রসূলুল্লাহ(সাঃ) উত্কৃষ্ট মোজেজা মেরাজ
লিখেছেন লিখেছেন হারানো সুর ১৬ মে, ২০১৪, ০৫:৪৩:০২ সকাল
মেরাজ আরবী শব্দ। যার অর্থ পথ, সিঁড়ি, ঊর্ধ্বে আরোহনের অবলম্বন। প্রচলিত অর্থে মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (স.) কর্তৃক আল্লাহর সাক্ষাত্ লাভের উদ্দেশ্যে ঊর্ধ্বারোহনকে মেরাজ বলে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, "পবিত্র ও মহিমাময় আল্লাহ, যিনি তাঁর বিশিষ্ট বান্দাকে রাতে সফর করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসায় (বায়তুল মোকাদ্দেস), যার পরিবেশ তাঁরই আর্শীবাদ পুষ্ট, তিনি (আল্লাহ) তাঁকে তাঁর নিদর্শনসমূহ দেখালেন। নিশ্চয় তিনি সব শোনেন, সব দেখেন" (সূরা বনী ইসরাঈল : ১)। প্রাণপ্রিয় স্ত্রী হযরত খাদিজা (রা.), যিনি ছিলেন নবীজির সকল বিপদাপদের শান্তনাদানকারী, তাঁর ইন্তেকালের বিয়োগ ব্যথায় কাতর এবং ধর্মপ্রচারের নানা প্রতিবন্ধকতায় জর্জরিত নবীজিকে আত্মিক শান্তিদানের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ জাল্লা শানু হিজরতের প্রায় ৩ বছর পূর্বে রজব মাসে মহাসমারোহে বিপুল অভ্যর্থনা দিয়ে নিয়ে যান তাঁর সান্নিধ্যে। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রথমে নবীজির সিনাচাক বা কলব পরিষ্কার করা হয়। অবশ্য আল্লাহপাক নবীজির আরও তিনবার সিনাচাক করেছিলেন। সিনাচাকের পর তিনি বোরাকে চড়ে ঊর্ধ্বাকাশে রওয়ানা হলেন। বোরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা বর্ণের জীব সদৃশ। বাইতুল মোকাদ্দেসে এসে নবীজি দুরাকাত নামাজ আদায় করলেন। তিনি নামাজের ইমামতি করলেন আর সমস্ত নবীগণ জামায়াতে অংশ নেন। হাদিস শরীফে আছে-হযরত আনাছ (রা.) মালেক বিন সা'সা আনসারী (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন, হযরত রসূল (স.) -কে যে রাতে আল্লাহ তায়ালা পরিভ্রমণে নিয়ে গিয়েছিলেন— সে রাতের ঘটনা বর্ণনায় সাহাবীগণের সম্মুখে তিনি বলেছেন, "যখন আমি কাবা গৃহের উম্মুক্ত অংশ হাতীমে ঊর্ধ্বমুখী শায়িত ছিলাম, হঠাত্ এক আগন্তুক আমার নিকট আসলেন, অতঃপর আমার বক্ষের ঊর্ধ্বসীমা হতে পেটের নিম্নসীমা পর্যন্ত চিরে ফেললেন এবং আমার কলব বের করলেন। অতঃপর স্বর্ণের একটি বড় পাত্র উপস্থিত করা হলো, যা ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল, তাতে আমার কলব ধৌত করা হলো। তারপর নির্ধারিত স্থানে রেখে আমার বক্ষকে ঠিকঠাক করে দেওয়া হলো। ঘটনার প্রবাহের ভিতর দিয়ে জিব্রাইল (আ.) আমাকে নিয়ে নিকটবর্তী তথা আসমানের দ্বারে পৌঁছলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। ভিতর হতে পরিচয় জিজ্ঞেস করা হলো, জিব্রাইল পরিচয় দিলেন। অতঃপর জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সঙ্গে কে আছেন? জিব্রাইল (আ.) বললেন, "মুহাম্মদ (স.) আছেন।" তারপর দরজা খোলা