একাধিক বিয়ের প্রসঙ্গ
লিখেছেন লিখেছেন হারানো সুর ১৭ মার্চ, ২০১৫, ০৭:১০:৪৭ সকাল
না জেনে কিংবা ভুল জেনে কথা বলার একটা অভ্যাস আমাদের সমাজে আছে। এতে অনেক ভুল ধারণা নিয়ে আমরা বেড়ে উঠি। অযথা বিতর্ক-বিত-াও কম হয় না। মূল কথা হলো, এতে প্রগতির বদলে মূর্খতার দিকেই আমরা ধাবিত হই। এ প্রসঙ্গে অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের ব্যাপারে আলোকপাত করতে চাই। মানব জাতি যে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত এগিয়ে আসতে পেরেছে, এতটা বিকশিত হতে পেরেছে, তার মূলে রয়েছে পরিবার তথা বিয়ের বন্ধন। ইসলামে একাধিক বিয়ের অনুমোদনের বিষয়টি নিয়ে অনেককে ঠাট্টা-মস্করা করতে দেখা যায়। যারা এ কাজটি করেন, তারা ইসলামের বিয়ের বিধান সম্পর্কে তেমন অবগত নন। একাধিক বিয়ে অনুমোদনের পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ আছে কিনা তাও তারা ভেবে দেখেন না। অনেকের বক্তব্য শুনলে তো মনে হয় যে, আগে বোধ হয় একটি বিয়েরই প্রচলন ছিল, ইসলাম তা বৃদ্ধি করে চার বিয়েতে উন্নীত করেছে। অথচ বাস্তব অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। ইতিহাস সম্পর্কে যাদের প্রাথমিক ধারণা আছে তারাও জানেন যে, ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে আরবের তদানীন্তন জাহেলিয়াত সমাজে নারীদের কোনো মর্যাদাই ছিল না। নারীদের উপর শুধু জুলুম-নির্যাতন নয়, যেনতেন প্রকার আচরণ করা হতো তাদের সাথে। নারীদের সম্ভোগ কিংবা তথাকথিত বিয়ের কোনো সীমা বা সংখ্যা ছিল না। নারীদের অবস্থা এতটাই অবমাননাকর ছিল যে, কোনো পরিবারে কন্যা শিশু জন্মগ্রহণ করলে সে পরিবারের মুখ মলিন হয়ে যেত এবং কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। বিয়ে সম্পর্কে ইসলামের যে পবিত্র ধারণা এবং স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি পরস্পরের যে দায়িত্ব ও সম্মানের চেতনা তা তখনকার সমাজে বর্তমান ছিল না। তখনকার সমাজের মেয়েদের নিরাপত্তা, সম্মান ও অধিকারকে প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামে বিয়ের বিধি-বিধানকে সুস্পষ্ট করা হয় এবং দায়-দায়িত্বহীন অসংখ্য বিয়েকে নিষিদ্ধ করে বাস্তব প্রয়োজনে সর্বোচ্চ চারটিতে সীমাবদ্ধ করা হয়। শুধু তাই নয়, এ কথাও সুস্পষ্টভাবে বলা হয় যে, ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিশ্চিত হতে না পারলে তোমাদের জন্য একটি বিয়েই উত্তম।
ইসলামের বিধি-বিধানগুলো যে সর্বজনীন, শাশ্বত ও কল্যাণকর তা বর্তমান সময়েও উপলব্ধি করা যায়। এ প্রসঙ্গে সৌদি আরবের দাহরান অঞ্চলের একদল কলেজ ছাত্রীর সাম্প্রতিক ভূমিকার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ঐ কলেজ ছাত্রীরা মেয়েদের অবিবাহিতা থাকা বা কুমারীত্ব সমস্যা দূর করতে একই সময়ে একাধিক স্ত্রী রাখতে পুরুষদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। তারা এই বিষয়ে টুইটারে এক প্রচারণা অভিযান শুরু করেছেন। ইসলাম ধর্মের এ সংক্রান্ত বিধানের আলোকে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে ধনী ও সক্ষম ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এসব ছাত্রী। সৌদি গেজেটের খবরে বলা হয়, সৌদি আরবে মেয়েদের অবিবাহিত হয়ে থাকার সমস্যা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। দেশটিতে এ ধরনের নারীর সংখ্যা ২০১০ সালে ছিল প্রায় ১০ লাখ। সৌদি আরবের অর্থনীতি ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জরীপে দেখা গেছে, দেশটিতে ২০১১ সালে ৩০ বছর বয়সী অবিবাহিত নারীর সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৪১৮ জন। প্রসঙ্গত সানিয়া আল দানদনিস নামের এক সৌদি নারী বলেছেন, প্রত্যেক সৌদি পুরুষ যদি ৪ জন স্ত্রী রাখেন এবং তার প্রত্যেক স্ত্রী যদি গড়ে ৮ সন্তান জন্ম দেন, তাহলে নারীদের চিরকুমারীত্ব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি এ দেশটির জনসংখ্যাও বেড়ে যাবে। স্বল্প জনসংখ্যার বিশাল ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এ দেশটির জন্য মহিলাটির প্রস্তাব তেমন কোনো অযৌক্তিক ব্যাপার নয়। তবে একজন সৌদি পুরুষ বলেছেন, কেউ যখন এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবেন যে, তিনি প্রথম ও ২য় স্ত্রী উভয়ের সাথে ন্যায় বিচারপূর্ণ আচরণ করতে পারবেন কেবল তখনই তিনি এ ধরনের বিয়ের কথা ভাবতে পারেন। তার এই বক্তব্য ইসলামের বিবাহবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বলেই মনে হয়।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, আমাদের সমাজে অনেকে বাস্তব প্রয়োজনে একাধিক বিয়ের বিষয়টিকে সমালোচনা করলেও পরকীয়ার মতো অশ্লীল ও অন্যায় আচরণের ব্যাপারে তারা থাকেন নির্বিকার। অথচ একটু চিন্তা করলেই উপলব্ধি করা যায় যে, পরকীয়ার মতো ব্যাপারটি শুধু পাপাচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক বিচ্ছেদ ঘটায়, এমনকি হত্যাকা-ের মতো ঘটনাও ঘটে যায়। যে পরিবারের সদস্যরা পরকীয়ার মতো কর্মকা-ে লিপ্ত থাকে, সে পরিবারের সন্তানরা সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। এসব বাস্তব বিষয় বিবেচনায় আনলে আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, বাস্তব প্রয়োজনে ও শর্তসাপেক্ষে ইসলামে একাধিক বিয়ের যে বিধান রেখেছে তা শুধু যুক্তিসঙ্গতই নয়, মানুষের পারিবারিক জীবন যাপনের জন্য কল্যাণকরও বটে।
বিষয়: বিবিধ
১৬০৯ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইসলামে শর্ত সাপেক্ষে এর অনুমোদন থাকলেও কোন পুরুষ মানুষ জেনে বুঝে নিজেকে আগুনে ফেলে দিতে চাইবে না সামর্থ্য থাকলেও ।
বর্তমানে বিয়ে হয়ে গেছে এরকমই ।
সৌদিতে সেটা সম্ভব কারণ , তাদের অঢেল তেল সম্পদ । টাকা ওড়ানোর ধান্দায় থাকে তারা । নাইট ক্লাবে এক নর্তকীর পেছনেই তাদের ১২ মিনিটে ৮৪ কোটি টাকা খরচ করার নজির আছে ।
সেখানে মেয়েরা তো চাইবেই এরকম উড়ানোওয়ালা কারও কাঁধে সওয়ার হতে। আর এসব উড়ানোওয়ালাদের হেরেমেই থাকে শতে শতে মিস্ট্রেস । তাই ৪ টাই হোক আর ৪০০ টা, শেখদের ঐসবে কোন সমস্যা নেই । তাছাড়া তারা কয়েকদিনের জন্য উপমহাদেশে এসে কন্ট্রাক্ট বিয়ে করে মৌজমাস্তি হালাল করতে । দিন দশেক পর সেই মেয়েকে তালাক দিয়ে টাকা ধরিয়ে চলে যায় । মেয়েটির এতে কোন সমস্যা হয় না কারণ এই সপ্তাহ দুয়েকে তার ভাগ্য দারুনভাবে বদলে গেছে ।
সৌদি মেয়েরা কি নিজেদের দেশের অর্থ বাইরে যেতে দিতে চাইবে ?
এইগুলোই উঠে আসত আমার মন্তব্যে, কিন্তু আপনার কথায় তা এসে গেছে।
বাংলাদেশে নারী পুরুষের অনুপাত সম্ভবত ১০৩ ঃ ১০০। অর্থাৎ প্রতি একশজনে তিনজন নারী বেশি, তাই অতীব প্রয়োজন ব্যতিরেকে একটার বেশি বিয়ে না করাই ভাল।
আর বাংলাদেশের নারীরা স্বভাবতই বেশি হিংসুটে, সতীন কে মেনে নেবার প্রবণতা খুব কম, দেখা যায় শান্তির চাইতে অশান্তি বেশি সৃষ্টি হয়য়। তবে কেউ যদি চার বিয়ে করতে চায় তাহলে নেগলেট করা কোনভাবেই বাঞ্চনীয় নয়।
অর্থাৎ প্রতি একশ জনে নারীর চাইতে তিনজন পুরুষ বেশি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন