স্পেশালিষ্ট ডাক্তারদের আসতে দেড়ী হওয়ায়!
লিখেছেন লিখেছেন বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ ৩০ নভেম্বর, ২০১৮, ০৪:০৮:৫০ রাত
বৃটেনে কোন ব্যাক্তি বা রোগীকে তার স্থানীয় ডাক্তার GP(General Practitioner) যদি সাধারণ অবস্থায়(জরুরী সমস্যা ব্যাতীত) কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার-প্রফেসরের কাছে পাঠায় তখন বলে আপনাকে ডাকযোগে নির্দেশনার চিঠি পাঠিয়ে দিব এতে এপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার ব্যাবস্থা থাকবে। কয়েকদিন পরে সেই পত্র পেলে রোগী টেলিফোনের মাধ্যমে National Health Service(NHS)র এপয়েন্টমেন্ট বুকিং এর কল সেন্টারে অপারেটরের সাথে কথা বলে নির্ধািরিত হাসপাতালের(Royal Hospital) বিশেষজ্ঞর সাথে সাক্ষাতের সময় ঠিক করে। এটাই বৃটিশ NHSর নিয়ম! এখানে না GP বা সেই হাসপাতালের বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করার জন্য কোন ফি লাগে! পুরোটাই ফ্রি, সেই সাথে প্রয়োজনীয় টেষ্টও! উক্ত ফোনের কয়েকদিন পর সেই হাসপাতালের নির্ধারিত ডিপার্টমেন্ট হতে ডাকযোগে চিঠির মাধ্যমে সাক্ষাতের সময় নিশ্চিত করা হবে! এখানে সেই প্রফেসরের নাম, ডিপার্টমেন্ট কত তলায়, লাউঞ্জ বা রুম নাম্বার কত সব উল্লেখ করা থাকবে। সেই সাথে যদি রোগীর কোন ব্লাড, এক্সরে বা যেকোন ধরণের টেষ্ট করানোর প্রয়োজন থাকে তাহলে রোগ বুঝে সাক্ষাতের এক সপ্তাহ বা ২/৩ সপ্তাহ আগে সে গুলো এই হাসপাতাল থেকেই করিয়ে নিতে হয়।
এভাবেই ফেসবুকের একজন বন্ধু কয়েক মাস আগে বৃটেনের একটি শহড়ের রয়াল হসপিটালে এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে দেখা করতে যায়। সে জানায় নির্ধারিত সময়ের আধাঘন্টা আগেই ঐ ডিপার্টমেন্টে নাম এন্ট্রি করিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। সাধারণত নির্ধারিত সময় থেকে পরের ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে স্পেশালিষ্টের রুম থেকে ডাক আসে। কিন্তু সেই দিন ৪০ মিনিট পেড়িয়ে গেলে সে ও তার সাথে অপেক্ষমান সাক্ষাৎ প্রার্থী রোগীরা কোন ডাক না পেয়ে সবাইকে একটু বিরক্ত দেখা গেল। যাই হৌক সেই ডিপার্টমেন্টের একজন মহিলা কর্মচারী তখন এই অবস্থায় স্পীকারে ঘোষণা দিল "লেডিস/জেন্টেলমেন, আমরা দুঃখিত যে আমাদের কয়েকজন প্রফেসদের আজকে এখানে আসতে দেড়ী হইছে; তো আমরা আপনাদের কে একটা স্লিপ দিব সেটা নিয়ে আপনারা এই হাসপাতালের মধ্যকার যেকোন ক্যান্টিনে যেয়ে একটা স্যান্ডউইচ এবং চা বা কফি পান করতে পারবেন ফ্রিতে"। তো উপস্থিত রোগীদের সবাই হাসপাতালের এই ডিপার্টমেন্টের আচরণে খুশী হল। সেই মহিলা কর্মচারী পরে আরও বলল যে এই হাসপাতালেরই অন্য একটা কাজে তাদের (স্পেশালিষ্টদের) ব্যাস্ততা ছিল। পরে আগত রোগীদের বেশীর ভাগই স্লিপ নিয়ে ক্যান্টিনে যেয়ে যার যার পছন্দ মত স্যান্ডউইচ ও চা/কফি খেল! কারেরাই আর এই দেড়ীর প্রসঙ্গে অভিযোগ রইল না।
তার কাছ থেকে কথাটা শুনে খুবই ভাল লাগল যে এখানে সিংহভাগ ফ্রি চিকিৎসা হলেও রোগীদের সময় ও চিকিৎসা সেবায় কোন অনিয়ম নাই। তাদের যথাসাধ্য রোগীদের উন্নত ও ভাল সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে NHS।
আর বাংলাদেশে সরকারী হলেওতো কথাই নাই এমনকি বেসরকারী চিকিৎসাতেও প্রায়ই রোগীদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা হাসপাতাল, ক্লিনিক বা চেম্বারে যেয়ে অপক্ষো করতে হয়। তার উপর অনেক সময় দরকার না থাকলেও একগাদা টেষ্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই সাথে বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালসের তথা মেডিক্যাল রিপরেজেন্টিভরা রোগীদের রোগ সমন্ধে যতনা পরামর্শ দেয় তারচেয়ে বেশী ওৎপেতে থাকে ডাক্তারদের প্রদত্ত প্রেসক্রিপশন দেখার জন্য। যে ডাক্তার সাহেবরা তার কোম্পানীর কয়টা ওষুধ রোগীদেরকে লিখে দিল।
নিজ পিতামাতা সহ বহু আত্নীয়-স্বজন ও পরিচিতদের এভাবে চিকিৎসা নিতে যেয়ে অনেক দূভোর্গ পোহাতে দেখছি। তবে চাইনা যে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের সাধারণ গরীব ও মধ্যবিত্তরা তাদের চাহিদামাফিক চিকিৎসা প্রাপ্তির জন্য কষ্ট করুক!
বিষয়: বিবিধ
৯৬৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আগেরকার বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা রোগী দেখতেন ১৫/ ২০ টা , সময় নিতেন ২০/২০ মিনিট করে। আর এখনকার ডাক্তারেরা দিনে ২০০ টা রোগী দেখেন এবং সব রোগী ডাক্তার পর্যন্ত যেতে পারে না , তাদের এসিস্টেন্ট ডাক্তারকে দেখিয়েই চলে আসে।
আর আমাদের রোগীদের মধ্যেও সমস্যা আছে। মানকরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দেখাতেই হবে , সেটা ৩/৪ মাস পরে সিরিয়াল পেয়ে হলেও। কিন্তু ততক্ষণে কি তার রোগ আগের জায়গায় থাকবে ?
কেউ কেউ আছে বিখ্যাত ডাক্তারকে দেখিয়ে সে পরিচিতজনদের কাছে নাম বাড়াতে চায়। সেই ডাক্তারকে দেখানোর জন্য একটা রোগও চাই তার। হোক সেটা ঘুমের সমস্যা কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন