প্রসঙ্গ মওদূদীর ছেলের জামায়াত বিরোধিতাঃ

লিখেছেন লিখেছেন কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস ১২ অক্টোবর, ২০১৩, ০২:৪৫:৩৬ রাত

গত ৬ ই অক্টোবর ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি তে দেখলাম জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আ’লা মওদূদীর ছেলের বক্তব্য প্রচার করলো।হয়তো অন্যান্য চ্যানেলেও এই খবরটি প্রচার করা হয়েছে।উনি IFIC Bank-র একটি কর্মশালায় যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন।অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি করার বিরোধিতা করলেন।তার ভাষায়,‘যেহেতু জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বীকার করে না সেহেতু এই দলের বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার নাই।জামায়ত একটি ভন্ড রাজনৈতিক দল।তারা ভারত ভাগেরও বিরোধিতা করেছে।আমার বাবা নিজেও একজন স্বার্থপর মানুষ।তিনি নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করার জন্য এই দল করেছেন।জামায়ত মানুষের ক্ষতি করে।এরা খুবই খারাপ…ব্লা ব্লা ব্লা…’।

ব্যক্তিগতভাবে আমি কিন্তু জামায়াত করি না অথবা জামায়াতের রাজনীতির সাথেও জড়িত নই।তারপরও এই বিষয়ে কিছু বলা উচিত বলে আমি মনে করি।কারণ ব্যাপারটা আমার কাছে বিশেষ চমকপ্রদ বলে মনে হল।যে পাকিস্তানকে এত ঘৃণা করে সেই পাকিস্তান থেকেই মানুষ এনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কেন প্রচারণা চালাতে হবে?দেশে কি মুক্তিযুদ্ধের চেতণাধারী কমে গেছে?

যেহেতু এই কথাগুলো জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আ’লা মওদূদীর ছেলে বলেছেন সেহেতু এই সব কথাকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয়া যায় না।একটি রাজনৈতিক দলের অনেক রকম ভুল থাকতেই পারে।মনে রাখতে হবে পৃ্থিবীর কোন রাজনৈতিক দলই একেবারে ধোয়া তুলসী পাতা নয়।কম-বেশি ভুল/দোষ-ত্রুটি সব দলেরই আছে।ঐসব দলের কর্মিদেরও দোষ-তুটি কম থাকে না।কিন্তু সচরাচর একটি দলের প্রধানের ছেলে সেই দলের এবং সেই প্রধানের প্রকাশ্যে সম্মালোচনা করে এমন দেখা যায় না।আমি মনে করি উনার অভিযোগগুলোর জবাব দেয়া অত্যন্ত জরুরী।

#উনার প্রথম অভিযোগ হল জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।এই অভিযোগ মোটেও ঠিক নয়।একাত্তরে তারা দেশ ভাগ হোক এটা চায় নাই।এটা খুবই স্বাভাবিক।একটা দেশের সবাই স্বাধীনতা চাইবে এমন কোন কথা নেই।অনেকেই চায়নি পাকিস্তান ভাঙ্গুক।এমনকি স্বয়ং বঙ্গবন্ধু নিজেও স্বাধীনতার কথা বলেন নাই।উনি নির্বাচিত নেতা হিসেবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন।দেশ ভাংলে মুসলিমদের ঐক্য নষ্ট হবে এই ভয়ে তারা দেশ ভাঙ্গার বিরোধিতা করেছিলো।ভারতের আগ্রাসনের ভয়ও একটা ব্যাপার ছিল।এখন তো তাদের সন্দেহই সঠিক প্রমানিত হয়েছে।যাই হোক দেশ যখন একেবারে ভাগ হয়েই গেছে তখন ঠিকপি তারা দেশের স্বাধীনতা মেনে নিয়েছে।এখন আর ঐ কথা বলে কোন ফায়দা নাই।

এরপর জামায়াতের বিরুদ্ধে আরেকটি বড় অভিযোগ হল তারা ভারত ভাগের বিরোধিতা করেছে।আমার প্রশ্ন হল ভারত ভাগের বিরোধিতা করে কি ভুল করেছে?এখন তো সেকুলারিস্টরাই বলে বেড়ায় ভারত ভাগ হওয়া ছিল একটা বড় ভুল।জামায়তের ভারত ভাগের বিরোধিতার প্রধান কারন হল ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়ার তাগিদে।যদি ভারত ভাগ হয় তাহলে মুসলিমরা যে ভূমি পাবে তা নিতান্তই কম এবং মানচিত্রে দেখা যায় যে ভুমি মুসলিদের জন্য বরাদ্দ করা হল তা অত্যন্ত বৈষম্যমূলক।তার চেয়ে যদি ভারত এক থাকে তাহলে মুসলিমরা একটা বড় দেশে থাকতে পারবে।আজকে যদি ভারত এক থাকতো তাহলে ভারত-পাকিস্তান এই দুই দেশের মধ্যে এতো ঝামেলা হত না।নিজেরা নিজেরা ঝামেলা করে নিজেদের শক্তি ক্ষয় করছে।সেই সাথে আমরা এ ও দেখতে পারছি ভারত বাংলাদেশের সাথে কি রকম আচরণ করছে।আজকে ভারত আমাদের সাথে যেসব বৈষম্য করছে তখন তা করতে পারতো না।সবচেয়ে বড় কথা এখন সেকুলারিস্ট এবং কম্যুনিস্টরা অ স্বীকার করে দ্বজাতি তত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হওয়াটা এই উপমহাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি।তো জামায়াত ভারত ভাগের বিরোধিতা করে কি দোষ করলো?এটা অনেকটা দেবতা করলে লীলা খেলা,মানুষে করলে পাপ এই রকম হয়ে গেল না?

