জীন জাতির অস্তিত্ব
লিখেছেন লিখেছেন হারানো সুর ২৭ জুন, ২০১৪, ০৪:২৩:২৫ বিকাল
আজকাল অনেকেই জ্বিনের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে। তারা মনে করে দুনিয়াতে জ্বিন বলে কিছু নেই। আসলে এটা ভ্রান্ত ধারণা। জ্বিন আছে এবং জ্বিনের অস্তিত্বও বিজ্ঞানসম্মত। আমরা এখানে সেটা নিয়েই আলোচনা করব। প্রথমে আমরা জানব জ্বিন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কি বলা হয়েছেঃ সুরাতুল যারিয়াহ এর ৫৬ নং আয়াতে আছেঃ ওয়ামা খলাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিঈয়াবুদুন । অর্থঃ আমি জীন ও মানুষকে শুধু আমার ঈবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি । সুরা আল জ্বিনে বলা হয়েছেঃ বলুন, আমার প্রতি ওহী নাযিলকরা হয়েছে যে, জ্বিনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে,অতঃপর তারা বলেছেঃ আমরা বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি। (আয়াত-০১) অথচ আমরা মনে করতাম মানুষ ওজ্বিন কখনও আল্লাহতা’আলা সম্পর্কে মিথ্যা বলতে পারে না। (আয়াত-০৫) আর যখন আল্লাহতা’আলার বান্দা তাকে ডাকার জন্যে দন্ডায়মান হল, তখন অনেক জ্বিন তার কাছে ভিড় জমালো। (আয়াত-১৯) জ্বিন জাতির ইতিহাসঃ কুরআন অনুসারে জিন জাতি মানুষের ন্যয় আল্লাহ্ তা'য়ালার এক সৃষ্ট একটি জাতি। পৃথিবীতে মানব আগমনের পূর্ব থেকেই তাদের অস্তিত্ব ছিল; এখনও তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। মানুষের চর্মচক্ষে তারা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। তবে জিনরা মানুষকে দেখতে পায়। তারা বিশেষ কিছু শক্তির অধিকারী। তাদের মধ্যেও মুসলিম এবং কাফির ভেদ রয়েছে। তারা মসজিদে নামাজ পড়তে আসে। তাদেরও সমাজ রয়েছে। তারা আয়ূ মানুষের চেয়ে অনেক বেশী। উদাহরনস্বরূপ, তারা ৩০০ বছরবয়সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। ঈমাম ইবনে তাইমিয়ার মতে জিন জাতি তাদের অবয়ব পরিবর্তন করতে পারে। ইসলামের মতে জিন জাতি এক বিশেষ সৃষ্টি। কুরআনের ৭২তম সুরা আল জ্বিন এ শুধু জিনদের নিয়ে কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সূরা আন নাসএর শেষ অংশে জিন জাতির উল্লেখ আছে। কুরআনে আরো বলাআছে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে জিন এবং মানবজাতির নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। হযরত সুলায়মান (আঃ) এর সেনাদলে জিনদের অংশগ্রহণ ছিল বলে কুরআনে উল্লেখ আছে।ইসলামে আরো বলা আছে "ইবলিশ"তথা শয়তান প্রকৃতপক্ষে জিন জাতির একজন ছিল। ইসলামের মতে, শয়তান হচ্ছে দুষ্ট জিনদের নেতা। ইবলিশ বা শয়তান ছিল প্রথম জিন যেআল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। কুরআনে উল্লেখ আছে যে, ইবলিশ এক সময় আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা ছিল । কিন্তু আল্লাহ যখন হযরত আদম(আঃ) কে সৃষ্টি করলেন, তখন হিংসার বশবর্তী হয়ে ইবলিশ আল্লাহর হুকুম অমান্য করে। এ কারণে ইবলিশ কে বেহেশত থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং এরপর থেকে তার নামকরণ হয় শয়তান। ইসলাম পূর্ব আরব উপকথা গুলোতে জ্বিন সদৃশ সত্ত্বার উল্লেখ আছে। প্রাচীন সেমাইট জাতির জনগণ জিন নামক সত্ত্বায় বিশ্বাস করতো। তাদের মতানুসারে নানাপ্রকারের জিন পরিলক্ষিত হয়। যেমন, ঘুল (দুষ্ট প্রকৃতির জিন যারা মূলত কবরস্থানের সাথে সম্পর্কিত এবং এরা যেকোন আকৃতি ধারণ করতে পারে), সিলা (যারা আকৃতি পরিবর্তন করতে পারতো) এবং ইফরিত (এরা খারাপ আত্মা)। এছাড়া মারিদনামক এক প্রকার জিন আছে যারা জিন দের মধ্যে সবচেয়েশক্তিশালী। প্রাচীন আরবদেরমতে জিন রা আগুনের তৈরি। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ব্যাখাঃ আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান জ্বিন জাতির অস্তিত্ব অস্বিকার করে না। অস্বিকার করার মত কোন যুক্তি বা মতবাদও আজ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং এ্যন্টি ম্যাটার সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যত বৃদ্ধি পাচ্ছে জ্বিনের অস্তিত্বের পক্ষে যুক্তি ততই প্রগাড় হচ্ছে। আসুন জানি এ্যন্টি ম্যাটার কিঃ পৃথিবীতে যেমন বস্তু রয়েছে। তেমনভাবে অবস্তুও থাকতে পারে। আসুন দেখি এন্টিম্যাটার সম্পর্কে উইকিতে কি বলা হয়েছেঃ পার্টিক্যাল ফিজিক্সে এ্যন্টি ম্যাটারেরর ধারণা প্রতিপদার্থের ধারণা রুপ নিয়েছে। ধারণা করা হয়েছে যেভাবে কণা দ্বারা পদার্থ গঠিত হয় ঠিক তেমনিভাবে প্রতিকণা দ্বারা প্রতিপদার্থ গঠিত হয়। উদাহরণস্বরুপ, একটি প্রতিইলেকট্রন (পজিট্রন) এবং একটি প্রতিপ্রোটন মিলিত হয়ে গঠন করে একটি প্রতিহাইড্রোজেন পরমাণু, যেমন করে একটি ইলকট্রন ও প্রোটন মিলে তৈরি করে একটি হাইড্রোজেন পরমাণু। উপরন্তু কণা এবং প্রতিকণা মিলিত হলে যেভাবে পূর্ণবিলয়ের মাধ্যমে সকল শক্তি বিমুক্ত হয়, তেমনি পদার্থ এবং প্রতিপদার্থের মিলনে পূর্ণবিলয়ের সৃষ্টিহয় বলে ধারণা করা হয়েছে। এ ধরণের পূর্ণবিলয়ের ফলে প্রকৃতপক্ষে উচ্চ শক্তির ফোটন (গামা রশ্মি) এবং বহু কণা-প্রতিকণা জোড়ার সৃষ্টি হয়। এই পূর্ণবিলয়ে বিমুক্ত কণাগুলোর মধ্যে বিপুল পরিমাণ শক্তি থাকে। এই শক্তির মান পূর্ণবিলয়ের ফলে সৃষ্ট বস্তুসমূহের নিশ্চল ভর এবং মূল পদার্থ-প্রতিপদার্থ জোড়ার অন্তর্ভুক্ত বস্তুসমূহের নিশ্চল ভরের পার্থক্যের সমান। অর্থাৎ আমাদের মহাবিশ্বে যত পার্টিক্যাল আছে ঠিক তত পরিমান এ্যন্টি পার্টিক্যাল আছে। শক্তির নিত্যতা সূত্রানুযায়ী। এ্যান্টিপার্টিকেল অদৃশ্য। এগুলোর মুভমেন্ট কোন যন্ত্র দ্বারা পর্যবেক্ষন করা যায় না। কিন্তু বিজ্ঞান এগুলোর অস্তিত্বকে অস্বিকার করতে পারছে না। পৃথিবীতে ৬৫০ কোটি মানুষ আছে। এ্যান্টি পার্টিকেল থিওরি অনুযায়ী প্রতিটি মানুষের জন্যে একটি করে প্রতিমানুষ থাকলে সেগুলোর সংখ্যা হবে ৬৫০ কোটি। এগুলোমানুষের মতই কিন্তু অদৃশ্য। এগুলোকেই জ্বিন বলা হয় যা বিজ্ঞান সম্মত।
বিষয়: বিবিধ
১৫৩০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন