পর্দা বা হিজাবের গুরুত্ব
লিখেছেন লিখেছেন Tomsom Begom ২২ অক্টোবর, ২০১৩, ০৭:২১:৪৯ সন্ধ্যা
পর্দা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কুরআন মজীদের কয়েকটি সূরায় পর্দা-সংক্রান্ত বিধান দেওয়া হয়েছে। পর্দার বিষয়ে আল্লাহ তাআলা সকল শ্রেণীর ঈমানদার নারী-পুরুষকে সম্বোধন করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করেছেন তিনি যেন তাঁর স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে এবং মুমিনদের নারীদেরকে চাদর দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত রাখার আদেশ দেন। কিছু আয়াতে উম্মুল মুমিনীনদেরকেও সম্বোধন করেছেন, কোনো কোনো আয়াতে সাহাবায়ে কেরামকেও সম্বোধন করা হয়েছে। মোটকথা, কুরআন মজীদ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য পর্দার বিধান দান করেছে। এটি শরীয়তের একটি ফরয বিধান। এ বিধানের প্রতি সমর্পিত থাকা ঈমানের দাবি।
পর্দার রয়েছে মৌলিক ছয়টি স্তম্ভ যার ভিত্তিতে পর্দার অপরিহার্যতা সাব্যস্ত হয়, তা নিম্নরূপ:
(১) আল-ঈমান: ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি সন্নিবেশিত বিধি-বিধানে আন্তরিক বিশ্বাস স্থাপন করা, যার সাথে সাথে মানব অন্তরে বিদ্যুৎ শক্তির উৎপত্তি হয়। যে শক্তি মানবের সর্বাঙ্গকে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল প্রদর্শিত আনুগত্যের বিধানানুসারে পরিচালিত করতে উদ্বুদ্ধ করে। সোজা কথায় আল্লাহ ও রাসূলের মনোনীত আইন কানুন মেনে নেয়া।
(২) আল-ইফ্ফাত: সতীত্ব সংরক্ষণ, নৈতিক পবিত্রতা বজায় রাখা।
(৩)আল-ফিতরাত: সৃষ্টিগত স্বভাব ও প্রকৃতি।
(৪) আল-হায়া: লজ্জাশীলতা।
(৫) আত-তাহারাত: আত্মার পবিত্রতা।
(৬) আল- গাইরাত: শালীনতা ও আত্মমর্যাদাবোধ।
আল-ঈমান: পর্দার স্তর ও অবস্থান হচ্ছে, আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল প্রদর্শিত আইন কানুনের আনুগত্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দাদের প্রতি তার আনুগত্যকে আবশ্যিক ও বাঞ্চনীয় করে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আনুগত্যের অপরিহার্যতা ঘোষণা করে বলেন:
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ
“আর আল্লাহ ও তার রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্যে নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে”। (সূরা আহযাব:৩৬)
মহান আল্লাহ আরও বলেন,
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
“তোমার সৃষ্টিকর্তার সপথ, তারা কিছুতেই মমিন হতে পারে না যতক্ষণ না তারা তাদের পারস্পরিক বিবাদ কলহে তোমাকে বিচারক রূপে মেনে নেয়। অত:পর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে তারা নিজেদের মনে কিছু মাত্র কুন্ঠাবোধ করবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে”। (সূরা নিসা:৬৫)
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
لا يومن أحدكم حتى يكون هواه تبعا لما جئت به
তোমাদের মধ্যে কেউই মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার মন আমার উপস্থাপিত আদর্শের বশ্যতা ও অধীনতা স্বীকার করে নেবে। (আল হাদীস)
আল্লাহ তাআলা পর্দার অপরিহার্যতার কথা বলতে গিয়ে বলেন:-
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ ﴿30﴾ وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آَبَائِهِنَّ أَوْ آَبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿31﴾
মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।[৩০] আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর:৩০-৩১)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآَتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ
“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর”। (সূরা আহযাব আয়াত: ৩৩)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
তোমরা তাদের (নবী পত্নীগণের) কাছে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে, এটা তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব-৫৩)
মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ
“হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়”। (সূরা আহযাব:৫৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
নারীর সর্বাঙ্গই সতর-অঙ্গ। (গোপনীয় বস্তু কাজেই নারীদেহ সম্পূর্ণটাই ঢেকে রাখা অপরিহার্য।)
উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হল যে, নারীর জন্যে কোন অবস্থাতে আবাস গৃহ থেকে বের হয়ে লোক চক্ষুর সামনে স্বীয় রূপ-সৌন্দর্য ও যৌবন প্রদর্শন করা বৈধ নয় বরং তা সন্দেহাতীত হারাম।
স্মর্তব্য, যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূলের পূণ্যবতী, পুত:পবিত্র মহান চরিত্রের অধিকারী, পরিপূর্ণ ঈমান বিশিষ্ট পত্নীগণকে এসব অবাঞ্চিত বস্তু থেকে সতর্ক করলেন, তাহলে অন্যান্য নারীদের বেলায় কিরূপ বিধান প্রজোয্য হতে পারে?
আল-ইফফাত: নৈতিক পবিত্রতা, সতীত্ব সংরক্ষণ।
মহান রাব্বুল আলামীন রমণীর জন্যে পর্দার বাঞ্চনীয় ও নৈতিক পবিত্রতা বজায় রাখার ঘোষণা দিয়ে বলেন:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا
হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন- ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব-৫৯)
আলোচ্য আয়াতের আনুষাঙ্গিক কিছু বিষয়:
(ক) নারীকুলকে পূর্ণ পর্দার আওতাধীন থাকার বিধান প্রদানে প্রতীয়মান হল যে, তার জন্য অবৈধ ও ফেরেঙ্গি আচরণ বর্জন করা তার নৈতিক দায়িত্ব। যাতে পাপাচারী ও লম্পটদের খপ্পরে পতিত হয়ে উত্যক্তের সম্মুখীন হতে না হয়।
হ্যাঁ, বৃদ্ধা নারী যাদের বিয়ের আশা নেই, ফেতনা ফাসাদ ও অশ্লীলতায় পতিত হওয়ারও আশংকা নেই। তাদের জন্যে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে যেসব অঙ্গ মাহরামের সামনে খোলা রাখা যায়, গাইরে মাহরামের সামনেও সেগুলো খুলতে পারবে, কিন্তু শর্ত হচ্ছে সাজ-সজ্জা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে না হওয়া।
পরিশেষে আরও বলা হয়েছে যে, যদি সে পরপুরুষ সমীপে আসতে পুরাপুরী বিরত থাকে তবে তা তার জন্যে উত্তম, বলুন তো? যুবতী, কোমলমতী রমণীর কি হুকুম হতে পারে? যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاءِ اللَّاتِي لَا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَنْ يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ وَأَنْ يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَهُنَّ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ﴿60﴾
বৃদ্ধা নারী যারা বিবাহের আশা রাখেনা, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখে, তাদের জন্য দোষ নেই। তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। (সূরা নূর: ৬০)
আল ফিতরাত: সৃষ্টিগত সহজাত প্রকৃতি।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
“অতএব তুমি একনিষ্ট হয়ে দীনের জন্য নিজকে প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতি যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না”। (সূরা রুম:৩০)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
كل مولود يولد على الفطرة فأبواه يهودانه أوينصرانه أو يمجسانه
“প্রত্যেক নবজাত শিশু ফিতরাত তথা ইসলাম বা স্রষ্টাকে চেনার ও তাকে মেনে চলার যোগ্যতার উপরই ভূমিষ্ট হয়, কিন্তু তার পিতা মাতা (বা ইসলাম বিরোধী পরিবেশ) তাকে ইহুদী, খৃষ্টান ও অগ্নিপূজকে পরিণত করে”। (আল-হাদীস)
আলোচ্য আয়াত ও হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, নারীদের জন্যে পর্দাবলম্বন করা স্বভাব-ধর্ম, সহজাত প্রকৃতি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমাদের মা বোনেরা আজ তাদের স্বভাবধর্ম ও সৃষ্টিগত প্রকৃতি পরিত্যাগ করে পাশ্চাত্যের ফেরেঙ্গি আচরণকে নিজেদের জন্যে মনোনীত করে নিয়েছেন। অথচ মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে এজন্যে জন্য সৃষ্টি করেননি।
সুতরাং, মানব মন্ডলী বিশেষ করে নারীকুলের জেন্যে এমন পথ বেছে নেয়া বাঞ্চনীয়, যে পথ তাকে স্বভাবধর্ম স্মরণ করিয়ে আল্লাহ ভীতি ও পরকালীন চিন্তার মহাসম্পদ লাভে উৎসাহিত করে, ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করার দিশা দিবে।