এরপর উনি নিজের জিন্মদাতা পিতাকে বললেন একজন স্বার্থপর লোক।মওদূদী স্বার্থপর কি না আমি তা জানি না।উনি ব্যক্তিগত জীবনে কেমন মানুষ তাও আমি জানি না।কিন্তু আমি তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে কথা বলবো।মওদূদী একটা রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা।যেহেতু উনি এই দল গঠন করেছেন সেহেতু এই দলের সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারনেও উনার প্রভাবও বেশি থাকার কথা।উনি যদি একজন স্বার্থপর মানুষ হতেন তাহলে উনি দলের সাংগঠনিক কাঠামো এমনভাবে তৈরি করতেন যেন উনার পর দলের প্রধান হতে পারে উনার নিজেরই ছেলে।কিন্তু আমরা জানি উনার মৃত্যুর পরে উনার কোন ছেলেই দলের প্রধান হয় নাই অথবা দল থেকেই ঐ রকম কাউকে নির্বাচন করা হয় নাই।প্রশ্ন হল একজন স্বার্থপর লোক কিভাবে নিজের ছেলেকে দলের প্রধান হওয়ার সুযোগ না দিয়ে অন্যকে সেই সুযোগ দেন।আমরা বড় বড় জনদরদী নেতাদের ভূমিকা তো নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি।আওয়ামি লীগ,বিএনপি,ইসলামি আন্দোলন(চরমোনাই),জাতীয় পার্টি ইত্যাদি ইত্যাদি।এই সব দলের নেতারাই বড় বড় ত্যাগী নেতা।কিন্তু সেই ত্যাগী নেতারাই নিজেদের দলের যোগ্য কর্মীদের বাদ দিয়ে নিজের সন্তানের জন্য দলের প্রধানের পদটি রেখে দিয়েছেন।কিন্তু মওদূদি কেন এমন করলেন না?কারন ইসলামী আন্দোলনে পরিবারতন্ত্রের কোন স্থান নাই।

এখন প্রশ্ন হল উনার ছেলে কেন এই রকম কথা বল্লেন?আমাদেরকে প্রথমেই বুঝতে হবে উনি কিন্তু একটা সুদি ব্যাংকের অনুষাঠানে এখানে এসেছেন।উনার আচরনে স্পষ্ট ফটে উঠেছে উনি একজন সেকুলারিস্ট ব্যক্তি।আসলে যদি মওদূদী দলের সাংগঠনিক কাঠামো এমনভাবে তৈরি করতেন যেন উনার পর উনার ছেলেই দলের প্রধান হতে পারে তাহলে হয়তোবা ছেলের মুখে এই রকম কথা শুনা যেত না।আরো মজার ব্যাপার হল ঐ অনুষ্ঠানের বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী,একাত্তরে পাকিস্তানিদের মুরগী সাপ্লায়ার,নাস্তিকদের গরু জনাব মুরগী কবির সাহেবও ছিলেন।এখন আপনারাই বুঝে নেন উনার ছেলেকে এনে তারা কি প্রমাণ করতে চায়।সবচেয়ে বড় কথা ব্যাংক নিষয়ক কোন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক কথা আসবে কেন?এবার আপনারাই যা বুঝার বুঝে নেন।

আর উনার এই ছেলের কেন জামাতের উপর এত ক্ষোভ তাও একটু খোজ নিলেই জানা যায়।মওদূদীর মৃত্যুর পূর্বে নিজের সব প্রকাশনী জামায়াত ইসলামীর নামে উইল করে যান।কিন্তু মওদূদীর মৃত্যুর পর এই কুলাঙ্গার এই সব প্রকাশনা থেকে যে আয় হয় তা দাবি করে বসে।এই জন্য তিনি আদালতেও যান।কিন্তু আদালত জামায়তের পক্ষে রায় দেন।সুতরাং আপনারা বুঝতেই পারছেন।আমাদের দেশে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে আর তা হলঃখেতে না পারলে আঙ্গুর ফল টক।

হল।যে পাকিস্তানকে এত ঘৃণা করে সেই পাকিস্তান থেকেই মানুষ এনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কেন প্রচারণা চালাতে হবে?দেশে কি মুক্তিযুদ্ধের চেতণাধারী কমে গেছে?

সব শেষে বলতে চাই এটা শাহরিয়ার কবির গংদের একটি নতুন চক্রান্ত।তাই বলে আমি এটাও বলছি না যে জামায়াত একেবারে ভাল।তাই বলে শাহরিয়ার কবিরদের ভাড়া করা লোকের কথা কেন বিশ্বাস করবো?

বিষয়: রাজনীতি

১১৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File