অনিশ্চয়তার রাজনীতি এবং দেশের ভবিষ্যৎ

লিখেছেন লিখেছেন হারানো সুর ০৫ জুন, ২০১৪, ০৫:৪৫:২০ সকাল

বর্তমান সময়ে সব থেকে আলোচিত বিষয় বাংলাদেশের রাজনীতি এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে নানাবিধ জল্পনা- কল্পনা। যারা রাজনীতির একদমই বাইরের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষ, তারাও বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, এই শ্রমজীবী মানুষের এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেকার হয়ে দিন

পার করতে হচ্ছে। যারা একান্তই বাধ্য হয়ে বাইরে কাজের সন্ধানে বের হচ্ছেন, তাদেরকে সহিংসতার শিকার হয়ে হয় মৃত্যুর পথে পা বাড়াতে হচ্ছে, অথবা সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই একজন মানুষই পুরো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। অর্থাৎ, একজনের মৃত্যু অথবা পঙ্গুত্ব, পুরো পরিবারটিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। সংবিধানের দশম সংশোধনীর কারণে, সরকার চায় তাদের তত্ত্বাবধানে, আর প্রধান বিরোধীরা চায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। দন্দের মুল বিষয়টি এটাই এবং একমাত্র কারণ।

সেনা সমর্থিত একটি অগণতান্ত্রিক সরকারের দুই বছরের মেয়াদ কালে, সব দলের নেতা কর্মীরাই ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে তীব্র অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। সময়টা ছিল অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরের, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কাল। ২০০৮ সালে, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার খসড়া প্রস্তাবে, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে, সংসদের দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে, সরকার গঠন করে তার শরীক দলগুলোর সাথে। সেই সুবাদে, পরবর্তীতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর ভিত্তি করে, এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে, সংবিধানে আনা হয় পরিবর্তন। যে পরিবর্তনের আলোকে, তাদের তত্ত্বাবধানেই দশম সংসদ নির্বাচনের পথ সুগম করে নেয়। ২০০৮ সালে ব্যাপক ভোটে নির্বাচিত আওয়ামীলীগ, নির্বাচিত হবার পর থেকেই একের পর এক ঘটনার জন্ম দিতেই থাকে, আর একই সাথে হারাতে থাকে জনপ্রিয়তা। ২০১০ সালে বি.ডি.আর. বিদ্রোহের সময় সরকারের ভুমিকা নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে তারা তীব্র সমালোচনার শিকার হয় এবং পরবর্তীতে, উইকিলিক্স সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে সেই বিদ্রোহে আওয়ামীলীগ সরকারের সরাসরি জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতেই, সরকারকে পড়তে হয় তীব্র চাপের মুখে।

শেয়ার বাজারে অস্বাভাবিক দরপতনের ফলে, লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারী সে সময় নিঃস্ব হয়ে পড়ে। লাভবান হয় গোটা কতক মানুষ, যারা রাতারাতি সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। বেশ কজন বিনিয়োগকারী সে সময় আত্তহুতি দিতে বাধ্য হয়, কিন্তু তাতে সরকারের টনক কখনই নড়ে নি। ফলে, তারা আন্দোলনকারী ক্ষতির সম্মুখীন, নিঃস্ব হয়ে যাওয়া বিনিয়োগকারীদেরকে আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনি দিয়ে কঠোর হাতে দমন করে। শেয়ার বাজারের কেলেঙ্কারির কোনও সমাধানে আসার আগেই, তাজরিন গার্মেন্টসে আগুনে পুড়ে মারা যায় ১৬১ জন। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই সাভারের রানা প্লাজায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় ১৫০০ শ’র বেশি মানুষ। ইংল্যান্ডের সেই সময় উদ্ধার তৎপরতায় সাহায্যের হাতকে তারা ফিরিয়ে দেয়। ঘটনার তীব্রতাকে এবং জনরোষের মুখ থেকে সরকারকে বাঁচাতে, দুর্ঘটনার ১৭ দিন পর, রেশমা নামের এক শ্রমিককে উদ্ধারের ঘটনা ঢালাওভাবে প্রচার করে। এই উদ্ধারের কাহিনী দেশের ভিতর ছাড়িয়ে, আন্তর্জাতিক মাধ্যমগুলোতেও নন্দিত হবার বদলে, সাজানো নাটক হিসেবে চরম নিন্দিত আর প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম.খা. আলমগীরের ‘ভবন ধরে নাড়া- চাড়ার’ তখনকার মন্তব্য প্রশ্নবিদ্ধ করে মন্ত্রীদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী দিপু মনির সদলবলে ঘন ঘন সরকারী টাকায় বিদেশ ভ্রমন আর শপিঙের কথা সবাই জানে। বিভিন্ন ইস্যুতে তার এই বিদেশ ভ্রমনের ফল হিসেবে কোনও লাভ এই পর্যন্ত বাংলাদেশ দেখে নি। বরং, তার ভ্রমন বাবদ, সরকারী তহবিল থেকে শত শত কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে। ভারতের সাথে সুন্দরবন উজাড় করে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিতর্কিত চুক্তি সইয়ের ভিতর দিয়ে সরকার, সমালোচনার আরও একধাপ উপরে উঠে যায়। বাংলাদেশের সব মানুষের মতের বিরুদ্ধে, ভারতকে খুশি করে আওয়ামী সরকার এই চুক্তি সই করে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির সে সময়ের প্রস্তাব সম্পূর্ণভাবে ভেস্তে যায়, শুধুমাত্র সরকারের দুর্নীতির কারণে। কিন্তু, সেখানেও সরকার নিজের দলের লোকজনের গা- বাঁচিয়েই পথ চলেছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি ছিল সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ। এই ক্ষেত্রেও সরকার চরম ব্যারথতার পরিচয় দিয়েছে। এটা ছিল আপামর জনগনের দাবি, কিন্তু আওয়ামী সরকার এটাকে ব্যাবহার করে, বিরোধী দল আর জামাতের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে দেবার জন্য। যার জন্য, তারা এই পর্যন্ত দলের ভিতর সরাসরি ৭১ এ, দেশদ্রোহিতায় যুক্ত ব্যাক্তিদের শাস্তির কথা মুখেও আনে নি। এই ধরণের অসংখ বিতর্কিত ঘটনার কারণে, আওয়ামী সরকার যখন একদমই অজনপ্রিয়, তখন তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ২৫শে নভেম্বর, ২০১৩ তারিখ। কিন্তু, সর্বদলীয় অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা না থাকার কারণে, ই.ইউ, কমনওয়েলথ, যুক্তরাষ্ট্র এবং সর্ব শেষ রাশিয়া তাদের পর্যবেক্ষক পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দিয়েছে।

জাতিসংঘের বিশেষ দুত, তারানকোর বাংলাদেশ সফরে এসে, দুই প্রধান দলের প্রধানকে এক না করতে পারার একমাত্র কারণ, বি.এন.পি আর আওয়ামীলীগের নিজেদের একগুঁয়েমি, যার মাসুল হয়তো বাংলাদেশকেই গুনতে হবে। কারণ, তারানকো ফিরে যাবার পর বাংলাদেশের জন্য চারটি প্রস্তাব জমা দেয়। যার ভিতর আন্তর্জাতিক অবরোধ আরোপ এমন কি, সামরিক আক্রমণের কথাও বলা হয়েছে।

পরিশেষে, একটা কথা বলতেই হয়, বাংলাদেশের সবগুলো রাজনৈতিক দলই একই রকম। এরা কখনও জনগনের জন্য ভাবে নি, ভাবেও না। যে যখন ক্ষমতায় থাকে, নিজেদের পকেট ভারি করতেই বাস্ত থাকে। যার ফল হিসেবে, পাঁচ বছরে আওয়ামী সরকারের প্রায় সব প্রতিনিধিদেরই সম্পদ বেড়েছে শত থেকে হাজার গুন। অথচ, দেশের চোখে পড়ার মত উন্নয়ন একটাও দেখা যায় না। পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হয়, আর বি.এন.পি আর আওয়ামীলীগ পালাক্রমে ক্ষমতায় আসে। যার জন্য আমরা দেখি, কোনও দলই বাংলাদেশে একবারে দুই মেয়াদে সরকার গঠন করে নি। কারণ একটাই, বাংলাদেশের মানুষ এক সরকারের আমলে, আরেক সরকারের সময়ের জুলুম- নির্যাতনের কথা বেমালুল ভুলে যায়। অথচ, এই দুটো দলই দেশের সব থেকে বড় শত্রু। মালয়েশির প্রধান মন্ত্রী মহাথির মুহম্মদ ২৮ বছর দেশ পরিচালনা করে, জনগনের মতের বিরুদ্ধে যেয়ে তাদেরকে কাঁদিয়ে পদত্যাগ করেন। অথচ, বাংলাদেশের প্রধান দুই দলের প্রধান তাদের মৃত স্বামীর আর বাবার নাম ভেঙে, এতটা বছর ধরে দেশকে শোষণ করেই চলেছে। যার কারণে, স্বাধীনতার ৪২ বছর পর, আজও বাংলাদেশের সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জন হয়ে ওঠে নি। এখন অপেক্ষা আর দেখার বিষয়, বাংলাদেশের জন্য আরব বসন্তের মত কোনও বিপ্লব আসলেই অপেক্ষা করছে কি না, যা সাধারন জনগনের মুক্তির পথ খুলে দিতে পারে। কারণ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিশ্চয়ই হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না যদি এইভাবেই দেশকে নিয়ে, জনগণকে নিয়ে এই দলগুলো ছিনিমিনি খেলতেই থাকে।

বিষয়: বিবিধ

৯০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File