নারীঃ

লিখেছেন লিখেছেন কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস ১১ অক্টোবর, ২০১৩, ০৪:০৯:৩৮ রাত

হুমায়ুন আজাদের নারী বইটির বেশ কিছু অংশ পড়লাম।সেখানে নারীর পরাধীনতার জন্য উনি পুরুষতান্ত্রীক সমাজ ও ধর্মকে দায়ী করেছেন।পৃ্থিবীর প্রধান প্রধান ধর্ম গুলো নারীর প্রতি যেসব বৈষম্যমুলক আচরণ করেছে উনি সেই সবের সমালোচনা করেছেন।উনার দৃষ্টিতে ধর্ম গুলো সব পুরুষতান্ত্রিক।যাই হোক অন্যান্য ধর্মের যে সমালোচনা উনি করেছেন সেব্যাপারে ওই সকল ধর্মের লোকেরাই উত্তর দিবে।আমি ঐ সকল ধর্মের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে তেমন একটা ভাল জানি না।কিন্তু একজন সাধারন মুসলিম হিসেবে ইসলামের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনলেন তার জবাব দেয়ার চেষ্টা করবো।যেহেতু পুরো বই পড়ি নাই তাই সব কিছুর উত্তর একসাথে দেয়া সম্ভব না।বইয়ের মোট পৃষ্টা সংখ্যা ৪০৭।এর মধ্যে আমি ১০০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়েছি।এবার মূল কথায় আসি।

অভিযোগঃ

উনার প্রথম অভিযোগ হল ইসলাম আসার পর নারী বন্দি হয়ে গেছে।অর্থাৎ ইসলামের পূর্ব যুগে নারী অধিক স্বাধীন ছিল।তখন যে কন্যা শিশুকে জীবিত কবর দেয়া হত তা উনি স্বীকার করে নিয়েছেন।স্বীকার করেই আবার বললেন সবাই এই কাজ করতেন না।তবে কিছু কিছু উপজাতি এই কাজ করতো।তখন নাকি নারীরা পুরুষদের মতই সকল প্রকার সামাজিক সুযোগ সুবিধা পেতো।নারীরা যেমন ইচ্ছা তেমন চলতে পারতো।কিন্তু ইসলাম এসে নারীর সেই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলো।

জবাবঃ

ভাইসাব যদি ইসলাম নারীকে বন্দিই করে রাখবে তাহলে কন্যা শিশু জীবিত কবর দেয়া বন্ধ করলো কেন?তখন নারী যেমনে খুশি তেমনে চলতে পারতো এই কথার মানে হল তখন নারী খোলামেলা পোষাক পরিধান করতো।কিন্তু নারীর এই ধরনের পোষাক পরিধান করার কারনে জাহেলি যুগের পুরুষগণ মেয়েদের টিজ করতো।সেই টিজ বন্ধ করার জন্যই আল্লাহ নারীদের শালীন পোষাক পরিধান করার আদেশ দিয়েছেন।এখনো তো পুরুষদের এই টিজ করার মনোভাব কমে নাই।আর নারী বেপর্দা বা খোলামেলা পোশাক পরিধান করলে কি সমস্যা হয় তার উদাহরণ তো উনি নিজেই।উনার তো আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের দেখলে চুইংগামের মত চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে হয়।তো উনার মত লুইচ্চাদের হাত থেকে বাচার জন্যই আল্লাহ মেয়েদের শালীন পোশাক পরিধান করার আদেশ দিয়েছেন।উনার মত গন্য-মান্য,জঘন্য লুইচ্চারা তো নারী শালীন পোশাক পরলে কষ্ট পাবেনই।

অভিযোগঃ

উনি স্বীকার করেছেন একমাত্র ধর্ম ইসলাম যেই ধর্মে নারীকে সম্পত্তির অধিকার দিয়েছে।নারীকে দেনমোহরের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।কিন্তু উনার অভিযোগ হল ইসলামে নারীকে যে সম্পত্তির অধিকার দিয়েছে তা খুবই সামান্য।দেনমোহরের পরিমানও খুবই সামান্য।অর্থাৎ ইসলাম হয়ত নারীকে কিছুটা দিয়েছে কিন্তু কেড়ে নিয়েছে অনেক বেশি।

জবাবঃ

একজন নারী তার পিতা-মাতা,স্বামী থেকে সম্পত্তি পায়।সন্তান মারা গেলে তাদের সম্পত্তির ভাগ ও পায়।তারপরও আমি এখানে তা উল্লেখ করছি না।পিতা থেকে সম্পত্তি পেয়ে বিয়ের পর স্বামীর বাসায় যায় এবং স্বামী থেকে দেনমোহর পায়,স্বামী মারা গেলে সম্পত্তির ভাগ পায়।আজাদ সাহেবের প্রশ্ন হল কন্যা পুত্রের অর্ধেক সম্পত্তি কেন পাবে?সমান সমান কেন পাবে না?একজন নারী তার পিতার সম্পত্তি ভাইয়ের অর্ধেক হিসেবে পায়,বিয়ের পর স্বামী থেকে দেনমোহর পায়,স্বামী মারা গেলে তার সম্পত্তির ভাগ পায়।বিনিময়ে তাকে পরিবার পরিচালনার কোন খরচই বহন করতে হয় না।এমনকি একজন নারী যদি করে তাহলে সেই আয়ে স্বামীর কোন হক থাকে না।কিন্তু স্বামীর আয়ে স্ত্রীর পূর্ন হক থাকে।অর্থাৎ তার পূর্ন ভরণ-পোষণের দায়ীত্ব স্বামীর।আবার তাকে যখন বিয়ে দেয়া হয় তখন তার বিয়ের সমস্ত খরচ বহন করতে হয় তার পিতাকে।যদি পিতা বেচে না থাকে তাহলে বড় ভাই থাকলে সেই ভাই তার বোন কে বিয়ে দিবে।অর্থাৎ ইসলামিক রীতি অনুযায়ী নারী যা পায় তার কানাকড়িও খরচ করতে হয় না।সে চাইলে খরচ না করে তার এই সম্পদ জমা করে রাখতে পারে।

কিন্তু একজন পুরুষের বেলায় সব উল্টো।একজন পুরুষ যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয় তখন তাকে পরিবারের দায়ীত্ব নিতে হয়।পিতা-মাতা বৃ্দ্ধ হয়ে গেলে তাদের কে দেখা-শোনা করার দায়ীত্ব ছেলের উপর বর্তায়।তার যখন বিয়ের বয়স হয় তখন দেখা যায় নিজের বিয়ের খরচ নিজেকে যোগাড় করতে হয়।আবার প্রতিষ্ঠিত না হলে তো কেউ মেয়ে দিবে না।কিন্তু মেয়েরা তো প্রতিষ্ঠিত না হলেও বিয়ে দেয়া যায়।ছেলেকে স্ত্রীর জন্য দেনমোহর্ যোগাড় করতে হয়।বিয়ের পর স্ত্রীর সব রকম চাহিদাই পুরুষকেই পূরন করতে হয়।আবার বাচ্চা-কাচ্চা হলে সেগুলোর ভরণ-পোষণের দায়ীত্ব পিতা হিসেবে পুরুষেরই।এখন যে লোক এতো কিছু করবে সে যদি সম্পত্তি একটু বেশি পায় তাতে কি কোন সমস্যা?

আজাদ সাহেব বললেন নারীকে যে দেনমোহর দেয়া হয় তা নাকি খুবই সামান্য।আমি জানি না কে সামান্য দেয়?দেনমোহরের একটি সর্বনিম্ন দাম নির্ধারন করা আছে।কিন্তু সর্বোচ্চ দাম নির্ধারন করা নাই।কিন্তু উনি এই সর্বনিম্ন দাম নিয়েই পড়ে থাকলেন।সবাইকে বুঝাতে চাচ্ছেন এর চেয়ে বেশি দেনমোহর দেয়া হয় না।

একবার খলিফাতুল মুসলেমীন উমর(রাঃ)তাঁর প্রজাদের সাথে পরামর্শ করছিলেন।ঐ পরামর্শ সভায় নারীরাও উপস্থিত ছিল।পরামর্শের একপর্যায়ে উনি বললেন যে মেয়েরা ইদানীং দেন মোহর বেশি দাবি করে।তাদের উচিত আরো কম দাবি করা।তখন উনার স্ত্রী প্রতিবাদ করে বল্লেন,আল্লাহ দেনমোহরের সর্বোচ্চ দাম ধরে দেন নাই।তাই মেয়েরা যেমন ইচ্ছা তেমন দেনমোহর দাবী করতে পারে।আপনার এই ব্যাপারে কিছু বলার কোন অধিকার নাই।উমর(রাঃ) এই কথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন।এর দ্বারা প্রমাণ হয় দেনমোহরের কোন সর্বোচ্চ মূল্য নাই।এটা নির্ভর করে আর্থিক এবং সামাজিক অবস্থানের উপর।একজন নারী খলিফার সাথেও নিজের অধিকার নিয়ে তর্ক করতে পারতো কিন্তু এই নাস্তিকরা তারপরও বলে ইসলাম নারীর অধিকার খর্ব করেছে।ইসলাম আসার পর নারী বন্দি হয়ে গেছে।

উনার আরেকটি বিশেষ অভিযোগ হল ইসলাম নারীকে পুরুষের অধীনস্ত করে রেখেছে।ইসলামে নারী-পুরুষকে সমানভাবে দেখা হয় না।এই ব্যাপারে উনি একটি হাদিস উল্লেখ করলেন যেখানে রাসুল(সাঃ) বলেছেন,‘যদি মানুষ মানুষ কে সিজদা করতে পারতো তাহলে আমি নারীদের আদেশ দিতাম তাদের স্বামীদের সিজদা দিতে’।ভাল কথা,কিন্তু আরেকটি হাদিসে যে রাসুল(সাঃ) নারীকে পুরুষের চেয়ে বেশি সম্মান দিলেন সেই কথা উনি উল্লেখ করলেন না।‘একবার রাসুল(সাঃ) সাহাবিদের সাথে কোথাও যাচ্ছিলেন পথিমধ্যে একটি উট রাসুলাল্লাহকে(সাঃ) সিজদা করলো।এই দৃশ্য দেখে সাহাবীরা বলে উঠলেন,হায় এই উট কতই না সৌভাগ্যবান।আমরাও যদি এই উটের মত আপনাকে সিজদা করতে পারতাম।রাসুল(সাঃ) বললেন,মানুষ কখনো মানুষকে সিজদা করতে পারে না।যদি আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে সিজদা করার নিয়ম থাকতো তাহলে আমি পুরুষদের নির্দেশ দিতাম যেন তারা তাদের মা কে সিজদা করে’।এখন এই হাদিস পড়ে কি তারা বলবে ইসলাম নারীকে পুরুষের চেয়ে বেশি মর্যাদা দিয়েছে?আরেকটি ঘটনা আছে,একবার এক লোক রাসুল(সাঃ) এর কাছে আসলো।লোকটি রাসুল(সাঃ) এর কাছে জানতে চাইলো আল্লাহর পর কার হক বেশি?রাসুল (সাঃ) বললেন ,তোমার মার।লোকটি জিজ্ঞেস করলো তারপর?রাসুল (সাঃ) বললেন তোমার মার।এরপর আবার জিজ্ঞেস করা হল এবং আবার উত্তর দিলেন তোমার মার।এরপর যখন আবার জিজ্ঞেস করা হল তখন রাসুল (সাঃ) বললেন,তোমার বাবার’।অর্থাৎ আল্লাহর পর সবচেয়ে বেশি হক মা’র,তারপর মা’র তারপর মা’র এরপর একেবারে শেষে এসে বলা হল এই বার তোমার পিতার হক।এখন প্রশ্ন হল এর দ্বারা কি ইসলাম নারীকে পুরুষের চেয়ে বেশি হক দিয়েছে।ইসলাম কি পুরুষের প্রতি বৈষম্য করেছে?মোটেও তা নয়।ইসলাম সামঞ্জস্য রক্ষা করেছে।কিছু ক্ষেত্রে নারীকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে আবার কিছু ক্ষেত্রে পুরুষকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।এমন কিছু কাজ আছে যা কেবল একমাত্র নারীই পারবে।কোন পুরুষকে দিয়ে সেই কাজ হবে না।যেমন বাচ্চা জন্ম দেয়া এবং তাকে দুধ পান করানো।এটা কখনো কোন পুরুষ পারবে না।তাই মা হিসেবে নারীকে পুরুষের চেয়ে বেশি মর্যাদা দেয়া হয়েছে।তাই ইসলামে মায়ের সম্মান সবার উপরে।এমনকি এটাও বলা হয়েছে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত।অর্থাৎ মাকে অসন্তুষ্ট করে কোন পুরুষ কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না।সে যত বড় ধার্মিকই হোক না কেন।ঠিক সেই নারী যখন স্বামীর ঘরে থাকে তখন স্বামী তার ভরণ-পোষণ হতে শুরু করে পুরো জীবনের দায়ীত্ব নিয়ে ফেলে।ঐ নারীর সকল প্রকার চাহিদা পূরণ করা স্বামীর দায়ীত্ব।স্ত্রীর সুখের জন্য স্বামীকে সম্ভব সব কিছুই করতে হয়।যে স্বামী স্ত্রীর জন এতো কিছু করে সেই স্বামীকে যদি আল্লাহ স্ত্রীর উপর কর্তৃ্ত্ব দেয় তাহলে কি সমস্যা?নারী যদি মা হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মান পেতে পারে পুরুষ কেন স্বামী হিসেবে স্ত্রীর কাছ থেকে সম্মান পাবে ণা?এক দিক দিয়ে নারীকে সম্মানিত করা হল আবার আরেক দিক দিয়ে পুরুষকে সম্মানিত করা হল।এর চেয়ে সুন্দর সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধান আর কোথায় পাওয়া যাবে?যদি আপনারা পারেন তাহলে একটা সামঞ্জস্যতাপূর্ণ সমাজ উপহার দেন।আর হুমায়ুন আজাদ সাহেব আরেকটা কথা বল্লেন সেটা হল,সব ধর্মই সংস্কারের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবস্থায় এসেছে।পৃ্থিবীতে একমাত্র ধর্ম ইসলাম যা যেভাবে নাজিল হয়েছে সেভাবেই রয়ে গেছে।ধন্যবাদ আপনাকে এমন সত্য স্বীকার করে নেয়ার জন্য।আপনার এই কথার মাধ্যমে আপনি আবার প্রমাণ করলেন ইসলামই একমাত্র অবিকৃ্ত ধর্ম।এটা যেভাবে নাজিল হয়েছে এখনো সেভাবেই রয়ে গেছে।মুসলিমরা তাদের ধর্মের সংস্কারের প্রয়জনবোধ করেনি কারন এখন যত রকমের আধুনিক মানবতাবাদী নিয়ম-কানুন,নারী অধিকারের আইন ব্লা ব্লা ব্লা… করা হচ্ছে তা অনেক আগে থেকেই ইসলামে আছে।তাই আমাদের কোন নতুন নিয়মের দরকার নাই।আল্লাহ আমাদের দ্বীন কে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।ইসলাম শুধু ধর্ম নয়,ইসলাম পূর্ণাংগ জীবন বিধান।ওহ আরেকটি কথা,পুরুষতান্ত্রীক সমাজের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই।এটা করেছে আপনাদের মত মহামানবরাই যাদের নিজেদের মেয়ে দেখলেই **** করতে ইচ্ছে হয়।কোনটা পুরুষতান্ত্রীক তা ভাল করে বুঝে নেন।

এরাই হল আসলে জ্ঞন পাপী।জেনে-বুঝে ইচ্ছে করে তথ্য বিকৃ্ত করে।সাধারণ মানুষকে ধোকায় ফেলে নাস্তিক্যবাদ কায়েম করতে চায়।

বিষয়: বিবিধ

১২৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File