আল-হায়া: লজ্জাবোধ।
এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেন:
إن لكل دين خلقا و خلق الإسلام الحياء
প্রত্যেক দ্বীনেরই একটি নৈতিক স্বভাব ও আখলাক রয়েছে। আর ইসলামের সেই আখলাক বা নৈতিক চরিত্রটি হচ্ছে লজ্জাশীলতা” (আল-হাদীস)
তিনি আরো বলেন,
الحياء من الإيمان و الإيمان في الجنة
লজ্জাশীলতা হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ আর ঈমান (এর ঠিকানা হচ্ছে) জান্নাত।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)আরো বলেন,
الحياء و الإيمان قرنا جميعا
“লজ্জাবোধ ও ঈমান হচ্ছে এক সাথে মিলিত ভ্রুস্বরূপ। (একটির অবর্তমানে অপরটির বিয়োগ অনিবার্য।)
উম্মতজননী আয়শা সিদ্দিকা রা. বলেন: যে কামরায় রাসূলের সাথে সহগামী হয়ে আমার আব্বাজান (আবুবকর) কবরস্থ হয়েছেন, সে কামরায় আমি প্রবেশ করে আমার পরিহিত বস্ত্র খুলে রাখতে কোনো রকম সংকোচ মনে করতাম না, কারণ, সেখানে একজন আমার প্রাণপ্রিয় স্বামী (রাসূল) অপরজন শ্রদ্ধাভাজন আব্বাজানই ছিলেন। কিন্তু যখন তাদের সাথে (ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা)ওমরকে রা.কে দাফন করা হল, তখন থেকে প্রয়োজন বশত: সেই কামরায় প্রবেশ করলে বস্ত্র দ্বারা আমার সর্বাঙ্গ ঢেকে প্রবেশ করতাম।
আলোচ্য হাদীস দ্বারা পর্দার অপরিহার্যতা প্রমাণিত হল, আরও বুঝা গেল যে, উম্মত জননী আয়েশার প্রশংসনীয় আচরণ ছিল যে, পরপুরুষ মৃত ওমরের সমাধিতেও তিনি পর্দা করতেন। এতে প্রনিধাণযোগ্য যে, নৈতিকতা বিধ্বংসী শয়তানের চেলা লম্পটদের সামনে পর্দার কতটুকু প্রয়োজন হতে পারে?
আত-ত্বাহারাত: পবিত্রতা
এ মর্মে আল্লাহ বলেন,
َوإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
তোমরা তাদের (নবী পত্নীগণের) কাছে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে, এটা তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব-৫৩)
এ আয়াতে মানব অন্তরের পবিত্রতার কারণ উপকরণ পর্দাকেই সাব্যস্ত করা হয়েছে। কেননা, চোখের দ্বারা কোনো বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত করা ছাড়া সে বস্তু সম্পর্কে অন্তরে কোনো রকম জল্পনা-কল্পনা ও চিন্তা-ভাবনা সৃষ্টি হয় না। তবে যখনই দর্শন করে তখন থেকে নানা ফেতনা ও অনাচারের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে উপায়াদি হাছিল করে শেষ পযর্ন্ত ব্যভিচার সংঘটিত হয়। এতে প্রতীয়মান হল যে, নারীকুলের জন্যে পাপাচারীর খপ্পর থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে পর্দাবলম্বন করা । কারণ, ধর্ষনের মূলে দর্শনই দায়ী ।
আল্লাহ আরও গুরুত্ব সহকারে বলেন:
إِنِ اتَّــقَــيْــتـُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا
যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কন্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে। (সূরা আহযাব-৩২)
আল-গায়রাত : শালীনতা-আত্মর্মযাদা।