হলো। তিনি প্রথম আসমানে হযরত আদম (আ.), দ্বিতীয় আসমানে হযরত ঈসা (আ.) ও হযরত ইয়াহিয়া (আ.), তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ (আ.), ৪র্থ আসমানে হযরত ইদ্রীস (আ.), ৫ম আসমানে হযরত হারুন (আ.), ৬ষ্ঠ আসমানে হযরত মুসা (আ.) ও সপ্তম আসমানে হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর সাক্ষাত পান। তাঁরা প্রত্যেকেই নবীজিকে স্বাগতম জানান এবং তাঁর কল্যাণের জন্য দোয়া করেন। এরপর তিনি 'সিদরাতুল মুনতাহায়' পৌঁছলেন। নবীজি বলেন, "আমি তখন একটি বৃক্ষ দেখতে পেলাম, যার ফলগুলো বিশালাকার, খুবই সুন্দর এবং পাতাগুলো হাতীর কানের ন্যায় বড়বড়।" তখন জিব্রাইল বললেন, এটাই হল সিদরাতুল মুনতাহা। নবীজি বলেন, "অতঃপর আমাকে 'বায়তুল মামুরের' দিকে উর্ধ্বারোহন করানো হল। বায়তুল মামুরে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেস্তা নামাজের জন্য প্রবেশ করে। তারা একবার নামাজের জন্য বের হলে দ্বিতীয় বার আর নামাজের সুযোগ হয় না। তারপর আমার কাছে মদ ও দুধের পেয়ালা আনা হল। আমি দুধের পেয়ালা হাতে তুলে নিলাম। এরপর আমার উপর প্রতিদিন পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হল। আমি ফিরে চললাম। ফেরার পথে মূসা (আ.) এর কাছে আসলে তিনি বললেন, আমি অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আপনার উম্মত এটা পালন করতে সক্ষম হবে না। আপনি আল্লাহর কাছে ফিরে যান এবং তা হালকা করার অনুরোধ করুন। রসূল (স.) বলেন, "আমি মহান আল্লাহর কাছে ফিরে গেলাম এবং সংক্ষেপ করার জন্য অনুরোধ জানালাম। এবার দশ ওয়াক্ত কমানো হল। আমি পুনরায় হযরত মুসা (আ.) এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি পুনরায় পূর্ববত্ পরামর্শ দিলে আমি আবারও আল্লাহর সামনে গেলে আল্লাহ আরও দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন।" এভাবে পাঁচবার আবেদন করায় পঞ্চাশ ওয়াক্ত থেকে কমিয়ে আল্লাহপাক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আদেশ দিলেন, হযরত রসূল (স.) শেষ বার আল্লাহর সামনে থেকে ফিরে আসলে হযরত মূসা (আ.) নবীজিকে আবারও আল্লাহর কাছে যেতে বললেন। নবীজি বললেন, "আমি লজ্জাবোধ করছি।" বুখারী শরীফের ৩৬০৮ নম্বর হাদীসে এ ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। মেরাজ থেকে ফিরে নবীজি (স.) বললেন, "আসসালাতু মেরাজুল মোমেনিন।" অর্থাত্ নামাজ হচ্ছে মোমিন বান্দার জন্য মেরাজ।
বিষয়: বিবিধ
১১৮০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দিনে ৫০ ওয়াক্ত থেকে কমে কমে ৫ ওয়াক্তে এলেও এখন অনেক মানুষ সপ্তাহে শুধু এক ওয়াক্ত নামাজ পড়ে এবং তা খুব মান্জা মেরে । এটা যতটা না নামাজ পড়তে এসেছে মনে হয় তার চেয়ে বেশী মনে হয় যে কোন নিয়ে বাড়িতে এসেছে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন