনা লিখতে গেলে আলাদা একটি প্রবন্ধ হবে । যখন আব্বা বিভিন্ন দ্বীনের দায়ীদের বীরচিত জীবনগাঁথা বর্ণনা করতেন তন্মধ্য গাজী সালাহ উদ্দীন আয়ূবী,মুসান্নাহ,তারিক বিন জিয়াদ,ইউসুফ বিন ইসহাক,হাসান আল বান্না,বদীউজ্জামান নুরসী,মাওলানা মওদূদী আরো অনেকের জীবন ও কর্ম নিয়ে কথা বলতেন তন্মধ্য যখন শাহ্ জালালের ঘটনা আসত তখন সিলেটের গৌরগুবিন্দ রাজার অত্যাচারে আমাদের পূর্ব পুরুষরা পালিয়ে বর্তমান মোহনগজ্ঞ থানাধীন

‘উলুকান্দা মাহমুদপুর” গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল এই গল্পটাও বলতেন। যিনি এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাহার নাম ছিল “শুকুর মাহমুদ” আর এই এলাকাটার নাম ছিল উলুকান্দা। তাই তার নাম অনুসারে গ্রামের নাম হল “উলুকান্দা মাহমুদপুর”।

আব্বা যখন মোহনগজ্ঞে দ্বীনের কাজ শুরু করেন তখন তিনি এখানেও অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিন্তু একটুও পিছপা হননি বরং টার্গেট ভিত্তিক দাওয়াতী কাজ করে লোক বৃদ্ধি করছেন ।আব্বার এই ডাকে সারা দিয়ে অনেকেই ইসলামী আন্দোলনে শরীক হয়েছেন তন্মধ্য মুক্তিযোদ্ধা আঃ বারী ভাই,ইজ্ঞিনিয়ার শহিদুল্লাহ তালুকদার আরো অনেকই। অপর দিকে লোক বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ডেও পিছিয়ে থাকননি এবং অন্যায় কাজকে কখনও আশ্রয় প্রশ্যয় দেয়াত দূরের কথা কঠোর হস্তে মোকাবেলা করেছেন। আমাদের গ্রামের বাড়ীতে ,গ্রামের লোকেরা মজ্ঞ গানের মানে “গ্রাম্য যাত্রা পালা” আয়োজন করল আর এগুলোর সাথে আমাদের বাড়ীর অনেকেই জড়িত ও উদ্যোক্তা ও বটে । নির্দিষ্ট দিনে ঘটা করে আমাদের বাহির বাড়ীর সামনের উঠানে মজ্ঞ তৈরী হল একটু পরেই শুরু হবে। আমি তখন খুবই ছোট,আব্বা জুহরের নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন “হে আল্লাহ্ তুমি আমাকে সাহায্য কর এই পাপচার রুখবার শক্তি দাও শাহাদাত কবুল কর” কারণ আমাদের চাচারা সহ গ্রামের সবলোক একতাবদ্ধ এই কাজে আর বাধা দানকারী শুধু তিনি {আব্বা}একা । আপন {biological}ভাইদের বিরুদ্ধে বাধা আর অপর দিকে তারাও সক্রিয় অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করবেই ।তিনি {আব্বা} আমাকে আম্মার কাছে তুলে দিয়ে বললেন এই ছেলেকে তুমি দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করিও ………………………………………………………!অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবনা…………………………………………………………! আম্মা কাঁদছেন কারণ পার্শ্বের ঘরের লোকজন আগে থেকেই হুমকি দুমকি শুরু করেছে যদি “নিজাম উদ্দীন”কোন ধরনের বিশৃঙ্কলা {বাধা দেয়}করে তাহলে দুনিয়া থেকে বিধায় করে দেয়া হবে ।আব্বা শাহাদাতের তামান্না নিয়ে দূঢ় পদক্ষেপে ………………………………………………….. মজ্ঞে উঠলেন । ততক্ষনে মজ্ঞের চারদিক লোকে কানায় কানায় পূর্ণ তিনি সবাইকে সালাম দিলেন……………. আল্লাহর রহমত লোকজন সাথে সাথে চলে যাওয়া শুরুকরে দিল । এরপর শুরু হল উত্তেজনা,আব্বার হৃদয় মন পাষাণ আয়োজকদের হুমকি দুমকি উত্তেজনাকে বিন্দু পরিমাণ তোয়াক্কা করেননি ভয়ও পাননি কারণ তিনি ত শাহাদতের জন্য প্রস্তুত । এভাবে তিনি দ্বীনি কাজ চিলিয়ে যেতে থাকেন …………………………………………………………… এরপর আমিও আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলাম ইত্যবৎসরে আমারা পুরো পরিবারে মদন থানা থেকে মোহনগজ্ঞ থানায় দাদার বাড়ীতে এসে পড়লাম ।

যে স্মৃতি আমাকে কাঁদায় বারাবার

আমি তখন খুরশিমূল প্রাঃ বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে মোহনগজ্ঞ পাইলট সরকরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ১৯৯৩ এর প্রথমার্ধে ফেব্রুয়ারীর শেষের দিকে শীতকাল । আমাদের বাড়ীতে আসলেন শিবিরের থানা সভাপতি সবুজ ভাই ও অর্থ সম্পাদক হামিদ ভাই আব্বার সাথে কথা বললেন ,আমাকে তারা কর্মী শিক্ষা শিবিরে নিয়ে যেতে চায় । আব্বাও ইতিবাচক সাড়া দিলেন । যাওয়ার দিনের আগের রাত্রেই আম্মাকে বললেন বিছানাপত্র গুছিয়ে একটা ব্যাগে তৈরী করে রাখতে । আম্মাও তাই করলেন । সকালে ফজরের নামাজের জন্য আমাকে ডেকে তুললেন, একত্রে নামাজ আদায় করে আল্লাহ্ র দরবারে হাত তুললেন “হে আল্লাহ্ আমি তাকে তোমার দ্বীনের জন্য তোমার কাছে সোপর্দ করলাম তুমি তাকে দ্বীনের দায়ী হিসেবে কবুল কর,মুজাহিদ হিসাবে কবুল কর,শহীদ হিসেবে কবুল কর আরো অনেক আবেগ প্রবণ দোয়া” ।

সে দিনটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন,নেত্রকোণা আজ্ঞুমান সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা শিবির চলছিল রমজান মাস দিনের অনুষ্টান সূচী শুরু হল তাহাজ্জুদ নামাজ দিয়ে এরপর একটার পর একটা কখনও কোরআনের দারস কখনও প্রশ্নোত্তর এভাবে প্রোগ্রাম চলতে লাগল । দ্বিতীয় দিন হঠাৎ দুপুর বেলা আওয়ামী নামধারী রক্ত পিপাসুরা শুরু করল অতর্কিত হামলা ………………………………………… জেলা সভাপতি লুৎফুর ভাই ও শহর সভাপতি আঃ রাকিব ভাই নারায়ে তাকবীর দিয়ে অন্যান্য ভাইদেরকে নিয়ে শুরু করলেন প্রতিরোধ । আমি উক্ত অনুষ্টানের সর্ব কনিষ্ঠ বালক । দুটোর বেশী ইট একা তুলতে পারি না । তখন একটি দুটি ইট নিয়ে বিল্ডিংয়ের চার তলায় দিয়ে আসি আবার যাই । কিছু ভাইয়েরা ইট ভেঙ্গে ঢিল ছুড়ছে এভাবে প্রায় তিন ঘন্টা । অতঃপর জেলা প্রশাসকের সহায়তায় মারামারি বন্ধ হল । এতঃপর বিডিয়ারের গাড়ী দিয়ে আমাদেরকে শহরের বাহিরে নামিয়ে দিল আর আমরা রাত্রির অন্ধকারকে ভেদ করে ছুটতে লাগলাম বাড়ীর উদ্দ্যেশে,মোহনগজ্ঞ শহরের কাছে বিভিন্ন ভাইদের বাড়ীতে রাত্রি যাপনের পর যে যার গন্তব্য । আমি বাড়ীতে প্রবেশের সাথে সাথেই আম্মা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন , কারণ তারা আগেই মারামারির সংবাদ পেয়েছেন। তাই আম্মা অস্থিরতা দেখাতে শুরু করলেন আর প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে লাগলেন ,আব্বা আম্মাকে থামালেন এবং বললেন এত অস্থির হওয়ার কি আছে দ্বীনের জন্যত তাকে আগেই সোর্পদ করে দিয়েছি ।

সময় দ্রুত চলতে লাগল ,আমার জীবিকার উদ্দ্যেশ্য বিদেশ যাত্রা ,আমাকে অনেকেই অনেক কিছু দিয়েছে কিন্তু আব্বা দিলেন সৌদীর গ্রান্ড মুফতি বাযের হালাল হারামের উপর একটি চটি বই আর একটি ব্যাক্তিগত রির্পোর্ট বই । প্রবাস জীবনে যখনই হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছি আবেগের কাছে বিবেক পরাজিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে ,তখন যেখান থেকে শুনেছি আশার বাণী তিনি {আব্বা}শুধু আমার পিতাই ছিলেন ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের পথ প্রদর্শক,বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতাম নিজের মধ্যেও প্রশ্নের উদয় হতো,আলোচনা তৈরীর ক্ষেত্রে রেফারেন্স সংগ্রহ সবকিছুতে শতভাগ উৎসাহ পেয়েছি তিনিও আনন্দিত হয়েছেন ।

সাহস যুগিয়েছেন আর আমার জীবনে প্রথম বক্তৃতা দেয়া তিনিই শিখিয়েছেন ৫ম শ্রেণীতে পড়ার সময় ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে স্কুল প্রাঙ্গণে এবং তিনিও মজ্ঞে উপবিষ্ট ছিলেন । এখন আমি অনেক বড় হয়েছি কিন্তু পিতার কাছে সন্তান কোন দিন বড় হয় না ।ছোট খোকা ছোট খোকাই থেকে যায় আর খোকাও বাবার সামনে পড়লে নিজেকে ছোট ও অবুঝই মনে করে ।এটা রূহের উপর রূহের প্রভাব আল্লাহ্ র অশেষ নিয়ামত । আমার জীবনে পিতার প্রভাবটা প্রবল তাই কোন কাজেই বিরোধীতা অথবা অবহেলা করিনি । বিগত ২০১১ ও ২০১২ সালে আওয়ামী সরকার বিরোধী যে কয়টা মহাসমাবেশ ঢাকায় হয়েছে সবগুলিতে আব্বা যোগদান করেছেন যদিও বয়সের ভাড়ে নূয়ে পড়ছেন বয়স সত্তরোর্দ্ধ ৭৩/৭৪,পরিবারের লোকেরা আব্বাকে বাধা দিতে সাহস পায়নি তাই আমাকে ফোন করেছে আমি যেন বারণ করি, আমি আব্বাকে ফোন করে খোঁজ নিলাম কিভাবে লোকজন ঢাকার সমাবেশ সফল করবে আব্বা বললেন সরকার সকল যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করছে যে সরকারী দলের অবরোধ ও হরতাল এবং সকল স্টেশন ও টার্মিনালগুলোতে সরকারের গুন্ডারা পাহারা বসিয়েছে আমাদের এলাকায় এর ব্যতিক্রম নয়। আমি আবার জিজ্ঞাস করলাম আপনি যাচ্ছেন কিনা ? তিনি {আব্বা}বললেন অবশ্যই যাব আমি বললাম আপনার শরীরের অবস্থাত ভাল না । তিনি বললেন আমার {আব্বার}দেখাদেখি আরো অনেকেই উদ্ভুদ হয়েছে আর জীবন দিলে দ্বীনের জন্যই দেব চিন্তার কোন কারণ নেই ।তুমি শুধু দোয়া কর । এভাবেই বয়স ও শরীরের অসুস্থতাকে উপেক্ষা করে দ্বীনি কাজে ছিলেন আগুয়ান । শুধু তাই নয় পিজি হাসপাতালে যখন তিনি দুটি কাডনি বিকল সহ শারিরীক চরম দুর্বলতায় ভুগছেন তখন আমি উনার চিকিৎসার জন্য {emergency leave}ছুটি নিয়ে ছুটে গেলাম । ২০১৩ রমজান মাসের মাঝামাঝি ,উনার চিকিৎসা চলতেছে তখন আব্বার বেডের পার্শ্বের বেডে একটি নতুন রোগ ভর্তি হল ।রোগীর বড় ভাই আমাকে সালাম দিল আমি সালামের উত্তর দিলাম কিন্তু আব্বা ইশারায় আমাকে কি যেন বুঝাতে চাচ্ছেন , আমি আব্বার মুখের দিকে তাকালাম ও সালাম প্রদানকারী ব্যাক্তির দিকে তাকালাম। আমি আব্বার অভিব্যাক্তি বুঝতে পারলাম। রোগীর বড় ভাইকে জিজ্ঞাস করলাম আপনি কি ইসলামী আন্দোলন করেন । এ কথা শুনে সালম প্রদানকারী {রোগীর বড় ভাই}হতবাক কি ব্যাপার ,বৃদ্ধ চাচা এটা বুঝলেন কি করে? হ্যাঁ আমি ইসলামী আন্দোলন করি আমার বাড়ী ফেনী মকবুল আহম্মেদ সাহেবের এলাকায় এ কথা বলতে বলতে আব্বার মাথার কাছে হাত রেখে দোয়া করলেন । আর আব্বা বললেন আমি দীর্ঘ দিন যাবত ইসলামী আন্দোলন করি মানুষের চেহারা দেখলে ধারণা করতে পারি {সুবহানআল্লাহ্}। শত চেষ্ঠা ও চিকিৎসা মৃত্যুর কাছে কিছুই না । সকল আত্নীয় স্বজন, পরিবার পরিজন,ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের চোখে বন্যা বইয়ে ২২শে অক্টোবর ২০১৩ রাত ৩ টা মহান প্রভুর সান্নিধ্য চলে গেলেন ।{ইন্নালিল্লাহী ওয়াইন্নাইলাইহি রাজিউন} ।এখন প্রতি মুহূর্তে যখন উনার কথা ভাবি চোখ বেয়ে অশ্রু পড়ে ,আল্লাহর কাছে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করি তখন নিজের প্রতি নিজের ঈর্শা হয় ,যে বাবা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নামাজ শেষে দোয়া পড়েছিল আমি যেন শহীদ হই , আল্লাহ যেন আমাকে দ্বীনের দায়ী,মুজাহিদ সর্বোচ্চ মর্যাদা শহীদ হিসেবে কবুল করেন ।কিন্তু আমি কি শহীদ হতে পেরেছি……………………………………………………………………………………………………………? তিনি কি আমাকে শহীদ হতে দেখেছেন ? দেখেন নি ।আমি যদি উনার জীবদ্দশায় আল্লাহর রাহে প্রাণ বিলিয়ে দিতে পারতাম তাহলে অবশ্যই তিনি খুশী হতেন । কিন্তু সেই তাওফিক আল্লাহ আমাকে দেননি । আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ ,যখন শুরু হবে হক ও বাতিলের চূড়ান্ত ফয়সালা আল্লাহ যেন আমাকে অঢল রাখেন বাতিলের শত সহস্র আঘাত ও বুলেট যেন এ দেহকে ঝাঝরা করে দেয় । সবচেয়ে প্রিয় জিনিস জীবন আর জীবনের শেষ রক্ত বিন্দুটুকু আল্লাহ্ কবুল করেন শহীদ হিসেবে কবুল করেন আমীন। কাল কিয়ামতের কঠিন দিনে আল্লাহ্ যেন আমার প্রাণের প্রিয় আব্বাকে শহীদের পিতার মর্যাদা দেন । আম্বিয়াআলাইহিতুসসাল্লামের সাথে শহীদদের সাথে জান্নাতে রাখেন।আমীন আমীন ।।

বিষয়: বিবিধ

২৫৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File