নারীর জন্যে শালীনতা যেহেতু তার মানমর্যদার অন্তর্ভুক্ত, তাই তার শালীনতাহানিকর যেকোনো আচরণই তার মানহানির নামান্তর। সুস্থ বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ তার স্ত্রী ও কন্যার প্রতি অপর কোন ব্যক্তির কামুক দৃষ্টিতে কখনও রাজী হতে পারে না । তাহলে সে অন্যের স্ত্রী কন্যা ও বোনের প্রতি কিভাবে কামুক দৃষ্টিতে তাকাবে? ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগের লোকেরা তাদের স্ত্রী কন্যা ও বোনদের ইজ্জত, সম্মান, মান-মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে পারস্পরিক যুদ্ধে লিপ্ত হত।
প্রখ্যাত সাহাবি ইসলামের চতুর্থ খলীফা আলী (রা বলেন, আমার নিকট সংবাদ এসেছে যে, তেমাদের নারীরা নাকি অনারবী পুরুষদের সাথে ভীড় করে ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে, এতে কি তোমরা আত্মমর্যদা বোধের অবক্ষয় মনে কর না? কিন্তু দূ:খের বিষয় পাশ্চাত্য সভ্যতার নামে অসভ্যতার মোহে পড়ে যারা বিকৃত ধ্যান ধারণা রাখে তারা শুধু তখনই নারীর মানহানি হয়েছে বলে মনে করে, যখন সে নারী পুরুষ দ্বারা ধর্ষিত হয়। কিন্তু আল্লাহর বিধানে এটা হচ্ছে নারীর মানহানির চূড়ান্ত পর্যায়। এর পূর্বে নারীর শালীনতা হারানোর আরও বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। সাধারণত: সে সব পর্যায় অতিক্রম করার পরই নারী পুরুষ দ্বারা ধর্ষিত হয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের অপমানিত হয়ে থাকে। নারীকে পর পুরুষ যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে উপভোগ করলে যেমন অপমান হয় তদ্রুপ কামুক দৃষ্টিতে উপভোগ করলেও অপমান হয়।
নারী পুরুষের সমান অধিকারের শ্লোগানটা পাশ্চাত্যবাদীদের একটা মারাত্মক প্রতারণামূলক শ্লোগান। যখন থেকে সমান অধিকারের নামে নারীরা স্বার্থবাদী, ভোগবাদী, কুচক্রী পুরুষের চক্রান্ত জালে আবদ্ধ হয়ে বেপর্দা অবস্থায় চলা-ফেরা করতে শুরু করল তখন থেকেই তারা তাদের ভোগের সামগ্রীতে পরিণত হল। তখন থেকেই শুরু হল সারা বিশ্বে নারী কন্ঠের করুণ আর্তনাদ নারী ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, নারী পাচার ও নারীকে পুরুষের ভোগের সামগ্রীতে পরিণত করার অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই।
সমান অধিকারের নামে সর্বপ্রথম পাশ্চাত্যের আমেরিকা, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে নারী পুরুষের সহ অবস্থানের ব্যবস্থা নেয়া হয় সহ শিক্ষার মাধ্যমে। তারপর পাশ্চাত্যের অনুকরণে বিশ্বের অন্যান্য দেশে সহশিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়। এভাবে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও শিক্ষিত সমাজে নারীকে পুরুষ কর্তৃক যেখানে-সেখানে যখন-তখন যেভাবে ইচ্ছা উপভোগ করার পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে। এর অনিবার্য পরিণতিতে আজ শিক্ষাঙ্গন সহ শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে গোটা বিশ্ব যৌন অপরাধের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যে সকল কিশোরী, তরুণী ও যুবতী রমনী ধর্ষিত হয়ে হাসপাতাল কিংবা আদালতের শরনাপন্ন হচ্ছে তাদের সিংহভাগই কি পর্দা লংঘনকারী নয়? তাদের আর্তনাদের ভাষায় কি আজ দেশের পত্র-পত্রিকার পাতাগুলো কলুষিত নয়? এখনও কি তাদের শুভবুদ্ধি উদয় হবার সময় আসেনি?
স্মর্তব্য, সুহৃদ পাঠক পাঠিকা ও সহশিক্ষার দিকে আহবায়ক ব্যক্তিবর্গ, আমরা যদি আল্লাহর বান্দা হয়ে থাকি এবং তারই প্রেরিত রাসূল মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উম্মত বলে দাবি করে থাকি। তাহলে আমাদেরকে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল প্রদর্শিথ বিধানকে অবশই বিনা দ্বিধায়, মস্তক অবনত করে হৃষ্টচিত্তে মেনে চলতে হবে। কেননা, পুরুষ হোক কিংবা নারী কোন মুমিনেরে পক্ষেই আল্লাহ ও রাসূলের আইন অমান্য করে মানব রচিত অন্য কোন মতবাদ গ্রহণ করার অধিকার ও ক্ষমতা রাখে না। কারণ, ভৃত্য মনীবের মনোনীত নীতির বিকল্প পথে চললে সেই ভৃত্যকে বলা হয় ধোকাবাজ ও অঙ্গীকার ভঙ্গকারী। এ কথায় দ্বীমত পোষণ করার কোনো সুযোগ নেই। বরং সকলেই এক মত। যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের উচিত সহশিক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, ও হৃত সম্ভ্রম উদ্ধারে সচেষ্ট হওয়া। যদি তা পারা না যায় তাহলে শিক্ষাঙ্গন তথা স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে পর্দার বিধান অপরিহার্য করে দেয়া। এবং ছাত্র ছাত্রীর বসার টেবিল আলাদা করে দেয়া। পুরুষ শিক্ষকের সম্মুখে নারী ছাত্রীর অনুরূপ নারী শিক্ষিকার সম্মুখে পুরুষ ছাত্রের বসাকে অনৈতিক জ্ঞান করা। সবচে ভাল হয়, বরং এটি অভিভাবকদের নৈতিক দায়িত্বও বটে, প্রাপ্ত বয়স্ক কিংবা বয়োপ্রাপ্তির নিকটবর্তী হেয় গেলে নিজ মেয়েদেরকে বালিকা স্কুলে শিক্ষাদান করানো।
স্মর্তব্য,
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করছি আর তা হচ্ছে, শিক্ষার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিতে হবে পবিত্র কোরআন ও হাদীসের শিক্ষাকে। অত:পর বস্তুগত শিক্ষা। সুতরাং একজন মুসলিম নারীর বস্তুগত শিক্ষার পূর্ণতার জন্যে হাইস্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডিগ্রী লাভ করে উচ্চ শিক্ষিত হওয়া অনর্থক। কেননা, মানব শিশুকে গর্ভে ধারণের দায়িত্বটা যেহেতু একচেটিয়াভাবে নারীকেই পালন করতে হয়, তাই রোজগারের জন্যে পরিশ্রম করার দায়িত্বটা একচেটিয়া পুরুষকে পালন করার বিধান দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ। কাজেই নারীকে বস্তুগত শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিতা হিসেবে গড়ে তোলা অত জরুরি নয়। সাধারণত: ভাল চাকুরী পাওয়ার জন্যেই তো উচ্চ শিক্ষা লাভ করা হয়।
হ্যাঁ, মুসলিম সম্প্রদায়ের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে নারীদেরকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা। আর তাই গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় ব্যাপকভাবে বালিকা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করা। তবে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এ ব্যাপারে আমাদের তৎপরতা তেমন নেই বললেই চলে। আর বস্তুগত শিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের জন্যে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষাই যথেষ্ট মনে করা উচিত।
সহশিক্ষার কারণে আজ নারী পুরুষ অবাধ মেলামেশার সুযোগ পাচ্ছে। আর সেই সুযোগের অসৎ ব্যবহার করে তারা প্রেমালাপ, প্রেমপত্র চালাচালি ও টেলিফোন ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যৌন অপরাধের কেন্দ্রে পরিণত করে ছেড়েছে। আর সমান অধিকারের নামে কর্মশালা, অফিস আদালত ইত্যাদিতে নারী পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার সুযোগ থাকায় সেখানেও এমন অনৈতিক কার্যাদি সঙ্ঘটিত হচ্ছে অহরহ। ফলে রাষ্ট্রের উন্নতির পরিবর্তে অবনতির অতল তলে তলিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
নবীপত্নী ও উম্মত জননীগণ নারীকুলের মাঝে শ্রেষ্ঠ ও পুত:পবিত্র চরিত্রে অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের প্রতি পরপুরুষের সাথে কোমল ও আর্কষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। তাদেরকে গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করার নির্দেশ প্রদান করে বলেন:
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না”।
কাজেই নারীরা শিক্ষা গ্রহণ করবে পর্দার অন্তরালে থেকে। অথবা শালীনতা বজায় রেখে বয়োপ্রাপ্তির পূর্বেই প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষা সমাপন করে দ্বীনে ইসলামের উপর বিশ্বাসগত ও কর্মগতভাবে অবিচল থাকাই অপরিহার্য। এটাই তাদের জন্যে ইহকালীন শান্তি এবং পরকালীন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায়।
আল্লাহ আমি আপনি এবং সমগ্র উম্মতকে তাকওয়া ও পরকালীন জীবনের পাথেয় অর্জনে রত থেকে ফেতনা ফাসাদের যাবতীয় উপায় উপকরণ থেকে যথাযথভাবে সংযত থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন
[ইন্টারনেট অবলম্বনে লেখা]
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন